বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দীপু নাম্বার টু (১০)

"ছোটদের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X দীপু চুপ করে রইল। কেন জানি তার চোখে পানি এসে গেল, তার মা বেঁচে আছেন অথচ একটিবার তার কথা মনে করলেন না? একটিবার তাকে দেখতে চাইলেন না? আব্বা ওকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, তোকে আমি খুব শক্ত করে মানুষ করছি দীপু, যখন বড় হবি তখন দেখবি ছোটখাটো দুঃখকষ্টকে ভয় পাবি না। তোকে এতদিন তোর মায়ের কথা বলিনি, ভেবেছিলাম বড় হলে বলব। কিন্তু– কিন্তু কী– সেদিন তোর মায়ের একটা চিঠি পেলাম, ও ঢাকা এসেছে কয়েকদিনের জন্যে। দীপু ভয়ানক চমকে উঠে ওর আব্বার দিকে তাকাল, ওর আম্মা তা হলে ঢাকাতে আছেন? আব্বা আস্তে আস্তে বললেন, তোকে একবার দেখতে চায়। দীপুর দু’চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে আসে। আব্বা আস্তে আস্তে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, আমি না করে দিয়েছিলাম, বলেছিলাম যে, তোকে তোর মায়ের কথা জানতে দিইনি, চাই না জানুক। মা ছাড়াই ও মানুষ হোক। কিন্তু কদিন থেকেই আমার মনে হচ্ছে, কাজটা কি ভাল করলাম? আমার নিজের মা আমাকে যা আদর করত! তোর মাও নিশ্চয়ই তোর জন্যে খুব ফীল করে, আদর করার সুযোগটা আর পায় না। আব্বা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তোর মা আবার আগামীকাল রাতে আমেরিকা চলে যাচ্ছে, আর হয়তো আসবে না। তাই আমি ভাবছিলাম, যদি তোকে এবারে তার সাথে দেখা করতে না দিই, হয়তো আর কোনোদিন তোদের দেখা হবে না। যাবি তোর মাকে দেখতে? দীপু আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না, আব্বাকে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল। আব্বা খুব আস্তে আস্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। মৃদু গলায় বললেন, যাবি তোর মায়ের সাথে দেখা করতে? তা হলে আর দেরি করিস না বাবা। বারোটার সময় ট্রেন ছাড়বে, কাল খুব ভোরে পৌঁছে যাবি ঢাকা। তুমি যাবে না? আব্বা একটু হেসে বললেন, কেন, তুই একা যেতে পারবি না? দীপু ঘাড় নাড়ল, পারব। . দীপু ঢাকা স্টেশনে ট্রেন থেকে নামল খুব ভোরে! ঢাকায় ও আগে যখন এসেছে তখন সাথে ছিলেন আব্বা, এবারে ও একা একা। ঘুরে বেড়াতে তার কখনও কোনো ভয় নেই, বরং ভালই লাগে। এবারে ব্যাপারটি অবশ্যি অন্যরকম। ট্রেনে ঘুমানোর জায়গা পেয়েছিল তবু সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারেনি। ও যতবার চোখ বন্ধ করেছে ততবার আম্মার ছবি দেখতে পেয়েছে। ও জানত না ওর আব্বার কাছে ওর আম্মার ছবি ছিল। আগে অনেক জিজ্ঞেস করেছিল, আব্বা বলেছিলেন, নেই। এবারে জিজ্ঞেস করার পর ট্রাঙ্ক খুলে একটি ছবি বের করে আনলেন। ছবিতে ওর আব্বাকে দেখাচ্ছে খুব কম বয়স, পাশে ওর আম্মা। আর ওর আম্মার কোলে সে নিজে একেবারে ন্যাদা ন্যাদা বাচ্চা। ওর আম্মা কী হাসছেন, মনে হচ্ছে বুঝি হাসির শব্দ শুনতে পাওয়া যাবে! আর ওর আব্বা বাচ্চা ছেলের মতো জোর করে হাসি চেপে আছেন, যেন ভারি একটা মজার ব্যাপার আছে, কাউকে বলা যাবে না। ছবিটি দেখে ওর অভিমানে গলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোনোমতে আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আব্বা তোমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল কেন? আব্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ছাড়াছাড়ি যে কেন হল তোকে বোঝানো মুশকিল! ঝগড়া হয়েছিল? হুঁ, অনেকটা ঝগড়ার মতোই। কেন ঝগড়া করলে তোমরা? প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করতে পারেনি। ওর আম্মার সাথে দেখা হলে সে জিজ্ঞেস করে দেখবে। দীপুর আবার চোখে পানি এসে যায়। স্টেশনের বাথরুমে দীপু দাঁত ব্রাশ করে পরিষ্কার হয়ে নিল। আয়নায় ও দেখতে পেল ওর চোখ লাল আর চুল উষ্কখুষ্ক। মিছেই হাত দিয়ে কয়েকবার চুল ঠিক করার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল। আব্বা ঠিকানা লিখে দিয়েছেন, সেটা বুক-পকেটে আছে। কিন্তু এতবার ও ঠিকানাটা পড়েছে যে, মুখস্থ আছে ওর। ও বাইরে এসে একটা রিকশা ঠিক করল। অনেক দূর এখান থেকে। অন্য সময় হলে সে ঠিক খুঁজে খুঁজে বাসা বের করে ফেলত। এবারে ওর বাসে যেতে ইচ্ছে করছিল না—একা একা রিকশা করে যেতে ইচ্ছে করছিল। ঢাকায় যতবার এসেছে ততবারই ওর খুব ভাল লেগেছে। যখনই নতুন কোনো জায়গায় যায়, ওর চোখ ঘুরিয়ে দু পাশে দেখতে খুব ভাল লাগে। কত মজার মজার দোকানপাট, বাড়িঘর, কত মজার লোকজন! এবারে ও কিছুতেই মন দিতে পারছিল না। ওর কেমন জানি ভয় ভয় লাগছিল, আর অদ্ভুত একটা অভিমান হচ্ছিল। কার ওপর কে জানে! ওর আম্মা কেমন, দেখা হলে ও প্রথম কী বলবে, ও ঠিক করতে পারছিল না। যদি ওর নাম শুনে চিনতে না পারেন, তা হলে সে কী বলবে?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৫৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now