বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গাব্বু (৭)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X মোটামুটি এই একই সময়ে রিফাত হাসান হোটেলের লবিতে এসে দাঁড়িয়েছেন, তার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। রিসেপশনিস্ট মেয়েটি এগিয়ে এসে বলল, “স্যার, আপনার কী কিছু লাগবে? কোনো সমস্যা। “সমস্যা তো বটেই!” “আমরা কী কিছু করতে পারি?” “মনে হয় না।” “বলে দেখেন। আমরা কত কী করতে পারি জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।” রিফাত হাসান ঘুরে গেটের দিকে দেখিয়ে বললেন, “ওই গেটে দেখেছেন কতজন সাংবাদিক ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে?” রিসেপশনিস্ট মেয়েটা বলল, “দেখেছি। সবাই আপনাকে কাভার করার জন্যে এসেছে। কার আগে আপনাকে নিয়ে কত বড় স্টোরি করতে পারে সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতা! এটাকে বলে খ্যাতির বিড়ম্বনা।” “খ্যাতি থাকলে বিড়ম্বনা সহ্য করার একটা অর্থ আছে। আমাকে কেন? আমি ফিল্মস্টার না, রকস্টার না, ক্রিকেট প্লেয়ারও না! আমাকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন?” “স্যার, আপনি ফিল্মস্টার, রকস্টার কিংবা ক্রিকেট প্লেয়ার থেকে কোনো অংশ কম না। এই দেশের মানুষ জেনে গেছে আপনি এখানে এসেছেন, তিন দিন দেশে থাকবেন। আপনাকে নিয়ে অনেক কৌতূহল। শুধু আপনার খোঁজে আমাদের হোটেলে এত ফোন এসেছে যে আমাদের পিএবিএক্স ওভারলোড হয়ে যাওয়ার অবস্থা! স্যার, আপনি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ!” “আমি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ কি না জানি না, কিন্তু সকাল থেকে শুধু গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সাথে কথা বলছি! এখন আমি একটু নিজের মতো থাকতে চাই। হোটেলের গেটে সাংবাদিকেরা বাঘের মতো বসে আছে, বের হওয়ামাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়বে!” রিসেপশনিস্ট মেয়েটা কী যেন একটা ভাবল, তারপর জিজ্ঞেস করল, “আপনি কোথায় যেতে চান স্যার?” “যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাসা ছিল গেন্ডারিয়ার দিকে। ভাবছিলাম জায়গাটা একটু দেখব।” “কাকে নিয়ে যাবেন?” রিফাত হাসান মাথা নেড়ে বললেন, “কাউকে নিয়ে নয়। একা একা।” মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, “একা একা? আপনি নিজে?” রিফাত হাসান বললেন, “এতে অবাক হওয়ার কী আছে?” “পারবেন?” “না পারার কী আছে? আমি এই দেশের মানুষ না? আমি এখানে বড় হয়েছি, জীবনের ইম্পরট্যান্ট সময়টা এখানে কাটিয়েছি।” “ঠিক আছে, আপনি যদি সত্যিই মনে করেন আপনি একা একা ঘুরতে পারেন তা হলে আমি আপনাকে বাইরে বের করার একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি।” “সত্যি? পারবেন?” “হ্যাঁ। পারব। আমাদের হোটেলের পেছনে একটা সার্ভিস ডোর আছে, আপনি চাইলে আপনাকে আমি সেদিক দিয়ে বের করে দিতে পারি। কেউ জানবেও না, আপনার পিছুও নিতে পারবে না।” রিফাত হাসানের চোখে-মুখে আনন্দের একটা ছাপ পড়ল। ছেলেমানুষের মতো খুশি হয়ে বললেন, “ও! থ্যাংকু থ্যাংকু থ্যাংকু। আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না!” রিসেপশনিস্ট মেয়েটি বলল, “ধন্যবাদ দিতে হবে না, অন্য একটা কিছু দিলেই হবে।” “কী?” “একটা অটোগ্রাফ। আপনি আমাদের হোটেলে উঠেছেন জানার পর থেকে আমার ছোট বোন আপনার একটা অটোগ্রাফের জন্যে আমার মাথা খারাপ করে ফেলছে! প্লীজ একটা অটোগ্রাফ দেবেন?” রিফাত হাসান বললেন, “একটা কেন? আপনাকে দশটা অটোগ্রাফ দেব–আপনি শুধু আমাকে গোপনে বের হওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দেন!” রিফাত হাসান যখন এক টুকরো কাগজে একটা অটোগ্রাফ দিচ্ছেন তখন রিসেপশনিস্ট মেয়েটি বলল, “আজকে আমার ছোট বোনের কাছে আমার স্ট্যাটাস কত বেড়ে যাবে আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না!” রিফাত হাসান কিছু না বলে একটু হাসলেন। . একটু পর সত্যি সত্যি রিসেপশনিস্ট মেয়েটি রিফাত হাসানকে বাইরে নিয়ে এল। বড় রাস্তায় এগিয়ে দিয়ে বলল, “এখন আপনি যেতে পারবেন?” “অবশ্যই পারব।” “আমার ধারণা খুব বেশি দূর যেতে পারবেন না। পাবলিক আপনাকে হেঁকে ধরবে।” “ধরবে না। পাবলিক যেহেতু ফুটপাতে রাস্তাঘাটে আমাকে দেখতে আশা করে না তাই আমাকে দেখলেও চিনবে না।” “না চিনলেই ভালো। গুড লাক।” রিফাত হাসান মাথা নেড়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। সত্যি সত্যি কেউ তাকে চিনল না। তিনি রাস্তা ধরে হাঁটলেন, দুই পাশের দোকানগুলো দেখলেন। ফুটপাতে বসে থাকা হকারদের দেখলেন, মানুষের ভিড়ের সাথে মিশে রাস্তা পার হলেন, ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক দেখলেন। তারপর একটা স্কুটারের সাথে দরদাম করে তার শৈশবের এলাকাতে রওনা দিলেন। স্কুটার থেকে নেমে চারিদিকে একবার তাকিয়ে তিনি হকচকিয়ে গেলেন। স্কুটারের ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি আমাকে ঠিক জায়গায় নামিয়েছেন তো?” ড্রাইভার দাঁত বের করে হাসল, বলল, “জে স্যার। ঠিক জায়গায় নামিয়েছি।” স্কুটারের ভাড়া মিটিয়ে রিফাত হাসান রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকেন, তার মনে হতে থাকে তিনি যেন সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা জায়গায় হাঁটছেন। এই রাস্তা ধরে বগলে বইয়ের ব্যাগ চেপে ধরে অসংখ্যবার হেঁটে গেছেন, ব্যাপারটা তার বিশ্বাসই হতে চায় না। রাস্তাটা ছেলেবেলায় তার বিশাল মনে হত, এখন মনে হচ্ছে সরু একটা রাস্তা। একটা গলির মোড়ে রিফাত হাসান দাঁড়িয়ে গেলেন, এইখানে একটা ছোট দোকান ছিল, হাতে পয়সা থাকলে এই দোকান থেকে চুইংগাম কিনতেন। সেই দোকানটা নেই, তার বদলে এইখানে একটা শপিং পাজা। কী আশ্চর্য! রিফাত হাসান আরও কিছুদূর হেঁটে গেলেন, সামনে একটা বিশাল মাঠ ছিল, যদি গিয়ে দেখেন মাঠটা নেই, চৌকোনা চৌকোনা কুৎসিত বিল্ডিং পুরো মাঠ ভরে ফেলেছে তা হলে তার মনে হয় দুঃখে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। রিফাত হাসান ভয়ে ভয়ে হেঁটে সামনে গিয়ে ডানদিকে তাকালেন এবং বুক থেকে একটা শ্বাস বের করে দিলেন। মাঠটা আছে, আগে যে রকম বিশাল তেপান্তরের মাঠের মতো মনে হত এখন সে রকম মনে হচ্ছে না। মাঠটা বেশ ছোট এবং রিফাত হাসানকে স্বীকার করতেই হবে, বেশ নোংরা। অবশ্যি আঠারো বছর পর এ দেশে এসে সবকিছুকেই নোংরা মনে হয় সেটা তিনি মেনেই নিয়েছেন। রিফাত হাসান হেঁটে এগিয়ে গেলেন, মাঠের মাঝখানে একটা গরু ঘাস খাচ্ছে। এক কোনায় বেশ কিছু ছেলে ক্রিকেট খেলছে। রিফাত হাসান মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালেন, তাদের বাসাটা যেখানে ছিল সেখানে একটা কুৎসিত ছয়তলা ফ্ল্যাট। রিফাত হাসান আস্তে আস্তে মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন, চারিদিকে বড় বড় গাছ ছিল, এখন বেশিরভাগ গাছ নেই। মাঠের মাঝামাঝি গাছটা এখনো আছে। এই গাছটা তার প্রিয় গাছ ছিল। কতদিন এই গাছটার ডাল ধরে ঝপাঝাঁপি করেছেন। আর কী আশ্চর্য, গাছের পাশে লোহার বেঞ্চটাও এখনো আছে, রাত্রিবেলা এই বেঞ্চটাতে শুয়ে শুয়ে তিনি আকাশের তারা দেখতেন। রিফাত হাসান গাছটার দিকে হেঁটে যেতে থাকলেন এবং তখন লক্ষ করলেন গাছের ডালে দশ-বারো বছরের একটা ছেলে, চোখে চশমা গায়ে লাল রঙের একটা টি-শার্ট। ছেলেটা ডালটাতে উঠে দাঁড়াল এবং তাকে অবাক করে ছেলেটা গাছ থেকে লাফ দিল। এত উঁচু থেকে কেউ সাধারণত লাফ দেয় না। ছেলেটা নিচে পড়ে নিশ্চয়ই ব্যথা পেয়েছে, কারণ রিফাত হাসান শুনতে পেলেন সে যন্ত্রণার মতো শব্দ করছে। রিফাত হাসান তার কাছে ছুটে গেলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “ব্যথা পেয়েছ, ব্যথা পেয়েছ তুমি?” ছেলেটা উত্তর না দিয়ে আবার যন্ত্রণার মতো শব্দ করল। রিফাত হাসান কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “উঠতে পারবে? ধরব তোমাকে?” ছেলেটা তখনো কথা বলল না, তার পায়ে যেখানে ব্যথা পেয়েছে সেখানে হাত বুলাতে লাগল। রিফাত হাসান বললেন, “কী হল? কথা বলছ না কেন?” ছেলেটি পা-টাকে সোজা করার চেষ্টা করতে করতে বলল, “আমি অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলি না।” ছেলেটি গাব্বু এবং এই বাক্যটি দিয়ে রিফাত হাসানের সাথে তার পরিচয়ের সূত্রপাত হল। রিফাত হাসান গাব্বুর কথা শুনে হেসে ফেললেন, বললেন, “ও আচ্ছা! সেটা অবশ্যি ভালো। অপরিচিত মানুষের সাথে কথা না বলাই ভালো। পৃথিবীতে কতরকম মানুষ আছে, কী বল?” গাব্বু এবারও কোনো কথা বলল না, উঠে দাঁড়িয়ে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে হেঁটে লোহার বেঞ্চটাতে গিয়ে বসল। রিফাত হাসান জিজ্ঞেস করলেন, “ব্যথাটা কী একটু কমেছে?” গাব্বু কথার উত্তর না দিয়ে হাত দিয়ে মুখটা জিপ করে বন্ধ করার মতো ভঙ্গি করল, ভঙ্গিটা খুবই স্পষ্ট, তার মুখ জিপ করে দেওয়া হয়েছে, সে কোনো কথা বলবে না। রিফাত হাসান বললেন, “ও আচ্ছা, মুখ বন্ধ? নো টক।” গাব্বু মাথা নাড়ল। রিফাত হাসান বেঞ্চের একপাশে বসে বললেন, “আমি যদি আমার পরিচয় দিই, যদি কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারি আমি চোর ডাকাত ছেলেধরা না তা হলে কী কথা বলবে?” “কীভাবে প্রমাণ করবেন?” রিফাত হাসান পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলেন, সেখান থেকে তার কার্ড বের করে গাব্বুর হাতে দিয়ে বললেন, “এই যে আমার কার্ড। এখানে আমার নাম লেখা আছে। আমার ইউনিভার্সিটির নাম–” গাব্বু মাথা নেড়ে বলল, “যে কেউ কার্ড বানাতে পারে। আমাদের ক্লাসে একটা ছেলে পড়ে, তার নাম বল্টু, সেও একটা কার্ড বানিয়েছে, কার্ডে কী লিখেছে জানেন?” “কী?” “ফেমাস ফিল্মস্টার।” গাব্বু মুখ গম্ভীর করে বলল, “সেই জন্যে কার্ডকে বিশ্বাস করা ঠিক না। তা ছাড়া—” “তা ছাড়া কী?” “এই যে মানিব্যাগটা আপনি বের করলেন, সেটা যে আপনার মানিব্যাগ তার কী প্রমাণ আছে?” “মানে আমি অন্য কারও মানিব্যাগ নিয়ে এসেছি? পকেটমার?” “আমি সেটা বলছি না, কিন্তু কোনো প্রমাণ তো নাই।” রিফাত হাসান এই পাগলাটে ছেলেটার কথা শুনে মজা পেতে শুরু করেছেন। হাসি গোপন করে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ, কোনো প্রমাণ নাই। যদি আজকের পত্রিকাটা থাকত তা হলে অবশ্যি প্রমাণ করতে পারতাম।” গাব্বু ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “কীভাবে?” “আজকের পত্রিকায় আমার ছবি বের হয়েছে।” রিফাত হাসানের কথা শুনে গাব্বু একটু সরে গিয়ে বসল। রিফাত হাসান জিজ্ঞেস করলেন, “কী হল? তুমি একটু সরে গেলে কেন?” “আপনি বলেছেন পত্রিকায় আপনার ছবি বের হয়েছে। সেই জন্যে। পত্রিকায় সবসময় মার্ডারার আর সন্ত্রাসীর ছবি বের হয়।” রিফাত হাসান চোখ কপালে তুলে বললেন, “আমাকে দেখে কী মার্ডারার আর সন্ত্রাসী মনে হয়?” গাব্বু কিছুক্ষণ রিফাত হাসানের দিকে তাকিয়ে রইল, চোখে চশমা, মাথায় আধপাকা চুল, মুখের কোনায় একটু হাসি, ঝকমকে চোখ। বলল, “নাহ্।” রিফাত বিশাল একটা পরীক্ষায় পাস করেছেন সে রকম ভাব করে বললেন, “থ্যাংকু! তুমি যদি বলতে আমার চেহারা মার্ডারার আর সন্ত্রাসীর মতো তা হলে আমার খুব মন খারাপ হত।” গাব্বু গম্ভীর গলায় বলল, “চেহারার উপরে মানুষের কোনো হাত নাই।” “তা ঠিক।” “আমাদের ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দর চেহারা মিলির। আর মিলি হচ্ছে সারা ক্লাসের মাঝে সবচেয়ে পাজি।” রিফাত হাসান মাথা নেড়ে বললেন, “ইন্টারেস্টিং।”


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৪৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now