বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মাসায়েল
উত্তর প্রদান করছেন
মোহাম্মদ শাহ জালাল
সহকারী অধ্যাপক, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আইআইইউসি।
-------------------------------
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য মাহরাম ছাড়া সফর করার বিধান কী? কারো যদি স্বামী বা মাহরাম না থাকে তাহলে সে কি হজ্জ করতে পারবে না?
উত্তর: ইসলামে মহিলাদের সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। তাই যে ক্ষেত্রে তাদের সম্মান ও মর্যাদা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য ইসলাম বিশেষ বিধান দিয়েছে। এই মুলনীতির আলোকে ইসলামের সাধারণ বিধান হচ্ছে যে, স্বামী বা মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করা মহিলাদের জন্য বৈধ নয়। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন:
لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِلاَّ مَعَ ذِى مَحْرَمٍ
‘নারীরা যেন মাহরাম ছাড়া তিন দিনের দূরত্বের সফরে না যায়’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১০৮৬)। অপর এক হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন:
لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ سَفَرًا يَكُونُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَصَاعِدًا إِلَّا وَمَعَهَا أَبُوهَا أَوْ أَخُوهَا أَوْ زَوْجُهَا أَوْ ابْنُهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا
‘যে নারী আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে, তার জন্য তার পিতা অথবা ভাই অথবা স্বামী অথবা পুত্র কিংবা অন্য কোন মাহরাম ছাড়া তিন দিন বা তার চেয়ে বেশী দূরত্বের সফরে যাওয়া বৈধ নয়’ (সুনান আল-তিরমিজী, হাদিস নং ১০৮৯)। কোন কোন হাদিসে দুই দিনের সফর আবার কোন কোন হাদিসে এক দিনের সফর থেকেও নিষেধ করা হয়েছে। যেমন আবু সাঈদ খুদরি (র.) এর বর্ণনায় রয়েছে:
لَا تُسَافِرْ الْمَرْأَةُ يَوْمَيْنِ إِلَّا مَعَهَا زَوْجُهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ
‘নারীরা যেন স্বামী কিংবা মাহরাম ছাড়া দুই দিনের দূরত্বের সফরে না যায়’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১১২২)। অপর দিকে আবু হুরাইরা (রা.) এর বর্ণনায় রয়েছে:
لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لَيْسَ مَعَهَا حُرْمَةٌ
‘যে নারী আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে, তার জন্য মাহরাম ছাড়া এক দিন ও এক রাত্রির চেয়ে বেশী দূরত্বের সফরে যাওয়া বৈধ নয়’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১১২৬)। এ কারণে সফরের দূরত্ব নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশের মতে এর পরিমান দুই দিনের দূরত্ব বা প্রায় ৮০ কিলোমিটার।
মহিলাদের সফরের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ মুলনীতি। এই মুলনীতির বাহিরে আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী মহিলাগন দুই অবস্থায় স্বামী বা মাহরাম ছাড়া একাকী সফর করতে পারেন।
ক. নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য: কোন মহিলা যদি শত্রুদের হাতে বন্দী হয়, কিংবা কোন পরিবেশে নিজের জীবন, ধার্মিকতা কিংবা পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে শঙ্কিত হয়, তাহলে ঐ জায়গা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সফর করা তার কর্তব্য। এরূপ অবস্থায় স্বামী বা মাহরামের শর্ত প্রজোয্য নয়।
খ. যাত্রাপথের দূরত্ব কম হলে: যাত্রাপথ নিরাপদ এবং এর দূরত্ব সফরের দূরত্বের চেয়ে কম হলে মহিলাগন একাকী সফর করতে পারেন।
এ ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে মাহরাম ছাড়া মহিলাদের একাকী সফর বৈধ কী না- সে ব্যাপারে ইমামদের মতভেদ রয়েছে। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।
ক. ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ ও অধিকাংশ আহলুল হাদিসের ব্যাখ্যানুযায়ী উপরোক্ত দুই ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া মহিলাদের একাকী কোন সফরই বৈধ নয়। এমনকি হজ্জ ও ওমরার সফরও বৈধ নয়। কারণ রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন:
لَا تُسَافِرْ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ وَلَا يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ فِي جَيْشِ كَذَا وَكَذَا وَامْرَأَتِي تُرِيدُ الْحَجَّ فَقَالَ اخْرُجْ مَعَهَا
‘নারীরা যেন মাহরাম ছাড়া সফরে না যায় এবং মাহরাম ছাড়া কোন বেগানা পুরুষও যেন তাদের কাছে প্রবেশ না করে’। এক ব্যক্তি বলল: ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি উমুক সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে যেতে চাই, কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জে যেতে চায়’। তখন রাসুল (স.) বললেন: ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জে যাও’ (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৭১৯)। অন্য বর্ণনায় আছে: لاَ تَحُجَّنَّ امْرَأَةٌ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ- ‘মাহরাম ছাড়া যেন কোন মহিলা হজ্জ না করে’ (সুনান আল-দারুকুতনী, হাদিস নং ২৪৬৭)।
খ. ইমাম মালেক ও ইমাম শাফিয়ীর মতে ওয়াজিব কাজের সফরের জন্য মাহরাম শর্ত নয়। তাই নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সাথী (যেমন: দ্বীনদার পরহেজগার হজ্জযাত্রীর দল, আস্থাভাজন মহিলাদের জমায়েত ইত্যাদি) থাকলে মহিলারা মাহরাম ছাড়াই ফরজ হজ্জ বা ওমরা করতে পারেন। কারণ স্বামী বা মাহরাম ব্যক্তি মহিলাদেরকে ফরজ কাজে বাধা দিতে পারেন না এবং হজ্জ বা ওমরা ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্তও নয়। যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
وَلِلَّهِ عَلَى الناسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً
‘যাদের আল্লাহর ঘরে যাওয়ার সামর্থ আছে, তাদের উপর হজ্জ ফরজ’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত নং ৯৭)। সামর্থ বলতে বুঝায় বাহন ও পাথেয়কে।
এ ছাড়া হযরত আদি বিন হাতেম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমি রাসুল (স.) এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন:
فَإِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ لَتَرَيَنَّ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنْ الْحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالْكَعْبَةِ لَا تَخَافُ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ
‘তুমি যদি দীর্ঘায়ু লাভ কর, তাহলে তুমি দেখবে যে, মহিলারা হিরা (প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, যা বর্তমান ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল) থেকে একাকী হজ্জ করতে আসবে। কাবার চারপাশে তাওয়াফ করবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তারা ভয় পাবে না’ (সহীহ আল-বুখারী, হাদিস নং ৩৩২৮)। অন্য এক বর্ণনায় আছে:
فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُتِمَّنَّ اللَّهُ هَذَا الْأَمْرَ حَتَّى تَخْرُجَ الظَّعِينَةُ مِنْ الْحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالْبَيْتِ فِي غَيْرِ جِوَارِ أَحَد
যার হাতে আমার জীবন, তার শপথ! আল্লাহ অবশ্যই এই দ্বীনের পূর্ণতা দান করবেন। এমনকি মহিলাগন কারো সঙ্গ ছাড়াই হিরা থেকে বাইতুল্লার ত্বাওয়াফ করতে আসবে (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ১৮২৬০)। তবে সফর যদি মুস্তাহাব বা বৈধ কাজে হয়, তাহলে মাহরাম ছাড়া মহিলাদের জন্য একাকী সফর করা বৈধ নয়।
গ. ইমাম ইবনে হাজম, ইবনে তাইমিয়া ও শাফিয়ী মাজহাবের কোন কোন ইমামের মতে ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজের জন্য মহিলারা নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সাথীদের সাথে সফর করতে পারেন। মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের সফরের জন্য মাহরাম বা স্বামীর শর্তারোপ করা হয়েছে। সুতরাং অন্য কোন ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও তারা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম নাওয়ায়ী সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন:
لا يشترط المحرم بل يشترط الأمن على نفسها
‘মাহরাম শর্ত নয়, বরং মহিলার নিরাপত্তাই শর্ত’ (শারহু সহিহ মুসলিম, ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৪)। হাসান বসরী (র.) বলেন:
المسلم محرم، ولعل بعض من ليس بمحرمٍ أوثق من المحرم
‘পরহেজগার মুসলিম মাহরাম হিসাবে গন্য। কোন কোন ব্যক্তি মাহরাম না হলেও মাহরামের চেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য। (শরহু সহিহ আল-বুখারী,ইবনু বাত্তাল, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৩)। এ ছাড়া রাসুল (স.) তার মেয়ে জয়নব (র.) কে মক্কা থেকে মদিনায় নিয়ে আসার জন্য জায়েদ বিন হারিসাকে পাঠিয়েছিলেন- অথচ তিনি তার মাহরাম ছিলেন না। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) তার প্রতিবেশী মহিলাদের সাথে নিয়ে হজ্জে যেতেন। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে মহিলারা প্রয়োজনে অভিভাবকের অনুমতি স্বাপেক্ষে মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারেন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now