বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

হিয়ার মাঝে-৯/১০

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Saniat Ahmed (০ পয়েন্ট)

X হিয়ার মাঝে সানিয়াত আহমেদ আবির পর্ব-৯/১০ কাজী সাহেব বেশ অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছেন! বরপক্ষের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতে দেরী করছিলো! একপর্যায়ে কাজী সাহেব তাড়া লাগালেন বিয়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য! ইরার শ্বাশুড়ী আসার পর থেকেই গাল ফুলিয়ে বসে আছেন! তার কি হয়েছে কেউ বুঝতে পারছেনা! ইরার মা তার মান ভাঙ্গাতে ব্যস্ত! ওদিকে কাবিননামা লিখতে গিয়ে বরপক্ষের সাথে হট্টগোল বেঁধে গেলো! মোহরানার অংক নিয়ে ইরার ছোটমামা কিছু একটা মন্তব্য করলে ইরার শ্বশুড় ক্ষেপে ওঠেন। ছোটখাটো তর্ক ঝগড়ায় রূপ নেবার উপক্রম হলো! রাজ সেখানেই উপস্থিত ছিলো! বহু কষ্টে সে আর তার দুএকজন বন্ধু মিলে পরিস্থিতি শান্ত করলো! অবশেষে ইরার বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো এবং সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হলো! বরপক্ষকে বিদায় দেবার সময় তাদের সাথে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার আপ্রান চেষ্টা করলো কনেপক্ষ! আমজাদ চৌধুরী গম্ভীর মুখে একপাশে বসে রইলেন!তিনি যথেষ্ট রাশভারী মেজাজের মানুষ।তার চোখের ইশারায় দেড়শো স্টাফ ওঠাবসা করে অথচ এখানে নিজের মেয়ের বিয়েতে এভাবে পাত্রপক্ষের হাতে অপদস্থ হতে হবে তিনি ভাবেননি! আসলে কনের বাবা যত বিখ্যাত আর দামী মানুষই হোন না কেন পাত্রপক্ষের সামনে তাকে ছোট করেই দেখা হয় আর এটাই আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট! পাত্রপক্ষ বিদায় নেবার সময় রাজ গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন একদল মেয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে তার সামনে এলো! নানান রকম দুষ্টামী শুরু করল! রাজ যথাসম্ভব ভদ্রতা বজায় রেখে তাদের এড়িয়ে গেলো! বিন্তু মেয়েগুলা দুষ্টামী করতে ছাড়লোনা। তারা কেউ 'হাই হ্যান্ডসাম' কেউ"আ'ম ক্রাশড" বলে রাজকে বিভিন্ন ইঙ্গিত ছুঁড়ে দিতে লাগলো! এরিমধ্যে একটা মেয়ে এসে রাজের পকেটে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলো! রাজ চমকে উঠে পকেট থেকে কাগজটা বের করে ফেলে দেবার আগমুহূর্তে দেখলো ওটা একটা ফোন নাম্বার! রাজ একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে সরে গেলো! রাজ এ ধরনের পরিস্থিতে আগেও পড়েছে। সে কোথাও গেলে মেয়েদের মধ্যে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয় এটা রাজ জানে! এই ব্যপার গুলো রাজ আগে ইনজয় করতো কিন্তু এখন সে সযত্নে এসব এড়িয়ে চলা শুরু করলো! কারন তার মনোজগতে পৌষী নামের মেয়েটি ছাড়া আর কারো প্রবেশাধিকার নেই! সে সেখানকার একচ্ছত্র অধিপতি! ইরার বিয়ের ঝামেলায় গতরাতে কারোরই ঘুম ঠিকমতো হয়নি! ফলে পরদিন সবাই বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠলো! রাজ নাস্তা খেতে সোজা ডাইনিং হলে চলে এলো! সাধারনত সে এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠেনা। আজ ঘুম আপনা হতেই ভেঙ্গে গেছে! টেবিলে কাউকে না পেয়ে রাজ চলে যাচ্ছিলো,আগে হলে হয়তো চেঁচামেচি শুরু করতো কিন্তু আজ নিরবে চলে যেতে ধরলে পেছন থেকে রাহেলা ডাকলো! -"বাইজান নাস্তা খাইয়া যান!পুষি আপায় বইতে কইছে!" রাজ কিছু বলতে গিয়েও পৌষীর নাম শুনে থেমে গেলো! চুপচাপ সুবোধ বালকের মতো একটা চেয়ার টেনে বসে পেপারটা পাশ থেকে টেনে নিলো! পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রাহেলা নাস্তা এনে দিতে লাগলো! রাজ পেপার সরিয়ে রেখে নাস্তার প্লেট টেনে নিয়ে খেতে শুরু করলো! ওর এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে নাস্তাটা পৌষী তৈরী করেছে এবং সেই ওকে চলে যেতে দেখে ডেকে বসিয়েছে। পৌষীর এই যত্নটুকু রাজ উপোভোগ করলো! নাস্তা প্রায় শেষ চা খাওয়া বাকি! রাহেলা এসে জানতে চাইলো-"অহন চা দিমু বাইজান?" রাজ বললো-"আগে আমার রুম থেকে মোবাইলটা নিয়ে আয় তো!"বলে রাজ উঠে যেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে বসে রইল! এদিকে পৌষী চা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!কিন্তু পাঠাতে পারছেনা। কারন রাহেলা সেই যে গেছে ফেরার নাম নেই! এদিকে চা ঠান্ডা হয়ে যাবার দশা! কিছুক্ষণ ইতস্তত করে পৌষী নিজেই চায়ের কাপটা রাজের সামনে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো! রাজ ওকে পেছন থেকে দেখে মুচকি হাসলো! তখনি রাহেলা ঢুকল! মুখটা অস্থির আর মলিন। বোঝা গেলো সে মোবাইলটা খুঁজে পায়নি! বলল-"পুরা গর ফাতাফাতা কইরা খুইজ্জাও মুবাইল ফাইলাম না বাইজান!" রাজ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল-"লাগবেনা যা।মোবাইল আমার কাছে!"বলে পেপারে মন দিলো! রাহেলা রাজের এমন আচরনের কারন বুঝতে না পেরে বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রান্নাঘরে চলে গেলো! রিসেপশনের আর মাত্র পাঁচদিন বাকী! রাণি ভিলা'তে বিয়ের ঊৎসব তুঙ্গে! রানী নিজেও ভীষণ ব্যস্ত। তাছাড়া মেয়েকে তুলে দেবার দুদিন বাদেই তিনি স্বামীর সাথে ইটালী যাবেন। আমজাদ চৌধুরী যাবেন তার ব্যবসার কাজে আর রানী যাবেন মেয়ে বিদায়ের শোক সামলাতে! তার সাথে মীরাও যাবে। নীরা আর রাজ থাকবে। কারন নীরার সামনে পরীক্ষা! রীনা সতর্ক দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করছেন যেন কোন কিছু বাদ না পড়ে যায়! এর মাঝেই থেকে থেকে কান্নার রোল উঠছে। ইরা তার প্রথম সন্তান। এটা এ বাড়ীর প্রথম বিয়ে!বড় ছেলে মেয়ের প্রতি বাবা মায়ের ফিলিংস অন্য সব সন্তানের চেয়ে আলাদা! রানী দিনের মধ্যে দশবারই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। বিদায়ের দিন যে কি করবেন আল্লাহই জানেন! দেখতে দেখতে রিসেপশনের দিন গড়িয়ে এলো! শেষ মুহূর্তের কাজগুলো ভালোভাবে চেক করার জন্য তিনি পৌষী আর নীরাকে নিয়ে বসলেন! মেয়ের লাগেজ গুছাতে গিয়েও তিনি আধাঘন্টা পরে বুঝলো তিনি কিছুই ঠিকভাবে করতে পারছেননা! অবশেষে পৌষীকে ডাকলেন-"তুই আর নীরা মিলে দ্যাখতো মা আমি বারবার ভুলে যাচ্ছি! মাথা ঠিকমতো কাজ করছেনা! পৌষী প্রথমে একটা কাগজে লিষ্ট তৈরী করলো ঠান্ডা মাথায় যে ইরার সাথে কি কি যাবে! মামীকে সেটা শোনালো! রানী সায় দিলে এবার নীরাকে সাথে নিয়ে লিষ্টের জিনিসগুলো একে একে লাগেজে ভরতে শুরু করলো! অবশেষে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে সুন্দরভাবে লাগেজ গোছানোর কাজ শেষ করলো পৌষী! রানী ওর কাজ দেখে খুব খুশী হলেন কারন এর মধ্যেও দুতিনটে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভুলে গিয়েছিলো পৌষী সেগুলো ঠিক করে দিলে তিনি সাময়িকভাবে মনে মনে খানিকটা আবেগাক্রান্ত হয়ে ভাবলেন-"আহ্ মেয়েটা তার রাজের বৌ হলে মন্দ হতো না! কিন্তু নাহ্! তার সামাজিক স্ট্যাটাস মাঠে মারা যাবে!" ইরার ওয়েডিং রিসেপশন সুন্দর ভাবেই শেষের দিকে যাচ্ছিলো! গোলমালটা বাঁধলো পাত্রপক্ষকে টেবিলে বসানোর পর। একে একে মেহমানরা উঠে যেতে শুরু করলো! বরকে তো টেবিলে বসানোই গেলোনা! বিশাল হুলুস্থুল। রানী দিশেহারা বোধ করলেন। মেয়েন বিয়ে উপলক্ষে কেনা ত্রিশ হাজার টাকা দামের শাড়ী পড়ে তিনি দরদর করে ঘামতে লাগলেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো অভিযোগ কিছুই না কাচ্চি বিরিয়ানীর মাংস বেশী গলে গেছে বলে ছেলের বড়ফুপা বললেন-'তাদের নাকি গলা মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে! ছোট্ট কথাটা একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো পড়ে প্রায় দাবানল সৃষ্টি করার যোগাড় করলো! বহু কাঠখড় পুড়িয়ে হাতে পায়ে ধরে পাত্রপক্ষকে ম্যানেজ করা হলো কিন্তু পরিস্থিতির চাপে আমজাদ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়লেন! তাঁর বুক ব্যথা করতে লাগলো! এদিকে ইরার বিদায়ের সময় হয়ে গেছে। রানীর যেন পাগল হবার দশা। তিনি সাহেদার হাত ধরে হাউমাউ করে প্রায় কেঁদে দিলেন! সাহেদা পরিস্থিতি সামলাতে রাজের সাহায্য নিয়ে ভাইকে একটা ক্লিনিকে নিয়ে এলেন কারন তাঁর স্ট্রোকের লক্ষণ স্পষ্ট! সেখানে সারারাতই তিনি আর পৌষী থেকে গেলেন। রাজ বারবার এসে যেয়ে খোঁজ রাখছিলো! ওদিকে ইরাকে বিদায় দিয়ে রানী ফিট হয়ে গেলেন! পরদিন সকালে ইরা তার স্বামীকে নিয়ে বাবাকে দেখতে হাসপাতালে এলে বিষয়টা অনেকটা সহজ হয়ে এলো! বিকেলেই আমজাদ চৌধুরীকে রিলিজ করা হলো! আর দুদিন পরেই তার ইটালির ফ্লাইট তাই তাকে ফুল বেডরেস্টেই রাখা হলো! ইটালি যাবার দিন রানী সাহেদার হাতে সমস্ত কিছুর দায়িত্ব দিয়ে এয়ারপোর্টে রওনা হলেন! কয়েকটা দিন সুন্দরভাবেই কেটে গেলো!রাজ এখন আর আগের মতো ধুমধাড়াক্কা গান বাজায়না! তাই সারাটা দিন এক ধরনের নিরিবিলি পরিবেশ বিরাজ করে বাড়ীটাতে। রাজের আচরণের পরিবর্তনটা পৌষী নিজেও কিছুটা টের পায়! আগে দিনরাতই গান বাজতো,বন্ধু বান্ধবীদের আড্ডা হৈ হুল্লোড় লেগেই ছিলো! অথচ এতোবড় একটা অনুষ্ঠান গেলো রাজ কোনো গানবাজনাই এবার বাজায়নি! এটা বিরাট একটা ব্যপার। সে রাজের এই পরিবর্তনের কারন বুঝতে পারলোনা! সাহেদা ভাতিজার নাস্তা খাওয়ার প্রতি সতর্ক খেয়াল রাখেন। রাজও ফুপিকে মায়ের মতো সম্মান করে। বরং রানি চলে যাবার পর থেকে রাজের সাথে সাহেদার সম্পর্কটা আরো সহজ এবং ঘনিষ্ট হয়ে ওঠে। রাজ তার কাছ থেকে ছোটবেলার গল্প শুনতে চায়। বিভিন্ন ইসলামিক বিষয় প্রশ্ন করে। মাঝেমধ্যে সাহেদা উত্তর দেন মাঝেমধ্যে বলেন এটা পৌষী ভালো বলতে পারবে! ও তো এসব স্টাডি করে,বিভিন্ন আলেমের লেকচার শোনে! পৌষী কেবল দুর থেকে চুপচাপ ওদের ফুপু ভাতিজার এসব চেয়ে চেয়ে দেখে! সেদিন রাতেও খাওয়া দাওয়া সেরে পৌষী ঘুমাতে যাচ্ছিলো! সাহেদার সন্ধ্যা থেকেই শরীরটা খারাপ লাগছে বলে উনি রাতেও কিছু খেলেন না! পৌষী ঘুমুতে যাবার আগে সাহেদা হঠাৎ বললেন,তার বুকটা খুব ব্যথা করছে। গলার কাছটাও কেমন জ্বালাপোড়া করছে! পৌষী ভাবলো এসিডিটি হবে কিনা! সে গ্যাসের ঔষধ খাইয়ে দিলো মা'কে কিন্তু কোনো ইমপ্রুভমেন্ট তো দেখা গেলোইনা বরং সাহেদা বললেন তার একহাত এককপা অবশের মতো লাগছে। তিনি কাতর স্বরে বললেন-"আমি বোধহয় মারা যাচ্ছিরে মা! বলে তিনি অস্থির হঢে কাঁদতে লাগলেন। তার অবস্থা দেখে পৌষী বেশ ঘাবড়ে গেলো!কোনো দিশা না পেয়ে সে রাজের রুমের দিকে ছুটলো! রাজ শুয়ে শুয়ে ইরার বিয়ের ভিডিও দেখছিলো। পৌষী ভিডিওটাতে কোথাও নেই। সে নাকি ছবি তোলেনা! তবু কোনো এক ফাঁকে নীরার পেছন দিয়ে এককোণে পৌষীর হাসিমুখের ছবি উঠে গিয়েছিলো। সে কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলছিলো। রাজ সেটাকেই ক্লোজ করে দেখছিলো! রাজ প্রথমে পৌষীর ছবিটাকে ক্লোজ করে অন্যদের থেকে আলাদা করলো! তারপর ছবিটাকে জুম করায় বায়ান্ন ইঞ্চির পুরো স্ক্রিনে পৌষীর হাসিমুখটা জ্বলজ্বল করছে।রাজ ছবিটাকে ফ্রিজ করলো! আর তখনি দরোজায় ব্যস্ত হাতের টোকা পড়লো! রাজ অবাক হলো,এতো রাতে কে হতে পারে? সে উঠে দরোজা খুলে পৌষীকে দেখে যারপরনাই অবাক হলো! -"কি ব্যপার আপনি?" -"প্লিজ একটু আসুন না, মা যেন কেমন করছেন!"পৌষীর ভেজা চোখ,কাতর দৃষ্টি, ভাঙ্গা কন্ঠের অনুরোধ রাজেরর বুকে তুফান বইয়ে দিলো যেন। সে দ্রুতপায়ে ছুটলো। পৌষিদের ঘরে ঢুকে সাহেদার পাশে বসে দুহাত দিয়ে ফুপির মুখটাকে আগলে ধরে ডাকলো রাজ-"এ্যাই ফুপি ফুপি কি হয়েছে তোমার?" গত কয়েকদিনে রাজের সাথে সাহেদার সম্পর্কটা মা ছেলের মতই ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছিলো। রাজ নিজের ভেতর তাড়া অনুভব করলো! সে পৌষীর দিকে তাকালো। পৌষী কাঁদছে। রাজ বলল-"ওনাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আপনি মোটামুটি গোছগাছ করে নিন। আমি দুমিনিটের মধ্যে আসছি! রাজ দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেলো! পৌষী একটা বড় ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভরে নিয়ে নিজেও দ্রুত তৈরী হলো! রাজ নিজের ঘরে এসে দ্রুত শার্ট গায়ে দিলে। ড্রয়ার থেকে টাকা বের করলো! হাসপাতালে ফোন করে আমজাদ চৌধুরী এবং নিজের পরিচয় দিলো। তারপর গাড়ী রেডী করে পৌষীদের ঘরে গেলো! পৌষীও তৈরী। রাজ নীরাকে ডেকে বাড়ী খেয়াল রাখতে বললো। তারপর সাহেদার পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ড ভাবলো! তারপর অনায়াসে নিজের মোবাইলটা পৌষীর হাতে দিয়ে বলল-"এটা একটু ধরুন তো!" বলে রাজ সাহেদাকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ীতে তুললো! নীরা উদ্বিগ্ন মুখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো! আর রাজ পৌষীকে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা দিলো! সাহেদাকে নিয়ে সরাসরি ইমারজেন্সীতে ঢোকানো হলো! কর্তব্যরত ডাক্তার ওনাকে খুব ভালোভাবে চেকআপ করা শুরু করলেন! রাজ পৌষীকে একপাশে বসার জায়গা করে দিলে পৌষী সেখানে চুপচাপ বসে নিরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলো! রাজের খুব ইচ্ছে হলো ওকে সান্তনা দেয়... কিছু বলে! কিন্তু ওর সে সুযোগ নেই! রাজ এখন জেনে গেছে যে সে পৌষীর জন্য একজন গায়রে মাহরাম। কুরআনে একজন নারীর জন্য চৌদ্দজন পুরুষকে মাহরাম নির্ধারন করে বাকিদের গায়ের করে তাদের সাথে পর্দাকে ফরয করে দিয়েছে। রাজ সেই এটা গায়ের মাহরামদের দলে! অথচ সে তার সাহেদা ফুপুর জন্যে আবার মাহরাম,গায়ের বা পর নয়! রাজ এসব আগে জানতো না। কিন্তু ইদানীং ইউ টিউবে কিছু লেকচার ওর চিন্তা চেতনার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে! ভালো যে পৌষী সেটা সাধ্যমতো মেনে চলতে চেষ্টা করে নতুবা ওর সমস্যা আরো বেড়ে যেতো!সবার কাছে ওর সৌন্দর্য্য হাটে বেচা খেলনার মতো হয়ে যেতো। যা ক্রেতারা কিনুক না কিনুক চোখ দিয়ে উপোভোগ করে আবার হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে! পৌষীর পর্দার এই বাড়াবাড়িটা এখন রাজের কাছে খুব অর্থপূর্ণ মনে হয়! ডাক্তারের ডাকে রাজের চিন্তাস্রোতে বাধা পড়লো! -"মি.চৌধুরী - ওনাকে ভর্তি রাখতে হবে। হার কন্ডিশন ইজ নট সো গুড!" রাজ সব শুনে পৌষীকে ফুপির কাছে বসিয়ে রেখে কেবিন ঠিক করতে গেলো!পনেরো মিনিটের মধ্যেই কেবিনের ব্যবস্থা হয়ে গেলো! রাজ পৌষিকে কেবিনে পৌঁছে দিয়ে সেখানকার ডিউটি ডাক্তারদের নিজের পরিচয় দিলে তারাও একটু তটস্থ হলেন। বিষয়টা রাজের কাছে একটু খারাপই লাগলো! সে যদি কোনো প্রভাবশালী ধনী ব্যাক্তির সন্তান না হতো তাহলে কি ডাক্তাররা ঐ রকম তৎপরতা দেখাতেন? মনে হয়না। দিনদিন পৃথিবীর মানুষগুলো কিরকম স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে! প্রায় সারাটা রাত রাজ বারান্দার চেয়ারে বসে মোবাইল টেপাটিপি করে কাটিয়ে দিলো! খানিকক্ষণ পা লম্বা করে দিয়ে চেয়ারেই হেলান দিয়ে ঘুমালো! ফুপুতো সেন্সলেসের মতো পড়ে আছে কারন তাকে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে! রাজ শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছে পৌষী কিছু খাবে কিনা! পৌষী নিরবে মাথা নেড়ে না বলেছে।তারপর আর রাজ ওকে বিরক্ত করেনি! রাজকে এভাবে কষ্ট করতে দেখে পৌষীর খুব খারাপ লাগছিলো! চাইলে রাজ ওপাশের বেডটায় শুয়ে থাকতে পারতো তবে এটা পৌষীর জন্য দারুন অস্বস্তির ব্যাপার হতো! পরদিন সকালেবেলা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে সাহেদাকে দেখলেন।ভদ্রলোক নামকরা ডাক্তার। অল্পবয়সেই বেশ নাম করেছেন উনি। বয়স রাজের আশেপাশেই হবে। তিনি সাহেদাকে যতটা না দেখলেন তারচে বেশী দেখলেন পৌষীকে। রাজের মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার যা বলার তা পৌষীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলছিলেন! যদিও কথা রাজই বলছিলো কিন্তু ডাক্তারের যাবতীয় মনোযোগ পৌষীর দিকে। পৌষী এখন বোরকা পড়ে নেই! সে একটা ঢোলাঢালা থ্রিপিসের সাথে বড় একটা চওড়া ওড়না পড়ে পুরো শরীর ঢেকে রেখেছে। ওর কেবল নাক আর চোখের অংশটুকুই দৃশ্যমান বাকিটা ওড়নার আড়ালে। বেয়াদব ডাক্তার সেটাই বারবার দেখছে। রাজ হেঁটে গিয়ে পৌষীর সামনে ওকে আড়াল করে দাঁড়ালে ডাক্তারের ঘোর কাটলো! পরেরদিন সাহেদার অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হলেও তাকে কমপ্লিট বেডরেষ্টে থাকার সাজেশন দেয়া হলো! বেলা বাড়লে পৌষী মা'কে ফিসফিসিয়ে বলল-"রাজকে ডেকে বাড়ী পাঠাও। সে রাত থেকে জেগে কষ্ট করছে,তার ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিয়ে আসা দরকার!' সাহেদা রাজকে ডেকে মৃদু স্বরে সেই অনুরোধই করলেন! কিন্তু রাজ পৌষীকে একা রেখে যেতে চাইছিলোনা! তার মধ্যে ঐ ডাক্তারের উৎপাত তো অসহ্য! রাজ ফোন করে নীরাকে আনালো! তারপর নিজে বাড়ী গেলো! সে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফিরবে বলেও জানালো! বিকেলের দিকে পৌষীকে নীরার সাথে একপ্রকার জোর করেই বাড়ী পাঠালো রাজ। পৌষী মা'কে বলে গেলো সে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়িই ফিরবে! সবাই চলে গেলে রাজ অপর বেডে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে নিউজ দেখতে লাগলো!সাহেদা দুচোখ বন্ধ করে পড়ে আছেন। তিনি ঘুম না জেগে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা! তখন সেই ডাক্তারটিই আবার এলেন-"রুগী এখন কেমন আছে?" সাহেদা সেভাবেই পড়ে রইলেন! রাজ উঠে তার সাথে কথাবার্তা বললেন! ডাক্তার সাহেদাকে দেখিয়ে রাজকে জিজ্ঞেস করলেন-"ইনি আপনার কি হন?" রাজ বললো-"ইনি আমার ফুপি হন!" -"ও আই সি - আর ঐ মেয়েটি যিনি গতরাত থেকে ছিলেন! উনি কি এনার মেয়ে না আপনার কিছু হন,আইমিন প্লিজ কিছু মনে করবেন না! জাষ্ট কিউরিসিটি!" রাজ মনে মনে বলল-"তোর কিউরিসিটি আমি বার করছি..!" রাজ আড়চোখে একবার ফুপুকে দেখে নিয়ে শান্তস্বরে বলল-"সে আমার হবু স্ত্রী মানে ইনশাআল্লাহ শিঘ্রই আমাদের বিয়ে হবে! দোয়া করবেন!" -"ওহ্...!তাই নাকি? "বলে ডাক্তারের চেহারা যেন দপ করে নিভে গেলো! রাজ মনে মনে কষে একটা গালি দিলো ডাক্তারকে! সাহেদা জেগেই ছিলেন। রাজের কথায় চমকে ফিরে তাকালেন! রাজ সংকোচে মুখ নামিয়ে ফেললো! ডাক্তার চলে যাবার পরে তিনি রাজকে কাছে ডাকলেন-"ডাক্তারকে মিথ্যা বললি কেন বাপ?" রাজ ধরা পড়া গলায় বলল-"তুমি সব শুনে ফেলেছো?" -"হমমম....!" -"জেনে যখন ফেলেছো তখন লুকোবোনা ফুপি! আমি আমি পৌষীকে অসম্ভব ভালোবাসি! ওকে বিয়ে করতে চাই!" সাহেদার শরীরে যেন কাঁপুনী শুরু হয়ে গেলো-"এ এ এসব তুই কি বলছিস? তোর বাবা-মা'র অন্যরকম স্বপ্ন তোকে নিয়ে!তাদের মনে কষ্ট দিসনা বাবা!" -"আর তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো! বলো তুমি কি এটা চাও..?" -"কিন্তু এটা তোর বাবা মা কোনোদিন মেনে নেবেনা! তাছাড়া পৌষীও তো এক জেদ ধরে বসেছে,দ্বীন মেনে চলা ছেলে ছাড়া সে আধুনিক ছেলে বিয়ে করবেনা! তার জন্য যতদিন অপেক্ষা করতে হয় করবে!" -"ফুপি আমি মুসলমান হয়ে জন্ম নিয়েছি কেবল কিন্তু ইসলাম কে জানতাম না।পৌষীকে ভালোবাসার পর থেকে ইসলামের বিধিবিধানগুলো দেখছি,পড়ছি,শুনছি।নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করছি। সব তো একদিনে হয়না! তাছাড়া আমি চাই আমার ইসলাম মেনে চলা হোক আল্লাহকে ভালোবেসে! কোনো স্বার্থের খাতিরে নয়!" সাহেদা চুপ করে গেলেন! রাজ সাহেদার ডান হাতটা তুলে নিজের মাথায় রেখে বললেন-"তুমি শুধু আমাকে দোয়া করো যেন এমন সময়ে পৌষী গেটে মৃদু নক করে ভেতরে ঢুকলে রাজ সাহেদাকে বলল-"আমি একটু আসছি ফুপি!"বলে রাজ বাইরে চলে গেলো! পৌষী এসে মায়ের কপালে হাত রেখে বলল-"এখন কেমন আছো মা?" -"আছি তো ভালই,আমার তো যত চিন্তা তোকে নিয়ে..!" -"আমাকে নিয়ে আবার কি চিন্তা! সব আল্লাহর ওপর ছেড়ে দাও তো মা! আমি শুধুমাত্র তার উপরই ভরসা করি!" সাহেদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! সাহেদাকে পরদিনই রিলিজ দিয়ে দেয়া হলো! তার বাম হাতটা যদিও এখনো পুরোপুরি সক্রিয় নয়। তবু তাকে বাড়ী নিয়ে নিয়মিত এক্সারসাইজ করালে তার হাত আবার সচল হতে পারে বলে আশ্বাস দিলেন ডাক্তার! তবে পনের দিন পরে তাকে আরেকবার দেখিয়ে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিলেন তিনি! এদিকে রানীদের চলে আসার দিন ঘনিয়ে এলো! তারা দুসপ্তাহের জন্য গিয়েছিলেন!দুসপ্তাহ শেষ হয়ে যাবার পর তারা আজই ফিরবেন বলে জানালেন। সাহেদা অসুস্থ থাকায় তদারকীর যাবতীয় ভার পৌষীর উপর পড়লো! আমজাদ চৌধুরী বাড়ী ফিরে বোনের অসুস্থতার খবর শুনে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন! বোনের রুমে সাধারনত আসেননা উনি। তার সাথে ডাইনিং রুমে অথবা তার নিজের রুমেই দেখা সাক্ষাৎ হয়। আজ তিনি নিজেই সাহেদার সাথে দেখা করার জন্য এ ঘরে এলেন। সাহেদা ওদের দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেললেন! আমজাদ সাহেদা হকের মাথায় হাত রেখে সান্তনা দিলেন-"কাঁদিসনা কাঁদিসনা! ডাক্তার কি বললো!" পৌষী সালাম দিয়ে এগিয়ে এলো!কাগজপত্রগুলো দেখালো! ডাক্তার যা যা বলেছে সব বললো! আমজাদ সেসব শুনে বললেন-"হমমম ডাক্তার যা যা বলেছে তা ঠিকঠিক মতো করিস। দেখি তোর মা'কে বাইরে নেয়া যায় কিনা। সামনের মাসে আমি রেগুলার চেকাপের জন্য চেন্নাই যাবো! তুইও চল্ আমার সাথে, কি বলিস? "তিনি বোনকে বললেন! সাহেদা চোখের পানি মুছে বলল-"আর কত করবে ভাইজান? হাসপাতালের এতোগুলো টাকা বিল আবার বাইরে না না ভাইজান!এমনিই সেরে যাবে! তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ আমার কিছু হলে আমার মেয়েটাকে তুমি দেখো ভাইজান! আমি ছাড়া ওর তো আর কেউ নেই...!" আমজাদ পৌষীকে বললেন-"আমার জন্যে একগ্লাস পানি আনতো মা!" পৌষী চলে গেলে আমজাদ সাহেদার দিকে তাকিয়ে বললেন-"পৌষিকে নিয়ে তুই ভাবিসনা। ওর ভাবনা ছেড়ে দে! ভেবেছিলাম ইরার বিয়েটা হয়ে গেলে বাইরে থেকে ফিরে কথাটা তোকে ডেকে বলবো !" -"কোন্ কথাটা ভাইজান?"সাহেদার বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো! আমজাদ ভারী কন্ঠে বললেন-"পৌষীকে আমি আমার রাজের জন্য চাইতাম !পৌষীকে আমি গত কয়েকমাস ধরে দেখছি! ও যদি রাজী হয় তবে সেটা হবে আমার ছেলের জন্য সৌভাগ্য। আমার একটাই ছেলে! সম্পত্তির লোভে অনেকেই ওকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু আমি তো সেসব বউ ঘরে আনবোনা যাদের কাছে আমার ছেলে একটা ক্রেডিট কার্ড! তুই ভেবেচিন্তে আমাকে জানা! পৌষীর মতটাও নে! আবার ভাবিসনা,আমি তোর ওপর চাপ দিচ্ছি! পৌষীর মতামতটাও জরুরী!" -"কিন্তু ভাইজান! যতদুর বুঝি ভাবী এটা মেনে নেবেনা! কারন রাজকে নিয়ে তার চাওয়া অন্যরকম। তাছাড়া রাজ...!" -"ওকে আমি ম্যানেজ করবো,ওটা নিয়ে ভাবিসনা! হ্যাঁ..এটা ঠিক! রানীকে নিয়ে একটু চিন্তা কিন্তু তুই আগে পৌষীকে জানা। তারপরেরটা তারপর। তাড়াহুড়োর কিছু নেই! আর এসব ভেবে শরীরটা আরো খারাপ করিসনা!" সাহেদার মনে হলো তার বুকের উপর থেকে দশমণের একটা পাথর নেমে গেলো! রাজ ভালো ছেলে! ভালো তরবীয়তের অভাবে এমন হয়েছে!৷ তাছাড়া ও পৌষীকে ভালোবাসে ! পৌষীর জন্য এরচে ভালো প্রস্তাব আর কোনোটা হবে না! সবাই বিয়েটাকে এখন কঠিন সব সিস্টেমের মাঝে বেঁধে ফেলেছে! কোনো দরিদ্র পিতামাতা চাইলেই এখনকার দিনে সাধারনভাবে বিয়ে দিতে পারেননা।তাদেরকে অসংখ্য সামাজিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়! রাজের সাথে বিয়েটা হলে তিনি খুব খুশী হবেন! আহা! পৌষীর বিয়ে দেখার সৌভাগ্য কি তার হবে? রাজ চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো! এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠলে রাজ তাকিয়ে দেখলো একটা আননোওন নাম্বার! রিসিভ করে কানে ঠেকালো-"হ্যালো?" মেয়েলী কন্ঠের হাসিতে চমকে উঠলো রাজ! -"কেমন আছেন?" -"ভালো!আপনি কে?" -"এরি মধ্যে ভুলে গেলেন? আশ্চর্য্য?" -"আসলে ঠিক মনে করতে পারছিনা! কে বলুন তো?" -"আমি ইরাভাবীর খালাতো ননদের ননদ"এমিকা"! এবার চিনতে পেরেছেন?" -"স্যরি মনে পড়ছেনা! আচ্ছা বাদ দিন,দেখলে হয়তো চিনতে পারবো!তা হঠাৎ কি মনে করে?" -"সেদিন আমার বান্ধবীরা আপনার পকেটে আমার মোবাইল নাম্বারটা গুঁজে দিলো!ভেবেছিলাম আপনিই ফোন করবেন কিন্তু কই আপনি তো একবারো কল দিলেন না!কি এতো ব্যস্ততা বলুন তো?" রাজ এবার চিনতে পারলো। ইরার বিয়েতে কিছু মেয়ে ওর পকেটে কাগজটা গুজে দিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু রাজ তো সেটা সাথে সাথেই ফেলে দিয়েছে! কিন্তু মুখে সেসব প্রকাশ না করে ভদ্রতা সূচক কয়েকটা কথা বলে ফোন কেটে দিতে চাইলো! কিন্তু এমিকা ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেই চলছে! রাজ একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে "হ্যালো...হ্যালো...শুনতে পাচ্ছিনা...হ্যালো" বলে কেটে দিয়ে মোবাইল টার্ণ অফ করে দিলো! পরদিন বিকেলে রাজ যখন বাইরে যাবার প্রস্ততি নিচ্ছিলো তখন মা এসে হাসিমুখে বললেন -"কোথায় যাচ্ছিস বাবা? একটু পরেই ইরার শ্বশুড়বাড়ীর লোকেরা আসবে!" -"আসুক! আমি থেকে কি করবো মা!" -"ওরা তোর সাথেও দেখা করতে চায়!" -"কেন? আমি কেন?"রাজ খালি গায়ে বডিস্প্রে ছিটিয়ে বললো! -"আরে তোকে তো বলি বলি করে বলাই হয়নি! ইরার খালাতো ননদের তো বেশ কোটিপতির কাছে বিয়ে হয়েছে! ওর জামাইয়ের একটাই বোন মানে ইরার ননদের ননদ "এমিকা"। দেখতেও খুব ফর্সা সুন্দর। তারচে বড় কথা মেয়েটার নামেই কোটি কোটি টাকার প্রপার্টি আছে। ওদের মেয়ে নাকি তোর কথা ওর মা'কে জানিয়েছে!" -"আমার কি কথা?"রাজ অবাক হলো! -"এমিকা তোকে খুব পছন্দ করে! তুই রাজী হলেই ওরা আর দেরী করবেনা। মেয়ের মা তো খুবই আগ্রহী। আমি তো এমিকাকে নিয়েই আসতে বলে দিয়েছি ইরাকে! রাতে ওরা এখানে খাবে! তুই কিন্তু কোথাও যাবিনা!" -"এসব কি শুরু করেছো মা?তোমাকে বলিনি আমি এসব মেয়েকে বিয়ে করবোনা যার সাথে আমার চিন্তাধারা মিলবেনা!" -"তুই দেখা কর্ ওর সাথে কথা বল্! কথা না বলেই কিভাবে বুঝলি ও তোর চিন্তাধারার না?" রাজ মা'কে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে বেরিয়ে গেলো! সন্ধ্যের পর অনবরত ফোন দিয়ে রাজকে আনানো হলো! রাজ দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েটা আর তার মায়ের ভ্যাজর ভ্যাজর সহ্য করলো! ওরা চলে যাবার পর রানি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন-",কেমন লাগলো মেয়েটাকে?" -"একটুও ভালো না!" -"কি যা তা বলিস আমার তো বেশ লেগেছে! কি মিষ্টি গলা!" রাজ বলতে চাইলো তোমাকে তো ওদের টাকাকড়ি ওদেরকে ভালো লাগাতে বাধ্য করেছে! কিন্তু মুখে কিছু বললোনা। রানী বললেন-"উপযুক্ত কোনো কারন দেখাতে না পারলে তোর কোন কথা আমি শুনছিনা।কোটিপতি বাপের একমাত্র মেয়ে, শিক্ষিতা! সুন্দরী! তুই বললেই হলো? আমি তো ভাবছি,আগামী সপ্তাহে ওদের বাড়ী যাবো এবং তুইও যাবি আমার সাথে!" রাজ কিছু বলার আগেই রানী উঠে চলে গেলেন! রাজ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো! আজ সকালে আমজাদ চৌধুরী রাজকে ফোন দিয়ে তার অফিসে আসতে বললেন!রাজের অবাক হবার পালা। বাবা তো কখনো তাকে অফিসে ডাকেন না? কি এমন প্রাইভেট কাজ যে বাড়ীতে বললেন না? নাকি বাবাও রাজকে মায়ের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করার প্রেসার দেবেন? রাজ মনে মনে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো! ভেবেচিন্তে কোন কুল কিনারা করতে পারলোনা! তবে এটা স্থির,সে পৌষীকে ছাড়া আর কাউকেও বিয়ে করবেনা! না হলে বিয়ে না করে থাকবে তবু অন্য কাউকে তো প্রশ্নই উঠেনা! লাঞ্চের আগ দিয়ে রাজ বাবার অফিসে পৌঁছুলো। আমজাদ চৌধুরী মিটিংয়ে ছিলেন। ব্রেক নিয়ে ছেলেকে রুমে ডাকলেন! -"আয় বস্ তোর সাথে একটু কথা আছে!" রাজের মাথায় রাজ্যের চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো! ওর বাবা হঠাৎ বললেন-"বিয়ের তো বয়স হয়ে গেলো! বিয়ের কথা কি ভাবছিস? বিয়ে করতে হবেনা?" -"ইয়ে মানে বাবা? আমি তো এসব আসলে ভাবিনি!" -"দ্যাখ্ রাজ,তুই আমার একমাত্র ছেলে! আমি চাইনা তোর জীবনটা কেবল টাকাপয়সার আবর্তে বেঁধে ফেলতে! জীবনে টাকা বহু কামিয়েছি খরচও করেছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি টাকা পয়সা স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারলেও সুখ দিতে পারেনা! তাই আমি তোর জন্য একটা মেয়ের কথা ভেবে রেখেছি! ওকে বিয়ে করলে তুই জীবনে সুখী হবি এটাই আমার বিশ্বাস!" রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলল-"এখানেও সেই এমিকা!"রাজ গলা কেশে বলল- -"বাবা,আমি মাকেও বলেছি,আমি এই মেয়েকে বিয়ে করবোনা! আমার জীবন তোমরা আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে দেবেনা?" -",তোর মাও কি পৌষীর কথা বলেছে নাকি? আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েটা যেহেতু খুবই ঘরোয়া আর ধার্মিক মাইন্ডের তাই ওকে বিয়ে করলে!" বাবার কথা শেষ হবার আগেই রাজ উত্তেজিত হয়ে প্রায় দাঁড়িয়ে গেল-"তুমি কার কথা বলছিলে?" -"কেন,পৌষীর! তোর সাহেদা ফুপির মেয়ে!আমি অবশ্য তোকে চাপ দিতে...!" -"বাবা,আমি রাজী!"বাবার কথা শেষ হবার আগেই রাজ উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলো। আমজাদ চৌধুরী চশমার ওপর দিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন-"মেয়েটা এতিম!তোর কোনো প্রত্যাশা নেই তো! পরে ওকে কষ্ট দিতে পারবিনা! কারন ওর মামাও আমি বাপও আমি! নিজের স্বার্থে তো মেয়েটাকে বিপদে ফেলতে পারিনা! এখন পৌষী যদি রাজী হয়! তোর সাহেদা ফুপিকে বলেছি পৌষীর সাথে কথা বলতে। দেখি রাতে তোর মা'র সাথে কথা বলে দেখি! তুই এখন যেতে পারিস! নাকি লাঞ্চ করবি আমার সাথে?" -"না না না বাবা আমি বাড়ী যাবো!" রাজ বুকের ভেতর টগবগে আবেগকে দমন করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে বেরিয়ে এলো! বাবা যে ওরই স্বপ্নকুমারীকে ওর জন্য পাত্রী হিসেবে নির্বাচন করবে এটা রাজের কল্পনারও অতীত ছিলো!ইস্..পৌষীকে এ মুহূর্তে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে! ও রাজী হবে তো? বারন করে দিবে নাতো আবার?"নানান ভাবনায় আচ্ছন্ন রাজ খুশিতে যেন দিশেহারা হয়ে পড়লো! রানী প্রায় চিৎকার করে উঠলেন-"কি বললে তুমি? অসম্ভব! ফালতু কথা বলোনা রাজের বাবা আমি এ বিয়ে মেনে নেবোনা!কিছুতেই না!" -"কেন সমস্যাটা কি?" -"সমস্যা তোমাকে ব্যখ্যা করে লাভ নেই!তোমার এতিম ভাগ্নিকে লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দাও! ছেলেকে বাড়ীঘর করে দাও আমার আপত্তি নেই! কখনো আপত্তি করেছি? করিনি! কিন্তু আজ না! আমার একমাত্র ছেলের সাথে আমি এটা হতে দেবোনা! -"কিন্তু রাজ কি তোমার কথা মতো এমিকাকে বিয়ে করবে?" -"কেন করবেনা? এমিকার কোন্ ত্রুটি আছে যে রাজ মানা করবে? বললেই হলো? ওকে বাধ্য করবো রাজী হতে নইলে বিষ খাবো এই বলে দিলাম!!" আমজাদ চৌধুরী হাতের মোবাইলটা শব্দ করে টেবিলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লে বললেন-"তোমার যা ইচ্ছে তাই করো! আমি জানি না! তবে খবরদার! এর আঁচ যেন সাহেদা বা ওর মেয়ের ওপর না আসে বলে দিলাম!" -"আমার ছেলের পথে না এলে আমি কাউকে কিছু বলবোনা! তারা থাকুক তাদের মতো! আমি দানছত্র খুলে বসিনি যে এখন নিজের হিরের টুকরো ছেলেও তাদের দান করে দেবো!" বলে গজগজ করতে করতে রানী বেরিয়ে গেলো!আমজাদ চৌধুরী কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! চলবে....!


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৮১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • ★ রোদেলা রিদা ‎★
    User ২ বছর, ৮ মাস পুর্বে
    হায়!gj গল্পটা খুবই সুন্দর!! খুব ভালো লেগেছে gjgjgj