বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মানসিক অপরাধী

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Solaiman Sikder (০ পয়েন্ট)

X প্রতিটি ক্লাসেই এমন কিছু বন্ধু থাকে যাদের গলায় গলায় ভাব। ইংলিশে যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড। তেমনি একটা বন্ধু ছিল আমার । আমি আশিশ। আর আমার বন্ধু রাহুল। আমরা সখিপুরের একটা স্কুলে পড়তাম। ৭ম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই বন্ধুত্বের শুরু। ০১ জানুয়ারী আনন্দ ভরা মন নিয়ে স্কুলে গেলাম। আর পড়ে গেলাম বন্ধুদের আবদারের মাঝখানে। অনেক কষ্টে বিদায় করলাম চকোলেট দিয়ে। ( ক্লাসে ১ম স্খানে এসেছি আমি তারই মিষ্টি চাইছিল বন্ধুরা। ) ২ মিনিট পড়েই রাহুলের আগমন। --কেমন আছ আশিশ? --হ্যা ভালো আছি তুমি কেমন আছ? --ভালো। এখানে কেন তুমি? স্যারদের সাথে দেখা করেছ? ওনারা তোমাকে খুজতেছে! --না করিনি। আচ্ছা চল যাই।( খানিকটা সংকোচের স্বরে বললাম। তার আচরণ আমার ভালো লাগলো। আগে হইত এত ভালো ছিলনা! নজরে পড়েনি। তাহলে কি তাকে বন্ধু ভাবা যায়? না থাক দেখা যাবেনি। এসব ভাবতে ভাবতে স্কুলে যাচ্ছি আচমকা পেছন থেকে--------- --আশিশ! --আরে রাহুল কেমন আছ? --হ্যা ভালো তুমি? --আমি ভালো আছি। এত হাপাচ্ছ কেন? --অনুপস্থিতির দরখাস্ত লিখতে হবে। লিখে দাও প্লিজ। --আচ্ছা বস লেখি। লেখা প্রায় শেষ।এরই মাঝে রাহুল বলে ওঠলো- --আমার বাসায় যাবে কবে? --দেখি কবে যেতে পারি! --অজুহাত নয় কবে যাবা বল! --আমি একা কিভাবে যাব? --নয়নকে সাথে নিয়ে চল।( আমাদেরই বন্ধু নয়ন।) --আচ্ছা দেখা যাবে। যাও দরখাস্ত জমা দিয়ে আসো।আর তোমার ফোণ নাম্বার টা দিও আজ! তার কিছুদিন পর বৃষ্টি ভেজা দিনে কাদামাখা রাস্তা পেরিয়ে গেলাম তার বাসায়। তার হাতে ব্যাগটা দিয়ে তার পিছু পিছূ ঢুকলাম তার বাসায়। --আন্টি কেমন আছেন? --ভালো তুমি কেমন আছ? --হ্যা ভালো আছি। --যাও রুমে গিয়ে বস। হাতমুখ ধুয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। --আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন আংকেল? --ভালো তুমি? --হ্যা ভালো। তারপর ওনার সাথে খুব সুন্দর সময় কাটলো।পরিচিত হলাম,হাসিঠাট্টা সবই হল। কয়েকমাস রাহুল স্কুলে আসলোনা। আমি চিন্তাই পড়ে গেলাম। ফোণ দিয়ে কথা বলে জানতে পারি ওর বাবা হসপিটালে। তারপর একদিন রাহুল স্কলে আসলো। --কেমন আছ ? এতদিন কোথায় ছিলা? --আব্বু অসু্স্খ । ঢাকাতে আছে।বাসার সব দায়িত্ব আমার উপর। --কি হইছে ওনার? --ক্যান্সার। আমি অনেকটা স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।কথা বলতে পারলাম না। ভাবতেছি কিভাবে ওকে কি বলব! মনের কোনে এক অজানা হাতাশা কাজ করতেছে। হতাশা মনে দিন পার করে দিচ্ছি আর ফোণে খবর নিতেছি প্রতিদিন। সপ্তাখানেক আগেও যখন ওকে ফোণ দিতাম তখন খুশির খবর দেওয়া নেওয়া হত আর এখন.........। একদিন রাহুলের ফোণ আসলো...। --আমি আজ খুব খুশি বন্ধু। --কেন?আর আংকেলের কি খবর? --সপ্তাখানেক পর বাসায় আসবে। --Thank God. খুশিতে কাটলো দু এক মাস। একদিন বাজারে গেলাম একটু দরকার ছিল । একটা লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হয় কোথায় যেন দেখেছি। কাছে গেলাম ... --আংকেল।( অবাক কন্ঠে)। --কেমন আছ?(ওনার কন্ঠটাই তোতলা ভাব এসে গেছে। ক্যান্সার নাকি জিব্বাতেই ছিল।) --ভাল আপনি? --হ্যা ভালো। --রাহুল কোথায়? --বাসায় আছে। --আপনি তো এখন সুস্থ আংকেল? --মোটামুটি।এসো একদিন বাসায়। --আচ্ছা আপনিও আসবেন কিন্তু।নিজের যত্ন নিবেন। ওনার চেহারা চেন্জ কেন?স্বর এমন কেন? কি হইছে? আমার মাথাটা ঘুড়তে লাগল। ৫ মিনিট সেখানেই দাড়িয়ে ছিলাম এসব ভাবতে ভাবতে। তার কিছূদিন পরই শুনি ওনাকে আবার হনপিটালে নেওয়া হইছে। ক্যান্সার বেড়ে গেছে। ভাবতে লাগলাম যে আমি ওনার বাসায় গেলাম তারপর থেকে ওনি অসুস্থ। কিছুটা সুস্থ হবার পর আবার দেখা হওয়ার পর থেকে আবার হসপিটালে । কোন কারনে এর জন্য আমি দায়ী নইত? আমাকে কি স্রষ্টা পাঠালেন ক্যান্সার রুপে? আরে না।এটাতো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় হচ্ছে। তার পর থেকে রাহুল কে ঠিকমক স্কুলে পাওয়া যেত না। কোনদিন এক ক্লাস করেই চলে যেত আবার কোনদিন এক ক্লাস পড়ে আসতো। কারণ বাসায় ও একা । এত বড় সংসার একা সামলাতে হয়।আমি ফোন দিয়ে খুজ খবর নিতাম দিনে ২/৩ বার । কারণ ওর বাবার অসুস্থতার জন্য আমি নিজেকে দোষী মনে করতাম।যদিও রাহুলকে কখনো কথাটা বলা হয়নি। বল্লে হইতবা ও আমাকে ওল্টো বুঝ দিবে।এসব ভেবে আর বলা হয়নি। একদিন ক্লাসে স্যার রাহুলকে দাড়া করিয়ে তার কাছে থেকে জেনে নিল যে কেন সে প্রতিদিন ক্লাস মিস করে। --হ্যালো কেমন আছ? --হ্যা ভাল তুমি? --হ্যা ভালো কি কর রাহূল?তোমার বাবার কি অবস্থা? --মোটামুটি। হাটতে পারেনা খাইতে পারেনা। নল দিয়ে খাওয়াতে হয়। --ডাক্তার কি বলছে?(কিছুটা কান্না নিয়ে) --বলছে সুস্থ হবে কিন্তু কিছুটা সময় লাগবে। --উপরওয়ালা ভরসা। --আচ্ছা কালকে স্কুলে যাব । কোন বিষয় কি পড়া একটু বল তো। --আচ্ছা শোন। পরদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিট। --আশিশ কেমন আছ? --হ্যা ভালো তুমি কেমন আছ দাদা? ( সজিব বন্ধু ।তাকে আমরা দাদা বলে সম্বোধন করি।) --হ্যা ভালো। আজ কিন্তু তোমাকে জাতীয় সংগীত গাইতে হবে পিটিতে! --সাথে কে গাইবে? --নয়ন । আর মেয়েদের পক্ষ হতে আনিকা আর সোহানা মনে হয়। --আচ্ছা সমস্যা নেই।রাহুল আসছে? --হ্যা ক্লাসে চল বসে আছে। ক্লাসে ঢুকেই রাহুলকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললাম। তার পর আমি নয়ন সজিব সিয়াম সবাই মিলে ঠীক করলাম আছ রাহুলকে নিয়ে ক্যান্টিনে যাব। বাজেট করলাম ১০০ টাকা। ইংরেজি ক্লাসে সবাই ৪ টা করে বাড়ি খাওয়ার পর চলে গেলাম ক্যান্টিনে ।আমি সব সময় রাহূলকে খুশি রাখতে চেয়েছি। তাই সব সময় হাসি ঠাট্টা করে ওকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করতাম। সেদিনটা ভালই কেটেছিল সবার সাথে। আস্তে আস্তে কেটে গেল কয়েক মাস। কিন্তু রাহুলের বাবা সুস্থ হয়েও হচ্ছেনা। আর রাহুল থাকছে প্রেসার এর মধ্যে। মা আর আমি খেতে বসছি । এমন সময় মা জানতে চাইল রাহুলের বাবা কেমন আছে। এমনকি তিনি যেতেও চাইল। যতই দিন যাই আমার কষ্টাটা তীব্র হতে থাকে। কিন্তু রাহুল স্কুলে এসে সব ঠিক করে দেয়। সেবছর ঈদের দিন রাহুলের আসার কথা ছিল আমার বাড়ি। ঈদের জামাতের পর আমি বেশ খুশি। রাহুল আসবে বলে কথা। ফোণের ঘন্টা বাজলো। --হ্যালো।( খুব খুশিমনে) --আমি যেতে পারবনা গো আজ। আব্বা খুবই সিরিয়াস অবস্থা। মন খারাপ হয়ে গেল ঈদটাও মাটি হয়ে গেল।আবার নিজেকে অপরাধী মনে হতে থাকল। সেই একই মানসিক যন্ত্রনা। এভাবে কয়েকমাস কাটার পর ভাবলাম যাই ওর বাবাকে দেখে আসি । গত কয়েকদিন ধরে রাহুলকে বেশি চিন্তিত লাগছে। গেলাম ওর বাসাই। আংকেল কে দেখে চোখে পানি আসলো। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না।রাহুলকেও না। ওর বাসার সবাই আমাকে খুব আদর করে। কেন জানি ওর মাকে দেখলে বড় মায়া হয়। সেদিন সারাদিন কাটিয়েছিলাম রাহুলের সাথে।এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছিলাম। তার কিছুদিন পর ভোর ৫ টাই রাহুলের ফোন। --হ্যালো কেমন আছ? --আমি রাহুলের ফুফাত ভাই। আসলে ওর বাবা একটু আগে মারা গিয়েছে। -- কিছু বলার ভাষা নেই । আমি সেই অপরাধীই রয়ে গেলাম। কেন যে আবার গিয়েছিলাম রাহুলের বাসায়! ১ম বার গেলাম অসুস্থ হলো। ২য় বার দেখা হল অসুস্থতা বাড়ল। আর ৩য় বার -----------। আল্লাহ এ আমি কি করলাম? আজ ২০২০ সাল। রাহুলের সাথে আজও রয়েছে বন্ধুত্ব। তবুও আজ ওর বাবার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষী মনে হয়। আমি যেন এক মানসিক অপরাধী।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৭০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now