বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
##দুই হাজার বছর পরের কথা##
নিশি রনের গলা জড়িয়ে বলল,
"তুমি এরকম মুখ ভার করে আছ কেন?"
রন অন্যমনস্কভাবে নিশির হাত সরিয়ে বলল, “কে বলেছে আমি মুখ ভার করে আছি?"
“এই তাে আমি দেখছি, তুমি নিজ থেকে কোন কথা বলছ না, আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিচ্ছ। তাও ছাড়া-ছাড়া ভাবে, কাটা-কাটা ভাবে।"
রন নিশিকে নিজের কাছে টেনে এনে বলল, "আমি দুঃখিত নিশি। কয়দিন থেকে কেমন যেন অস্থির-অস্থির লাগছে।"
"কেন? কি হয়েছে?"
"জানি না কেন। আমার বয়স প্রায় দুই হাজার বৎসর হয়ে গেছে কিন্তু এখনাে মনে হয় নিজেকে বুঝতে পারি না।”
নিশি রনের গলা জড়িয়ে খিলখিল করে হেসে বলল, “তােমার বয়স দশ হাজার বৎসর হলেও তুমি নিজেকে বুঝতে পারবে না। কিছু কিছু মানুষ নিজেকে বুঝতে পারে না।”
রন কোমল চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি কি নিজেকে বুঝতে পারাে?"
নিশি মাথা নাড়ল, বলল, "পারি। এই যেমন মনে করে তােমার পাশে বসলেই আমার মনে হয় আমার বয়স এক হাজার বৎসর কমে গিয়েছে!”
"সত্যি?"
“সত্যি ।”
রন মাথা নাড়ল, বলল, "আমি বিশ্বাস করি না। এক হাজার বৎসর আগে তােমার কেমন লাগত সেটি তােমার মনে নেই। তােমার মনে থাকার কথা নয়।” নিশি হাসি-হাসি মুখে বলল, "মনে না থাকলে নেই-সবকিছু মনে রাখতে হবে তােমাকে কে বলেছে?"
"আমার মাঝে মাঝে খুব মনে করার ইচ্ছে করে।"
রন একধরনের উদাস-চোখে বলল, "আমার কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মনে করার ইচ্ছে করে জানাে?”
"কোন জিনিসটা?”
"আমার শৈশবের কথা। আমি শৈশবে কি করেছি খুব জানার ইচ্ছে করে।”
"সেটি তুমি কেমন করে জানবে? গত দুই হাজার বৎসরে তুমি নিশ্চয়ই তােমার স্মৃতি খুব কম করে হলে পাঁচবার মুছে দিয়েছ।”
"নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই দিয়েছি।”
"তুমি যতবার তােমার নূতন জীবন শুরু করেছ ততবার তুমি তােমার স্মৃতি মুছে দিয়েছ।"
রন মাথা নাড়ল, "আমার নূতন জীবনটি কতটুকু নূতন কে জানে!
নিশি খিলখিল করে হেসে বলল, "এডভেঞ্চারের দিকে তােমার যত ঝোঁক আমি নিশ্চিত তুমি এক দুইবার ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছ, মেয়ে থেকে ছেলে হয়েছ! দুই হাজার বৎসরে কত কী করা যায়!"
রন কোন কথা না বলে একটু হাসল।
নিশি হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে বলল, "আমার কী ইচ্ছে করে জানাে?"
"কী?"
"আমার খুব সন্তানের মা হতে ইচ্ছে করে। এরকম ছােট একটা বাচ্চা হবে, আঁকুপাকু করে নড়বে, আমি বুকে চেপে ধরে রাখব, ভাবলেই আমার বুকের ভিতর কেমন জানি করতে থাকে।"
রন নিশিকে স্নেহভরে কাছে টেনে নিয়ে বলল, "তুমি খুব ভালাে করে জান সেটি হবার নয়। পৃথিবীতে নূতন শিশুর জন্ম দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় এক হাজার বৎসর আগে।”
"জানি। তবুও ইচ্ছে করে।”
"পৃথিবী যত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে এখানে তার থেকে অনেক বেশি মানুষ। আমার শুধু কী মনে হয় জানাে?"
"কী?"
"পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা আবার বুঝি আশঙ্কা-সীমা পার হয়ে গেছে।”
নিশি চমকে উঠে বলল, "কী বলছ তুমি!”
"হ্যাঁ। মনে নেই গত কয়েক মাস থেকে খাবার পরিবহনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে, পানীয়ের সরবরাহ কম।"
"হ্যাঁ।"
"আমার ধারণা এগুলাে পরিবহনের বা সরবরাহের ত্রুটি নয়।"
নিশি ভয়-পাওয়া গলায় বলল, "তাহলে এগুলাে কী?"
“এগুলাে অভাব। শুধু-যে খাবারের অভাব তাই নয়, জ্বালানির অভাব, জায়গার অভাব। তুমি লক্ষ্য করেছ আমাদের এই দুইহাজার তলা দালানে একটি এপার্টমেন্ট খালি নেই?দেখেছ?"
"হ্যাঁ। দেখেছি।"
"মনে আছে পােশাকের মূল্য শতকরা বিশভাগ বাড়ানাে হলাে। মনে আছে?"
নিশি মাথা নাড়ল, তার মনে আছে।
রন গম্ভীরমুখে বলল, "আমার এইসব দেখে মনে হয় কী জানাে?”
"জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে?"
"হ্যাঁ।"
নিশির বুক কেঁপে উঠে, পৃথিবীতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে গত দুই হাজার বৎসরে বেশ কয়েকবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেই স্মৃতি তাদের মস্তিষ্ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু তবু তারা সেগুলাে জানে। পৃথিবীর মানুষ এখন এই ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকে, কখন পৃথিবীর প্রয়ােজনে তাকে পৃথিবী থেকে অপসারণ করিয়ে দেয়া হয়।
নিশির ভয়-পাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে রন গভীর ভালােবাসায় তাকে বুকের মাঝে টেনে নেয়। অপূর্ব রূপসী এই রমণীটিকে সে মাত্র তিনশত বৎসর আগের থেকে চেনে। ছেলেমানুষী সরল এই মেয়েটিকে তার বড় ভালাে লাগে।
গভীর রাতে তীক্ষ্ণ সাইরেনের শব্দে নিশি চমকে জেগে উঠল। বিছানায় তার পাশে শূন্য জায়গা, রন আগেই উঠে গেছে। নিশি ভয়-পাওয়া গলায় ডাকল, "রন। কোথায় তুমি?”
জানালার কাছে ছায়ামূর্তির মত রন দাঁড়িয়েছিল, বলল, "এই যে, আমি এখানে।
“কি হয়েছে রন? সাইরেন বাজছে কেন?”
"পৃথিবীর মানুষের এখন খুব বড় বিপদ নিশি।”
"কি হয়েছে? কেন বিপদ?"
"পৃথিবীর জনসংখ্যা আশঙ্কা-সীমা পার হয়ে গেছে।”
"পার হয়ে গেছে?" নিশি আতঙ্কে চিৎকার করে বলল, “পার হয়ে গেছে!”
“হ্যাঁ। শুনছ না বিপদের সাইরেন?"
"এখন কি হবে?"
"জনসংখ্যা কমাতে হবে।”
“কীভাবে কমাবে? কাকে কমাবে?”
"জানি না। যােগাযােগ মডিউল খুলে দেখি।"
রন যােগাযােগ মডিউলের নিয়ন্ত্রণ স্পর্শ করতেই ঘরের ভেতরে একজন মানুষের হলােগ্রাফিক প্রতিচ্ছবি ভেসে এল। মধ্যবয়স্ক কঠোর চেহারার মানুষ, বুকের উপর চারটি লাল রঙের তারা দেখে বােঝা যায় সে নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর অত্যন্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী। মানুষটি কঠোর গলায় বলল, "পৃথিবী আবার ভয়ংকর বিপদের মুখােমুখি। মানুষের একটি বিশেষ সংখ্যায় পৌছে গেলে পৃথিবী তাকে বহন করতে পারে না, একটি অপ্রতিরােধ্য বিপর্যয় দিয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা কমে আসে। আমরা সেই অপ্রতিরােধ্য বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে যেতে চাই না। সেই বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণহীন এবং তার ভেতর থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন। অতীতে জনসংখ্যা যখনই আশঙ্কার সীমা অতিক্রম করেছে তখনই মানুষের সংখ্যা কমিয়ে নূতন শিশুর জন্ম দেয়া হয়েছে। যারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে ইচ্ছুক তাদের তালিকা করে পৃথিবী থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সেই সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল হওয়ায় লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে মানুষকে অপসারণ করা হয়েছে। মানুষকে অত্যন্ত দ্রুত হত্যা করতে পারে এরকম ভাইরাস তৈরি করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়ে একবার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছে, এখন এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে হত্যা করেও পৃথিবীকে রক্ষা করা যাবে না। এখন পৃথিবীর অর্ধেক মানুষকে কমিয়ে আনতে হবে। যেভাবেই হােক। পৃথিবীর জনসংখ্যা কমানাের জন্যে এবার সম্পূর্ণ নতুন এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই পদ্ধতি অবলম্বন না করা হলে মহা-বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই। পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ। আজ রাতের জন্যে মানুষ হত্যাসংক্রান্ত বিধিনিষেধটি পৃথিবী থেকে তুলে নেয়া হল। পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবিত মানুষ অন্য একজন মানুষকে পৃথিবী থেকে অপসারণ করবে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে তাকে আইনের মুখােমুখি হতে হবে না, বরং সে পৃথিবীতে বসবাসের সুযােগ পাবে। তাকে যেন হত্যাকাণ্ডের অপরাধবােধে ভুগতে না হয় সেজন্যে কাল ভােরের আগেই তার পুরাে স্মৃতিকে অপসারিত করে দেয়া হবে। মানুষ হত্যা করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এর কার্যকর কয়েকটি পদ্ধতি সবাইকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। পদ্ধতিগুলি হচ্ছে..."
নিশি চিৎকার করে যােগাযােগ মডিউলটি বন্ধ করে দিতেই ঘরের মাঝামাঝি বসে থাকা কঠোর চেহারার মানুষের হলােগ্রাফিক প্রতিচ্ছবিটি অদৃশ্য হয়ে গেল। নিশি উদভ্রান্তের মতাে রনের দিকে তাকাল, বলল, “এটা হতে পারে না। এটা কিছুতেই হতে পারে না।”
রন বিষন্ন গলায় বলল, "কিন্তু এটা হয়ে গেছে।”
"একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে হত্যা করতে পারে না।
“প্রয়ােজনের খাতিরে মানুষ অনেকবার অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। পৃথিবীর ইতিহাস হচ্ছে যুদ্ধের ইতিহাস। যুদ্ধের অর্থ হচ্ছে হত্যাকাণ্ড। পরিকল্পিত সুসংবদ্ধ হত্যাকাণ্ড।”
নিশি ব্যাকুল হয়ে বলল, "কিন্তু এটি তাে যুদ্ধ নয়।”
“কে বলেছে যুদ্ধ নয়? মানবজাতিকে বেঁচে থাকার জন্যে এটিও একধরনের যুদ্ধ। এখানে মানুষ নিজেরা নিজেদের শত্রু। তাই এখন একে অন্যকে হত্যা করবে। মানুষকে যেন সেই হত্যাকাণ্ডের অপরাধবােধ বহন করতে না হয় সেজন্যে তার স্মৃতিকে পুরােপুরি অপসারণ করে দেয়া হবে। সে জানতেও পারবে না সে একটি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে।”
নিশি হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মত মাথা নেড়ে বলল, "না-না-না। এটা হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না। একজন মানুষ অন্যকে খুন করতে পারে না।"
রন বিষন্ন গলায় বলল, “এটি সেরকম খুন নয়। এর মাঝে কোন ক্রোধ, জিঘাংসা, স্বার্থ বা লােভ নেই। এটি একটি প্রক্রিয়া, পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার একটি পক্রিয়া। এর সিদ্ধান্ত কোনাে মানুষ নেয়নি, তারা শুধুমাত্র নিয়মটি পালন করেছে।"
নিশি এবার মুখ ঢেকে আকুল হয়ে কেঁদে ফেলল, কাঁদতে কাঁদতে বলল, "কিন্তু আমি কেমন করে একজন মানুষকে খুন করব? কাকে খুন করব? কেমন করে খুন করব?"
রন কিছু বলল না, গভীর মমতায় নিশির দিকে তাকিয়ে রইল। নিশি ব্যাকুল হয়ে রনের দিকে তাকাল, রন তাকে গভীর ভালােবাসায় আলিঙ্গন করে বলল, "নিশি, তােমার কাউকে খুন করতে হবে না। আমি তােমাকে রক্ষা করব নিশি।”
"কেমন করে তুমি আমাকে রক্ষা করবে?"
রন কোন কথা বলল না, গভীর মমতায় সে নিশির মুখে হাত বুলিয়ে বলল, "এই যে। এইভাবে।”
নিশি অনুভব করল রনের শক্ত দুটি হাত তার গলায় চেপে বসেছে, নিশি নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। একবিন্দু বাতাসের জন্যে তার বুকের ভেতর হাহাকার করতে থাকে কিন্তু রনের হাত এতটুকু শিথিল হল না। নিশি বিস্ফারিত চোখে রনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, সেই মুখে কোনাে ক্রোধ নেই, কোনাে জিঘাংসা নেই, কোনাে প্রতিহিংসা নেই। সেই মুখে গভীর বেদনা এবং ভালােবাসা। নিশির জন্যে ভালােবাসা এবং পৃথিবীর জন্যে ভালােবাসা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
মমতা বেগম
User ৩ বছর, ২ মাস পুর্বেইফতেখার হাসান মাহিন
Golpobuzz ৩ বছর, ২ মাস পুর্বেদুষ্টু কবি
User ৩ বছর, ৩ মাস পুর্বে