বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

♥ বাবার তুবা ♥

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Siam 2.0 (০ পয়েন্ট)

X তামান্না জেনিফার আমার বাবা সবার থেকে আলাদা ৷ সবার বাবা তাদের হিরো জানি,আমার বাবাও আমার হিরো ৷ তবে আলাদা এ জন্য যে বাবা শুধু আমার হিরো না..বাবার আমার দৃষ্টি ৷ বাবার চোখ দিয়ে যে আমি দেখি তাই.. ও আচ্ছা,আমি তো আমার পরিচয় বলিনি এখনো ..আমার নাম তুবা ৷ গত বছর আমি ক্লাস টুতে পড়তাম ৷সে হিসেবে এখন আমার ক্লাস থ্রীতে পড়ার কথা..তবে এখন আর আমি স্কুলে যাই না ৷ গত ছ'মাস হলো আমি বাড়ির বাইরে যাই না ৷ বাবা অবশ্য মাঝে মধ্যে আমাকে নিয়ে বাগানে বসেন বিকেলবেলা ৷ তখন আমার ভীষন ভালো লাগে ৷ কতো পাখি যে আসে আমাদের বাগানে আল্লাহ...সকালে আর বিকেলে ওদের ডাকে পুরো বাড়িটা ভরে যায় আমাদের ৷ আমার বাবা রেজাউল হক ৷ উনি একটা মস্ত অফিসে চাকরী করেন ৷ বাবাকে অনেক কাজ করতে হয় ৷ এখনতো বাবা ওভারটাইমও করেন অনেক ৷ আমাদের এখন অনেক টাকার দরকার তো এজন্য ৷ টাকা দিয়ে কি করবো?জানেন না বুঝি.. আমার তো অসুখ করেছে..গত বছর ডিসেম্বরে যখন পরীক্ষা দিয়ে ফুফুর বাড়ি বেড়াতে গেলাম তখনই প্রথম অসুস্থ হই আমি ৷ হঠাৎ করে আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই...কি ভীষন ব্যাথা,অসহ্য..অসহ্য.­.. আমার যখন জ্ঞান ফিরলো আমি দেখলাম আমি ধবধবে সাদা বিছায় শোয়া..মা যখন মারা গেল মাকেও এমন সাদা চাদরে মুড়ে রেখেছিল ৷ কাঠের খাটিয়াতে মার পুরো শরীরটা ধবধবে সাদা কাপড়ে মোড়া ছিল ৷ আমি তো ভেবেছিলাম আমি বোধহয় মরেই গেছি মার মতো ৷ আমি অবশ্য একটু খুশিই হয়েছিলাম মার সাথে দেখা হবে ভেবে..পরে অবশ্য বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালে ৷ ডাক্তার আঙ্কেল অনেক ভালো ছিল ৷ তবে উনার নাকের নিচে মস্ত একটা মাকড়শার মতো গোফ ছিল,আমার ভীষন হাসি পাচ্ছিল দেখে.. ডাক্তার আঙ্কেল আমার সাথে অনেক গল্প করছিলেন ৷ আমাকে আপনি করে বলছিলেন,আর কেউ আমাকে আপনি বলেনি কখনো..আমি ডাক্তার আঙ্কেলকে বললাম আমার কি হয়েছে বলেন তো..উনি হেসে বললেন ""আপনার তো কিছু হয়নি...একটু সমস্যা ছিল ওষুধ দিয়ে দিয়েছি..আপনি এখন সুস্থ হয়ে যাবেন..."" ডাক্তার আঙ্কেল আমাকে মিথ্যে বলেছিল ৷ আমার চোখের আলো নিভতে নিভতে এখন আর নেই...প্রথম প্রথম হালকা দেখতে পেতাম..এখন আর কিচ্ছু দেখতে পাইনা....কেমন অন্ধকার সবসময়,,রাত নেই দিন নেই...সব অন্ধকার ৷ বাবা আমাকে বেশ কবার ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন ডাঃ দেখাতে ৷ প্রতিবার ডাক্তার দেখানো শেষে আমরা চিড়ায়াখানায় যেতাম..চিড়িয়াখানা আমার ভীষন পছন্দ জানেন তো .. তবে শেষ দু'বার আমি কিচ্ছু দেখতে পাইনি তবে দেখেছি সব..বুঝলেন না?সব দেখেছি বাবার চোখে...বাবা যখন বাঘের খাঁচার সামঁনে গেলাম বাবা বলতে লাগলেন ""তুবান তুবাবা তুবা ,,দেখ দেখ মস্ত একটা বাঘ...কেমন রাগীরে বাবা...আমি তো ভীষন ভয় পাচ্ছি..."" ৷ বাবার কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরি...বাবা আমাকে এভাবেই ডাকে ""তুবান তুবাবা তুবা"" বাবার সাথে যতক্ষন থাকি বাবা খেলার মতো ধারাভাষ্য দিতে থাকেন ৷ কিভাবে?বুঝলেন না তো ? ধরেন আমি পানি খাচ্ছি বাবা তখন বলবেন ""তুবান তুবাবা তুবা তুমি কিন্তু তোমার প্রিয় সবুজ গ্লাসে পানি খাচ্ছ..ওই গ্লাসের গায়ে সাদা সাদা ফুল ছোট্ট ছোট্ট..পানিতে এক টুকরো বরফ দেয়া তোমার পছন্দমতো..""হিহিহিহি­.. আসলে বাবা চান না অন্ধকারে থাকতে থাকতে আমি পৃথিবীর রং গুলো ভুলে যাই..."" আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন,এই যে আমি এত বকবক করছি...আপনি নিশ্চয় অনেক ব্যাস্ত ৷ আপনাকে আর বিরক্ত করবো না...যে কথাটা বলতে এসেছি সেটা বলেই চলে যাবো.. আপনি তো আমাদের বাড়িটা কিনেছেন তাইনা আঙ্কেল..বাবা আমাকে কিছুতেই আপনার কাছে আনতে চায়নি,,আমি অনেক জোর করে এসেছি.. আঙ্কেল আপনি আমার একটা কথা রাখবেন প্লীজ.. বাগানের এক কোনে আমার মায়ের কবরটা আছে,,প্লীজ ওখানে কিছু করবেন না..আর গেটের কাছে কৃষ্ণচূড়ার গাছটা আছে প্লীজ ওটা কাটবেন না..আমার মায়ের খুব প্রিয় ছিল কৃষ্ণচূড়া... কাল আমার ফ্লাইট..আমি বিদেশে যাচ্ছি চিকিৎসা করাতে...বাবার বিশ্বাস আমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবো..আমি যদি সুস্থ হয়ে ফিরি যখন আমি বড় হবো,আমার যদি অনেক টাকা হয় তখন কিন্তু আপনি আমাকে আবার বাড়িটা ফিরিয়ে দিবেন কেমন... দোয়া করবেন আঙ্কেল আসি..... **** আমি বিল্ডার রায়হান চৌধুরী...জায়গা কিনি..পুরাতন সব ঘরবাড়ি ভেঙে নতুন করে ফ্লাট বানাই...উচু উচু বিল্ডিং..ইট কাঠ পাথরের শহর গড়ি...এই মাত্র যে আট/ন বছরের মেয়েটা গেল আমাকে যেন কেমন বদলে দিয়ে গেল...ওইতো ওকে এখনো দেখা যাচ্ছে...বেনী দুলিয়ে বাবার হাত ধরে যাচ্ছে...তুবার বাবা হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে...হয়তো ওকে বলছে পথে কোথায় কি আছে... ফোন করলাম সহকারীকে..বললাম ওই বাড়িটা যেন অমনই থাকে..তুবা,মামনি...স­ুস্থ হয়ে ফিরে আসো...তোমার বাড়ি আমি রেখে দিলাম আমানত হিসেবে...ফিরে আসো...অপেক্ষায় থাকবো


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৯১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now