বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কালাচিতায় ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। চারদিক এত নির্জন যে কেউ কথা বলে সেটা ভাঙবে সাহস পাচ্ছিল না। কেন জানি ফিসফিস করে কথা বলছিল সবাই। একটু একটু বাতাস। তারিক সাবধানে মোমবাতি জ্বালাতে যাচ্ছিল, হঠাৎ দীপু খপ করে তারিকের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, সাবধান–
কী?
চুপ একেবারে চুপ সবাই, একটা কথাও না।
সবাই চমকে উঠে কাছাকাছি সরে আসে। অন্ধকারে নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। ভয়-পাওয়া গলায় দীপু বলল, ঐদিকে তাকিয়ে দেখ।
সবাই তাকিয়ে দেখল, কালাচিতার ইটের ফাঁক দিয়ে খুব সরু একটা আলোর। ফলা বেরিয়ে আসছে। ভেতরে কে যেন আছে!
সবাই ভয়ে কুঁকড়ে গেল। বাবু কঁপা-কাঁপা গলায় বলল, চল ফিরে যাই। আমার ভয় করছে।
রতন প্রায় কেঁদে দিয়ে ভাঙা গলায় কী বলল কেউ বুঝতে পারল না।
তারিক ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল, চুপ একটা কথাও না। তারপর আস্তে আস্তে বলল, আমার গুপ্তধন চুরি করতে এসেছে কেউ, হারামজাদার মাথা গুঁড়ো করে ফেলব না।
তার পরেই পকেট থেকে চাকু বের করে সে খুলে ফেলল।
মাথা গরম করিস না, তারিক। কতজন আছে তুই কেমন করে জানিস?
আমি দেখে আসি।
না-না-না—বাবু প্রায় কেঁদে দিল।
ফ্যাচফ্যাচ করিস না-তারিক সত্যি সত্যি রওনা দেয়।
দাঁড়া তারিক, দীপু ওকে থামানোর চেষ্টা করল। হঠাৎ করে কিছু করিস না। আজকেই আব্বা বলছিলেন এসব ব্যাপারে চুরি করার জন্যে অনেক বড় বড় দল থাকে। মানুষ টানুষ খুন করে ফেলে এরা।
তারিক ভয় পাবার ছেলে নয়। বলল, আমি খুব সাবধানে যাব, দেখে আসি ব্যাপারটা কী। তোরা এখানে দাঁড়া, আমি যাব আর আসব।
সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, তারিক অন্ধকারে মিশে গেল ওদের সামনে।
অপেক্ষা করা খুব খারাপ ব্যাপার, ওরা প্রায় অধৈর্য হয়ে উঠেছিল, ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ প্রচন্ড চিৎকার আর হুটোপুটি শুনতে পেল। এক সেকেন্ডের জন্যে একটা চলাইট জ্বলে উঠে নিভে গেল, আর তারা সবাই দেখতে পেল কালোমতো একটা লোক তারিককে জাপটে ধরে ফেলেছে।
উঠে দৌড় মারার প্রবল ইচ্ছেটাকে জোর করে চেপে রেখে দীপু সবাইকে নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইল। বুক ধক্ করে এত জোরে শব্দ করতে লাগল যে মনে হল শব্দ শুনে বুঝি ওদেরও ধরতে লোকজন চলে আসবে।
মিনিট কয়েক লাগল ওদের ঠাণ্ডা হতে। দীপু ফিসফিস করে বলল, খুব সাবধানে একজন একজন করে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়। খবরদার, একটুও শব্দ করবি না।
সবাই মিলে জঙ্গলের অনেক ভেতরে গিয়ে একত্র হতে বেশিক্ষণ লাগল না। ভয়ে সবার মুখ শুকিয়ে গেছে। নান্টু ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে শুরু করল অভ্যাসমতো। বাবু ভাঙা গলায় বলল, তারিককে মেরে ফেলেনি তো?
ভয়টা দীপুরও হচ্ছিল, কিন্তু দূর করে দিল জোর করে। বলল, আরে ধেৎ!
তুইই না বললি, এরা মানুষ খুন করে ফেলে—
তাই বলে তারিককে কেন মারতে যাবে!
তা হলে ওরকম শব্দ হল কেন? নিশ্চয়ই চাকুটাকু মেরেছে।
দূর। হঠাৎ করে ধরেছে তাই চমকে উঠে ওরকম চিৎকার করেছে।
বলেছে তোকে! কী ঝামেলায় পড়লাম। তোর সাথে আসাই উচিত হয়নি।
রাগে দুপুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল, কার কার মনে হচ্ছে আমার সাথে আসা উচিত হয়নি।
সবাই চুপ করে রইল। নান্টু শুধু গজগজ করে কী জানি বলল, কেউ বুঝতে পারল না।
তারিক কী বিপদে পড়েছে কিছু জানি না। বেঁচে আছে না মেরে ফেলেছে সেটা পর্যন্ত জানি না, আর তুই তোর নিজের কথা ভাবছিস? লজ্জা করে না!
ঠিক আছে, দীপু ঠান্ডা গলায় নান্টুকে বলল, তারিককে কীভাবে ছুটিয়ে আনব সেটা আমরা ঠিক করব। তুই বাসায় চলে যা—গিয়ে তোর আম্মার সাথে লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখ গিয়ে। যা–
নান্টু লজ্জায় লাল হয়ে বলল, আমি কি তাই বললাম নাকি? আমি বলছিলাম…
দীপু বাধা দিয়ে বলল, ওসব আমি বুঝি না। তারিককে ছুটিয়ে আনার জন্যে এখানে থাকবি, না বাসায় যাবি?
এখানে থাকব।
গুড।
দীপু খানিকক্ষণ ভুরু কুঁচকে বলল, কী হচ্ছে না হচ্ছে জানার আগে আমরা কিছুই করতে পারব না।
জানবি কেমন করে?
কারও যাওয়ার দরকার। তোরা তো চিনিস ন জায়গাটা আমি ভাল করে চিনি।
আমি যাই।
না-না-না-না–সবাই একসাথে বাধা দিল।
মিঠু বলল, তারিক তো তা-ই করতে গিয়ে বিপদে পড়ল।
কিন্তু কিছুই যদি না জানি তা হলে করব কী?
বোঝাই যাচ্ছে কেউ এসেছে মূর্তি চুরি করতে।
কতজন এসেছে তুই কেমন করে জানিস?
সাজ্জাদ বলল, পুলিশকে গিয়ে খবর দিলেই হয়।
কী বলবি তুই পুলিশকে?
দীপু বলল, সেটা জানার জন্যেই তো যাওয়া দরকার। কারা আছে কতজন আছে না জানলে পুলিশকে কী বলবি?
বাবু মাথা নেড়ে বলল, কী দরকার? তারিক বিপদে পড়েছে। এখন তাকে বাঁচানোর জন্যে আরেকজনের বিপদে পড়ার কোনো মানে নাই।
তার মানে তারিককে বাঁচানোর চেষ্টা করব না? আর বিপদে পড়ব সেটা কে বলল, তারিক জানত না বাইরে কেউ আছে। তাই সোজা হেঁটে গিয়েছিল, আমি সাবধানে যাব।
কিন্তু–
এর মাঝে আর কোনো কিন্তু নেই। দীপু গম্ভীর হয়ে আব্বার মুখে অনেকবার শোনা কথাটা বলল, যেটা করা দরকার সেটা করে ফেলতে হয়। আমি যাচ্ছি–ধরা পড়ব না, ভয় পাস না। খোদা না করুক যদি ধরা পড়ে যাই—দু’জন কিংবা সবাই চলে গিয়ে পুলিশকে খবর দিবি। আর যদি ধরা না পড়ি ফিরে এসে একটা কিছু করা যাবে।
দীপু তার সাদা শার্টটা পালটে নান্টুর গায়ের সবুজ রঙের শার্টটা পরে নিল, তা হলে দূর থেকে দেখা যাবে না। রওনা দেবার আগে বলল, আমার আসতে একটু দেরি হতে পারে, কেউ ভয় পাস নে।
সাজ্জাদ বলল, দাঁড়া একটু—দীপু দাঁড়াল। সাজ্জাদ তিনবার কুলহু আল্লাহ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দিল, যা, কোনো ভয় নেই!
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now