বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
গাব্বু (৮)
"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)
X
গাব্বু কোনো কথা বলল না এবং দুইজন চুপ করে বসে রইল। হঠাৎ রিফাত হাসানের কিছু একটা মনে পড়ল, সোজা হয়ে বসে বললেন, “ইউরেকা।”
গাব্বু রিফাত হাসানের দিকে তাকাল, রিফাত হাসান বললেন, “আমার কাছে একটা স্মার্ট ফোন আছে, সেটা দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়। উইকিপিডিয়াতে আমার ওপর একটা পেজ আছে, আমি যদি সেখানে গিয়ে আমার পেজটা দেখাই তা হলে কী তুমি বিশ্বাস করবে?”
“ছবি আছে আপনার?”
“মনে হয় আছে।”
রিফাত হাসান পকেট থেকে তার স্মার্ট ফোন বের করে সেটাকে টেপাটেপি করতে লাগলেন এবং কিছুক্ষণের মাঝেই উইকিপিডিয়াতে তার ছবিসহ একটা পেজ চলে এল। রিফাত হাসান দেখালেন, “এই দেখো আমার ছবি। এই দেখো ছবির নিচে আমার নাম, আমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়াই তার নাম। দেখেছ?”
গাব্বু মাথা নাড়ল।
”এখন বিশ্বাস হয়েছে যে আমি ডাকাত কিংবা ছেলেধরা না?”
গাব্বু আবার মাথা নাড়ল।
”এখন আমরা কথা বলতে পারি?”
গাব্বু আবার মাথা নাড়ল, বলল, “পারি।”
রিফাত হাসান গাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “আমার নাম রিফাত হাসান। আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়াই। আমেরিকাতে যারা আছে তারা অবশ্যি কেউই আমার নামটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারে না। বলে ডিফাট।”
গাব্বু হাত মিলিয়ে বলল, “ড়িফাট?”
হ্যাঁ। ওরা ত উচ্চারণ করতে পারে না। আসলে শুনতেও পারে না। তুমি যদি বল বোতল ওরা শুনতে পায় বোটল।
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। সত্যি বললে ওরা শুনবে সট্যি!”
“কী মজা।”
রিফাত হাসান বললেন, “আমি তো আমার পরিচয় দিলাম, এখন তোমার পরিচয়টা জানতে পারি?”
“আমার নাম গাব্বু। আমার আরেকটা ভালো নাম আছে, সেটা অনেক লম্বা। গাব্বুটাই ভালো, মনে রাখা সোজা।”
“গাব্বু?”
“হ্যাঁ।”
“ভেরি ইন্টারেস্টিং নেম। তুমি যদি আমেরিকা যাও তা হলে তোমার নামটাও মনে হয় ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারবে না। বলবে ঘ্যাভু।”
“ঘ্যাভু?”
“হ্যাঁ। যাই হোক, এখন তুমি বল তুমি কেন এত উঁচু একটা গাছ থেকে লাফ দিয়েছ।”
“সেটা আপনি বুঝবেন না।”
“বুঝব না?”
“না।”
“কেন?”
গাব্বু মাথা নেড়ে বলল, “এটা হচ্ছে বিজ্ঞানের ব্যাপার। বিজ্ঞান না জানলে এটা বোঝা যায় না। আমি আব্বু, আম্মু, আপু সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কেউ বুঝতে পারে নাই। আপনিও বুঝবেন না।”
“বুঝতেও তো পারি।”
“উঁহু। অনেক কঠিন। এটা বুঝতে হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, ভর, ওজন এইসব বুঝতে হয়।”
রিফাত হাসান কষ্ট করে মুখে গাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, “ও আচ্ছা, তা হলে আমি আন্দাজ করার চেষ্টা করি তুমি কেন গাছের ওপর থেকে লাফ দিয়েছ?”
গাব্বু অবাক হয়ে রিফাত হাসানের দিকে তাকালেন, “আপনি আন্দাজ করবেন? করেন দেখি।”
রিফাত হাসান হাসি হাসি মুখ করে বললেন, “ফ্রি ফলের সময় মানুষের নিজেকে মনে হয় কোনো ওজন নেই। তুমি তাই গাছ থেকে লাফ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছ ওজন না থাকলে কেমন লাগে।”
গাব্বু অবাক হয়ে রিফাত হাসানের দিকে তাকিয়ে রইল, চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “কী আশ্চর্য! আপনি কেমন করে আন্দাজ করলেন? আমি কত চেষ্টা করে কাউকে বোঝাতে পারি নাই, আর আপনি নিজে নিজে বুঝে গেলেন!”
“তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না?”
“না। উল্টো আমাকে নিয়ে ইয়ারকি করে।”
রিফাত হাসান মাথা নাড়লেন, বললেন, “আমি জানি। সায়েন্টিস্টদের কথা কেউ বুঝতে চায় না। তাদের জীবন খুবই কঠিন। আগে অবস্থা আরও অনেক খারাপ ছিল, পুড়িয়ে মেরে ফেলত। এখন অবস্থা একটু ভালো, আর পুড়িয়ে মারে না। বড়জোর গালাগাল দেয়।”
গাব্বু হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, বলল, “না, অবস্থা বেশি ভালো হয় নাই। দুই-দুইবার আমার ল্যাবরেটরিটা নালায় ফেলে দিয়েছিল।”
“খুবই অন্যায় হয়েছে।”
“এক্সপেরিমেন্ট করার সময় একটু ভুল তো হতেই পারে। একটু আগুন লেগেছে, জানালার পর্দা অল্প একটু পুড়েছে। ব্যস! সবাই রেগেমেগে ফায়ার। আমার পুরা ল্যাবরেটরি নালায়। কত মূল্যবান কেমিক্যালস ছিল। ইশ!”
রিফাত হাসান সমবেদনার ভঙ্গি করে বলল, “ইশ! খুবই অন্যায় হয়েছে। খুবই অন্যায়।”
ঠিক এই সময় রিফাত হাসানের টেলিফোন বাজল, টেলিফোন করেছে ইউসুফ, ভয় পাওয়া গলায় বলল, “স্যার, আপনি কোথায়?”
রিফাত হাসান বললেন, “আমি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে ব্যস্ত আছি। তোমার সাথে একটু পরে কথা বলি?”
ইউসুফ বলল, “ঠিক আছে স্যার। ঠিক আছে।” সে টেলিফোন বন্ধ করে হোটেলের রিসেপশনিস্ট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে ব্যস্ত আছেন।”
মেয়েটি বলল, “গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তো গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এত মানুষ দেখা করতে চাইছে সবাইকে তো সময়ও দিতে পারেন না। নিশ্চয়ই কাউকে সময় দিয়েছেন।”
“কে হতে পারে?” ইউসুফ মাথা চুলকালো।
”প্রাইম মিনিস্টার? প্রেসিডেন্ট?”
“বুঝতে পারছি না। কারও সাথে যোগাযোগ না করে একা বের হয়ে গেছেন, খুব দুশ্চিন্তা লাগছে।”
মেয়েটি অপরাধীর মতো বলল, “স্যারকে সার্ভিস ডোর দিয়ে বের করে দেওয়াটা মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হয় নাই। কী করব–এমনভাবে বলছিলেন যে না করতে পারলাম না।”
ইউসুফ চিন্তিত মুখে বলল, “ভেরি রিস্কি। স্যার যখন ইউরোপ যান তখন স্যারের প্রোটেকশনের জন্যে স্পেশাল স্কোয়াড থাকে, আর আমরা এখানে স্যারকে একা একা ছেড়ে দিলাম। স্যার স্কুটার রিকশা করে চলে গেলেন। কী সর্বনাশ!”
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, “মনে হচ্ছে ভুলটা আমারই হয়েছে।”
“না, না, আপনার ভুল হয়নি। স্যার এডাল্ট মানুষ, কিছু একটা করতে চাইলে তো নিষেধ করতে পারি না। কাল থেকে পুলিশ স্কোয়াডের ব্যবস্থা করব। কোথায় আছেন কে জানে তা হলে এখনই পুলিশ নিয়ে যেতাম।”
“গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষের সাথে যখন কথা বলছেন, মনে হয় নিরাপদেই আছেন।”
.
ঠিক এরকম সময় রিফাত হাসানের সাথে”গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির আলাপ খুব জমে উঠেছে।
গাব্বু জিজ্ঞেস করেছে, “আপনি কী করেন?”
রিফাত হাসান বলল, “বলতে পার আমিও তোমার লাইনের লোক। এই তোমার মতো একটু-আধটু বিজ্ঞানের কাজ করি।”
গাব্বু কিছুক্ষণ রিফাত হাসানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “বেশি সুবিধে করতে পারেন নাই। তাই না?”
রিফাত হাসান থতমত খেয়ে বললেন, “কেন? তোমার এটা কেন মনে হল?”
“সত্যিকারের সায়েন্টিস্টদের একটা চেহারা থাকে, আপনার সেই চেহারাটা এখনো আসে নাই।”
“সেটা কী রকম চেহারা?”
গাব্বু নিজের চুল এলোমেলো করে দেখিয়ে দিয়ে বলল, “লম্বা লম্বা উষ্কখুষ্ক চুল। আর বড় বড় মোছ।”
“তাই না কি?”
“হ্যাঁ। আইনস্টাইনের লম্বা লম্বা চুল। নিউটনের লম্বা লম্বা চুল, গ্যালিলিওর লম্বা লম্বা চুল। সব সায়েন্টিস্টদের লম্বা লম্বা চুল থাকে। আপনি যদি বড় সায়েন্টিস্ট হতে চান তা হলে লম্বা লম্বা চুল রাখা শুরু করে দেন।”
“ঠিক আছে। রিফাত হাসান রাজি হওয়ার ভঙ্গি করে বললেন, “তোমার কাছ থেকে অনেক বড় একটা জিনিস শিখে নিলাম। লম্বা চুল এবং সম্ভব হলে বড় বড় গোঁফ।” হঠাৎ করে তাঁর কিছু একটা মনে হল, মাথা ঘুরিয়ে গাব্বুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আচ্ছা, মেয়েরা তো সাধারণত লম্বা লম্বা চুল রাখে, তা হলে তারা কি আরও সহজে বড় বিজ্ঞানী হতে পারবে?”
গাব্বু ইতস্তত করে বলল, “সেইটা তো কখনো চিন্তা করি নাই। মনে হয় পারবে। কিন্তু চুল লম্বা হলেই তো হবে না, উষ্কখুষ্ক থাকতে হবে। মেয়েরা কখনো চুল উষ্কখুষ্ক রাখতে চায় না। সেইখানে মনে হয় সমস্যা হয়।”
রিফাত হাসান মুখে কষ্ট করে একটা গাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, “তুমি বিজ্ঞানের আর কী কী জানো?”
“অনেক কিছু জানি।”
“কয়েকটা বল দেখি।”
গাব্বু কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “বিজ্ঞানের গবেষণা করার সময় আগে থেকে কাউকে সেটা বলবেন না।”
“কেন?”
“কারণ তারা গবেষণার কিছু বুঝে না, আর সেটা নিয়ে হাসাহাসি করে। আর যদি কাজ না করে তা হলে সারাক্ষণ টিটকারি মারবে। আমি একবার একটা রকেট বানিয়েছিলাম, সেটা কেন জানি উপরে না উঠে নিচে ডাইভ মেরেছিল, তারপর সেটা নিয়ে কী হাসাহাসি কী টিটকারি। দেখা হলেই বলে, এই গাব্বু, তোর রকেটের খবর কী? এখনো মাটির নিচে যায়?”
রিফাত হাসান বললেন, “খুবই অন্যায় কথা।”
গাব্বু হঠাৎ করে ঘুরে রিফাত হাসানকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি এখানে কেন এসেছেন?”
“আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এখানে থাকতাম। তাই জায়গাটা আবার দেখতে এসেছি, কতটুকু আগের মতো আছে, কতটুকু পাল্টে গেছে।”
“আগের মতোন কী আছে?”
রিফাত হাসান মাথা নাড়লেন, বললেন, “না। মোটেও আগের মতোন নাই। চারিদিকে খালি বিল্ডিং আর বিল্ডিং। এই মাঠটার জন্যে এখনো চিনতে পেরেছি। তুমি যে গাছ থেকে লাফ দিয়েছ, আমিও এই গাছ থেকে লাফ দিতাম।”
“আপনাদের বাসাটা কোথায় ছিল?”
রিফাত সামনে দেখিয়ে বলল, “ঐ যে ছয়তলা দালানটা দেখছ, ওখানে আগে ছোট একটা দুই তলা বিল্ডিং ছিল, আমরা সেইখানে থাকতাম। ডানপাশে একটা টিনের ছাদওয়ালা ছোট বাড়ি ছিল, এখন সেখানে ন-দশ তলা বিল্ডিং! থ্যাংক গড, এই মাঠটা এখনো খালি আছে।”
গাব্বু বলল, “বেশিদিন খালি থাকবে না। এইখানে না কী একটা বারো তলা শপিং কমপ্লেক্স হবে।”
রিফাত হাসান মাথা নেড়ে বললেন, “হাউ স্যাড! কী দুঃখের ব্যাপার।”
গাব্বু হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কী নিয়ে গবেষণা করেন?”
“তুমি কী নিয়ে গবেষণা করো?”
“অনেক কিছু। যেমন মনে করেন, টিকটিকির লেজ পড়ে গেলে আরেকটা লেজ গজায়। তা হলে এমন কি হতে পারে আসল লেজটা পড়ার আগেই নতুন একটা লেজ গজালো! তার মানে তখন এক টিকটিকির দুই লেজ!”
রিফাত হাসান হাসলেন, বললেন, “ভেরি ইন্টারেস্টিং।”
“তারপর মনে করেন আমার আরেকটা গবেষণা হচ্ছে টেলিপ্যাথি নিয়ে। আপনি টেলিপ্যাথির নাম শুনেছেন?”
“শুনেছি। একজনের চিন্তা আরেকজনের মাথায় পাঠিয়ে দেওয়া।”
গাব্বুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, এই প্রথম সে একজন মানুষকে পেয়েছে যে নিজে থেকে টেলিপ্যাথি বিষয়টা জানে। এর আগে সবাইকে তার বিষয়টা বোঝাতে হয়েছে এবং কাউকেই সে আসলে বোঝাতে পারেনি এবং সবাই উল্টো তাকে এটা নিয়ে ঠাট্টা করেছে। গাব্বু উত্তেজিত গলায় বলল, “দুইজন যদি অনেকদূরে বসে একই সময় একইভাবে চিন্তা করে তা হলে একজনের চিন্তাটা আরেকজনের মাথায় পাঠানো যায়। চিন্তা করতে হয় এইভাবে-” বলে গাব্বু চোখ বন্ধ করে দুই হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরে ভুরু কুঁচকে গভীরভাবে চিন্তা করার একটা ভঙ্গি করল।
রিফাত হাসান কষ্ট করে হাসি চেপে রেখে মুখে একটা গম্ভীর ভাব ধরে রেখে বললেন, “তুমি কি টেলিপ্যাথি করার চেষ্টা করে দেখেছ যে এটা কাজ করে?”
গাব্বু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কেমন করে পরীক্ষা করব? কাউকে রাজি করাতে পারি না। অনেক কষ্ট করে আপুকে রাজি করিয়েছিলাম। আপু চিন্তা না করে খালি হাসে। হাসলে কেমন করে হবে?”
টেলিপ্যাথি জাতীয় বিষয়গুলো যে আসলে বিজ্ঞানের বিষয় নয়, এগুলো যে বিজ্ঞানের নাম ব্যবহার করে অবৈজ্ঞানিক চিন্তা প্রচার করার একটা চেষ্টা, বিষয়টা গাব্বুকে জানাতে গিয়েও রিফাত হাসান থেমে গেলেন। গাব্বুর এত উত্তেজনার মাঝে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে ইচ্ছে করল না, আধপাগল এই বাচ্চাটার মাঝে যদি সত্যিকারের একটা বৈজ্ঞানিক মন থাকে তা হলে সে নিজেই একদিন বিষয়টা বুঝে নেবে।
“এই জন্যে এখনো টেলিপ্যাথির গবেষণাটা শেষ করতে পারি নাই।” গাব্বু বলল, “কেউ টেলিপ্যাথি করতে রাজি হয় না।”
“এত ইন্টারেস্টিং গবেষণা তার পরেও কেউ রাজি হয় না?”
হঠাৎ করে গাব্বুর চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে, রিফাত হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি করবেন?”
রিফাত হাসান চমকে উঠলেন, “আমি?”
“হ্যাঁ। আপনি আর আমি।”
“আ-আ-আমাকে কী করতে হবে?”
“কিছু না, খুবই সোজা। প্রত্যেকদিন ঠিক রাত দশটার সময় আপনি চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে চিন্তা করে আমাকে কোনো একটা খবর পাঠাবেন।”
“খবর–মানে ম্যাসেজ?”
“হ্যাঁ। আমিও পাঠাব। দেখব ম্যাসেজ যায় কি না।”
“ম্যাসেজটা গিয়েছে কি না সেটা কেমন করে বুঝব?” গাব্বু বলল, “ম্যাসেজটা পেলেই বুঝবেন সেটা গিয়েছে। না বোঝার কী আছে?”
“ও আচ্ছা।”
গাব্বু আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “করবেন এক্সপেরিমেন্ট?”
রিফাত হাসান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না যখন শুনলেন যে গাল্লুকে বলছেন, “ঠিক আছে!” আমেরিকায় তার ইউনিভার্সিটির বন্ধু-বান্ধব ছাত্রছাত্রী যদি এটা শুনে তা হলে তারা নিশ্চয়ই হাসতে হাসতেই মরে যাবে।
গাব্বু তার সবগুলো দাঁত বের করে হেসে বলল, “রাত দশটা। প্রত্যেকদিন।”
প্রফেসর হাসান মাথা নাড়লেন, বললেন, “ঠিক আছে। যদি মনে থাকে।”
“আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব।”
“কেমন করে মনে করিয়ে দেবে?”
“কেন? টেলিপ্যাথি দিয়ে!”
রিফাত হাসান বললেন, “ও আচ্ছা! ঠিক আছে। হ্যাঁ মনে করিয়ে দিয়ো।”
ঠিক এরকম সময় দূরের মসজিদ থেকে আজানের শব্দ শোনা যেতে লাগল। গাব্বু তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আজান পড়ে গেছে। যেতে হবে।”
“ঠিক আছে বিজ্ঞানী গাব্বু। যাও।”
গাব্বু যেতে যেতে দাঁড়িয়ে গেল, বলল, “সবাই যদি আপনার মতো বিজ্ঞানের ব্যাপার-স্যাপার বুঝত, তা হলে কী যে ভালো হত!”
“সবাইকে দোষ দিয়ে আর কী হবে? সবাই তো আর তোমার কিংবা আমার মতো বিজ্ঞান করে না। কেমন করে বুঝবে?”
“আপনি কী নিয়ে গবেষণা করেন সেটা তো বললেন না?”
“আমার গবেষণা মোটেও তোমার মতো ইন্টারেস্টিং না। তোমার তুলনায় খুবই বোরিং। রীতিমতো হাস্যকর।”
গাব্বু উদারভাবে বলল, “তাতে কী আছে! তবু শুনি?”
রিফাত হাসান বললেন, “আমি এক্সেলেটর দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি। এক্সপেরিমেন্টের পর অনেক ডাটা পাওয়া যায়, সেই ডাটা এনালাইসিস করে একটা পার্টিকেল খুঁজি।”
“কেমন করে খোঁজেন?”
“পার্টিকেলটা থাকলে তার কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে। ডাটাগুলোর মাঝে সেই বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজি।”
গাব্বু বুঝে ফেলার ভঙ্গি করে বলল, “বুঝেছি।”
গাব্বুর কথা শুনে রিফাত হাসান থতমত খেয়ে গেলেন। তাঁর যে কাজ সেটা গাব্বুর মতো দশ-বারো বছরের বাচ্চার বোঝার কথা নয়। তাই একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বুঝেছ?”
“হ্যাঁ। আসলে আমিও এরকম একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম, একটু অন্যভাবে।”
গাব্বুর কথা শুনে রিফাত হাসান কৌতুক অনুভব করলেন, বললেন, “তুমিও এই রকম এক্সপেরিমেন্ট করেছ?”
“হ্যাঁ। অন্যভাবে।”
“কীভাবে?”
গাব্বু মুখে এক ধরনের গাম্ভীর্য নিয়ে এসে বলল, “আমাদের একজন স্যার আছেন, হাকিম স্যার। খুবই কড়া। সমাজপাঠ পড়ান। পরীক্ষার আগে সবাই চিন্তা করছে স্যার কী রকম প্রশ্ন করবেন। ক্লাসের সবাই স্যারের আগের প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে, সেগুলো দেখে আন্দাজ করার চেষ্টা করেছে স্যার এইবার
কী প্রশ্ন করবেন। আর আমি কী করেছি জানেন?”
“কী?”
“আমি করেছি ঠিক তার উল্টো।”
“উল্টো?”
“হ্যাঁ। হাকিম স্যার আগে কী প্রশ্ন করেছেন সেটা দেখার চেষ্টা না করে আমি দেখার চেষ্টা করলাম স্যার আগে কোন কোন প্রশ্ন করেন নাই! শুধু সেইগুলো পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি। চোখ বন্ধ করে এ পাস!”
রিফাত হাসান অবাক হয়ে দশ-বারো বছরের এই আধা পাগল ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলেন, বাচ্চাটা ছেলেমানুষি ভঙ্গিতে তার সামনে হঠাৎ একটা আশ্চর্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। এক্সপেরিমেন্টাল পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে তার আর তার দলের সবার জীবনের বড় একটা অংশ কাটে এক্সপেরিমেন্টের ডাটা ঘেঁটে। কেমন করে এই ডাটা বিশ্লেষণ করা হবে তার ওপর নির্ভর করে কত তাড়াতাড়ি তারা তাদের এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল প্রকাশ করতে পারেন। এই ছেলেটি সম্পূর্ণ নতুনভাবে ডাটা বিশ্লেষণের একটা পদ্ধতি বলে দিয়েছে–এত সহজ এত চমৎকার একটা পদ্ধতির কথা তার মাথায় কেন আসেনি রিফাত হাসান সেটা ভেবে অবাক হয়ে গেলেন।
গাব্বু আকাশের দিকে তাকাল, তারপর বলল, “আমি যাই।” রিফাত হাসান বললেন, “দাঁড়াও গাব্বু। এক সেকেন্ড দাঁড়াও।”
গাব্বু মাথা নাড়ল, বলল, “উঁহু দাঁড়ানো যাবে না। আমাদের বাসার নিয়ম হচ্ছে আজান হওয়ার সাথে সাথে বাসায় রওনা দিতে হবে।”
“কিন্তু তোমার জানা দরকার তুমি আমাকে অসাধারণ একটা আইডিয়া দিয়েছ।”
“লাভ নাই।” গাব্বু হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, “আমাকে বাসায় যেতেই হবে।”
রিফাত হাসান বললেন, “ডাটাতে একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য না খুঁজে আমরা এখন তোমার টেকনিক ব্যবহার করতে পারি। কোনটা নেই সেটা খুঁজতে পারি। অসাধারণ আইডিয়া।”
বিষয়টা নিয়ে গাবুকে খুব উত্তেজিত হতে দেখা গেল না। বলল, “আমার এখন যেতে হবে।”
“এক সেকেন্ড। প্লীজ।”
“উঁহু।” গাব্বু হাঁটতে হাঁটতে বলল, “বাসায় দুশ্চিন্তা করবে।”
রিফাত হাসান ব্যস্ত হয়ে বললেন, “আমি যদি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চাই?”
“টেলিপ্যাথি–” গাব্বু গম্ভীর গলায় বলল, “টেলিপ্যাথি করে আমার কাছে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিবেন।”
রিফাত হাসান অবাক হয়ে গাব্বুর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now