বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ব্ল্যক হোলের বাচ্চা পার্ট ১

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Ridiyah Ridhi (০ পয়েন্ট)

X আমরা যে ছোট শহরটাতে থাকি সেখানে একটা খুব হাইফাই স্কুল আছে-স্কুলটার নাম অক্সব্রীজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। অক্স মানে হচ্ছে ষাঁড় আর ব্রীজ মানে হচ্ছে পুল, তার মানে অক্সব্রীজ হচ্ছে ষাঁড়ের পুল। ষাঁড় দিয়ে কেমন করে পুল তৈরী করে আর একটা স্কুলের নামে কেন ষাঁড় শব্দটা থাকতে হবে সেটা আমরা কোনোদিন বুঝতে পারি নাই। তখন একদিন বগা খবর আনল যে আসলে অক্সব্রীজ শব্দটা তৈরী হয়েছে অক্সফোর্ড আর ক্যামব্রীজ একত্র করে। অক্সফোর্ড আর ক্যামব্রীজ নাকী লন্ডন না আমেরিকা না জাপানের খুব বড় বড় স্কুল, আর আমাদের শহরের অক্সব্রীজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও একদিন অক্সফোর্ড আর ক্যামব্রীজ থেকেও বিখ্যাত হয়ে যাবে তাই আগে থেকেই এইভাবে নাম রাখা হয়েছে। এই স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেখলে অবশ্যি মনে হয় তাদের স্কুল বুঝি এখনই অক্সফোর্ড আর ক্যামব্রীজ থেকেও বিখ্যাত হয়ে গেছে। এই স্কুলের ছেলেমেয়েদের অবশ্যি রাস্তাঘাটে খুব বেশী দেখা যায় না, তার কারণ এই স্কুলে শুধু বড়লোকের ছেলেমেয়েরা পড়ে আর বড়লোকের ছেলেমেয়েরা সবসময় গাড়ী করে স্কুলে যায় আসে। যদি কখনো কোনো কারণে তাদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয় তখন তাদের দেখলে মনে হয় তাদের চারপাশে বুঝি ময়লা আবর্জনা রোগ জীবানু ভাইরাস আর তারা খুব সাবধানে নাক মুখ কুচকে রোগ জীবানু ভাইরাস ময়লা আবর্জনা বাঁচিয়ে কোনোমতে হেঁটে যাচ্ছে। অক্সব্রীজ স্কুলের ছেলেমেয়েরা যেহেতু সবাই বড়লোকের ছেলেমেয়ে তাই তাদের চেহারায় তার স্পষ্ট ছাপ আছে। তারা সবাই গোলগাল নাদুসনুদুস, তাদের গায়ের রং সাদা তেলাপোকার মত ফর্সা, তাদের ঠোঁটগুলো চিকন আর চোখগুলো সরু। সেই সরু চোখে মাত্র দুইটি জিনিষ, আমাদের জন্যে তাচ্ছিল্য আর তাদের নিজেদের জন্যে অহংকার। অক্সব্রীজ স্কুলের ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদের কখনো সরাসরি কথা হয় নাই কিন্তুআমি তাদের নিজেদের মাঝে কথা বলতে শুনেছি। মনে হয় তারা বাংলায় কথা বলতে পারে না তাই সব সময় ইংরেজীতে কথা বলে। মাঝে মাঝে যখন বাংলায় কথা বলে তখন মনে হয় তাদের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। ঠোঁটগুলো চেপে রেখে কেমন জানি নাক দিয়ে কথা বলে। বাংলাদেশকে তারা বলে ব্যাংলাদেশ, করতে পারি কে বলে কোড়তে পাড়ি, টমেটোকে বলে টোমাটো। তাদের হাইফাই স্কুলের মতো পোষাকটাও অনেক হাইফাই। ধবধবে সাদা শার্ট, কুচকুচে কালো প্যান্ট, সাদা মোজা, কালো জুতো, সু আর টকটকে লাল টাই। শুধু যে ছেলেরা টাই পরে তা নয় মেয়েরাও টাই পরে। এক কথায় বলা যায় অক্সব্রীজ স্কুলের ছেলেমেয়েদের চুলের ডগা থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত পুরোটুকুর মাঝে একটা চকচকে ঝকঝকে ভাব। বোঝাই যাচ্ছে এই ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে আমাদের অনেক হিংসা হয়, কিন্তু আমরা সেটা কখনো প্রকাশ করি না। আমরা তাদের চোখের কোনা দিয়ে দেখলেও সব সময় ভাণ করি তাদেরকে দেখি নাই। যদি কখনো দেখতেই হয় তাহলে মুখের মাঝে একটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গী ফুটিয়ে তাদের দিকে তাকাই। এ ছাড়া আমাদের অবশ্যি কোনো উপায়ও নেই কারণ আমাদের স্কুলটা অক্সব্রীজ স্কুলের ঠিক উল্টো। অক্সব্রীজ স্কুলের সবকিছু যেরকম হাইফাই আমাদের স্কুলের সবকিছু সেরকম ল্যাটাপ্যাটা। যেমন আমাদের স্কুলের নাম হচ্ছে হাজী মহব্বতজান উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের যে অবস্থা, এর নাম হওয়া উচিৎ ছিল পাজী মহব্বতজান নিম্ন বিদ্যালয় ! মহব্বতজান হচ্ছে এই এলাকার এক বিশাল সন্ত্রাসী, থানায় তার নামে কম করে হলেও এক ডজন খুনের মামলা আছে। তার মিশমিশে কালো রং, টকটকে লাল চোখ, আর পান খাওয়া ক্যাটক্যাটে হলুদ দাঁত। মাথা ফুটবলের মতন— একটা চুলও নাই । মাথায় চুল গজায় না নাকী সে কামিয়ে ফেলে সেটা কেউ জানে না। সন্ত্রাসী মহব্বতজান হঠাৎ একদিন হজ করে চলে এল, তখন তার চেহারার একটু পরিবর্তন হল, থুতনীতে কয়েকটা দাড়ি আর মাথায় একটা টুপি, নাম হয়ে গেল হাজী মহব্বতজান। কী তার মতলব কে জানে, মানুষের জমি দখল করে সেখানে একটা স্কুল, দুইটা মাদ্রাসা আর একটা কলেজ বানিয়ে ফেলল। তার বানানো সেই স্কুলটাই হচ্ছে আমাদের এই স্কুল। এই শহরে তার নামে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ছাড়াও আছে মহব্বতজান মার্কেট, মহব্বতজান কোল্ড স্টোরেজ আর মহব্বতজান ইটের ভাটা। এই শহরের সবচেয়ে যেটা ভয়ংকর সেটা হচ্ছে তার নামে একটা দৈনিক পত্রিকা,সেটার নাম হচ্ছে দৈনিক মহব্বত । সেই পত্রিকায় হাজী মহব্বতজানের নানা রকম ভালো ভালো খবর ছাপা, যে খবরে তার নামের আগে লেখা হয় দানবীর হাজী মহব্বতজান। আমাদের স্কুলের কোনো পোষাক নাই যার যা ইচ্ছা পরে চলে আসে । বগা দাবী করে একটা নাকী পোষাক আছে লাল পায়জামা বেগুনী সার্ট কিন্তু সেটা কেউ প্রমান করতে পারে নাই। আমাদের স্কুলে কোনো লেখাপড়া হয় না। আমরা স্কুলে আসি কথাবার্তা বলি। গল্পগুজব করি, ঝগড়াঝাটি মারামারি করি তারপর ধীরে সুস্থে বাসায় যাই । কোনো কোনো ক্লাশে স্যার ম্যাডাম আসেন। তাদের মাঝে বেশীরভাগই হয় মোবাইলে কারো সাথে কথা বলেন, তা না হলে চেয়ারে পা তুলে বসে বসে ঘুমান। অন্যরা পড়ানোর নামে আমাদের বেত দিয়ে পিটান । আমাদের স্কুলে যে কোনো ছেলে মেয়ে যে কোনো ক্লাশে ভর্তি হতে পারে, তাই যারা অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি হতে পারে না তারা আমাদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়। অন্য স্কুল থেকে যাদেরকে টিসি দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয় তারা সবাই আমাদের স্কুলে এসে ভর্তি হয় । কেউ অবশ্যি বেশীদিন থাকে না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বাবা মায়েরা তাদেরকে অন্য একটা স্কুলে নিয়ে যায়। আমরা যে কয়জন অনেকদিন থেকে এই স্কুলে আছি তাদের বাবা মায়েদের আসলে আমাদের জন্যে কোনো মাথা ব্যথা নেই । যেমন ধরা যাক আমাদের রূম্পার কথা। তার বাবা মা আছে না নাই, থাকলেও কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না। রুম্পা তার মামীর বাসায় থাকে, মামা মামী অপেক্ষা করছে কখন সে একটু বড় হবে, তখন ঝপ করে তাকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করে দেবে। তবে কাজটা খুব সহজ হবে না। ঝুম্পাকে কেউ যদি জোর করে বিয়ে দিতে চায়, তাহলে ঝুম্পা শুধু যে তার নূতন জামাইকে মার্ডার করে ফেলবে তা নয়। নূতন শ্বশুর শাশুড়ী এমনকি বিয়ের কাজী আর উকিল বাবাকেও মার্ডার করে ফেলবে । আমি পরিষ্কার দেখতে পাই পত্রিকার হেডলাইন হবে এরকম : “হিংস্র নববধূ কর্তৃক জামাতা ও শ্বশুর শাশুড়ী খুন । মৃত্যুর সাথে লড়ছেন কাজী এবং উকিল বাবা।" কিংবা "রক্ত পিপাসু নববধূ, বিয়ের আসরে গণহত্যা।” অনেকেই মনে করতে পারে কথাগুলো বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলা হচ্ছে-আসলে এক বিন্দুও বাড়ানো হয়নি । যেমন ধরা যাক গত সপ্তাহের ঘটনাটা, ঝুম্পা স্কুলে আসছে চৌরাস্তার মোড়ে ভিডিওর দোকানের সামনে একটা লাফাংরা ছেলে ঝুম্পাকেলক্ষ্য করে কী একটা বাজে কথা বলল অন্য যে কোনো মেয়ে হলে কথাটা না শোনার ভান করে হেঁটে চলে যেতো, ঝুম্পা সেরকম পাত্রই না, ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, “এই পাংকু, তুই কী বললি? ছেলেটা একবারে হকচকিয়ে গেল, সে কল্পনাও করতে পারেনি একা একটা মেয়ে এইভাবে কথা বলবে। ছেলেটা মাস্তান টাইপের, নিজেকে সামলে নিয়ে হলুদ দাঁত বের করে হাসার ভাণ করে বলল, “শুনতে ভালো লেগছে? আবার শুনবার চাও?" ঝুম্পা তখন তার ব্যাগটা নিচে রেখে সেখান থেকে একটা লাল রুমাল বের করে মাথার মাঝে বাঁধল, তারপর ওড়নাটা কোমরে পেঁচিয়ে নিয়ে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষকে বলল, “আংকেল, আমার ব্যাগটা একটু দেখবেন।” তারপর দুই হাত দিয়ে ছেলেটার চোখ দুটি তুলে নেবার একটা ভঙ্গী করে এগিয়ে গেল । ঝুম্পার চেহারা ভালো না খারাপ সেটা আমরা কেউই পরিষ্কার ভাবে বলতে পারি না, অন্য দশটা মেয়ের মত চুলে শ্যাম্পু ট্যাম্পু দিয়ে সেজেগুঁজে থাকলে মনে হয় ভালো হিসাবে চালানো যায়, কিন্তু যে যখন মাথার মাঝে লাল রংয়ের একটা রুমাল বেঁধে দাঁত কিড়মিড় করে এগিয়ে যায় তখন তার দুই চোখের দিকে তাকালেই মানুষের আত্মা উড়ে যায়। মাস্তান ছেলেটারও আত্মা উড়ে গেল, তাই নূতন কোনো গোলমাল না করে সে সরে পড়ার চেষ্টা করল । কিন্তু সে সরে যাবার চেষ্টা করলেই তো হবে না, ঝুম্পারও তো তাকে সরে যেতে দিতে হবে । ঝুম্পা তাকে সরে যেতে দিল না, পিছন পিছন গিয়ে বলল, “এই পাংকু, কই যাস? কী বললি আরেকবার বল দেখি।” পাংকু আরেকবার বলার কোনো আগ্রহ দেখাল না, তাড়াতাড়ি হেঁটে পাশের গলিতে ঢোকার চেষ্টা করল, পিছন পিছন ঝুম্পাও এগিয়ে গেল, পাংকু তখন নার্ভাস হয়ে দৌড় দেবার চেষ্টা করল ঝুম্পা তখন হুংকার দিয়ে বলল, “ধর পাংকুকে” তারপর তাকে ধাওয়া করল চৌরাস্তা থেকে ধাওয়া করে মহব্বত মার্কেটের সিঁড়ির তলায় ঝুম্পা শেষ পর্যন্ত পাংকুকে মাটিতে চেপে ধরেছিল। মাথায় লাল রুমাল বাঁধা একটা মেয়ে লাফাংরা টাইপের একটা ছেলেকে প্রায় এক কিলোমিটার ধাওয়া করে একটা মার্কেটের সিঁড়ির নিচে চেপে ধরার ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না, তাই কিছুক্ষণের মাঝেই সেখানে অনেক ভীড় জমে গেল এবং সবাই মিলে ছেলেটাকে উদ্ধার করল, তা না হলে সেই ছেলের কপালে অনেক দুঃখ ছিল ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now