বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
জিজেসরা যখন নেপালে শেষ পর্ব
লেখিকাঃ রোদেলা রিদা
আগের অংশের পর....
ভোরের আগেই আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। সবাই বলবো না কয়েকজন! আর বাকিরা ঘুম থেকে উঠেই না যেমন আরিজা বারিজা! বারিজার এতো ঘুম কই থেকে যে আসে বুঝি না! বাসায় সারাদিন ঘুমায় এখন এখানেও! খুব কষ্ট হইছে ওরে ঘুম থেকে তুলতে!
তারপর একে একে সবাইকে তুলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফজরের নামাজ পড়ে আমরা সবাই সারাংকোট এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ট্যাক্সি করে গেলাম। পাহাড়ের আকা বাকা রাস্তা দিয়ে আমরা একটা জায়গায় নেমে পড়লাম। বাকি পথ সিঁড়ি বেয়ে যেতে হবে। আমরা হাফাতে হাফাতে গিয়ে হাজির হলাম টপ পয়েন্টে। অসাধারণ ! অপূর্ব! পুরো পোখারা শহর দেখা যাচ্ছে! দেখতে পেলাম হিমালয়ের কোলে সূর্যদয়! মাচ্ছুপুছুরে পর্বতের গায়ে সূর্যোদয় দেখতে বহু মানুষ এখানে আসে। অপূর্ব দৃশ্য ।
এরপর আমরা সারাংকোটের একটি রেস্তোরাঁয় ব্রেকফাস্ট সারলাম।
এবার আমরা সবাই পোখারার উঁচু নিচু পাহাড়গুলো ঘুরবো। এখানে ভাড়া পাওয়া যায় বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল / স্কুটার। ভাড়া করা তাই বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল / স্কুটার ভাড়া করে নিজের পছন্দমাফিক ঘুরতে বেশ মজা। আমরা সবাই বাইসাইকেল ভাড়া করলাম। আমরা সাইকেলিং করবো। সাইকেল ৫০০ থেকে শুরু করে ২০০০ রুপি পর্যন্ত আছে। সারাদিন ও ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়। আমরা কয়েক ঘন্টার জন্য নিলাম। প্রথমে আমরা পাহাড়ে গেলাম। সাইকেলে পাহাড় থেকে নামতে কোনো কষ্ট হলো না কিন্তু উঠতে বেশ কষ্ট হয়েছে। তারপর শহরের আশেপাশে, অলিতে গলিতে ছুটে চললাম, শহরটি যানজট মুক্ত হওয়ায় সাইকেল চালিয়ে অনেক মজা পেয়েছি আমরা।
এবার আমরা করবো প্যারা গ্লাইডিং! এটা আমাদের জীবনের প্রথম প্যারাসুট ভ্রমন। আরিজাতো তো কোনো মতেই করবে না! তার ধারণা, 'প্যারাসুটে উঠলে যদি ছাতা আকৃতির প্যারাসুট উল্টে যদি ইংরেজি বর্ণমালা U আকৃতি ধারণ করে আর তা যদি শা শা শব্দে পাহাড়ের নিচে নেমে যায়! ' ভাভারে ভাভা এর এতো ভয়
পরে অনেক বুঝায় সুঝায় রাজি হলো। হৃদয় ভাইয়াও রাজি হলো। আমরা খুব উৎফুল্ল ! লাইফে প্রথম প্যারাসুটে উঠবো!
সবাই চললাম প্যারাসুট টিমেট গাড়ি করে পাহাড়ের গা বেয়ে ১৫০০ ফুট উচুতে, যেখান থেকে লাফ দিবে। অবশ্য একটু আতটু ভয়ও লাগছে সবার, আমারও লাগছিল! স্বাভাবিক থাকতে আমরা রাস্তায় বিভিন্ন কথা বার্তা বলতে থাকলাম ( নিজেদের ভয় লুকাতে আরকি )
অবশেষে আসলো সেই ক্ষণ। সবাই লাফ দিলাম প্যারাসুট নিয়ে, সঙ্গে পাইলট। লাফ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টে গেল।মনে হলো, আমরা যেনে পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ছি! হ্যাঁ! ঠিকই তো পাখি, পাখির মতো উড়ে উড়ে ঘুরতে থাকলাম। মনে বাচ্ছিল, "আকাশে বাতাসে চল যাই চল উড়ে যাই ডানা মেলে রে......" ! অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি! আনন্দে আমরা চিৎকার চেঁচামেচি করছি! আমাদের পায়ের নিচে ফেউয়া লেক, একপাশে শ্বতী নদ বয়ে চলেছে, সামনে ধবলগিরি, মাচ্ছুপুছারে আর অন্নপূর্ণা রেঞ্জের পর্বতমালা। আশেপাশে কিছু পাখিও উড়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের কয়েকজনের হাতে সেলফি স্টিক ছিল! বেশ অনেক গুলো ছবিও তুললাম। ২০/২৫ মিনিট উড়ার পর নেচে নেমে এলাম। একটু মাথা ঘুরছিল কিন্তু বেশ মজা করেছি। আমরা সবাই ই খুব মজা পেয়েছি। একটা মজাদার অ্যাডভেনন্জার!
এরপর পোখারায় আমরা আমাদের হেটেলে ফিরে রেস্ট নিলাম। রেস্ট নিয়ে নামাজ পড়ে, দুপুরের খাবার খেয়ে গেলাম অন্নপূর্ণা জাদুঘরে (Annapurna Butterfly Museum) । এই জাদুঘরে ছোট ছোট অনেক প্রজাপতি দেখতে পেলাম।
বিকালে আমরা ফিউয়া লেকে নৌকা ভ্রমন করলাম, মাঝি আমাদের লেকের চারপাশে ঘুরিয়ে দেখালো, জাস্ট অসাধারণ সৌন্দর্য
এরপর আমরা ব্যাট কেভে গেলাম। ব্যাট কেভ হচ্ছে বাদুড়ের গুহা। টিকিট করলে সাথে একটা বড় টর্চ দিয়ে দেয়, আনন্দের সাথে সেখানে প্রবেশ করলাম! তার ২/৩ টি মাথায় বারি খেয়ে এগিয়ে চললাম! শুধু আমি না বাকিরাও কম বেশি মাথায় বারি খেল.। দুঃখের বিষয় বাদুড়রা মনে হয় ওই সময় বাসায় ছিলো না, তাই দেখা পেলাম না।
ওইদিনও সূর্য ডোবার আগে লেকের পাশে গিয়ে বসে ছিলাম আমরা। অপূর্ব সেই দৃশ্য । সূর্য ডোবার সাথে সাথে লেকের রঙ পরিবর্তন মনোমুগ্ধকর! পোখারা লেক সাইডটি জমজমাট। যেন এক ভিন্ন পৃথিবী। রাস্তার দুইপাশে নানা দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট আর বার। অসম্ভব প্রাণপ্রচুর্যপূর্ণ একটি শহর। প্রাকৃতিকভাবেই এই শহরটি শান্তিময়। রাতের শহরটা হয়ে উঠে আরও উপভোগ্য।
পরেরদিন পোখারাকে বিদায় জানিয়ে আমরা থামেলে ব্যাক করলাম। ওখানে একদিন থাকলাম। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করলাম। থামেলের বাজারগুলো পরিদর্শন করলাম। তারপর পরেরদিন আমদের দেশে ফিরার পালা! থামেল থেকে কাঠমুন্ডুতে আসলাম। কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্টে ফ্লাইটে বসে আছি!
ফারহান ভাইয়াঃ আচ্ছা আমরা কি কিছু মিস করছি??
রিফাতঃ হ্যাঁ আমারো মনে হচ্ছে আমরা কিছু একটা মিস করছি!
ফারহান ভাইয়াঃ কি??
তানিম ভাইয়াঃ হ্যাঁ, কি মিস করলাম বলোতে??
রিফাতঃ কি...কি...কি.....
সবাই ভাবতে থাকি কি মিস করলাম?
এরমধ্যেই ফ্লাইট শুরু হয়ে গেল, তখন পাইলট আমাদের মনে করায় দিলে আমরা কি মিস করছি!
" প্রিয় যাত্রী আমরা এখন নেপাল থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছি! আপনারা আপনাদের বামে তাকালে দেখতে পারবেন মাউন্ট এভারেস্ট। "
এটা শুনার পর আমরা সবাই একসাথে বলে উঠি এটাই তো মিসিং ছিল! ফ্লাইটের জানালা দিয়ে আমরা উপভোগ করলাম বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট! সবাই বড় একটা আত্মতৃপ্তি পেলাম। যাক আলহামদুলিল্লাহ আর কোনো আপসোস রইল না।
অবশেষে আমরা ফিরে আসলাম আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে
_________________________________ সমাপ্ত________________________________
( জিজেসরা নিয়ে এটা আমার প্রথম লিখা, আমি কখনো নেপালে যাইনি এই সম্পূর্ণ গল্পটাই কাল্পনিক থ্যাংকস টু অন্তিক মাহমুদ! ওনার ভিডিও দেখে আমরা গল্পটা মাথায় আসে! আর অনেক ইন্টারনেট সার্চ করে তথ্যগুলো বের করেছি! আশা করি সবার ভালো লেগেছে! পরিশেষে ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ! লিখতে যেয়ে অনেক ভুল হতেই পারে, ভুলগুলো শুধরায় দিবেন প্লিজ )
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now