বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রোবট করে হোমওয়ার্ক

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Ridiyah Ridhi (০ পয়েন্ট)

X বানপান, তুমি কি আমাকে আমার হোমওয়ার্ক করে দেবে? টিংকু বলল তার মামার রোবটটাকে। টিংকুর মামা প্রফেসর হারুন অর রশীদ টোকিওর একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস বিভাগের প্রধান। তিনি তিন মাসের জন্য ঢাকায় এসেছেন, বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগে একটা ওয়ার্কশপ পরিচালনা করবেন। জাপান সরকার এ জন্য অনেক টাকার একটা তহবিল মঞ্জুর করেছে। প্রফেসর হারুন এসে উঠেছেন তাঁর একমাত্র বোনের বাড়িতে। ধানমন্ডিতে বাড়িটা, দোতলা, সামনে সবুজ মাঠ আর আমগাছ। একটা কদমগাছও আছে। বর্ষাকালে কদম ফুল ফুটেছিল, এখন কদমের ফল ঝুলে আছে থোকা থোকা। আর কদম ফুলের পাপড়ি পচে গিয়ে একটা বিদঘুটে গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বাড়িজুড়ে। প্রফেসর হারুন লনে হাঁটেন, জোরে জোরে শ্বাস নেন, আর বলেন, আহ্, কী গন্ধ, জাপানে এই গন্ধটাই মিস করি, বুঝলে আনু। টিংকুর মা আনোয়ারা বলেন, তুমি যে কী বলো না, ভাইজান। এই পচা গন্ধের কারণেই ভাবি কদমগাছটা কেটে ফেলব। হারুন বলেন, না না, খবরদার! টিংকুর এই মামা জাপান থেকে এনেছেন একটা রোবট। এটা তিনি তাঁর জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস বিভাগের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে বানিয়েছেন। নাম দিয়েছেন বানপান। বাংলাদেশের বান আর জাপানের পান নিয়ে এই নামকরণ। রোবটটা ইংরেজি জানে না, জাপানি আর বাংলা জানে। টিংকু তো প্রথমে ভেবেছিল, মামা তার জন্য একটা খেলনা রোবট নিয়ে এসেছেন। ইস্টার্ন প্লাজার নিচতলায় টিংকু একটা রোবট দেখেছিল, সাড়ে তিন হাজার টাকা দাম, লাল-নীল আলো জ্বলে, কথা বলতে পারে আর হাততালি দিলে ডিগবাজি দিতে পারে। ক্লাস ফোরে পড়া টিংকু রোবটটা কিনতে চেয়েছিল, মা সেটা তাকে দেননি। তিনি বললেন, টিংকু, তুমি ফোরে পড়ো, এসব রোবট নিয়ে খেলার বয়স তুমি অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছ। মনে রেখো, তুমি কার ভাগনে! তোমার হারুন মামা সত্যিকারের রোবট বানিয়েছেন। মামা যেদিন তাদের বাসায় এলেন, তখন টিংকুর প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়াল রোবটটাই। টিংকুকে দেখেই রোবটটা বলল, গুড আফটার নুন, টিংকু বাবু। কেমন আছ?টিংকু বলল, এখন তো সকাল। তুমি আফটার নুন বলছ কেন? মামা বললেন, ও হো, ও তো এখনো জাপানের টাইমে চলছে। ওর টাইম ফ্রেম চেঞ্জ করতে হবে। বানপান বলল, খুব বুদ্ধিমান ছেলে। এত বুদ্ধিমান ছেলে তো সাধারণত দেখা যায় না। টিংকুর সঙ্গে বানপানের বন্ধুত্বই হয়ে গেল। মামা সারা দিন বুয়েটে থাকেন। ওয়ার্কশপ করেন। রাতে ফেরেন। আর স্কুল থেকে দুপুরবেলা ফিরেই টিংকু বানপানের সঙ্গে গল্পগুজব আরম্ভ করে। এই সময়টা আবার টিংকুর হোমওয়ার্ক করার সময়। অপরাহ্ন তিনটা। মা ঘুমিয়ে। বাইরে আমগাছে ঘুঘু ডাকছে। টিংকু বলল, বানপান, তুমি কি আমাকে আমার হোমওয়ার্ক করে দেবে? বানপান বলল, কী হোমওয়ার্ক? ধরো, অঙ্ক। কী অঙ্ক? পাটিগণিত। কেমন পাটিগণিত? একটা সমস্যা। কী সমস্যা? ১২ জন লোক একটা কাজ করে ১২ দিনে। ৬ জন লোক সেই কাজ কত দিনে করতে পারবে? সব লোকের কি কাজ করার ক্ষমতা আর সময় এক? নিশ্চয়ই। ১২ জন লোক একটা কাজ ১২ দিনে করলে একজন লোক কত দিনে করতে পারবে? এক দিনে। তা কী করে হয়। লোক কম হলে কাজ করতে সময় বেশি লাগবে। তুমি ভেবে বলো। ১৪৪ দিনে। ঠিক। তাহলে এবার ছয়জনে কত দিনে করতে পারে। ভাগ দিতে হবে। ঠিক। ভাগ দাও। তুমিই ভাগ দিতে পারো। ২৪ দিনে। ঠিক। এখন অঙ্কটা তুমি করে ফেলো। টিংকু অঙ্কটা করে ফেলল। হোমওয়ার্কে খুব ভালো করতে লাগল সে। শিক্ষক তাঁর খাতায় এক্সিলেন্ট ইত্যাদি মন্তব্য লিখে দিতে লাগলেন। কিন্তু সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষায় টিংকুর গণিত খাতা যেদিন দেওয়া হলো, সে পেল ১০০-তে ২৩। কারণ, প্রতিটি অঙ্ক টিংকু লজিক দিয়ে করার চেষ্টা করেছে। কোনোটাই শেষ করতে পারেনি। তার এগোনোর পদ্ধতি ঠিক ছিল, কিন্তু ভেবে ভেবে অঙ্ক কষতে গিয়েই সে খেল বিশাল ধরা।খাতা নিয়ে এসে সে এখন মা-বাবাকে দেখাবে কেমন করে। সে খাতা লুকিয়ে ফেলল। কিন্তু স্কুল হয়ে গেছে ডিজিটাল। মায়ের মুঠোফোনে এসএমএস এসেছে, আজ ম্যাথ পরীক্ষার কপি দেওয়া হয়ে গেছে। মা বললেন, গণিতের কপি দেখাও। দেয়নি, মা। দিয়েছে। এই যে এসএমএস। টিংকু চোরের মতো মুখ করে লুকিয়ে রাখা খাতা বের করে দিল। মা আকাশ থেকে পড়লেন। তুমি এত খারাপ করলে কেন? তুমি না হোমওয়ার্কে সব সময় বেশি বেশি মার্কস পেতে! তখন হঠাত্ করে কথা বলে উঠল বানপান। বলল, কারণ সব হোমওয়ার্ক আমি আর টিংকু মিলে করেছিলাম। মা মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলেন। মামা এলে বাড়িতে বিচার বসল। মামা বললেন, বানপান, তোমাকে কি আমি এই শিক্ষা দিইনি যে তুমি অন্যায় কিছু করবে না? দিয়েছ। তাহলে তুমি টিংকুর হোমওয়ার্ক করে দিলে কেন? আমি টিংকুর হোমওয়ার্ক করে দিইনি। সে-ই করেছে। আমি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে তার ভেতরে লজিক দাঁড় করিয়েছি। টিংকু অ্যানালাইসিস করতে পারে। প্রশ্ন করতে পারে। তাহলে সে খারাপ করল কেন? বাবা বললেন, গণিত হলো প্র্যাকটিস। কিন্তু টিংকু প্র্যাকটিস করেনি। তাই হয়তো পরীক্ষায় খারাপ করেছে। হারুন মামা সারা রাত ঘুমাতে পারলেন না। সারা বাড়ির পরিবেশ থমথমে। টিংকুর মন সবচেয়ে খারাপ। সে জানালা দিয়ে কদমগাছের দিকে তাকিয়ে আছে। বানপান বলল, টিংকু মন খারাপ কোরো না। শুনে টিংকু ভ্যা করে কেঁদে ফেলল। সকালবেলা মামা বললেন, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। টিংকু আয় তো, গণিতের এই সমস্যাটার সমাধান কর। আজ সারা দিন সময় পাবি। আমি বানপানকে নিয়ে বুয়েটে যাচ্ছি। এসে দেখব, তুই কত দূর পারলি।বিকেলে বাসায় এসে মামা অবাক। টিংকুর খাতা দেখে তিনি আনন্দে কাঁদতে লাগলেন। এই সমস্যার সমাধান তুই নিজে নিজে এত দূর পারলি। এটা তো ম্যাথ অলিম্পিয়াডে ১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের করতে দেওয়া হয়। মামা বললেন, আনু, রাজ্জাক, তোমরা ভেবো না। তোমাদের ছেলে ম্যাথমেটিকসের লজিকটা ধরে ফেলেছে, সে সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস করা শিখে ফেলেছে। ও বড় হয়ে অনেক বড় প্রোগ্রামার হবে। মামা চলে গেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন বানপানকে। রোবটটা যাওয়ার আগে বলে গেল, তোমার জন্য আমার খারাপ লাগবে। তুমি তাড়াতাড়ি জাপান চলে এসো। টিংকু বলল, আচ্ছা আসব। তাড়াতাড়িই আসব। ক্লাস এইটে থাকতেই টিংকু জাপানের সবচেয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকসে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়ে গেল। এখন বানপান আর টিংকু টোকিওতে প্রফেসর হারুন সাহেবের ফ্ল্যাটবাড়িতে একসঙ্গে থাকে। টিংকু বানপানকে কবিতা শেখাচ্ছে। এখন বৃষ্টি হলেই বানপান নাচতে থাকে: ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর নদেয় এলো বান।’ এই বান মানে আমি না, এই বান মানে বন্যা। টিংকুর তখন তাদের কদমগাছটার কথা মনে পড়ে। বৃষ্টিদিনে নিশ্চয়ই গাছে অনেক কদম ফুটেছে। এই গল্পটার লেখক আমি না


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৬৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now