লেখক:অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হৃদয়
অবশেষে শব্দের উৎসের দিকটাই আমাদের যাত্রার লক্ষ্য স্থির হলো।আমাদের সঙ্গে রাখা সব সামগ্রী তো নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।আবার মি.A এর পরিকল্পনা হলো বড়জোর তিনদিন আমরা যাত্রা করব।তারপর আর উপায় না থাকলে দিক পরিবর্তন করব। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসা ভারী বস্তুগুলো রাখব কোথায়??? আমরা জাতে বাঙ্গালি,অভ্যাস এবং সব দিক দিয়ে বাঙ্গালি।আমরা কোনো আরব বেদুইন বা মধ্য এশিয়ার যাযাবর গোত্র নই যে দিনের পর দিন এতো এতো ভারী জিনিসপত্র নিয়ে চলাচল করব।তাই আমাদের দরকার একটা নিরাপদ জায়গা যেখানে ক্যাম্পের মতো করে আমাদের জিনিস পত্র রাখব।আর এর ফলে আরেকটা সুবিধা আছে,আর সেটা হলো আমরা শব্দের উৎসস্থললে লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করছি,সেখানে যদি কোনো জনপদ বা সোনালী মাটির উৎসের খুঁজ না পাই তাহলে অন্তত পূর্বের জায়গায় ফিরে আসা যাবে। তবে এরকম ক্যাম্প বানানোর জন্য যা দরকার তা হলো একটা নিরাপদ জায়গা এবং সেটাও হতে হবে এমন বিশেষ জায়গা যেটাকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।কারণ অ্যামাজনের মাঝের দিকে বিস্তির্ণ বন জঙ্গলহীন সমভূমির মতো জায়গা থাকলেও জঙ্গলের প্রায় সবদিকই একই রকম লাগে।তবে প্রাকৃতিক কিছু উঁচু জায়গা, খানিকটা টিলার মতো,এরকম জায়গাও প্রাকৃতিক কোনো কারণের সাক্ষী স্বরূপ জাগ্রত হয়ে উঠে। আমাদের নজর এরকমই কিছুর উপর। চারপাশে কিছুক্ষণ খুঁজ করার পর এমন জায়গা পেয়ে গেলাম।আপনার মনে হতে পারে এতো সহজে কী করে টিলা খুঁজে পেয়ে গেলাম।তার উত্তরও দিচ্ছি।আসলে টিলা নয়,চারপাশের তুলনায় কিছুটা উঁচু জায়গা পেয়ে গেছি আমরা প্রায় ১০০০ ফুটের কাছাকাছি দূরত্বে।জায়গাটা মোটামোটি ফাঁকা।এমনিতেও সোনালী মাটির এলাকায় গাছপালা কম,তারমাঝে এই উঁচু জায়গাটাতে গাছ একেবারে নাই।মাত্র দুটো বেশ উঁচু উঁচু দুটি গাছ আছে।গাছগুলো একটও ইউক্যালিপটাসও হতে পারে,আবার এই সূদূর দক্ষিণের এই অ্যামাজনে হয়তো ইউক্যালিপটাস ছাড়া অন্য গাছও হতে পারে এই গাছটি,আরেকটি গাছ তাল গাছের মতো তবে অস্বাভাবিক রকম লম্বা।মূল কথা হলো আমাদের মাঝে কেউই গাছ দুটোকে চিনতে পারি নি।এই জায়গাটা চারপাশ থেকে বেশ উঁচু,আবার দুটো লম্বা গাছ আছে, ফলে চিনতে সহজ হবে।তবে সেখানে একটা সমস্যার সন্ধান পেল রুবি আপু।আপু বলল,,,
রুবি আপু: মি.A, উঁচু জায়গা তো বের করলাম,তবে এখানে আমার মতে একটা সমস্যা আছে।
সবার কৌতুহলী নজর আপুর দিকে।কারণ আমরা তেমন কোনো সমস্যা পাই নি।কী সমস্যা আছে সেটা জানার জন্য মি.A. জিজ্ঞেস করলেন,,,
মি.A : রুবাইয়্যা,এখানে কী সমস্যা পেয়েছ তুমি??? জায়গা তো উঁচু আছে,আর দুটো গাছ বেশ লম্বা,অনেক দূর থেকেও দূরবীন দিয়ে দেখতে পারব।
রুবি আপু: প্রায় তিন কি.মি. এর মতো দূর যাওয়ার পর আমরা কনফিউসড হয়ে যাব আসল উঁচু জায়গা কোনটা।কারণ আরেকটু সামনে যাওয়ার পর হয়তো আরও কোনো উঁচু নিচু ঢাল পেয়ে যাব আমরা।তাই আমার মতে এই গাছের (একটা গাছকে নির্দেশ করে) একেবারে মাথায় বাংলাদেশের পতাকা ঝুলিয়ে দিন।
মি.A কিছুক্ষণ ভাবলেন,তারপর বললেন,,,
মি.A : হুমম এটাই ভালো হবে।তোমাদের মধ্যে কে গাছে উঠতে চাও???(আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন)
বেশ কয়েকজন গাছে উঠতে চাইল।তবে তারমাঝে শুভ,মাহিন আর মেহেদীর আগ্রহ বেশি।একজন আরেকজনকে ছাড় দিতো রাজি নয়।সবাই ই উঠতে চায়



তবে শেষে মি.A মাহিনকে বললেন পতাকা টানাতে।মাহিন সাবধানে উঠতে লাগল।তবে নিচে থেকে তাকে নির্দেশনা দিলেন তানিম ভাই।
তানিম ভাই: সাবধানে উপরে উঠো মাহিন।পুরনো গাছ,গাছের ফাঁক ফোঁকরে বিষাক্ত সাপ বা বিছা থাকতে পারে(চিৎকার দিয়ে)
উপরে উঠছিল মাহিন।খানিক্ষণ একটু থমকে গেল।মনে হয় তানিম ভাইয়ের কথায় হালকা ভয় পেয়ে গেল ও।
রুবি আপু:তানিম্যা তোর কোনো কাজ নাই।ওকে ভয় দেখালি কেন???



তানিম ভাই: আমি ভয় দেখালাম কবে??? আমি তো উৎসাহ দিলাম



মেহেদী ভাই: মাহিন ভয় পেও না,সাবধানে উঠো।(মেহেদী হাসান প্রভা ভাই সাহস জোগান দিতো জোরে বললেন)
মাহিন এবার চড়তে লাগল গাছে।পতাকা টানিয়ে নিচেও চলে আসল নিরাপদ ভাবে।তবে এবারও মি.A আরও সতর্ক হওয়ার জন্য মেহেদীকে গাছে উঠিয়ে দিলেন।তাকে বললেন আরেকটা গাছে আয়না লাগিয়ে দিতে চারপাশে,এই গাছটার মাথায় তেমন পাতা নাই।এই গাছ হয়তো তাল গাছের কোনো প্রজন্মের ভাই ছিল।মেহেদী তার পিঠে আয়নার ব্যাগ নিয়ে নিল,তার ভিতর চারটা আয়না,চারদিকে লাগাবে ও।আর তারপূর্বে নিজেকে দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেধে নিবে ও।তবে এবার যেন তানিম ভাই ওদের ভয় দেখাতে না পারেন তার জন্য মফিজুল তানিম ভাইয়ের মুখে হাত দিয়ে ধরে রাখল।তানিম ভাই ছাড়াতে চেস্টা করেও খোলতে পারলেন না।
মেহেদী প্রায় ১০ মিনিট পর নেমে আসল।এবার আমাদের সঙ্গে থাকা ভারী বস্তু,যেমন খালি হয়ে যাওয়া খাবারের টিনগুলো,আর অতিরিক্ত থাকা কিছু টিন।আর যত ভারী জিনিস পত্র ছিল সব রেখে দেয়া হলো।এবার আমাদের সঙ্গে থাকা ভারী বস্তু বলতে দড়ির বিছানা আর বন্দুক।
এবার আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। বিশ্রাম শেষে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম।চারপাশে সোনালী মাটি,আর গাছপালা।কিছুটা পথ যাওয়ার পর ঝোপঝাড়ও কমে আসল। জঙ্গলে সন্ধ্যা খুব দ্রুত হয়।আর অন্ধকারে হাটাও যায় না।আলো থাকতে থাকতে আমরা মাত্র দেড় কি.মি. এর মতো আসতে পারলাম।সোজা রাস্তা হলে হয়তো এই সময়ে আমরা অন্তত ৬/৭ কি.মি. চলে যেতে পারতাম।কিন্তু অ্যামাজনের মতো বনে এটা সম্ভব নয়।এদিকে আঁধার হয়ে আসতে লাগল।তাই আমাদের যাত্রাও বন্ধ হয়ে গেল।কিন্তু সামনে কিছু দেখতে পেলাম না।
আনিকা: আমরা এখনও তো কোনো কিছুই পেলাম না।আর কত হাটতে হবে আল্লাহই জানে।
হৃদয়: হুমম আনিকা, সামনে কিছুই পাওয়া গেল না।ফারহান তো বলল অ্যালডোরাডো থাকতে পারে।তারও সম্ভাবনা পাচ্ছি না
রনি ভাই: অ্যালডোরাডো আমাদের কল্পনার মতো হবে এটা ভাবা একদম বোকামী।অ্যালডোরাডো হয়তো অন্য রকম, যেরকমটা আমরা ভাবতাম তার চেয়ে আলাদা।আর নাতনীর মনে হয় পা ব্যাথা করছে হাটতে হাটতে(আনিকাকে উদ্দেশ্য করে বললেন)।
আনিকা: না,আমি অনেক হাটতে পারি।পা ব্যাথা হয় নি।
শুভ: আজ তো মনে হচ্ছে এখানে থাকতে হবে।তাহলে ফর্সা থাকতে থাকতে দড়িগুলো টানিয়ে নিলে ভালো হতো।
মি.A :হুমম দড়ির বিছানাগুলো টানিয়ে নাও।
হৃদয়,শুভ,মাহিন,মেহেদী কাজটা করতে গেল।
ইভা: রান্নাবান্নার কাজও শুরু করে দিই।তবে সবার আগে চা বানিয়ে নিতে হবে।
মফিজুল: হুম চা পাগলী আপু তো সবার আগে চাই খাবে।
ইভা: তোরা বুঝি চা খাস না??? সব নাম শুধু আমাকেই দিয়ে দিস।
শিখা: আরে চট কেন??? আমরাও চা খাই।তবে চা তো তোমার পছন্দ তাই তো তোমায় অমন বলল আরকি।
সারা: আরে চা পছন্দ নয় বরং বল ও চা আসক্তিতে ভোগছে



ইভা: হুমম,,, যা বলার বলে নে



সামিয়া: আরে আপু,রাগ না করে চল চা বানাই।
এদিকে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে গেছে।বেশ কয়েকটা মশাল জ্বালানো হলো, আর আমাদের কাজ চলতে লাগল।আজও একটা সুন্দর রাত কাটাতে চলেছি,,,
[কেমন লাগল??? গল্পে ভুল নজর আসলে বলবেন।আর মেহেদী হাসান প্রভা ভাই আর মেহেদীর মধ্যে পার্থক্য বোঝতে হলে যথাক্রমে মেহেদী ভাই এবং মেহেদী বলা হবে।দুঃখিত,সময়ের অভাবে বড় করতে পারি নি আগের মতো



]
বি.দ্র.: যথেস্ট সময় আর শ্রম ব্যায় করে গল্প লিখি।তাই দয়া করে কপি করবেন না।
চলবে,,,
আল বিদা,,,