বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
হিয়ার মাঝে
সানিয়াত আহমেদ আবির
পর্ব - ১৩/১৪
(পূর্ব প্রকাশের পর....দেড়ি করে গল্পটা দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত! অফিসিয়াল কাজে একটু ব্যাস্ত তম সময় পার করছি।)
প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা পর অপারেশন সম্পন্ন হলো! পৌষী কেবিনে সিজদায় পড়ে ছিলো। থেকে থেকে কান্নার দমকে ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। রাজ কেবিনে ঢুকে ওকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে ওর মাথায় আলতো হাত রাখলে পৌষী ধীরে ধীরে উঠে বসলো। ওর নাকের ডগা আর চোখগুলো লাল হয়ে আছে।
রাজ মৃদু স্বরে বলল-
-"অপারেশন শেষ হয়েছে! ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছে! উনি জানিয়েছেন অপারেশন ভালো হয়েছে! ফুপিকে আগামী বাহাত্তর ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হবে! পৌষী নিরবে তা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
-"এখন দেখা করা যাবে?"
-"না...সম্ভবত আরো পরে তবে ভেতরে যেতে দেবেনা,গ্লাসের বাইরে থেকে দেখতে হবে!"
রাজ পৌষীর পাশে হাঁটুগেড়ে বসেছিলো!পৌষী ওর কাঁধে মাথা ঠেকালো!
তার পরের দুটো দিন কাটলো উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে। তৃতীয় দিন সাহেদাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হলো!
পৌষী আর রাজ অতন্দ্র প্রহরীর মতো সাহেদাকে পাহাড়া দিতে লাগলো।
অপারেশনের কারনে রাজ গত কয়েকদিন অফিসে যায়নি।
এর মাঝে আমজাদ চৌধুরীও এসে বোনকে দেখে গেলেন!
দিন পনের পরে সাহেদাকে বাসায় আনা করা হলো কিন্তু প্রচুর নিয়ম আর রেস্ট্রিকশন বেঁধে দিয়েছে ডাক্তার। এরি মধ্যে বাসায় ফিরে শুনল আগামী কাল মামী ফিরবেন!
পৌষীর মনের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা।
মায়ের চিন্তা কমেছে এখন আবার নতুন চিন্তা, মামী সব শুনলে কি বলবে!
এদিকে বিকেলে রাজ ফোন দিয়ে জানালো তার ফিরতে আজ রাত হবে কারন কোম্পানীতে কি একটা গন্ডগোল দেখা দিয়েছে যার জন্য বাবাকে রাতেই ইটালী যেতে হবে। যেহেতু বাবার সাথেই তাদের ডিলিংস হয়েছে তাই এই প্রতিকূল পরিস্থিতি তিনি ছাড়া আর কেউ সামাল দিতে পারবেনা। আর কারো কথা বায়ার কোম্পানীগুলো মানবেও না। তারা ওউনারের এসিওরিটি চায়!
তাই আমজাদ চৌধুরীকে তড়িঘড়ি করে রাতের ফ্লাইটেই রওনা দিতে হলো!
সব শুনে পৌষীর দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। মামা না থাকলে মামীকে এসব বলবে কে আর পরিস্থিতি সামলাবে কে?
রাতে খাবার টেবিলে কথাটা রাজের সাথে শেয়ার করলো পৌষী। রাজ বলল-
-"বাবা ফিরে আসুন,তখনই মা'কে জানানো হবে! এখন তাড়াহুড়ো করে লাভ নেই!তাছাড়া ফুপি অসুস্থ, বাড়ীতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হওয়াই ভালো!"
পৌষী নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল! রাজ ওর হাত ধরে বলল-"এতো ভেবোনা তো,যাক না কটা দিন। অন্য সময় হলে আমি নিজেই বলতাম এবং জেদ দেখিয়ে ঠিকই নিজের কাজ আদায় করে নিতাম। কিন্তু যেদিন থেকে আল্লাহর হুকুমগুলো মেনে চলার চেষ্টা করছি,ইসলামের বিধিবিধানের ওপর আমল করার চেষ্টা করেছি সেদিন থেকে মায়ের সঙ্গে কারনে বা অকারনে রাগ জেদ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি। কারন মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেস্ত। তাই আমার পক্ষে এখন আর মা'কে কষ্ট দিয়ে কিছু বলা সম্ভব না!
-"না...ঠিকআছে। বলা উচিতও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ এর মধ্যেই আমাদের কল্যান রেখেছেন!"পৌষীও সায় দিলো!
আজই রানীরা এসে পৌঁছেছেন। ইরা আর তার স্বামী এয়ারপোর্ট থেকেই তাদের উত্তরা মডেল টাউনের বাড়ীতে চলে গেছে! রানী ফিরে সাহেদার কথা শুনে এক ঝলকে এসে দেখে নিজের রুমে চলে গেলেন!
গোসল সেরে সেই যে ঘুম দিলেন একেবারে বেলা পার করে উঠলেন।
পৌষী সব রান্না বান্না করেই রেখেছিলো!
খাবার টেবিলে রানী বেশ আগ্রহের সাথে সেদেশের গল্প করছিলেন। তাঁকে কিছু একটা ব্যাপারে খুব এক্সাইটেড মনে হলো!
উনি সংক্ষেপে জানালেন যে মীরার জন্য খুব ভালো একটা প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। ছেলে ইরার স্বামীরই বন্ধু! মীরার পরিবার রাজী হলে ওরা কথা আগে বাড়াতে ইচ্ছুক। রাণী তো মহাখুশী মনমতো সমন্ধ পেয়ে যাওয়াতে!
পৌষী চুপচাপ তার আগ্রহভরা গল্পগুলো শুনছিলো! রানী বলছিলেন-
-"বুঝলি পৌষী,মীরার বিয়েটা হয়ে গেলে তোর জন্য একটা ভালো দ্বীনদার ছেলে দেখে তোর বিয়েটাও দিয়ে দেবো!
পৌষীর বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো এ কথায়।নীরা পাশেই খাচ্ছিলো। ও খাওয়া বন্ধ করে পৌষীর দিকে তাকালো। পৌষী নিরবে মাথা নাড়লো কিছু না বলার জন্য। রানী বলে চলছেন-"ছেলে অবশ্য আমার হাতে আছে কিন্তু দ্বীনদার না। তুই তো আবার দ্বীনদার ছাড়া বিয়ে করবি না!"
নীরা প্রসঙ্গ বদলাতে বলল-"ইরা আপু যে তোমাকে জোর করে নিয়ে গেলো,সমস্যাটা কি ছিলো তা তো বললেনা!"
রানীর চেহারা খানিকটা ম্লান হলো-
-"কি জানি বাপু,মেয়েটা এতো ভালো ঘর পেয়েছে,এতো ভালো বর পেয়েছে, একটু মানিয়ে চলবে কি,তা না...সে বরের সাথে পার্টিতে যাবে না! ওর জামাই আবার খুব সৌখিন বুঝলি পৌষী,ও চায় আমার বউ সব জায়গায় যাবে,সবার সাথে মিশবে কিন্তু আমার মেয়েটা হয়েছে আরেক খ্যাত। তোর মতো ঘরকুনো হতে চায়!"
-"কিন্তু মামী,ইরা আপাতো এমন ছিলোনা,কেন হঠাৎ এমন করছে আপনি জানতে চেয়েছিলেন?"পৌষী বাধ্য হয়েই বললো কারন ওর কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না!"
-"না...জিজ্ঞেস তো করিনি,দেখি মিরার বিয়েতে তো কয়েকদিন এসে থাকবে তখন জিজ্ঞেস করবো। তোরাও জিজ্ঞেস করতে পারিস। যদি তোদের বলে...!"
বাড়ীতে হঠাৎ করেই উৎসবের ঢেউ জ্গলো যেন। মীরার হবু বর নাকি আগামী পনের দিন পরেই অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে,তাই সে বিয়ে করে বউ নিয়ে যেতে চায়। তার সব কাগজপত্র করা আছে। তাই রানী তোড়জোড় শুরু করেছেন। এমন পাত্র হাতছাড়া করা যাবেনা।
গতকালি মীরাকে এসে পাত্রপক্ষ এসে দেখে গেছে! আগামী সপ্তাহেই বিয়ে করাতে চায় ওরা। রানীর যেন মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। আমজাদ চৌধুরীকে ফোনে সব জানালে তিনি এ মুহূর্তে ফিরতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তার ফিরতে আরো হপ্তাখানেক লাগতে পারে!
রানী নিজের মতো করে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাহেদা আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। ঘরের ভেতরেই আস্তে ধীরে হাটাহাটি করেন তিনি। রাজ এখন পুরোদমে অফিস সামলাচ্ছে। বেচারা ফিরতে ফিরতে আজকাল রাত হয়ে যায়। পৌষী কান পেতে থাকে। ওর গাড়ীর হর্ণ শুনলেই সে খাবার দাবার গরম করতে লেগে যায়। সব টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে সরে যায়। যদিও রানী মেয়ের বিয়ের ঝামেলায় এদিকটায় তেমন মনোযোগ দিতে পারছেন না। বেশীরভাগই পৌষীকে খাবার দিতে বলেন। তবু পৌষী সতর্ক থাকে! ওদের কোনো আচরণে যেন রানীর মনে সন্দেহ না জাগে।
আজ রাজ গম্ভীর মুখে খেতে বসলো! পৌষী দেখলো গালে গত কয়েকদিনের না কামানো দাঁড়ি! পৌষী পানি ঢেলে সামনে দিয়ে বলল-"দাঁড়িতে তো ভালোই দেখাচ্ছে,রেখে দিন না! নামাজ যখন ধরেছেন দাঁড়িটাও তো রাখলে পারেন!"
রাজ কটমটিয়ে ওর দিকে তাকালো! পৌষী মিষ্টি হেসে ওর মন গলানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তাতে পাথর গললোনা!
মৃদু স্বরে বলল-"কি হলো আপনার,এতো রাগ কিসের জন্য?"
-"জানেন না আপনি তাই না?"
পৌষী হাসি চাপলো। আসলেই মায়ের অপারেশন থেকে শুরু করে মামী আসার কারনে গত বেশ কয়েকটা দিন ও রাজ থেকে দুরে দুরেই থেকেছে! বললো-
-"আচ্ছা,এখন খেয়ে নিন!"
রাজ শার্টের হাতা গুটিয়ে ভাতে হাত দিয়ে বলল
-"মানুষকে এভাবে কষ্ট দেয়া ঠিক না! পৌষী নাক কুঁচকে ভেঙ্গচালো ওকে! রাজ ভাত রেখে তেড়ে এলো-"
-"কি হলো ভেঙ্গালে কেন?"
পৌষী ভয় পেয়ে চারিদিকে তাকিয়ে রাজের বুকে মৃদু ধাক্কা দিলো-
-"ইয়া আল্লাহ! কি শুরু করেছেন,কেউ দেখে ফেলবে তো!"
-"দেখে ফেললেই ভালো! এই রোজকার যন্ত্রনা আর ভাল্লাগেনা। নিজের বৌয়ের সাথে চোরের মতো দেখা করতে ভালো লাগেনা। আজ কদিন তোমায় কিস করিনি হিসেব আছে?"
-"ইস্....চুপ!"
-"রাখো তোমার চুপ আর চাপ!"
বলে পৌষীকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে মুখটা নামিয়ে আনলো তখনি রাহেলার গলার শব্দ পেয়ে পৌষী ছটফটিয়ে উঠে রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো!
রাজ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাম হাতে নিজের কপাল চাপড়ালো!
আজ মীরার গায়ে হলুদ দেয়া হবে।এরিমধ্যে বাড়ী সাজানো হয়েছে। বিকেল থেকেই অতিথিরা আসতে শুরু করেছে। পৌষী সাধারনত এসব অনুষ্ঠান এভয়েড করে চলে। এতে গায়ে হলুদের নামে নারী পুরুষে খোলামেলা মেলামেশা ছাড়া আর কিছুই হয়না। তবু রাজের অনুরোধে ওরই গিফট করা একটা কলাপাতা রঙের শাড়ী পড়লো সে। কলাপাতা রঙা শাল,একই রঙের হিজাব। কেবল ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক ছুঁইয়েছে!
রাজ দুর থেকেই ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পৌষী মুখ নামিয়ে ফেললো।
এমন সময় একটা মেয়ে এসে চিৎকার দিয়ে উঠল
-"হাই রাজ ও মাই সুইট হার্ট..!"
পৌষী চমকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি দুহাত বাড়ীয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে আর রাজ ফ্যাকাসে দৃষ্টিতে একবার পৌষী দিকে আরেকবার ঐ মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। পৌষীর মুখ বেশ গম্ভীর হয়ে উঠলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় রাজ বেশ হকচকিয়ে গেছে! আজ এতদিন পর নিকিতার সাথে এই পরিবেশে দেখা হয়ে যাবে! আর নিকিতা ওকে এভাবে সবার সামনে বিশেষ করে পৌষীর সামনে ডেকে উঠবে রাজ ধারনা করতে পারেনি। রাজ দুর থেকেই হাত তুলে নিকিতাকে থামতে বলে ঘর দেখিয়ে দেয়-"
ঐ যে,ঐদিকে সব মেয়েরা!" বলে নিকিতার বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজ পৌষীর দিকে তাকালো কিন্তু দেখলো পৌষী সেখানে নেই। রাজ দ্রুত ছুটলো পৌষীর খোঁজে!
(নিকিতার পরিচয়টা একটু দেয়া দরকার।নিকিতা হলো রাজের ছোট খালার মেয়ে,গত কয়েক বছর ধরেই ওরা আমেরিকায় থাকে! সম্ভবত এবার উইন্টারে ওরা দেশে এসেছে তাই মীরার বিয়েতে আসতে পেরেছে! কারন ইরার বিয়ের সময় ওরা কেউই আসতে পারেনি!
নিকিতা সেই মেয়ে যে ছিলো রাজের যৌবনোদ্দীপনার প্রথম সবক! রাজ তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। নিকিতা ও তাই। দুজন প্রায় সমবয়সী! নিকিতার জন্মদিনে ওর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে জীবনে প্রথমবার বিয়ার খেয়েছিলো রাজ। আর জীবনের সসবচে বড় ভুলটাও সেদিনই ওর দ্বারা ঘটে গিয়েছিলো!
সেরাতে নিকিতাই ওকে আটকে ছিলো বাড়ী ফিরতে দেয়নি। সেটাই ছিলো রাজের প্রথম দুর্ঘটনা! রাজ কখনো শারিরীক সুচিতা-পবিত্রতা, জেনা বা তার গুনাহ কোনোটাই জানতো না। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা বুঝিয়েছিলো,মেয়ে মানেই উপোভোগের বস্তু! নারীদেরকে নাকি সৃষ্টিই করা হয়েছে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য।
((এই একই কথা বর্তমানে একদল মানুষ রূপী শেয়ালের দল অন্য অর্থে ব্যবহার করে।)) পর্দাবৃতা বোরকা পড়া কোনো নারীকে দেখলে তারা বলে সে বেচারী স্বামীর দাসী,অবরোধবাসিনী,স্বামীর মনোরঞ্জন করা আর সন্তান জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যেই তাদের পর্দা করে বাড়ীতে আটকে রাখা হয়। এই কথা বলে বলে তারা বর্তমানের কচি কচি মেয়েদের মাথায় আধুনিকতা আর স্বাধীনতার ভুত চাপিয়ে দিয়েছে! তাদেরকে ঘর থেকে বের করে এনেছে!
আজকের আধুনিকাদেরকে শত শত পুরুষরা নিজেদের ভোগের পন্য বানিয়ে রেখেছে! সাজিয়ে গুজিয়ে অনলাইন লাইভ, অফিস,দদোকান পাট, মমলগুলোতে বসিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাড়াচ্ছে আর মুখে বলছে তুমি স্বাধীন তাই কাপড় খুলে বাড়ীতে রেখে বাইরে বেরোও এ দুনিয়া তোমার!
এটা না বললে ঐ চাটার দলেরা মেয়েদের দেখবে কিভাবে? বোকা মেয়েগুলোও সেটাকেই বেদ বাক্যের মতো মেনে নিয়ে নিজেদের নারীত্বকে বিলীন করে দিচ্ছে। আজ তারা স্বামীর কাজ করাকে দাসত্ব মনে করে অথচ সামান্য বেতনের বিনিময়ে বসের দাসত্ব করা,পথ চলতে লোভী পুরুষের চোখের খোরাক হওয়া কিংবা বাসে ট্রেনে কামুক পুরুষের হাতের আর কনুইয়ের খোঁচা খাওয়াকে জীবনের স্বাভাবিক অংশ বলে মেনে নিয়েছে! তারা এয়ার হোস্টেস হয়ে সেজেগুজে চারশো পুরুষের ট্রে বয়ে বেড়ানোকে সম্মানের মনে করে, কিন্তু সেজেগুজে স্বামীর দৃষ্টিনন্দিনী হয়ে তার ভাত বেড়ে দিয়ে পাশে বসে থাকাটাকে অমর্যাদার মনে করে!
কে কাকে বোঝাবে এসব কথা?
মেয়ে গুলোতো এটা ও বোঝেনা যে,শত শত পুরুষের লোভের খোরাক হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বামীর দাসত্ব মেনে তার অধীনে রানীর মতো জীবনযাপন করে মরে যাওয়া অনেক ভালো!
পৌষি কে কোথাও খুঁজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে মায়ের রুমে এলো রাজ!
ওকে দেখে পৌষী মুখ নামিয়ে নিয়েছে। রানী ওকে কি একটা কাজ দিয়েছেন ও মনোযোগ দিয়ে সেটাই করছে।
রাজকে দেখে রানী বিরক্ত হয়ে বললেন
-"এ কি রে তুই শেভ করিসনি এখনো? কি জঙ্গল বানিয়ে রেখেছিস মুখটাকে?
রাজ দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলল
-"দাঁড়ী আর ফেলবো না! রেখে দেবো ভাবছি!"
-"হায় আল্লাহ! এই ভূত আবার মাথায় কবে চাপলো? রাখবি রাখ,কিন্তু এখনকার ছেলেরা যেমন ছেটেকেটে স্টাইলিস করে রাখে সেরকম করে আয়!"
-"নাহ্,এটা আমার ফেভারিট হিরোর স্টাইল দাঁড়ীতে হাত না লাগানো!"
-"এটা আবার কোন হিরো?"
-"দ্যা ওয়ান এন্ড ওনলি রাসুল সাঃ! হি ইজ মাই হিরো! তিনি দাঁড়ীতে হাত লাগাতে নিষেধ করেছেন!"রাজ হাসলো!
রাণী বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন-"কি জানি বাবা,তোর আজব কথাবার্তা আমি বুঝিনা!"
রানী বেরিয়ে যাবার পর পৌষী একা পড়ে গেলে সেও দ্রুত সেখান থেকে বেরোতে গেলে রাজ দ্রুত দরোজা আগলে দাঁড়ায়!
-"কি হলো!পালাচ্ছো যে?"
-"সরুন কেউ এসে পড়বে!"
-"আসুক! তুমি আমাকে ভুল বুঝে চলে যাবে আর আমি তোমার ভুল ভাঙ্গাবো না?"
-"মেয়েটা কে? আপনার সাথে এভাবে কথা বললো কেন?
রাজ কিছুটা ইতস্তত করে বলল-"ও আমার কাজিন। দেশের বাইরে থাকে! একসময় বন্ধুর মতো মিশতাম। সেই সুবাদেই!"
-"ওর কথার ধরন আমার ভালো লাগেনি!"পৌষী দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রাজ ওর হাত ধরে বলল
-"পৌষী,আমার অতীত জীবনটা অন্ধকার ছিলো! সবটা আমি তোমায় বলতে পারবোনা। মহান আল্লাহ আমাকে তোমার মাধ্যমে আলোর পথ দেখিয়েছেন। আজ বিগত দিনের ভুলগুলো যদি কখনো আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, তুমি কি আমাকে সেই অন্ধকারে ঠেলে দেবে?"
পৌষী মুখ নামিয়ে রাখলো! রাজ ওর মুখখানি দুহাতে তুলে ধরে বলল-
-"প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়োনা!স্রেফ মরে যাবো,বিশ্বাস করো! তোমাকে ছাড়া আমার এ জীবন মরুভূমি!"
পৌষী রাজের দুহাত সরিয়ে দিতে চাইলো!
-"আচ্ছা, ছাড়ুন,কেউ এসে পড়বে!"
-"ছাড়বো, তার আগে কথা দাও আমার উপর রাগ করবেনা! কখনো যদি তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরী হয় আমাকে কৈফিয়ত দেবার সুযোগটুকু দিও!"
পৌষী রাজের হাত ছাড়াতে চাইলো!
-"আচ্ছা,ছাড়ুন না...!"
-"ছাড়বো, আগে হাসো একটু!"
পৌষী মুখ নিচু করে সামান্য হাসলো!রাজের কাছে ওকে অপুর্ব লাগলো। রাজ ওর মুখ উচু করে ধরে ওর থুতনীতে ছোট্ট চুমু খেলো! পৌষী বাধা দেবার জন্য মুখ খুলেছিলো কিন্তু ততক্ষণে রাজ তার অধরোষ্ঠ বীরদর্পে দখল করে ফেলেছে!
কিছুক্ষণ পর বাইরে হৈ চৈ এর শব্দ শুনে পৌষী মৃদু ধাক্কা দিলো রাজকে! তারপর দ্রুত সেখান থেকে বেরোতে গিয়ে বাধা পেলো। রাজ ওর শাল ধরে রেখেছে। পৌষী টান মেরে শালটা টেনে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেলো!
গায়ে হলুদ শেষ হতে হতে রাত বারোটা বেজে গেলো! নিকিতা রাতে রয়ে গেলো এ বাড়ীতে। রাতে মেকাপ মুছে জামা বদলে নিচে ডাইনিং হলে যাবার পথে পৌষীদের রুমটাতে উঁকি দিলো! তারপর পৌষীকে দেখে বলল -"আসতে পারি?"
-"জ্বী,আসুন!"
পৌষী নিজেও শাড়ী বদলে ঘরোয়া থ্রিপীস পড়েছে! নিকিতা ঘুমন্ত সাহেদাকে দেখে বললো-"উনি কি অসুস্থ?"
-"জ্বী,গত মাসে ওপেন হার্ট সার্জারী হয়েছে!"
-"ও..মাই গাড..!"
-"বসুন না আপনি তো রাজের খালাতো বোন তাইনা?"
-"ইয়েপ...রাজ আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। বাট নাউ রাজ হ্যাজ আ লট অফ চেঞ্জেস! আমার সাথে ঠিকমতো কথাও বললোনা জানেন?"
পৌষী মৃদু হাসলো!
নিকিতা বলল-"আপনি সাংঘাতিক প্রিটি!আপনার মতো কিউট একটা মেয়েকে সামনে পেয়েও রাজ আপনাকে ইগনোর করছে কিভাবে বুঝলাম না! ওর তো এতদিনে আপনার সাথে লিঙ্ক হয়ে যাওয়ার কথা!"
-"মানে?"কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো পৌষী!
-"নাথিং সিরিয়াস! তবে রাজ আপনাকে দিনরাত দেখে ও নিজেকে কিভাবে ঠিক রাখতে পারছে সেটাই প্রশ্ন!"
পৌষী ইচ্ছে করেই কোনো প্রশ্ন করলোনা কারন মেয়েটা কোন ইন্টেনশনে এখানে এসেছে তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা। সে নিজে থেকেই এতকথা কেন বলছে,নাকি সে এভাবেই কথা বলে! নিকিতার একটা কথায় পৌষী চমকে উঠলো-
-"রাজ সম্ভবত আপনাকে ভালোবাসে,তাই না?"
-"ক্..কেন এমনটা মনে হলো?"
-"তখন রাজ যেভাবে আমাকে ফেলে আপনার দিকে দৌড় দিলো অথচ আমার সাথে ওর প্রায় তের বছর পর দেখা। তাছাড়া একটা সময় ওর সাথে আমার হার্ড রিলেশানশীপ ছিল! আইমিন বুঝতেই পারছেন! উই ওয়্যার মিট লাইক হাব্বি এন্ড ওয়াইফ!"
পৌষীর মাথায় বাজ পড়লেও ও এতটা শকড হতোনা কিন্তু এ মুহূর্তে ওকে একজন বাজপড়া মানুষের মতই দেখাচ্ছে! নিকিতা মুচকি হাসল-"আই ওয়াজ রাইট...ইউ আর ইন এ রিলেশনশীপ উইথ রাজ..ইজন'ট ইট?"
পৌষী নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলল
-"আমার শরীরটা খারাপ লাগছে!"
-"ওউ স্যরি আচ্ছা আমি যাই কেমন? বা..বাই...!"
নিকিতা বেরিয়ে গেলে পৌষী ওদের ঘরের দরজা আটকে দিলো। প্রতিদিন রাতে শোবার আগে একবার রাজের সাথে দেখা করে ও। আজ আর পৌষী গেলোনা। রাজ অপেক্ষা করতে করতে ভোরের আযান হয়ে গেলো! এদিকে নিদ্রাহীন পৌষী একদৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা!
সকালে নাস্তার টেবিলে পৌষীকে আশা করেছিলো রাজ। কিন্তু সে সেখানে নেই দেখে কিছুটা অবাক হলো! রান্নাঘরে উঁকি দিলো,সেখানেও নেই।
ভাবনায় পড়লো রাজ। হঠাৎ করে পৌষীর এই উদাসীনতার কারন কি! সে তো রাজের নাস্তা তৈরী করে তাকে ডেকে পাঠায় নতুবা নিজে গিয়ে ডেকে আনে! আজ কি হলো তার!
রাজ একটু ভেবে পৌষীর ঘরের দরজায় টোকা দিলো!
পৌষীই গেট খুললো! রাজের মনের আকাশে একরাশ আতশবাজি ফুটে উঠে চারপাশে তার বর্ণালী আলো ছড়িয়ে দিলো যেন! রাজ অপলক চেয়ে রইলো!
আজ ওর মাথায় ওড়না নেই! সিল্কি চুলগুলো পাহাড়ী ঢালের মতো কাঁধ গড়িয়ে পিঠের ওপর নেমে গেছে। চোখগুলোতে একটু ফোলাটে ভাব রয়েছে! ওকে দেখে পৌষীর চমকে ওঠা রাজের চোখ এড়ালোনা।
-"কি...শরীর ভালোনা?"
-"ন্..না ভালোই শুয়েছিলাম!"
-"আচ্ছা,তাহলে রাহেলাকে বলি নাস্তা দিতে"!
পৌষী কিছুটা ইতস্তত করে বলল
-"আপনি টেবিলে বসুন আমি আসছি!"
গতরাতে সবাই গায়ে হলুদের কারনে রাত জাগায় এখনো ঘুমে ডুবে আছে গোটা বাড়ী। রাহেলাও তার বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে! পৌষী ওড়না পেঁচিয়ে রান্নাঘরে এলো। স্টোভ অন করে চুলায় চায়ের পানি বসালো। নাস্তা গরম করার জন্য ওভেন খুলতেই টের পেলো ওর পেটের দুপাশ থেকে দুটো হাত এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলে মুখ গুঁজলো কেউ!
পৌষী ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েও পারলোনা। রাজ ওর ওড়না সরিয়ে ঘাড়ের কাছে মুখ রেখে বলছে
-"রাতে এলেনা যে...?"
-"ক্লান্ত ছিলাম!"পৌষি মৃদু স্বরে বলল!
রাজের বাঁধন আরো শক্ত হলো, পৌষীকে একটানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওকে জাপটে ধরে ওর ঠোঁটে ডুব দিলো। পৌষীর চুলগুলো রাজের দুহাতের মুঠোর মধ্যে ! পৌষী হাঁপিয়ে উঠলো রাজের এই আগ্রাসী ভালোবাসায়! মনের অজান্তে নিজেও কখন সাড়া দিয়ে বসেছে ও জানেনা। হঠাৎ রাতের বেলা নিকিতার বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেলো ওর। ধাক্কা দিয়ে রাজকে সরাতে চাইলো। কিন্তু রাজ যেন এ জগতে নেই, চোখ বন্ধ করে অমৃত সুধা পানে ব্যস্ত!বহু কষ্টে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরালো পৌষী! রাজ ওকে জড়িয়ে ধরেই কিছুটা উঁচুতে তুলে ফেললো!
-"আমার জান তুমি,তোমাকে একবেলা না দেখলে আমার হ্রৎপিন্ড শ্বাস নিতে ভুলে যায়!"
পৌষী পড়ে যাবার ভয়ে দুহাতে রাজের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে! ওর ওড়নাটা মাটিতে পড়ে গেছে।
-"প্লিজ,নিচে নামান আমাকে কেউ এসে পড়বে..!"
-"কেউ আসবেনা সবাই ঘুমে!"
পৌষী তবু পীড়াপীড়ি করলো নামার জন্য!অগত্যা রাজ ওকে ধীরে নামিয়ে দিলো!
-"কি হয়েছে তোমার? আজ মুড অফ কেন?"
পৌষী নিচ থেকে ওড়না কুড়িয়ে গায়ে দিতে নিলে রাজ ওড়নাটা টেনে নিয়ে নিজের ঘাড়ে মাফলারের মতো এক প্যাঁচ দিয়ে রাখলো! পৌষী বলল-"এমনিই!"
-"উঁহু...এমনি না। কিছু হয়েছে? তোমার মুখে হাসি নেই যে!"
পৌষী মুখ নামিয়ে বলল-"নিকিতা আর আপনি একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলেন,তাই না?"
রাজ স্থির হয়ে গেলো। পৌষী ওড়নাটা নিয়ে নিজের গায়ে জড়ালো
-"একসময় ওর সাথে খুব ঘনিষ্ট সময় কাটিয়েছেন?"
নিজের গলার স্বর নিজের কাছেই অচেনা ঠেকলো পৌষীর!
রাজের কাছ থেকে একটু সরে গিয়ে পৌষী বলল
-"গতকাল নিকিতা এসে সব কথা বলেছে আমাকে!"
রাজ শান্ত ভঙ্গিতে ওকে দেখছে! পৌষী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-'আপনি টেবিলে বসুন,নাস্তা গরম করে দিচ্ছি!"
রাজ ওর দুকাধ ধরে বললো-"নিকিতার একপেশে গল্প শুনেছো, আমারটা শুনবেনা?"
পৌষীর চোখ ভিজে উঠল-"এরকম আর কত গল্প আছে আপনার? আপনি..."!
পৌষির কথার মাঝখানে বাঁধা পড়লো,মীরা ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে এলো! রাজের সাথে পৌষীকে এভাবে একা দেখে বেশ চমকে গেলেও দ্রুত সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
-"পৌষী,আমাকেও নাস্তা দিও,খিদা লেগেছে!"
রাজ সরে বাইরে টেবিলে চলে গেলো,পৌষী ঘুরে দাঁড়িয়ে নাস্তা গরম করতে লাগলো!
আজকে ছেলের বাড়ী যাবে ওরা গায়ে হলুদ করতে তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ওরা!
পৌষী গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গুলো বরাবরই এভোয়েড করে আসছে। তাই সে জানালো সে মা'কে একা রেখে যাবেনা।
রানী বললেন
-"ভালোই হলো মীরা একা থাকবে,তার চে তোরা বাসায় থাকলে ওকে আর একা থাকতে হলোনা!
সন্ধ্যের পর পর রানী ছেলেদের বাড়ী নেবার সরঞ্জামগুলো গোছাতে পৌষীকে ডাকলেন।পৌষী এসে সেসব গুছিয়ে দিলো তারপর রানীর অনুমতি নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো!
রানী পার্লারে যাবেন এমন সময় মীরা ঢুকলো!
-"পার্লারে যাচ্ছো আম্মু?"
-"হ্যাঁ,তুই পৌষীদের সাথে সময় মতো খেয়ে নিস রাত করিসনা। ফিরতে ক'টা বাজে কে জানে!"
-"তুমি তো এখন ব্যস্ত নইলে একটা কথা ছিলো তোমার সাথে!"
-"ব্যস্ততা তো থাকবেই তোর কথা তুই বল্!"
মীরা উঠে গিয়ে মায়ের দরোজা লক করে দিলো। রানী কিছুটা অবাক হলেন কি এমন কথা যে দরোজা লাগাতে হবে?
পৌষী শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো! রানী গেট নক করলে সে উঠে দরোজা খুলে দিলো! রানী ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলেন।
পৌষী একটু অবাক হলো কারন মামীর তো এখন পার্লারে যাবার কথা। উনি এখনো যাননি? তাছাড়া এখানেই বা এলেন কেন,আর দরজাই বা লাগালেন কেন?
সাহেদা শুয়ে ছিলেন,রানীকে দেখে আস্তে ধীরে উঠে বসলেন!
-",তুমি যাওনি ভাবী?"
রানী হিসহিসিয়ে বললেন
-"আমি না থাকলে বুঝি তোমাদের মা মেয়ের খুব সুবিধে হয়, তাইনা?"
-"এসব তুমি কি বলছো ভাবী?"
সাহেদা অবাক হলো! রাণী চাপা স্বরে ধমক দিয়ে বলল
-"চুপ করো মনে করেছো, তোমরা যা খুশি তা'ই করবে আর আমি টেরও পাবোনা,তাই না?(বলে পৌষীর দিকে তাকালেন) তোকেই জিজ্ঞেস করছি! রাজের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক? খুব তো পর্দা পসীদা দেখাস।একটা অবিবাহিত ছেলের সাথে রান্নাঘরে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করার সময় তোর দ্বীনদারী কই থাকে?
ছিহ্ তোকে তো পেটের মেয়ের মতই জানতাম। আজ আমার ঘরে থেকে আমারটা খেয়ে পড়ে আমারই বুকে শেল বিঁধালি?"
সাহেদা বলতে চাইলেন কিছু। রানী বাধা দিয়ে বললেন-"থাক্,তোমাদের কোনো সাফাই গাইতে হবেনা!"
পৌষী মুখ নিচু করে কাঁদছে! সেদিকে চেয়ে রানী ব্যঙ্গ করে বলে উঠলেন
-"কতো ঢংইনা তোরা দেখাতে জানিস।এসব ধর্মীয় কচকচানি আমার জানা আছে। তোদের মুখে এক, মনে আরেক।ভাব দেখাবি কিচ্ছু চাইনা অথচ লোভ তোদের ষোলোআনা!
-"ভাবি,আপনি আমার কথাটাতো শুনবেন!"
-",কোনো কথা শোনার বা বলার বাকী নেই!মীরা নিজ চোখে তোমার মেয়েকে রাজের সাথে গায়ে গা লাগিয়ে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে! অস্বীকার করতে পারবে, জিজ্ঞেস করো ?"
পৌষী নিরবে কঁদে চলেছে!
রানী ফুঁসে উঠলেন-"কাল আমার মেয়ের বিয়ে নইলে তোদের মা মেয়েকে আজই বাড়ীছাড়া করতাম। বিয়েটা হতে দে তারপর তোরা তোদের ঠিকানা খুঁজে এখান থেকে চলে যাবি! প্রয়োজনে তোদের খরচপত্র যা লাগে সদকা মনে করে পাঠিয়ে দেবো কিন্তু এ বাড়ীতে আর না। দুটো দিন সময় দিলাম। মীরার বিয়ের পরই তোরা চলে যাবি,কোথায় যাবি সেটা তোদের ব্যপার!"
সাহেদা বিস্ময়ে বোবা বনে গেছেন যেন। তবু মরিয়া হয়ে বলতে চাইলেন
-"ভাবি,আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি,ওদের সম্পর্ক....!"
-"এজন্যেই লোকে বলে অভাবে স্বভাব নষ্ট!(সাহেদার কথা যেন শুনতেই পাননি তিনি) তোদের আশ্রয় দিয়েছি বলে বাড়ীর মালিককে ধরেই টান দিয়েছিস? অনেক বিশ্বাস করতাম তোকে পৌষী! তুই যে এমন ছুপারুস্তম বেরোবি তা কস্মিনকালেও ভাবিনি!"
বলে রানী দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন!
তারপর আবার কি মনে হতে ফিরে এসে পুনরায় বললেন-"আর বাড়ী ছাড়ার আগ পর্যন্ত যদি আমার ছেলের আশেপাশে তোকে দেখেছি তো আমার চে খারাপ আর কেউ হবেনা! আসুক তোর মামা,তাকে দেখাবো তার ভাগনির আসল রুপটা!
উনি নাকি পরপুরুষের সামনে যাননা কিন্তু আমার ছেলের সাথে একঘরে গুটুরগুটুর করতে পারেন। ওটাতে গুনাহ হয়না! হায়রে তোদের যে কতরূপ! ভেবেছিলাম,দ্বীনদার ছেলে দেখে তোকে বিয়ে দেবো! এখন আমার প্রশ্ন তুই নিজে কতটা দ্বীনদার?"
বলে রানী ঝড়ের বেগে যেভাবে এসেছিলেন সেভাবেই বেরিয়ে গেলেন!
সাহেদা হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। পৌষী দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে।
সাহেদা ওর দিকে হাত বাড়ালেন
-"আমার কাছে আয় মা!"
পৌষী মায়ের বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠলো।সাহেদা ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন!তারপর কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন
-"রাতেই ব্যাগটা গুছিয়ে ফেল্ মা,আমরা আগামী কাল রাতেই চট্টগ্রাম রওনা দেবো!"
-"তোমার এই শরীরে কিভাবে মা?"
-"শরীর আমার ঠিক আছে...! এখন সম্মানটা তো ঠিক রাখতে হবে! এসব কথা শোনার পর তোর কি এবাড়ীতে থাকার ইচ্ছে আছে?"
পৌষী মাথা নাড়লো! ওর মনেও ঝড় চলছে। রাজকে সে কিছুই জানাবেনা।রাজের ব্যাপারে ওর মনে অনেক প্রশ্ন জমেছিলো। হয়তো এর সদুত্তর রাজ দিতে পারতো কিন্তু আজ পৌষী নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ! সবচে ভালো হয় সে নিরবে সরে গেলে!অনেক দিক রক্ষা পাবে তাতে!
আশ্রয়ের জীবন বড় লাঞ্ছনার জীবন!
পৌষী নিজের পুরোনো কাপড়চোপড়গুলো গুছিয়ে নিলো। রাজের গিফট করা সমস্ত কাপড়, অর্নামেন্টস,এবং ওদের বিয়ের শাড়ী কাপড় এমনকি বিয়েতে পাওয়া উপহারগুলো সমস্ত রেখে কেবল যা নিয়ে এবাড়ী এসেছিলো সেগুলোই একটা ব্যাগে গুছিয়ে নিলো!
আধাঘন্টার মধ্যেই পুরো বাড়ী নিস্তব্ধ হয়ে গেলো! কেবল মীরা ওর ঘরে আছে। পৌষী রাহেলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো রাজের কথা! রাহেলা জানালো রাজ বাইরে গেছে!
এই ই সুযোগ! পৌষী মা'কে প্রস্তত হতে বলে দ্রুত দারোয়ানকে অনুরোধ জানালো একটা ট্যাক্সি ডেকে দিতে! দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো-"কোথায় ভাড়া করবো?"
-"শান্তিনগর বাসস্ট্যান্ড! আর আপনার ছোটসাহেব কে কিছু বলবেন না এ ব্যাপারে!"
পৌষি হাত মোজা পা মোজা পড়ে আপাদমস্তক নিজেকে ঢেকে নিলো!দারোয়ান ফেরার আগেই দেখলো রাজ বাড়ীতে ঢুকছে। পৌষী ব্যাগ হাতে একটা থামের আড়ালে সরে গেলো!
রাজ নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে। দরোজার লক খুলে ঘরে ঢুকে গেট আটকে দিতেই পৌষী হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো! দ্রুত মা'কে নিয়ে মেইন গেটের বাইরে চলে এলো!
ততক্ষণে দারোয়ানও ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে হাজির। পৌষী মা'কে নিয়ে তাতে উঠে বসলো!
দারোয়ান বোকার মতো সেদিকে চেয়ে রইলো! পৌষীদের ট্যাক্সি বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলো।
চলবে.........?
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
★ রোদেলা রিদা ★
User ২ বছর, ৭ মাস পুর্বে★ রোদেলা রিদা ★
User ২ বছর, ৮ মাস পুর্বে★ রোদেলা রিদা ★
User ২ বছর, ৮ মাস পুর্বে★ রোদেলা রিদা ★
User ২ বছর, ৮ মাস পুর্বে