বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
যেদিন ফুটবল খেলা সেদিন রুখসানা তার ফুটবল টিম নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছে। বাচ্চাগুলিকে আজকে চেনা যায় না, উজ্জ্বল লাল এবং সাদা রঙের জার্সিতে আজকে তাদেরকে আর আলাদা করে গরিব বাচ্চা বলে বোঝা যায় না। কালামকে পর্যন্ত দেখতে মনে হচ্ছে একটি সভ্যভব্য ছেলে, মেয়েদের কথা তো ছেড়েই দেয়া যাক। ফুটফুটে চেহারায় একেকটা মেয়েকে মনে হচ্ছে বুঝি ফুলপরী।
সরকারি স্কুলের ফুটবল টিমের কোচ পথচারী স্কুলের টিম দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। তোতলাতে তোতলাতে বললেন, “এই মে-মে-মে-মেয়েরা খেলবে?”
রুখসানা মিষ্টি করে হেসে বলল, “হ্যাঁ।”
“এরা খে-খে-খে-খেলতে পারে?” রুখসানা আরও মিষ্টি করে হেসে বলল, “পারে।”
সরকারি স্কুলের ফুটবলের শিক্ষক এতক্ষণে নিজকে সামলে নিয়েছেন, চোখমুখ লাল করে বললেন, “এটা কোন ধরনের ফাজলেমি?”
“কেন, কী হয়েছে?”
“আমি আপনাদের স্কুলের খেলার টিচারের সাথে কথা বলতে চাই।”
রুখসানা তখনও চেষ্টা করে মুখে হাসি ধরে রেখে বলল, “আমিই খেলার টিচার।”
“আপনি? আপনি একজন মেয়েমানুষ।”
এবারে রুখসানার মুখ থেকে হাসি খানিকটা মুছে গেল, বলল, “তাতে কোনো সমস্যা আছে?”
“অবশ্যই আছে।” মানুষটি এবারে রেগেমেগে বলল, “মেয়েমানুষের জায়গা মাঠে-ঘাটে-ফুটবল ফিল্ডে না। মেয়েমানুষের জায়গা পাকঘরে। মেয়েমানুষ স্বামীর খেদমত করবে আর ঘর-সংসার করবে।”
রুখসানার মুখে যেটুকু হাসি ছিল এবারে সেটাও মুছে গেল। শক্তমুখ করে বলল, “যদি মেয়েরা অন্য কিছু করে তা হলে কী হয়?”
“কী হয় তো দেখতেই পাচ্ছেন–” লোকটা চিৎকার করে কথা বলার সময় খানিকটা থুতু বের হয়ে এল, সেই অবস্থাতেই বলল, “তা হলে মেয়েরা গোল্লায় যায়! আর তার দেখাদেখি আর অন্য দশটা মেয়ের মাথা খাওয়া হয়–আপনি যে রকম খাচ্ছেন!”
রুখসানার মুখ হঠাৎ একেবারে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল, কিন্তু সে গলা খুব ঠাণ্ডা রেখে বলল, “এবারে আমার কী মনে হয় শুনবেন?”
লোকটি থতমত খেয়ে বলল, কী মনে হয়?”
“যে-মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধি চিন্তাভাবনা আপনার মতো তার জায়গা হচ্ছে নর্দমা!” লোকটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “কী বললেন?”
“আমার কথা বিশ্বাস হল না? এই দেখেন–” বলে কিছু বোঝার আগে রুখসানা এগিয়ে এসে মানুষটাকে ধরে কীভাবে কীভাবে জানি শূন্যে ছুঁড়ে দিল এবং সবাই অবাক হয়ে দেখল মানুষটা শূন্যে উড়ে গিয়ে কাছাকাছি একটা নর্দমাতে গিয়ে পড়ল। নর্দমার ময়লা কাদা ছিটকে এসে লোকটার চোখেমুখে লেগে তাকে দেখাতে থাকে একটি ভয়ের সিনেমার ভূতের মতো। লোকটার খানিকক্ষণ লাগল বুঝতে কী হয়েছে, যখন বুঝতে পারল তখন হাঁসফাঁস করে নর্দমা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে থাকে। রুখসানা কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “মেয়েদের নিয়ে আবার যদি আজেবাজে কথা বলেন তা হলে পরের বার আপনাকে স্ট্রেচারে করে নিতে হবে।”
কালাম কাছেই দাঁড়িয়েছিল, তার মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। মাথা নেড়ে বলল, “আমাদের আপার সাথে তেড়িবেড়ি করা ঠিক না। বন্দুক পিস্তল যেরকম লাইসেন্স করতে হয় আপার দুইটা হাতও সেইরকম লাইসেন্স করা আছে।”
সরকারি স্কুলের ফুটবল শিক্ষকের সাথে রুখসানার ছোট ঘটনার খবরটা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে এবং তার ফল হয় ম্যাজিকের মতো। খেলার কর্মকর্তা যারা ছিল সবাই ভান করতে থাকে ফুটবল টিমে মেয়েদের নিয়ে খেলতে আসা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিছুক্ষণেই মাঠে খেলোয়াড়রা নেমে যায় এবং মাঠের চারপাশে ভিড় জমে ওঠে। পথচারী স্কুলের ছাত্রছাত্রী শিক্ষকেরাও খেলা দেখতে এসেছে–সবাই মাঠের এক পাশে বসেছে। মার্থা রোজারিও তাঁর ওষুধপত্রের বাক্স নিয়ে এসেছেন, চুনু মিয়ার হাতে পানির বোতল এবং লেবুর টুকরা।
খেলা শুরু হল এবং মাঠের চারপাশের মানুষেরা অবাক হয়ে দেখল আট নয় বছরের ফুটফুটে মেয়েরা কী চমৎকার সাবলীলভাবে পায়ে বল নিয়ে ছুটে যাচ্ছে এবং গোলপোস্টের কাছে গিয়ে লম্বা কিক দিয়ে গোল করার চেষ্টা করছে। তাদের দলের ছেলেদের থেকে তারা এতটুকু খারাপ খেলছে না। শক্তসমর্থ তেজি মেয়ে, ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েও তারা পড়ে থাকছে না, স্প্রিংয়ের পুতুলের মতো আবার লাফিয়ে উঠছে।
খেলা খুব জমে উঠল। সরকারি স্কুলের ছেলেরা অনেকদিন থেকে ফুটবল খেলছে, তার তুলনায় পথচারী স্কুল নতুন। কিন্তু পথচারী স্কুলের ছেলেমেয়েদের উৎসাহ অনেক বেশি, তারা মরণপণ করে খেলছে। তাদের উৎসাহ দিচ্ছে স্কুলের সব কয়জন শিক্ষক–সব কয়জন ছাত্রছাত্রী! মির্জা মাস্টার তার বিশাল শরীর নিয়ে চিৎকার করছেন এবং মাঠের বেশিরভাগ মানুষ খেলা না দেখে তাকে চিৎকার করছে দেখছে। বল যখন পথচারী স্কুলের ছেলেমেয়েদের পা থেকে সরকারি স্কুলের ছেলেদের পায়ে চলে যায় তখন মির্জা মাস্টার ধপ করে একটা চেয়ারে বসে গিয়ে মুখ হাঁ করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকেন–তখন চিৎকার শুরু করে সরকারি স্কুলের ছেলেরা। প্রথম গোলটি হল দশ মিনিটের মাথায়। সরকারি স্কুলের সেন্টার ফরোয়ার্ডের পা থেকে বল কেড়ে নিল কালাম, পাস করে দিল তেজি মেয়েটিকে, সে মাঠের একপ্রান্ত থেকে একেবারে অন্যপ্রান্তে বল নিয়ে ছুটে গেল, হাফব্যাককে পাশ কাটিয়ে গোলপোস্টের কাছাকাছি এসে একটা টানা কিক। বলটা সোজা গোলপোস্টে ঢুকে গেল এবং সাথে সাথে মাঠের অসংখ্য মানুষ চিৎকার করে ওঠে–’ গো-ও-ও-ও-ও ল’! মির্জা মাস্টার তাঁর বিশাল দেহ নিয়ে থপথপ করে খানিকক্ষণ দৌড়ে বেড়ালেন এবং তাঁর সাথে যোগ দিল আরও অনেক বাচ্চা-কাচ্চা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now