বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নি (২)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X ০২. আজ বৃহস্পতিবার, হাফ স্কুল আজ বৃহস্পতিবার, হাফ স্কুল। সেকেন্ড পিবিয়ডে মবিনুর রহমানের কোনো ক্লাস নেই। তিনি টিচার্স কমনরুমে তাঁর নিজের চেয়াবে চুপচাপ বসে আছেন। তাঁর বুক পকেটের ঘড়ি শতকরা আশি ভাগ হিউমিডিটির কথা বলছে। কিন্তু আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটা নেই। ব্যাপারটা ঠিক মিলছে না। মবিনুর রহমানের ভুরু কুঁচকে আছে এই কারণে। কমনরুমে আরো কিছু শিক্ষক আছেন। তারা সরকারি ডি এ নিয়ে আলাপ করছেন। এবারের সরকারি সাহায্য এখনো এসে পৌঁছায় নি। মবিনুর রহমান এইসব আলোচনায় অংশগ্ৰহণ করছেন না। কখনোই করেন না। স্কুলের ধর্ম ও আরবি শিক্ষক জালালুদ্দিন সাহেবের চেয়ার মবিন্নুর রহমানের চেয়ারের ঠিক পাশেই। পাশাপাশি বসতে হয় বলেই বোধহয় দুজনের মধ্যে সামান্য সখ্যতা আছে। জালালুদ্দিন সাহেব মবিনুর রহমানকে তুমি তুমি করে বলেন। তাঁর কথাবার্তা থেকে মনে হতে পারে যে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর প্রচুর কৌতূহল। তা ঠিক না। কোনো বিষয় সম্পর্কেই তার কোনো আগ্রহ নেই। ভদ্রলোক কোনো ক্লাসই ঠিকমতো নেন না। আজও ক্লাস শেষ হবার কুড়ি মিনিট আগে বের হয়ে এলেন। মবিনুর রহমানের পাশে বসতে বসতে মধুর গলায় বললেন, তারপর মবিন, তোমার সায়েন্সের খবর কী? কোন খবরটা জানতে চান? বৃষ্টি হবে কী হবে না? বৃষ্টি হবে। হিউমিডিটি ৮০। জালালুদ্দিন পানের কোটা খুলতে খুলতে বললেন, বৃষ্টি যে হবে এটা বলার জন্য তোমার সায়েন্স লাগে না। আষাঢ় মাস, বৃষ্টি তো হবেই। পান খাবে না-কি? জি-না। খাও একটা জর্দা দেয়া আছে। আকবরী জর্দা। অতি সুঘ্ৰাণ। আমি পান খাই না। এমনভাবে তুমি কথাটা বললে যেন পান খাওয়া বিরাট অপরাধ। পান খাওয়া কোনো অপরাধ না। এটা হজমের সহায়ক। দাঁত ভালো থাকে। জালালুদ্দিন একসঙ্গে দুটো পান মুখে দিলেন, আঙুলের ডগায় চুন নিতে নিতে বললেন, আচ্ছা মবিন, এই যে পানের সঙ্গে আমরা চুন খাই। কেন খাই? তোমার সায়েন্সে কী বলে? আপনি সত্যি জানতে চান? অবশ্যই চাই। আরবি পড়াই বলে সায়েন্স জানব না? সায়েন্সের সঙ্গে এরাবিকের তো কোনো বিরোধ নাই। মবিন শীতল গলায় বললেন, পানের সঙ্গে চুন কেন খাওয়া হয়। আমি ব্যাখ্যা কবছি। মন দিয়ে শুনুন। শুনছি। তুমি হাসি মুখে বলো। মুখ এমন শুকনো করে রেখেছ কেন? মবিনুর রহমান ক্লাসে বক্তৃতা দেয়ার ঢং-এ বললেন, শুধু শুধু পান চিবুলে দেখবেন টক টক লাগছে। টক লাগার কারণ হচ্ছে পানে এক ধরনের এসিড বা অন্ন আছে। অম্ল টক স্বাদযুক্ত। চুন হচ্ছে এক জাতীয় ক্ষার। ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড। এই ক্ষার অম্নকে প্রশমিত করে। এই জন্যেই পানের সঙ্গে চুন খেতে হয়। ও আচ্ছা আচ্ছা। ভালো কথা। অম্ল এবং ক্ষার। ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। অনেকদিন থেকে মনের মধ্যে একটা খটকা ছিল। আচ্ছা, এখন বলে তো দেখি, তেঁতুলের সঙ্গে চুন মিশালে কি তেঁতুলের টক-ধর্ম চলে যাবে? মবিনুর রহমান চুপ করে বইলেন। এই বিষয়টা তার জানা নেই। অনুমানের উপর কিছু বলা ঠিক হবে না। বিজ্ঞান অনুমানের উপর চলে না। পরীক্ষা করে তারপর বলতে হবে। জালালুদ্দিন পানের পিক ফেলতে ফেলতে বললেন, কী, কথা বলছি না কেন? কী হবে তেঁতুলের সঙ্গে চুন মেশালে? কাল আপনাকে বলব। কাল কেন? আজই বলো। আজ বলতে পারব না। পরীক্ষা করে তারপর বলব। একদিন যাব তোমার বাড়িতে। তোমার চোঙটা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাব। দুরবিনের কথা বলছেন? হ্যাঁ, দুরবিন। বৃহস্পতির বলয় না-কি দেখা যায়, হেড স্যার বলছিলেন। হ্যাঁ দেখা যায়। চৈত্র মাসে দেখা যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকে। চৈত্র মাস। আসুক, আপনাকে দেখব। মবিনুর রহমান উঠে পড়লেন। তার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। ঘণ্টা পড়বার আগেই ক্লাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। দীর্ঘ আট বছরের নিয়ম। এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা ঠিক না। ক্লাস টেন, সেকশান বি-র সঙ্গে ক্লাস। পড়বার বিষয়বস্তু হচ্ছে আলো। আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ। বড় চমৎকার বিষয়। আলো হচ্ছে একই সঙ্গে তরঙ্গ এবং বস্তু। কী অসাধারণ ব্যাপার! ক্লাস টেনের ছেলেগুলি অবশ্যি এইসব বুঝবে না, তবে বড় হয়ে যখন বুঝবে তখন চমৎকৃত হবে। মবিনুর রহমান ক্লাসে ঢুকেই বললেন, আজ বাতাসেব আৰ্দ্ধতা শতকরা আশি। যদিও বাইরে রোদ দেখা যাচ্ছে তবু আমার ধারণা সন্ধ্যানাগাদ বৃষ্টিপাত হবে। এখন তোমরা বলে আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে কত? যারা জানো ডান হাত তোল। যারা জানো না বাঁ হাত তোল। সাতজন ছেলে ডান হাত তুলল। মবিনুর রহমানের মন খারাপ হয়ে গেল। তাঁর ধারণা ছিল সবাই ডান হাত তুলবে। মাত্র সাতজন? ছেলেগুলি কি সায়েন্সে মজা পাচ্ছে না? তা কী করে হয়? তুমি বলো, আলোর গতিবেগ কত? প্ৰতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল, স্যার। ভেরি গুড। এখন তুমি বলো–হ্যাঁ, তুমি ইয়েলো শার্ট তুমি বলো–আলোর গতি কি এর চেয়ে বেশি হতে পারে? জি-না স্যার। কেন পারে না? এটাই স্যার নিয়ম। কার নিয়ম? প্রকৃতির নিয়ম। ভেরি গুড়। ভেরি ভেরি গুড। প্রকৃতির কিছু নিয়ম আছে যার কখনো কোনো ব্যতিক্রম নেই। ব্যতিক্রম হতে পারে না; যেমন ধর মাধ্যাকর্ষণ। একটা পাকা আমি যদি গাছ থেকে পড়ে তা পড়বে মাটিতে। আকাশে উড়ে যাবে না। ইজ ইট ক্লিয়ার? জি স্যার। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক কে? নিউটন। নামটা তুমি এমনভাবে বললে যেন নিউটন হলেন একজন রাম-শ্যাম, যদু-মধু, রহিম-করিম, বজলু-ফজলু। নাম উচ্চারণে কোনো শ্ৰদ্ধা নেই। শ্রদ্ধার সঙ্গে নাম বলো। ছাত্রটি মুখ কাচুমাচু করে বলল, মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন। মবিনুর রহমান শুকনো মুখে বললেন, একজন অতি শ্ৰদ্ধেয় বিজ্ঞানীর নাম অশ্রদ্ধার সঙ্গে বলার জন্যে তোমার শাস্তি হবে। ক্লাস শেষ হলে আজ বাড়ি যাবে না। পাটিগণিতের বারো প্রশ্নমালার একুশ এবং বাইশ এই দুটি অঙ্ক করে বাড়ি যাবে। ইজ ইট ক্লিয়ার? ফোর্থ পিরিয়ড শেষ হবার আগেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করল। ঝুম বৃষ্টি নামল ক্লাসের শেষ ঘণ্টার পর। ভাসিয়ে নিয়ে যাবার মতো বৃষ্টি। মবিনুর রহমান টিচার্স কমনরুমে বসে রইলেন। স্কুল ফাঁকা হতে শুরু করেছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সবাই নেমে পড়ছে। পুরা স্কুলে এখন মানুষ আছে তিনজন। দপ্তরি কালিপদ, মবিনুর রহমান এবং ক্লাস টেনের হলুদ শার্ট গায়ে দেয়া ছাত্র মফিজ। বারো প্রশ্নমালার অঙ্ক দুটি সে কিছুতেই কায়দা করতে পারছে না। মবিনুর রহমান চুপচাপ তাঁর চেয়ারে বসে আছেন। খোলা জানালায় বৃষ্টির ছাঁট আসছে। তিনি তাকিয়ে আছেন বৃষ্টির দিকে। তাঁর মন বেশ খারাপ। গত দশদিন ধরেই রোজ সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। দুরবিন নিয়ে আকাশ দেখা হচ্ছে না। বর্ষাকালের মেঘমুক্ত আকাশ দুরবিন দিয়ে দেখার জন্যে খুব ভালো। আকাশে ধুলোবালি থাকে না। অনেক দূরের নক্ষত্রও স্পষ্ট দেখা যায়। মবিনুর রহমান উঁচু গলায় ডাকলেন, কালিপদ! কালিপদ ছুটে এলো। মফিজ নামের ছেলেটাকে দুটা অঙ্ক করতে দিয়েছিলাম, অঙ্ক হয়েছে কি-না খোঁজ নিয়ে আসি। জি আচ্ছা স্যার। তুমি স্কুল বন্ধ করে চলে যাও। আমার প্রাইভেট টিউশ্যানি আছে। সন্ধ্যাবেলা স্কুল থেকে যাব। আমি তালা দিয়ে যাব। জি আচ্ছা স্যার। কালিপদ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জানাল, ছেলেটির অঙ্ক দুটা এখনো হয় নি। মবিনুর রহমান তাঁর সামনের ডেস্কের ড্রয়ার থেকে সাদা কাগজ বের করলেন। অতি দ্রুত সেই কাগজে অঙ্ক দুটি করলেন। কাগজের এক মাথায় লিখলেন–মফিজ, তুমি আরো মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। প্রকৃতি তোমাকে যে মস্তিষ্ক দিয়েছে তা প্রথম শ্রেণীর। সেই মস্তিষ্ক ব্যবহার করা তোমার কর্তব্য। কালিপদ, ছেলেটাকে এই কাগজটা দিয়ে আসা। সে যেন দেখে দেখে অঙ্ক দুটা বোর্ডে করে রাখে। জি আচ্ছা। অঙ্ক করা হলে তাকে চলে যেতে বলে। জি, আচ্ছা। স্কুলঘর এখন পুরো ফাঁকা। মবিনুর রহমান চেয়ার ছেড়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন। ঘড়িতে তখন বাজে। ছটা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি দুটা থেকে সন্ধ্যা ছটা–এই চার ঘণ্টা তিনি একইভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। বাতাসে মাথার চুল না। নড়লে তাঁকে মূর্তি বলেই মনে হতো। দীর্ঘ সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকায় এই ব্যাপারটা শুধু কালিপদ জানে। সে কাউকে তা বলে নি। মাঝে মাঝে এই মানুষটাকে তার ভয় ভয় করে অথচ মানুষটা ভালো। প্রতি মাসের তিন তারিখে বাড়ি ভাড়া বাবদ একশ টাকা তাকে দিচ্ছে। তবে কালিপদের ধারণা এই বর্ষাকালেই মানুষটা সাপের কামড়ে মারা যাবে। বাড়ি ভাড়া হিসেবে একশ টাকা আসা বন্ধ হতে বেশি দেলি নেই। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ছটায় মবিনুর রহমান এই অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হোমিওপ্যাথ ডাক্তার, স্কুল কমিটির মেম্বার, প্রাক্তন চেয়ারম্যান আফজাল সাহেবের বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকলেন। আফজাল সাহেবের বড় মেয়ে রূপাকে গত ছমাস ধরে তিনি পড়াচ্ছেন। রূপা এই বছর এসএসসি দেবে। গত বছর দেবার কথা ছিল, টাইফয়েড হওয়ায দিতে পারে নি। এবার দিচ্ছে। রূপার ধারণা এবারো সে পরীক্ষা দিতে পারবে না। পরীক্ষার ঠিক আগে চিকেন পক্স কিংবা হাম হবে। মেয়েটি অসম্ভব বুদ্ধিমতী। তবে পড়াশোনায় মন নেই। কখনো সময়মতো আসবে না। এমনো হয়েছে তিনি আধঘণ্টা বসে আছেন কপার দেখা নেই। আজ অবশ্যি সঙ্গে সঙ্গে চলে এলো। চোখ কপালে তুলে বলল, স্যার এই বৃষ্টির মধ্যে আসছেন। আমি ভাবলাম, আসবেন না। মবিনুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, ঝড়বৃষ্টির জন্যে আসি নি এরকম কী কখনো হয়েছে? একবার হয়েছে স্যার। মে মাসের দু তারিখে আপনি আসেন নি। ঝড় হচ্ছিল তাই আসেন নি। মবিনুর রহমান চুপ করে গেলেন। কথা সত্যি। মে মাসের দুতারিখে তিনি আসেন। নি। মেয়েটা এটা মনে করে বাখবে তা ভাবেন নি। এই মেয়েব অনেক কিছুই তিনি বুঝতে পাবেন না। যেমন, মাঝে মাঝে সে পড়া বন্ধ করে এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। তিনি বিবক্ত হয়ে যখন ধমক দেন–কী ব্যাপার, পড়ছি না কেন? তখনো চোখ নামিয়ে নেয় না। ক্লান্ত গলায় বলে, আজ আর পড়তে ভালো লাগছে না, স্যার। আজ আপনি যান। বলেই অতি অভদ্রের মতো উঠে চলে যায়। রূপা বলল, স্যার, একটা গামছা এনে দিই। মাথাটা মুছে ফেলুন, মাথা ভিজে গেছে। অসুবিধা হবে না–তুমি অঙ্ক নিয়ে বস। বারো প্রশ্নমালার একুশ এবং বাইশ এই দুটা অঙ্ক কর তো দেখি পার কি-না! রূপা নিমিষেই অঙ্ক দুটা করে ফেলল। মবিনুর রহমান মনে মনে বললেন, ভেরি গুড, ভেরি গুড। এই মেয়েটির সঙ্গে বেশিরভাগ কথাই তিনি মনে মনে বলেন। স্যার, অঙ্ক দুটা হয়েছে? হ্যাঁ। আচ্ছা শোন, তোমাদের বাসায় কি তেঁতুল আছে? জি স্যার, আছে। একটা পিরিচে করে সামান্য তেঁতুল আর খানিকটা চুন আন। পান খাওয়ার চুন। কী করবেন। স্যার? ছোটখাটো একটা এক্সপেরিমেন্ট। পিরিচটা দিয়ে তুমি অ্যালজেব্রা নিয়ে বস। কাল করেছিলে দশ প্রশ্নমালা। আজ এগারো। রূপা উঠে চলে গেল। ফিরতে অনেক দেরি করল। মেয়েটার এই এক অভ্যাসএকবার উঠে গেলে ফিরতে অনেক দেরি করে। মবিনুর রহমান বিরক্ত মুখে অপেক্ষা করতে লাগলেন। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। এবার নিশ্চয় বন্যা হবে। এক বছর পর পর দেশে বন্যা হচ্ছে। গত বছর হয় নি। এবার তো হবেই। স্যার, নিন তেঁতুল। খানিকটা লবণও নিয়ে এসেছি। স্যার লবণ লাগবে? না। তোমাকে তো লবণ আনতে বলি নি। তুমি অ্যালজেব্রা নিয়ে বস। মবিনুর রহমান আঙুল দিয়ে ডলে ডলে চুন এবং তেঁতুল মেশাচ্ছেন। রূপা নিঃশব্দে অঙ্ক করে যাচ্ছে। মবিনুর রহমান এক সময় হঠাৎ লক্ষ করলেন, রূপা অঙ্ক করা বন্ধ করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ঘোর-লাগা চোখের দৃষ্টি। তিনি বিরক্ত গলায় বললেন, কী ব্যাপার, কী দেখছ? অঙ্ক কর। আজ আর করব না, স্যার। কেন? ভালো লাগছে না। রূপা তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে না। মবিনুর রহমান চুন মেশানো তেঁতুল খানিকটা জিভে লাগালেন। তিতা তিতা লাগছে। টক ভাব এখনো আছে। অন্ন এবং ক্ষারের প্রশমন ক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হয় নি বলে মনে হচ্ছে। আরো খানিকটা চুন মেশানো দরকার। এবং একটু বোধহয় গরম করা দরকার। রূপা! জি স্যার। আরেকটু চুন। এনে দাও তো! রূপা উঠে দাঁড়াল। ইতস্তত কবে বলল, আচ্ছা স্যার, আমার মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন লক্ষ করেছেন? তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, কী পরিবর্তন? সত্যি লক্ষ করেন নি? না তো! প্রথম আমার গায়ে ছিল সবুজ রঙের একটা শাড়ি। এখন একটা ডোরাকাটা শাড়ি। যখন তেঁতুল আনতে বললেন, তখন শাড়ি বদলালাম। ও! ও আচ্ছা! চুন নিয়ে রূপা এলো না। একটা কাজের মেয়ে একগাদা চুন দিয়ে গেল। সরু গলায় বলল, আপার মাথা ধরছে আইজ আর পড়ব না। আচ্ছা। আম্মা আফনেরে ভাত খাইয়া যাইতে বলছে। না, ভাত খাব না। চলে যাব। শোন, আমি তেঁতুল আর চুন নিয়ে যাচ্ছি, কেমন? ঘরে বাড়তি ছাতা থাকলে আমাকে একটা ছাতা দাও। বাড়তি ছাতা ছিল না। মবিনুর রহমান বাড়িতে ফিরলেন কাকভেজা হয়ে। নদীর পাশ ঘেসে বাড়ি ফেরার বাস্তা। নদী ফুলে-ফোঁপে একাকার হয়েছে। কান পাতিলেই নদীর ভেতর থেকে আসা হুঁ-হু গর্জন শোনা যায়। খানিকটা ভয় ভয় লাগে। শুধু ভয় না। ভয়ের সঙ্গে এক ধরনের আনন্দও মেশানো থাকে। মবিন্নুর রহমান বাড়ি ফিরেই রান্না চড়ালেন। হাঁড়িতে দুছিটাক আন্দাজ পোলাওয়ের চাল, মুগের ডাল, কয়েক টুকরা আলু এবং তিন চামচ ঘি। অল্প আঁচে অনেকক্ষণ সিদ্ধ হবে। এক সময় অতি সুস্বাদু ঘন সু্যপেব মতো একটা জিনিস তৈরি হবে। গরম গরম খেতে চমৎকার লাগবে। ডিম থাকলে ভালো হতো। ডিমটাও ছেড়ে দেওয়া যেত। প্রোটিন কম খাওয়া হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল। বৃষ্টির বিরাম নেই। মনে হচ্ছে আকাশটা যেন অনেক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। মবিনুর রহমান একটা টর্চ এবং ছাতা হাতে ঘরে তালা দিয়ে বের হলেন। আজ রাতটা তিনি নৌকায় কাটাবেন। নৌকায় বিছানা বালিশ সবই আছে। প্রশস্ত পাটাতনে তোশক বিছানো। দুপাশের দরজা লাগিয়ে নৌকায় শুয়ে থাকলে চমৎকার লাগবে। সারারাত নদীতে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যাবে। বাতাসে নৌকা এপাশি-ওপাশ করবে। চারদিকে থাকবে নিশ্চিছদ্র অন্ধকার। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাবে। সেই বিদ্যুৎ চমকে চারদিক আলো হয়ে আবার অন্ধকার হয়ে যাবে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৫২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ সোনাই মাঝি পাট(২)
→ ফ্লেশ/মাংস Pat(2)
→ অন্য ভুবন (২)
→ টুনটুনি ও ছোটাচ্চু (২)
→ আগুনের পরশমণি (২)
→ দ্য রিটার্ন অব শার্লক হোমস (২)
→ সপ্তপদী (২)
→ কোথাও কেউ নেই (২)
→ কোথাও কেউ নেই (২)
→ অপরাজিত (২)
→ আমার বন্ধু রাশেদ (২)
→ পুতুলনাচের ইতিকথা (২)
→ রাশা (২)
→ পদ্মা নদীর মাঝি (২)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now