বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ইকারাস পার্ট ১

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Ridiyah Ridhi (০ পয়েন্ট)

X সমুদ্রের পানিতে সূর্যটা পুরোপুরি ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত জহুর বালুবেলায় চুপচাপ বসে রইল। সে প্রতিদিন এই সময়টায় সমুদ্রের তীরে আসে এবং চুপচাপ বসে সূর্যটাকে ডুবে যেতে দেখে। ঠিক কী কারণে দেখে তার কোনে৷ সঠিক ব্যাখ্যা নেই। সে খুবই সাধারণ মানুষ। প্রকৃতি বা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য এসব ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ নেই। যারা তাকে চেনে তাদের ধারণা সে বাউণ্ডুলে এবং ভবঘুরে ধরনের মানুষ। সেটি পুরোপুরি সত্য নয়–অল্প সময়ের ব্যবধানে তার একমাত্র মেয়ে এবং স্ত্রী মারা যাবার পর হঠাৎ করে সে পৃথিবীর আর কোনো কিছুর জন্যেই আকর্ষণ অনুভব করে না। সূর্যটা পুরোপুরি ডুবে যাবার পর জহুর উঠে দাঁড়াল এবং নরম বালুতে পা ফেলে হেঁটে হেঁটে ঝাউগাছের নিচে ছোট টংঘরটাতে হাজির হলো। সেখানে কাঠের নড়বড়ে বেঞ্চটাতে বসে জহুর এক কাপ চায়ের অর্ডার দেয়। তার যে চা খেতে খুব ইচ্ছে করে তা নয়, তারপরেও সে রুটিনমাফিক এখানে বসে এক কাপ চা খায়। যে ছেলেটা দুমড়ানো কেতলি থেকে কাপে গরম পানি ঢালে, দুধ চিনি দিয়ে প্রচণ্ড বেগে একটা চামচ দিয়ে সেটাকে ঘুঁটে তার সামনে নিয়ে আসে জহুর বসে বসে তার কাজকর্ম লক্ষ করে। কেন লক্ষ করে জহুর নিজেও সেটা জানে না। এখন তার জীবনের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই, একদিন থেকে পরের দিনের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। জহুর অন্যমনস্কভাবে চায়ের কাপে চুমুক দেয়, চা টা ভালো হয়েছে না মন্দ হয়েছে জহুর সেটাও বুঝতে পারল না। অনেকটা যন্ত্রের মতো কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে সে সামনের দিকে তাকালো এবং দেখল মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। জহুরের ভাসা ভাসাভাবে মনে হলো এই মানুষটা সে আগে কখনো দেখেছে কিন্তু ঠিক কোথায় দেখেছেমনে করতে পারল না। মানুষটার সামনের দিকে চুল পাতলা হয়ে এসেছে, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি এবং গায়ে একটা ভুসভুসে নীল রঙের শার্ট। জহুর মানুষটাকে এক নজর দেখে আবার তার চায়ের কাপে চুমুক দেয়, এবারে তার মনে হলো চায়ে চিনি একটু বেশি দেয়া হয়েছে—তবে তাতে তার কিছু আসে যায় না। কোনো কিছুতেই তার কখনো কিছু আসে যায় না। জহুর চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে আবার সামনের দিকে তাকালো, দেখাল মাথার সামনে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া মধ্যবয়স্ক মানুষটা এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। জহুর একটু অস্বস্তি অনুভব করে, সে নিজে সুযোগ পেলেই তার চারপাশের মানুষকে লক্ষ করে, কিন্তু সেটা সে করে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। এই মানুষটি তাকে লক্ষ করছে সরাসরি, এক দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে। জহুর একটু ঘুরে বসবে কি না চিন্তা করছিল তখন মধ্যবয়স্ক মানুষটা সামনের বেঞ্চ থেকে উঠে তার পাশে এসে বসে জিজ্ঞেস করল, “ভাই। আপনি কী করেন?" জহুর কী বলবে ঠিক বুঝতে পারল না, একজন মানুষ—যার সাথে চেনা পরিচয় নেই তাকে সরাসরি এভাবে এ রকম একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারে কি না সেটা সে একটু চিন্তা করল। যে আসলে কিছুই করে না, সে কী বলে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে? জহুর অবশ্য বেশ সহজভাবেই উত্তর দিল, বলল, “কিছু করি না।" মধ্যবয়স্ক মানুষটা তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, “কিছু করতে চান?" জহুর এবারে একটু অবাক হয়ে মানুষটার দিকে তাকালো, জিজ্ঞেস করল, “আমি?” “জি। আপনি কি কোনো কাজ করতে চান?” “কাজ? আমি?" "হ্যা।" মানুষটা মাথা নেড়ে মুখের মাঝে হাসি হাসি একটা ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। জহুর কয়েক সেকেন্ড মানুষটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “কী কাজ?" মানুষটা একটু ইতস্তত করে বলল, “আপনি যদি কাজ করতে চান তাহলে বলি কী কাজ। যদি না করতে চান তাহলে—“জহুর খুব বেশি হাসে না, কিন্তু এবারে সে একটু হাসার চেষ্টা করল, বলল, “কাজটা কী সেটা যদি না জানি তাহলে করতে চাইব কি না কেমন করে বলি? যদি বলেন অস্ত্র চোরাচালানের কাজ—” মধ্যবয়স্ক মানুষটা সবেগে মাথা নাড়ল, বলল, “না না না কোনো বেআইনি কাজ না। খাঁটি কাজ। তবে—" “তবে কী?” “নয়টা পাঁচটা কাজ না। চব্বিশ ঘণ্টার কাজ।” “চব্বিশ ঘণ্টার?” "জি।" “কোথায়?” মধ্যবয়স্ক মানুষটা আবার তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, “এটাই হচ্ছে সমস্যা।” জহুর ভুরু কুঁচকে বলল, “সমস্যা?" “জি।” মানুষটা মাথা নাড়ে। “এইটাই একটু সমস্যা।" “কেন? সমস্যা কেন?” “কাজটা অনেক দূরে। সমুদ্রের মাঝখানে।” “সমুদ্রের মাঝখানে?” মানুষটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করল, “সমুদ্রের মাঝখানে একটা দ্বীপের উপরে একটা হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। খুব হাইফাই হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের কাজ।” “সমুদ্রের মাঝখানে হাইফাই হাসপাতাল?” মানুষটি মাথা নাড়ল। জহুর ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “সমুদ্রের মাঝখানে হাসপাতালের দরকার কী? সমুদ্রে কে থাকে?” “সেটা অনেক লম্বা ইতিহাস। " মানুষটি চুপ করে গেল, জহুর একটু অপেক্ষা করে কিন্তু মানুষটার মাঝে সেই লম্বা ইতিহাস বলার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। জহুর জিজ্ঞেস করল, “শুনি সেই লম্বা ইতিহাস।” মানুষটি একটু ইতস্তত করে বলল, “আসলে সেটা নিয়ে আমরা বেশি কথা বলাবলি করি না। আমাদের কাদের স্যার হাসপাতালটা নিয়ে বেশি হইচই করতে না করেছেন।” “কাদের স্যারটা কে?"“কাদের স্যার এই হাসপাতাল তৈরি করেছেন। অনেক বড় ডাক্তার। " জহুর মাথা নেড়ে বলল, “আমি পুরো ব্যাপারটা এখনো ভালো করে বুঝতে পারি নাই। কিন্তু আপনার যদি বলা নিষেধ থাকে, ব্যাপারটা গোপন হয় তাহলে থাক – " মানুষটা ব্যস্ত হয়ে বলল, “না—না— না। এটা গোপন না, গোপন কেন হবে? কিন্তু আমাদের কাদের স্যার নিজের প্রচার চান না। সেই জন্যে এটা নিয়ে আমাদের বেশি কথাবার্তা বলতে না করেছেন। কিন্তু আপনাকে বলতে সমস্যা নাই—আপনি তো আর পত্রিকার লোক না।” কথা শেষ করে মানুষটা একটু হাসার চেষ্টা করল। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো পত্রিকার লোকেরা খুব বিপজ্জনক মানুষ। জহুর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমি আসলে এখনো ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বুঝতে পারি নাই। একটা হাসপাতাল যদি সমুদ্রের মাঝখানে একটা দ্বীপের মাঝে হয় তাহলে রোগীরা সেখানে যাবে কেমন করে? সাঁতার দিয়ে?" জহুরের কথা শুনে মানুষটা হা হা করে হেসে উঠল, যেন এটা খুব মজার একটা কথা, হাসতে হাসতে বলল, “না না রোগীরা সাঁতরে সাঁতরে হাসপাতালে যায় না। রোগী আনার জন্যে হেলিকপ্টার আছে।" “হেলিকপ্টার?” জহুর চোখ কপালে তুলে বলল, “হেলিকপ্টার?" "জি।” মানুষটা মাথা নেড়ে বলল, “আপনাকে বলেছি এটা অনেক হাইফাই হাসপাতাল। এখানে হেলিকপ্টার আছে, স্পিডবোট আছে, বড় জাহাজ আছে, আলাদা পাওয়ার স্টেশন আছে আর হাসপাতাল তো আছেই ।জহুর এবারে পুরো ব্যাপারটা খানিকটা অনুমান করতে পারে। হাসপাতাল বললেই চোখের সামনে যে রকম একটা বিবর্ণ দালানের ছবি ভেসে ওঠে, যার কোনায় কোনায় পানের পিকের দাগ থাকে, যার বারান্দায় রোগীরা শুয়ে থাকে এবং মাথার কাছে আত্মীয়স্বজন উদ্বিগ্ন মুখে পাখা দিয়ে বাতাস করে—এটা সে রকম হাসপাতাল না। এটা বড়লোকদের হাসপাতাল, তারা হেলিকপ্টারে করে এখানে আসে। এটা আসলে নিশ্চয়ই হাসপাতালের মতো না, এটা ফাইভস্টার হোটেলের মতো। এখানে যেটুকু না চিকিৎসা হয় তার থেকে অনেক বেশি আরাম আয়েস করা হয়। সমুদ্রের মাঝে ছোট একটা দ্বীপে বড়লোকেরা বিশ্রাম নিতে আসে, সময় কাটাতেআসে। সে জন্যে এই হাসপাতালের কথা পত্রপত্রিকায় আসে না, সাধারণ মানুষ এর কথা জানে না। যাদের জানার কথা তারা ঠিকই জানে। পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করে কেন জানি জহুরের একটু মন খারাপ হলো, সে ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মধ্যবয়স্ক মানুষটা জহুরের মন খারাপের ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারল না, সে বেশ উৎসাহ নিয়ে বলতে থাকল, “বুঝলেন ভাই, নিজের চোখে না দেখলে আপনি বিশ্বাস করবেন না। হাসপাতালের মেঝে তৈরি হয়েছে ইতালির মার্বেল দিয়ে দেখলে চোখ উল্টে যাবে।” জহুর বলল, "অ" “থাকার জন্যে আলাদা কোয়ার্টার। ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস ট্যাপ খুললেই গরম পানি নিজেদের ডিশ। ইন্টারনেট, কম্পিউটার সব মিলিয়ে একেবারে যাকে বলে ফাটাফাটি অবস্থা।” জহুর এবারে একটু ক্লান্তি অনুভব করে, ছোট একটা হাই তুলে বলল, “আমার চাকরিটা কী রকম হবে?" “অনেক রকম চাকরি আছে। আপনার কীরকম লেখাপড়া, কীরকম অভিজ্ঞতা তার ওপর চাকরি। তার ওপর বেতন।" “আমার লেখাপড়া নাই।" জহুর দাঁত বের করে হেসে বলল, “আমার কোনো অভিজ্ঞতা নাই।” মাঝবয়সী মানুষটার এবার খানিকটা আশাভঙ্গ হলো বলে মনে হলো। সরু চোখে জিজ্ঞেস করল, “লেখাপড়া নাই?” “নাহ্ । গ্রামে মানুষ হয়েছি, চাষ বাস করেছি। লেখাপড়ার দরকার হয় নাই, করিও নাই। পত্রিকাটা কোনোমতে পড়তে পারি। পত্রিকায় যে সব খবর থাকে এখন মনে হয় ওইটা না পড়তে পারলেই ভালো ছিল।” “অ।" মানুষটা এবারে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “বেশি লেখাপড়া না জানা মানুষেরও চাকরি আছে।” জহুর একটু উৎসাহ দেখানোর ভান করে বলল, “আছে নাকি?” “জি। আছে।” “সেটা কী চাকরি?” “এই মনে করেন কেয়ারটেকারের চাকরি ।" জহুর একটু হাসার ভঙ্গি করল, বলল, “তার মানে দারোয়ানের চাকরি?”


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৭৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ইকারাস পার্ট ৩
→ ইকারাস পার্ট ২

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now