বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গল্প এক বর্ষাদিনের

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান স্নিগ্ধা আফসানা রোশনী (০ পয়েন্ট)

X গল্প এক বর্ষাদিনের সবে মাঝরাত। বিছানায় এপাশ-ওপাশ,কখনো পায়ের দিকে মাথা দেওয়া আবার খাটের মাঝ বরাবর শোয়ার পরেও কাজ হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে বিছানাটাই খারাপ।ফ্যান ফুল স্পিডে চলছে,তবু ঘেমে নেয়ে উঠছি।তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে লাকড়ি!হার্টএটাক হচ্ছে নাকি?কাউকে ডাকব?থাক,রাতের এই সময়ে ঘুমটা গাঢ় হয়ে আসে। শেষ কয়েক মাস ধরে চোখে যখন ঘুম নামে তখন বাইরে ভোরের আলো ফুটেছে।উঠোনের কোণার খোপে লাল-কালো মোরগটা ডানা ঝাপটায়।রেইনট্রি গাছটায় কাকের বাসা,কাকগুলোও জেগে উঠছে।কাকের ডাক এই ভোরে চমৎকার একটা সিম্ফোনি হয়ে মস্তিষ্ক শান্ত করে।পাশ ফিরে নরম হয়ে যাওয়া তুলার কোলবালিশটা জড়িয়ে ধরি।কেউ যেন খুব পাশে আছে। সাবধানে বিছানা থেকে নামলাম।ঘরের ডিম লাইটটা নষ্ট,নতুন লাগাবো করে আর হয়নি।এখন দরজা খুলে ডাইনিং রুমে যাও,পানি খাও।ঘরে একটা পানির বোতল রাখতে হবে। ডাইনিং রুমের বারান্দার দরজা খোলা,বাসার সব দরজা-জানালা আমি লাগাই।স্পষ্ট মনে আছে রাতে বিছানায় যাবার আগে আমি ডাবল চেক করেছি। বারান্দার বাতি নেভানো।ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোয় বেতের চেয়ারে বসে থাকা ছায়ামূর্তি দেখে বুকটা কেঁপে উঠলেও সামলে নিলাম।নানু বসে আছেন।ছোটখাটো মানুষটা চেয়ারে এলিয়ে পড়ে আছেন।কেমন অসহায়,দুঃখী একটা ভঙ্গি। আস্তে করে বললাম, “বাতি জ্বালব নানু?মশা লাগছে না?” নানু আমার থেকেও আস্তে করে বললেন, “মশা নাই রে বুবু”। পাশের চেয়ারটায় বসলাম, “ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলে আজ?” “খাইছি বুবু।ঘুমের ওষুধে কি আর ঘুম হয় বুইন,পরানের শান্তি ঘুম আনে”। নরম গলায় জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে নানু তোমার?” নানু হাসার চেষ্টা করলেন, “কিছু হয়নাই বুইন।বয়স হইলে আপনাতেই ঘুম কমে। একটু থেমে নিঃশ্বাস নিলেন নানু, “তুমিও তো ঘুমাও না রাইতে!” আমি হাসলাম, “আমিও বুড়ী হয়ে গেছি নানু!” নানু আমার মাথায় হাত দিলেন। “আমার বুবুর কি মনডা খারাপ?” “মন খারাপ না নানু।তুমি এখানে একা বসে আছো কেন?আমাকে ডাকলেই হত।জেগেই তো থাকি”। “ডাকতে তো পারিই বুবু তয় মাঝে মাঝে একলা থাকা ভাল।নিজের লগে কথা কইতে হয়।পরান হালকা লাগে”। “তুমি এসব নিয়ে খুব ভাব নানু?” “মাঝে-মধ্যে আপনাতেই মনে চইলা আসে বুইন।একলা থাকি,একটু হিসাব-নিকাশ করি।আবার ভাবি হিসাব কইরা কি হবে?দুই দিনের জীবনে এত কি হিসাব?হিসাব নেওয়ের জইন্যে তো আল্লাহপাক আছেই”। আমি কিছু বললাম না।নানুর গলার স্বর খুব সুন্দর।শুনলে মন “ঠান্ডা” লাগে। “শ্রাবণ মাস চলে,না রে বুইন?” ইদানীং প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে,আষাঢ়-শ্রাবণই হবে। “হু নানু,বর্ষাকাল”। “এই রকম, এক বর্ষাকালেই তোর নানার লগে দেখা হইছিলো!” নানু সাধারণত এসব নিয়ে গল্প করেন না।আমি নড়েচড়ে বসলাম।নানুর কনুই ধরে বললাম, “তোমার সাথে নানভাইয়ের বিয়ের গল্পটা বল না,নানু”। নানু আদুরে গলায় বললেন, “কতবার শুনেছিস বল তো?” “শুনলে শুনেছি,তুমি আবার বল”। “সব কি আর মনে আছে বুবু...” “যা মনে আছে তাই বল”। “ঝুম বৃষ্টির দিন।কি বৃষ্টি বুবু।দিন নাই,রাইত নাই।আসমান কানতেছে।বাইরে বাইর হওনের উপায় নাই।তিন দিন ধইরা ঘরে আটকা সবাই।আব্বা-আম্মা সময় পাইতেছে,সবাই খ্যাতা মুড়ি দিয়া ঘুমাইবে দুপুরে।এমন সময় দরজায় খটখট।আব্বা ম্যালা বিরক্ত হইয়া দরজা খোলতে গেছে,ভিইজ্জা জবজবা একটা মানুষ দাঁড়াইয়া আছে।কি মানুষ,একবার চিন্তা কর বুবু!আকাশের এই অবস্থা দেইখাও নামছে,লগে ছাতা নাই।আইছে অন্য বাড়ি,কাগজপত্র ভিইজ্জা যাইতেছে তাই আমাগো বাড়ি আইছে।আব্বা ধমক দেয় দেয় অবস্থা,তোর নানার মুখের দিকে তাকাইয়া মুহূর্তে রাগ পানি!” “কিভাবে নানু?” “আব্বা তো আর বলে নাই,পরে আম্মায় কয়।ঘরে রাজপুত্তুর আইছে!” এইটুকু বলেই নানু চুপ করে গেলেন।এই গল্প অসংখ্যবার আমার শোনা।এই পর্যায়ে এসে নানু লজ্জা পেয়ে চুপ করে যান।নানুর এই লজ্জা পাওয়া মুখটা এত সুন্দর,কোমল একটা ভালবাসা,মায়ায় ঘেরা।যেন এখনও সেই মানুষটা তাঁর পাশে বসে আছে,তাঁকে দেখে নানু লজ্জা পাচ্ছেন!” আমি হাসতে হাসতে বললাম, “তারপর এই “রাজপুত্তুর” একটা রাজকন্যা পেয়ে গেলেন,তাই না বুবু? নানুর হাসলেন।তাঁর চেহারা না দেখেই বুঝতে পারলাম আমার পাশে আমার মায়ের মা বসে নেই।আছে তেরো বছরের এক কিশোরী।কিশোরী হাসিনা বানু। “নানু?” “কি বুবু?” “আজ আঠারো তারিখ নানু!” নানু আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন,দিন-তারিখ তাঁর মনে থাকেনা আমি জানি।কিন্তু এই দিনটি নানু কোনদিন ভুলে যাননি।এমনিতেও দিনের বেশিরভাগ সময় মানুষটা জায়নামাজে পড়ে থাকেন।আজকের দিনে নানু দিন-রাতের সবটা প্রার্থনায় থাকবেন। নানা ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিন এটা।আজকের দিনে নানু কি চান?বেহেশত? “নানু?তুমি নানাভাইকে খুব “মিস” কর তাই না?” ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন বুড়ো মানুষটি।মাথা ঝাঁকালেন।প্রায় শোনা যায় না এমন গলায় বললেন, “বুবুরে,দুনিয়ায় এই হইল আপনা মানুষ!এরে ছাড়া আইজ ত্রিশ বচ্ছর বাইচা আছি।থাকা যায় না রে বুবু!” “তুমি নামাজ পড়ে সারাক্ষণ কি চাও?নানাভাইয়ের জন্য দোয়া কর?” “দোয়া তো সবার জইন্য করি বুইন।” “আর তোমার নিজের জন্য?নিজের জন্য কি চাও?” “যারে এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় নাই,তারে পাওয়া যায় মৃত্যুর পরে।আখিরাতে মানুষ তার সাথেই থাকবে যারে সে ভালোপায়।সত্যি ভালোপায়”। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলা আলোয় আমি স্পষ্ট দেখলাম নানুর চোখ ভেজা। “বুবু?” “জ্বি,নানু?” নানু আমার পিঠে হাত রেখে বললেন,“চইল্লা গ্যালেই শেষ সব বুইন।মানুষটা নাই মানে নাই।তারে আর কোনদিন পাওয়া যাইবে না,দেখা যাইবে না।যে আছে তারে যাইতে দিও না বুবু!” আমি বিস্ময় নিয়ে প্রায় আশি বছরের এই মহিলার দিকে তাকাই।এত বছর পরেও হৃদয়ে কি অসীম ভালবাসার সাগর জমা করে রেখেছেন!প্রিয় মানুষটাকে হারানোর বেদনা তাঁর এতটুকু কমেনি। বাসায় সামনেই মসজিদ আমাদের, ফজরের আযান হচ্ছে।আমি মাথায় আঁচল তুলে দিলাম।নানু গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,“চল বুবু,ওযু কইরা আসি”। মসজিদের বড় হুযুর আজান দেন সবসময়,আজ অন্য কেউ দিচ্ছেন।ভোর রাতের নিস্তব্ধতা ভেংগে তাঁর কন্ঠ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে... “ আস-সলাতু খাইরুম মিনান নাউম!” অর্থ- ঘুম হতে নামাজ উত্তম! আচ্ছা,ফাহিম কেমন আছে?ফোন করে তাকে ঘুম থেকে তুলে দিলে কেমন হয়?এতকাল পরে আমার নম্বরটা সে চিনবে?নামাজের পর দু’জন চায়ের কাপ হাতে ভোর হতে দেখা।মাঝের শত কিলোমিটার দুরত্ব,একটা ফোনকল কি পারবে তা মুছে দিতে?দেরি করে ফেলিনি তো?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫১৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ গল্প এক বর্ষাদিনের

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now