বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গাব্বু (৩)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান TARiN (০ পয়েন্ট)

X রাতে টুনি তার টেবিলে বই রেখে পড়ছে, হঠাৎ তার মনে হল কেউ তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে, তাকিয়ে দেখে গাব্বু। টুনি ভুরু কুঁচকে বলল, “তুই কী করছিস?” “দেখছি।” “কী দেখছিস?” “তোমার চুল।” টুনির মাথার লম্বা চুল সত্যি দেখার মতো, তবে সেটা গাব্বুর চোখে পড়বে সেটা টুনি কখনো চিন্তা করেনি। সে বলল, “দেখা হয়েছে?” “হ্যাঁ।” “এখন যা। ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলবি না।” গাব্বু বলল, “আপু, আমাকে একটা জিনিস দেবে?” “কী জিনিস?” “আগে বল, দেবে।” “না জেনে কেমন করে বলব? আগে শুনি তারপর দেখি দেওয়া যায় কী না।” মিঠু কাছেই ছিল, সে উপদেশ দেওয়ার ভঙ্গি করে বলল, “আপু, তুমি রাজি হয়ো না, ভাইয়া সবসময় আজব আজব জিনিস চায়।” গাব্বু মুখ শক্ত করে বলল, “আমি মোটেও আজব কোনো জিনিস চাই না।” টুনি জিজ্ঞেস করল, “তা হলে কী চাস?” “চুল।” “চুল?” টুনি অবাক হয়ে বলল, “তুই চুল চাস?” “হ্যাঁ।” “তুই আমার কাছে চুল চাইছিস কেন? তোর নিজেরই তো মাথাভর্তি চুল। গাব্বু বলল, “আমার লম্বা চুল দরকার। ছোট চুল দিয়ে হবে না। দেখছ না আমার চুল কত ছোট। আব্বু আমাকে চুল লম্বা করতেই দেয় না।” “কী করবি লম্বা চুল দিয়ে?” “হাইগ্রোমিটার বানাব।” “সেটা আবার কী জিনিস?” “জলীয় বাষ্প মাপার মেশিন। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে চুল লম্বা হয়। তাই চুল দিয়ে একটা মেশিন বানাব। একটা রোলারের মতো জিনিসে চুল প্যাঁচানো থাকবে। চুল লম্বা হলে রোলারটা ঘুরবে। রোলারের সাথে একটা কাঁটা লাগানো থাকবে-” গাব্বু দুই হাত-পা নেড়ে তার যন্ত্র কীভাবে কাজ করবে সেটা বোঝানো শুরু করল, টুনি তখন তাকে থামাল, বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, বুঝেছি।” “দেবে চুল?” “তোর কতগুলো চুল লাগবে?” গাব্বু বলল, “সবগুলো হলে ভালো হয়।” টুনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, “কী বললি? সবগুলো? আমি তোকে চুল দেওয়ার জন্যে আমার মাথা ন্যাড়া করে ফেলব?” গাব্বু বলল, “কেন? মানুষ কি মাথা ন্যাড়া করে না? আবার তো চুল উঠে যাবেই।” টুনি রেগে বলল, “ভাগ এখান থেকে। পাজি কোথাকার! ঢং দেখে বাঁচি না। কত বড় শখ! তার মেশিন বানানোর জন্যে আমি আমার মাথা ন্যাড়া করে ফেলব!” গাব্বু বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। সবগুলো দিতে না চাইলে অর্ধেক দাও।” টুনি মুখ শক্ত করে বলল, “মাথার হাফ সাইড কামিয়ে অর্ধেক দেব? হাফ ন্যাড়া হাফ চুল?” “হ্যাঁ। সমস্যা কী?” “একজন মানুষের মাথার অর্ধেক ন্যাড়া আর অর্ধেক চুল থাকলে সেটা কী সমস্যা যদি তুই না বুঝিস তা হলে বুঝতে হবে তোর সিরিয়াস সমস্যা আছে। বুঝতে হবে তোর ব্রেনে গোলমাল আছে। বুঝেছিস?” গা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তার মানে তুমি দেবে না?” “না।” “একটুও দেবে না।” “একটা দিতে পারি। জাস্ট ওয়ান।” মিঠু এগিয়ে এসে বলল, “ভাইয়া নিয়ে নাও। আপু তোমাকে একটার বেশি দেবে না।” গাব্বু টুনির মাথার লম্বা চুলগুলোর দিকে লোভ নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমার মাথায় এত চুল, আর তুমি মাত্র একটা দেবে?” টুনি মুখ খিঁচিয়ে বলল, “তুই যদি বেশি ঘ্যান ঘ্যান করিস তা হলে ওই একটাও পাবি না।” মিঠু বলল, “ভাইয়া, বেশি ঘ্যান ঘ্যান না করে এই একটাই নিয়ে নাও। প্রত্যেকদিন একটা একটা করে নিলেই অনেকগুলো হয়ে যাবে।” গাব্বু খুবই হতাশ ভঙ্গি করে বলল, “ঠিক আছে। তা হলে একটাই দাও।” টুনি তার মাথার একটা চুল ছিঁড়ে দিতে যাচ্ছিল, গাব্বু তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “দাঁড়াও, দাঁড়াও, তুমি ঠিক চুল দিতে পারবে না। আমি নাদুসনুদুস দেখে একটা বেছে নিই।” গাব্বু দেখেশুনে একটা নাদুসনুদুস চুল হ্যাঁচকা টান দিয়ে ছিঁড়ে নিল, টুনি”আউ আউ” করে চিৎকার করে বলল, “বেশি নিয়ে যাসনি তো?” গাব্বু মাথা নাড়ল, “না, বেশি নেই নাই।” তারপর একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল, “আমি শুধু একটু বড় হয়ে নিই, তখন দেখ আমার এত বড় বড় চুল হবে। যখন দরকার হবে তখন পুট করে ছিঁড়ে নেব।” মিঠু জানতে চাইল, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোন?” গাব্বু মাথা নাড়ল, “উঁহু। আইনস্টানের মতোন। বৈজ্ঞানিকদের অন্যরকম লম্বা চুল থাকে।” মিঠু মাথা নাড়ল, বলল, “না ভাইয়া, থাকে না। আজকে টেলিভিশনে বৈজ্ঞানিক রিফাত হাসানকে দেখিয়েছে, তার মাথায় মোটেও লম্বা চুল নাই।” “তার মানে রিফাত হাসান হচ্ছে পাতি সায়েন্টিস্ট।” টুনি বলল, “বাজে কথা বলবি না। এত বড় একজন সায়েন্টিস্টকে নিয়ে কী একটা বাজে কথা বলে দিল। ভাগ এখান থেকে। কানের কাছে আর ভ্যাদর ভ্যাদর করবি না। যা–” গাব্বুর চোখ-মুখ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বলল, “আপু তুমি কি জানতে চাও কেমন করে অল্প একটু পড়েই সবকিছু মনে রাখা যায়?” টুনি বলল, “না, আমি জানতে চাই না। তুই বিদায় হ।” “খুবই সহজ। ব্রেনের একটা অংশ আছে, তার নাম হচ্ছে এমিগডালা। এমিগডালার কাজ হচ্ছে টুনি মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “তুই চুপ করবি? করবি চুপ?” গাব্বু হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে বাবা–চুপ করছি।” . গভীর রাতে টুনির ঘুম ভেঙে গেল, তাকিয়ে দেখে ঘরে আলো জ্বলছে। ঘুরে গাব্বুর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল গাব্বু বিছানায় দুই পা তুলে বসে আছে। তার দুই চোখ বড় বড় করে খোলা এবং সে ড্যাব ড্যাব করে শূন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। টুনি ঘুম ঘুম চোখে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকাল-ঘড়িতে রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট। সে গাব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল, “গাব্বু, রাত একটা বাজে। তুই এখনো ঘুমাসনি?” গাব্বু মাথা নাড়ল, বলল, “না।” “কী করছিস?” “কিছু করছি না।” “কিছু করছিস না তো জেগে বসে আছিস কেন?” গাব্বু গম্ভীর মুখে বলল, “আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছি।” “এক্ষুনি বললি কিছু করছিস না, এখন বলছিস এক্সপেরিমেন্ট করছিস। ব্যাপারটা কী?” “এইটাই এক্সপেরিমেন্ট।” “কোনটা?” “জেগে বসে থাকা।” টুনি দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “জেগে বসে থাকা এক্সপেরিমেন্ট? আমার সাথে ফাজলেমি করিস?” তারপর ধমক দিয়ে বলল, “এক্ষুনি লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়।” গাব্বু মাথা নাড়ল, “উঁহু। আমি জেগে থাকব।” “জেগে থাকবি?” “হ্যাঁ।” “কেন?” গাব্বু বলল, “কেউ যদি পরপর টানা তিন দিন না ঘুমিয়ে থাকতে পারে তা হলে তার হ্যালুসিনেশন শুরু হয়। হ্যালুসিনেশান বুঝেছ তো? অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস দেখা যায়–” টুনি গরম হয়ে বলল, “রাত একটার সময় তোর আমাকে হ্যালুসিনেশান শিখাতে হবে না। আমি জানি হ্যালুসিনেশান কী!” সে বিছানায় উঠে বসে মেঘস্বরে বলল, “তুই যদি এক্ষুনি লাইট নিভিয়ে ঘুমাতে না যাস তা হলে তোর আর হ্যালুসিনেশান দেখার জন্যে তিন রাত জেগে থাকতে হবে না। তুই এক্ষুনি হ্যালুসিনেশান দেখা শুরু করবি।” গাব্বু অবাক হয়ে বলল, “এক্ষুনি? কীভাবে?” “আমি উঠে এসে তোর চুলের ঝুঁটি ধরে এমন কয়েকটা ঝাঁকুনি দেব যে তোর ব্রেন তোর নাক দিয়ে বের হয়ে আসবে।” এরকম একটা অবৈজ্ঞানিক কথা শুনে গাব্বু খুব বিরক্ত হল, বলল, “ব্রেন কখনো নাক দিয়ে বের হতে পারে না।” টুনি চোখ পাকিয়ে বলল, “তুই দেখতে চাস বের হয় কি না? দেখাব এসে?” রীতিমতো হুংকার দিয়ে বলল, “দেখাব?” গাব্বু বলল, “না। দেখাতে হবে না।” টুনি বরফের মতো ঠাণ্ডা গলায় বলল, “আমি এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনব-এর মাঝে তুই যদি লাইট নিভিয়ে শুয়ে না পড়িস তা হলে তোর কপালে দুঃখ আছে।” টুনি গুনতে শুরু করল, “এক।” গাব্বু বলল, “আপু, আমার কথা শোনো।” টুনি গাব্বুর কথা শোনার জন্যে কোনো আগ্রহ দেখাল না, বলল, “দুই।” “তুমি আগে শোনো আমি কী বলি।” “তিন।” গাব্বু মাথা নেড়ে বলল, “আপু, তোমার জন্যে আমি একটা কিছু করতে পারি না।” টুনি বলল, “চার।” “ইশ! আপু-” “পাঁচ।” গাব্বু এবারে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি শুয়ে পড়ছি। খালি আমি একবার বড় হয়ে নিই, তখন দেখব তুমি কী করো।” টুনি বলল, “ছয়।” “গাব্বু বলল, তখন আমি তিন দিন না-সাত দিন না ঘুমিয়ে থাকব। তখন দেখব তুমি কী করো।” টুনি বলল, “সাত।” গাব্বু তখন লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল, টুনি শুনল, শুয়ে শুয়ে গাব্বু বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে। . ঠিক তখন রিফাত হাসানও তাঁর হোটেলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। তার কারণটা অবশ্যি ভিন্ন, হঠাৎ করে তিনি টের পেয়েছেন এই দেশে তার কোনো আপনজন নেই। পরিচিত মানুষ আছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো প্রিয়জন নেই। নিজের দেশে যদি একজনও প্রিয়জন না থাকে তা হলে তার মতো দুর্ভাগা কে হতে পারে? রিফাত হাসান অবশ্যি তখনো জানেন না পরদিন তার সাথে গাব্বু নামের বারো বছরের একটা ছেলের পরিচয় হবে এবং শুধু পরিচয়েই সেটা থেমে থাকবে না! রিফাত হাসানও তাঁর হোটেল ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন, হোটেলের জানালা দিয়ে খানিকটা চাঁদের আলো তার বিছানায় এসে পড়ল।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৬৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now