বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দীপু নাম্বার টু (৯)

"ছোটদের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X সেরাতে ঘুমাতে গিয়ে দীপুর হঠাৎ ওর আব্বার কথা মনে পড়ল। ওর আব্বা বলেছিলেন, যদি ওর কখনও তারিককে ভাল লেগে যায়, তা হলে তারিকেরও ওকে ভাল লাগবে, প্রাণের বন্ধু হয়ে যাবে দু’জনে! এখন তো ওর তারিককে খুব ভাল লাগছে, যত রাগ ছিল সব চলে গিয়েছে। তারিকের কি ওকে এখন ভাল লাগবে? না লাগলেও সে আর কিছু মনে করবে না কাল ভোরেই তারিকের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলবে। দুদিন হল দীপু লক্ষ্য করছে, তার আব্বা কী নিয়ে যেন খুব চিন্তিত। যতক্ষণ বাসায় থাকেন সবসময় এঘর থেকে ওঘরে হাঁটতে থাকেন। অনেক সময় হাতে সিগারেট নিয়ে বসে থাকেন, টানতে পর্যন্ত মনে থাকে না, সিগারেট লম্বা ছাই জমে টুপ করে মেঝের ওপর পড়ে। দীপুর অস্বস্তি লাগে, যখন হঠাৎ করে বুঝতে পারে তার আব্বা কেমন করে জানি তার দিকে তাকিয়ে আছেন। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করে দেখেছে, আব্বা বলার চেষ্টা করে বলেছেন, না, কিছু হয়নি। রাতে হঠাৎ দীপুর ঘুম ভেঙে যায়, বুঝতে পারে আব্বা তার মাথার কাছে চুপচাপ বসে আছেন। খুব আস্তে আস্তে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। দীপু ঘুমিয়ে থাকার ভান করে শুয়ে রইল, যদিও ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আব্বার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। আগেও অনেকবার এরকম হয়েছে। ওর মনে আছে, একবার প্রচণ্ড ঝড়ের রাতে ওর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। কাঁচের জানালা দিয়ে বিদ্যুঝলকের সাথে দেখতে পাচ্ছিল প্রচণ্ড ঝড়ে গাছগুলো মাতামাতি করছে, দেখে মনে হয় গাছগুলো যেন মানুষ—যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ঝড়কে ও ভয় পায় না, কিন্তু সে-রাতে কেন জানি ওর ভয় ভয় লাগছিল। শুধু ভয় নয়, তার কেন জানি মন-খারাপ লাগছিল, বুকের ভেতর ফঁকা ফাঁকা লাগছিল ওর। কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল। ঠিক সেসময় আব্বা পাশের ঘর থেকে উঠে এসে ডাকলেন। বাবা দীপু, ঘুমিয়ে আছিস? ও বলল, না আব্বা, আমার ভয় লাগছে। ভয় কী বাবা, বলে আব্বা বিছানায় ওর পাশে এসে বসলেন আর ও বাচ্চা ছেলের মতো ওর আব্বার বুকের মাঝে গুটিসুটি মেরে পড়ে রইল। আব্বার শরীরের ঘ্রাণ ওর কত চেনা, ওর তখন যে কী ভাল লাগছিল! শক্ত করে আব্বাকে ধরে ও শুয়ে রইল, সব ভয় যে ওর কোথায় চলে গেল। আজ রাতেও দীপুর ইচ্ছে ওর আব্বাকে ধরে শুয়ে থাকতে। কিন্তু কেন জানি ও তবু চুপ করে শুয়ে রইল। শুনতে পেল, আব্বা খুব ধীরে ধীরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! কেন জানি দীপুর ভারি মন-খারাপ হয়ে গেল। . সকালে স্কুলে যাবার আগে আব্বা ওকে বললেন, দীপু, তোর আজ স্কুলে যেতে হবে না। দীপু একটু ভয় পেয়ে বলল, কেন আব্বা? কাজ আছে একটু। আগেও অনেকবার এরকম হয়েছে। স্কুল খোলা, অথচ আব্বা তাকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে চলে গেলেন। একবার কী একটা পরীক্ষা পর্যন্ত দেয়া হল। না, রেজাল্ট খারাপ হয়ে গেল শেষে। আব্বা হেসে বললেন, রেজাল্ট খারাপ হলে কী হয়? বেশি ভাল রেজাল্ট হলে অহঙ্কারী হয়ে যাবি, ভাববি আমি কী হনু রে। অথচ আজ সে আব্বাকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করতে পারল না কী কাজ। একটা চাপা ভয় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। একটু পরেই আব্বা তাকে তার ঘরে ডাকলেন। বিছানায় হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন চুপচাপ। দীপুকে একেবারে কাছে ডেকে নিয়ে বসালেন। সচরাচর ওরকম করেন না। দীপু একটু অবাক হল। আব্বা আস্তে আস্তে বললেন, দীপু, আজ তোকে একটা জিনিস বলব। দীপু কেন জানি খুব ভয় পেয়ে গেল। শুকনো গলায় বলল, কী? আব্বা তবু খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই জানিস যে তার আম্মা মারা গেছেন, না? দীপু ফ্যাকাসে মুখে মাথা নাড়ল। আসলে— দীপু ভয়ানক চমকে উঠে বলল, আসলে কী? আসলে তোর আম্মা এখনও বেঁচে আছে। কয়েক সেকেন্ড দীপু কিছু বুঝতে পারল না, শূন্য দৃষ্টিতে আব্বার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে ও বুঝতে পারল আব্বা কী বলছেন। চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল, ভাঙা গলায় বল, কী বললে? আব্বা ওকে শক্ত করে বুকে ধরে রাখলেন, আস্তে আস্তে বললেন, আমি তোকে এতদিন মিছে কথা বলে এসেছি দীপু। আসলে তোর আম্মা এখনও বেঁচে আছে। দীপু কোনোমতে বলল, কোথায়? আমেরিকা। তোর জন্মের পর তোর আম্মা আর আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। তোর মা তোকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, আমি দেইনি। তোকে আমার কাছে রেখেছি। আব্বা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন, তার কয়দিন পর তোর মা আমার এক বন্ধুকে বিয়ে করে আমেরিকা চলে গেছে। তার আরও দুটি ছেলেমেয়ে হয়েছে বলে শুনেছি। এতদিন তোকে আমি কিছু বলিনি। ভাবতাম, যদি তোকে জানতে দিই যে তোর মা বেঁচে আছে, তা হলে হয়তো শুধু শুধু কষ্ট পাবি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৮৫ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now