বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
পাশের ঘর থেকে সম্পাদক শামীম ভাই (শামীমুজ্জামান) ইন্টারকমে ফোন করলেন মাসুদকে। শামীম ভাই লোকটা ভীষণ কৌতূহলোদ্দীপক একজন মানুষ । ইংরেজিতে যাকে বলে ইন্টারেস্টিং চরিত্র। এই লোকের মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে থাকে। তিনি কখনোই রাগেন না। কখনোই কেউ তাকে উত্তেজিত হতে দেখেনি। প্রবল বিপদেও তার মাথা ঠা! জরুরি প্রয়োজনেও কেউ তাকে ছুটতে দেখেনি। হস্তদন্ত হতে দেখেনি। তিনি হলেন ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। তিনি হয়তো দুপাটি দাঁত বের করে হাসিমাখা মুখে সবাইকে ডেকে বলবেন, শোনো, আমাকে একটু বেরুতে হবে, আজকে আমার ছোটবোনটা আবার ডেলিভারির সময় মারা গেছে । আমার খুবই আদরের ছোটবোন। বোনটা মারা গেছে, বাচ্চাটা বেঁচে আছে। ভারি সুন্দর হয়েছে দেখতে বাচ্চাটা। ফিরে এসে বাকি কাজটা সারব। কেউ কিছু চিন্তা কোরো না। বলে আবার তিনি হাসবেন। এত ঠাণ্ডা ও অমায়িক ধরনের মানুষ তিনি, কিন্তু তাই বলে তার কোনো কাজ পড়ে থাকে না । হাসিমুখে ঠাণ্ডা মাথায় জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই তার বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজে বিশেষ করে সাপ্তাহিক পত্রিকার জগতে তাকে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের একজন বলে গণ্য করা হয় ।
শামীম ভাই ইন্টারকম তুলে মাসুদের নাম্বারে ডায়াল করলেন।
মাসুদ ধরল। হ্যালো... শামীম ভাই বললেন, মাসুদ...
সম্পাদক ডেকেছেন, মাসুদ আক্ষরিক অর্থেই কাঁপতে লাগল, জি জি শামীম ভাই...
বাবুরে নিয়া একটু আসো। জি শামীম ভাই... এক্ষুনি আসতেছি... মাসুদের বুকের কাঁপন তার গলায় ধরা পড়ছে।
ফোন রেখে সে বাবুকে বলল, শামীমভাই কইছে তোমারে কানে ধইরা নিয়া যাইতে... চলো...এইটা মাসুদ বানিয়ে বলল, ডেকে আনতে বললে বেঁধে আনে, মাসুদ সব সময় বাবুর ব্যাপারে এই নীতি মেনে চলে।
বাবু বলল, ডাকল?
মাসুদ বলল, হ্যা। খালি ডাকে নাই। কী কইলাম। কানে ধইরা নিতে কইছে...বাবু আর মাসুদ তাদের দুই ডেস্কের রুম থেকে চলল সম্পাদকের
শামীম ভাই বসে আছেন তার টেবিলে। রুমটা খুবই আধুনিকভাবে ও রুচিসম্মতরূপে সাজানো। পেছনে রনবীর আঁকা একটা ছাগলের ছাপচিত্র। বেশ বড়। ছাগলটা একটা দড়ি ছেঁড়ার চেষ্টা করছে। এক পাশে একটা আফ্রিকান মুখোশ। রংদার। একদিকে একটা উইনডো ধরনের এয়ারকুলার ঝিমঝিম শব্দ করে চলছে। শামীম ভাই এসি ছাড়া থাকতে পারেন না। পৌষ মাসের শীতেও তিনি এসি ছেড়ে হাফহাতা শার্ট পরে এই রুমে বসে থাকেন। তার টেবিলটা বেশ বড়। ভদ্রলোক পরিচ্ছন্ন ও শৌখীন। টেবিলের পেছনে নানা রকমের জীবন্ত ক্যাকটাস। টেবিলে দুটো ফোন।
মাসুদ আর বাবু ঢুকল সম্পাদকের কক্ষে। বসো। শামীম ভাই হাসিমুখে বললেন।
ওরা টেবিলের এক পাশে রাখা চেয়ার দুটো টেনে নিয়ে বসল। অটবির চেয়ার। চেয়ারের গায়ে এখনও কোম্পানির স্টিকার লাগানো রয়ে গেছে। শামীম ভাই বললেন, আমরা নেক্সট সংখ্যার কভার স্টোরি কী ঠিক
করছি? মাসুদ স্বভাবতই নার্ভাস, সে তোতলাচ্ছে, গ... গ...
বাবু বলল, গণগ্রেপ্তার
শামীম ভাই বললেন, ভালোই তো। স্টোরি লিখতেছে কে? মাসুদ বলল, রও...র...
বাবু বলল, রওশন ভাই কাজ করতেছে। অনেক দূর করছে...
শামীম ভাই পিয়নের নাম ধরে ডাকতে লাগলেন, রাজ্জাক রাজ্জাক... রাজ্জাক গেছে কই? বাবু বলল, লেখা আনতে বাইরে গেছে। কেন কিছু লাগবে।
শামীম ভাই বলল, একটু চা খাইতাম। বসো আমিই বলে আসি... বাবু বলল, আরে বসেন। আমি যাচ্ছি....
বাবু উঠে গেল চায়ের কথা বলতে। রাজ্জাককে বলা আর দেয়ালকে বলা একই কথা। রাজ্জাক এই অফিসের একটা প্রাগৈতিহাসিক চরিত্র। নরসিংদির ছেলে। একবার একটা লেখা ওর হাতে দিয়ে বলা হয়েছিল কম্পিউটার রুমে দিয়ে আসতে, ও লেখা নিয়ে সোজা নরসিংদি চলেগেছল। এসেছিল তিনদিন পরে। কী ব্যাপার লেখা নিয়ে কই গায়েব হয়ে গেছলা! স্যার, পকেটে ভরছিলাম ভুইলা গেছলাম।
তা তিনদিন আসলা না কেন? প্রথমে ছিল বাংলাদেশের নববর্ষ, পরের দিন আসলটা, ইন্ডিয়ার পয়লা বৈশাখ, তারপরের দিন শুক্রবার, এই কইরা তিনদিন গেল স্যার। রাজ্জাকের বর্ণনা দিতে গেলে সে সাতকাণ্ড রামায়ণ হয়ে যাবে। এই গল্প তাকে নিয়ে নয়।
বাবু চায়ের কথা বলতে গেছে, সম্পাদকের কক্ষে মাসুদ আর শামীমভাই দুজনে বসে আছেন।
শামীম ভাই বললেন, বাবু ছেলেটা ভালোই কী বলো!
মাসুদ বলল, জি ভালো। শামীম ভাই বললেন, একটু চালাক না? তুমি কিন্তু দেখে শুনে
রাখবা।
মাসুদ বলল, জি... মাসুদ আর শামীম ভাইয়ের কথা এই পর্যন্তই হয়েছে।
বাবু এসে ঢুকল। শামীম ভাই বললেন, ঈদ তো এসে গেল না? ঈদসংখ্যার কী করবা? এই ধরনের নির্দোষ আলাপ সেরে তারা বেরিয়ে এলো সম্পাদকের রুম থেকে। তাদের সম্পাদক শামীম ভাই সত্যি ভালো মানুষ। নিরহঙ্কার। আর সব বিষয়ে ভীষণ যত্নবান, এমনকি কর্মীদের ব্যক্তিগত সুখে-দুখেও তিনি হাসিমুখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
আবার তারা দুইজন মাসুদ ও বাবু রুমে এসে গেল। মাসুদ বলল, মিয়া আমি তোমারে আর কত গার্ড দিয়া রাখব? শামীম ভাই তো তোমার উপরে খুব খ্যাপা।
কেন? কী বলে? আমারে বলে বাবুকে নিয়া খুব মুশকিলে পড়ছি। চারদিক থাইকা ওর এগেনস্টে কম্প্লেইন। স্পটে না গিয়া বানায়া লেখে। এর ওর কাছে টাকা চায়।
কী বলেন। এগুলা বলল? আরে কত কী বলল। আমি বললাম, শামীম ভাই গরিব মানুষ খালি ওর চাকরিটা খাইয়েন না শামীম ভাই বলে, তুমি বইলা মাসুদ সহ্য করো। আমি তোমার জায়গায় হইলে করতাম না। এইসব পোলাপানরাখলে পত্রিকার দুর্নাম। প্রফেশনের বদনাম।
বাবু পাকা অভিনেতা। সে কেঁদে ফেলল। শামীম ভাই এইরকম বলতে পারল। আচ্ছা আমি এক্ষনি জিজ্ঞাসা করতেছি। দাঁড়ান। শামীম ভাই শামীম ভাই....
এই কই যাও যাও না গিয়া কও না। বাইর কইরা দিবে খুব রাগারাগি করতেছে আজকা। ফায়ার হয়া আছে...
না আমি যাব।
আরে যাস না তোর ভয় কি। আমি তো মাথার উপরে তোর বড়ভাই আছি। ঝড়ঝাপ্টা যা আইব সব আমি সামলামু। যাইস না। বাবু চোখ মোছে। কিন্তু তার মনের মধ্যে অন্য পরিকল্পনা। মাসুদকে
কীভাবে জব্দ করা যায়, তার উপায় সে মনে মনে এঁটে ফেলেছে। শামীম তার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। বাইরে গিয়ে গাড়িতে
উঠলেন।
বাবু দেখল শামীম ভাই চলে যাচ্ছেন। শামীমভাই চলে গেলে বাবু অফিসে ঢুকল।
সোজা চলে গেল শামীম ভাইয়ের রুমে। তার ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করল মাসুদের মোবাইলে। মাসুদ এরই
মধ্যে অফিস থেকে চলে গেছে।
বাবু ফোন করল। মাসুদ ফোন ধরল তার মেসে বসে। হ্যালো... মাসুদ কাঁপছে। শামীম ভাইয়ের অফিসের
ফোন নাম্বার
মোবাইলের স্ক্রিনে দেখেই তার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। বাবু বলল, মাসুদ আমি শামীম ভাই...বাবু অভিনেতা হিসেবে পাকা।
বিভিন্ন লোকের কণ্ঠস্বর নকল করতে তার তুলনা নাই । শা... মী... ম ভাই সালামালেকুম...
মাসুদ তুমি বাবুরে কী বলছ বলো তো ওতো এসে আমার কাছে
কান্নাকাটি করতেছে... আমি তোমাকে কী বললাম....
বাবু আপনারে লাগাইছে নাকি...দেখেন দেখেন তো... আমি তো তোমারে বলি নি তাই না তুমি বানায়া বানায়া এইসব
বললা...
স্যরি শামীম ভাই। বানাও বানাও আমার নাম দিয়া বানাইবা?
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now