বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আজিজ সাহেবের বাড়ির সামনে তার নামের নেমপ্লেট এই নিয়ে পাচবার চুরি হয়েছে!
প্রথমবারের সময় যখন চুরি গিয়েছিল তখন আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম পাচ কেজি আম দিতে।তখন বেচারার চেহারা খানা দেখার মতো ছিলো।আজ সকাল সাতটার দিকে হাটতে বের হয়ে দেখি তার বাড়ির সামনে নেমপ্লেটখানা নেই।দেখেই বুঝতে পেরে গেছি আবার চুরি গেছে।কিন্তু একটা জিনিস মাথায় খেললো না যে নেমপ্লেট চুরি করে একটা চোরের কি আসা যায়?একটা সামান্য নেমপ্লেট তাও আকাশী গাছের কাঠের।এই নিয়ে পাচবার চুরি! চোরের মাথা কি গেছে নাকি।
হাটাহাটি শেষ করে আমি আজিজ সাহেবের বাসার সামনেই দাড়িয়ে রইলাম।তিনিও হাটতে বের হয়েছেন,রোজ হাটেন,পাড়ার বড় মাঠে ক্রিকেট খেলেন।তিনি একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার।বেচারার মুখখানা আবার দেখার মতো হবে।দূর থেকে দেখলাম জগিং করে আসছেন।গেটে ঢুকার সময় আমাকে দেখার কারণে নেমপ্লেট যে নেই সেটা খেয়াল করেননি।আমার পিঠে এসে চাপড়ে বললেন,
"কি খবর মাই বয়?”
-আংকেল খবর তো ভালো না!
-হোয়াট হ্যাপেন্ড?
আমি পেছনে আংগুল দিয়ে ইশারা করে দেখালাম।দেখে বুঝতে পারলেন আমার চেয়ে তার খবরই বেশি খারাপ।খুব ভালো অবস্থায় থাকলে ইনি ইংলিশ ঝাড়েন। মন খারাপ হলে তিনি তার মায়ের ভাষা মনে করে হাহাকার করেন।
আংকেলের মাথায় হাত!তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল," আবার হয়ে গেলো!"
তিনি মন খারাপ করে ভিতরে ঢুকে গেলেন।আমি তার পেছন পেছন ঢুকলাম।আজিজ সাহেব আমাদের প্রতিবেশী। ইনি আর আমার বাবা একসাথেই অবসরে গেছেন।ভালো বন্ধুত্ব সাথে আমাদের পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক। বাড়ির ভিতরে ঢুকে সোফাখানায় বসে দুঃখ বিলাস করছেন।
একটা আপেল নিয়ে আমি তার সামনের সোফায় বসলাম।
"আচ্ছা আংকেল,আপনার সাথে কি কারো শত্রুতা ছিল?"
"না, মাই বয়।আমি তো কারো কোনোদিন ক্ষতি করিনি!"
"তাহলে কেউ পারলে আপনার দামি গাড়ি টয়োটা জিটি-টা নিলো না কেন?লেগে আছে আপনার নেমপ্লেটের পেছনে!"
"এটাই তো বুঝলাম না!"
"ওই নেমপ্লেট চোর কি রাতের বেলায় চুরি করে?"
"ও সুযোগ খুজে।সকালে আমি বের হওয়ার সাথে সাথেই হামলা দেয়!আমি অনেকবার সকালে হাটতে বের হইনি। বসে ছিলাম লুকিয়ে,যদি সে আসে।কিন্তু না কিভাবে জানি তার কাছে খবর যায় যে আমি বের হবো না।আজ বের হলাম আজই নিয়ে নিলো!"
"তাহলে তো কেইসটা খুব সিরিয়াস ব্যাপার।"
[ | ]
আমি বের হয়ে চলে এলাম।কিছু একটা করতে হবে। আংকেলের মুখে কষ্টের ছাপ দেখে আমার ভালো লাগছে না।বাসায় এসে মাকে সব বললাম।
আমার মা হেসে হেসে খালি বলছেন,"ওনার নাম মনে হয় চোরের পছন্দ হয় নি তাই চুরি করতে এলে গেটের সামনে নাম দেখেই মেজাজ বিগড়ে যায়। আজিজ বিন ছাত্তার আলম!"
এটা বলেন আর হেসে উঠেন।তবে ব্যাপারটা হাসির না। সিরিয়াস ম্যাটার;কোনো শত্রু হতে পারে উনাকে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছে। কিছু একটা প্যাচ তো এর মধ্যে আছেই।আমি আমার রুমে চলে গেলাম।টেবিল থেকে একটা কাগজ বের করলাম।সবার উপরে লিখলাম,
"আজিজ বিন ছাত্তার আলম
রিটায়ার্ড কর্ণেল (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) "
আমি জানি না কেনো লিখলাম।এরপর লিখতে শুরু করলাম গত একমাস যাবত আমার জানামতে আংকেল কোথায় কোথায় যায়।সকালে হাটাহাটি করেন একঘন্টার জন্য, এরপর ক্রিকেট খেলেন,বাজারে যান, গার্ডেনিং ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার বাজার নামের সাথে গড়মিল লাগছে। উনি মনে হয় বাজারে কারো সাথে বকাবকি করেছেন। আর্মিরা আবার একটু বেশি স্ট্রিক্ট। আমার বাবাও,এজন্য আমার আম্মাজান বাবাকে বাজারে পাঠান না।দাম বেশি চাইলেই জোরে জোরে বকে দেন। তবে আমার মতে দামদর করা উচিত।এটা বাঙালিদের প্রথা।
[ | | ]
আমি আবার আংকেলের বাসায় গেলাম।তার কাছ থেকে জানতে হবে বাজারে কোনো গন্ডগোল পাকিয়েছেন কিনা।
-আপনি মনে করার চেষ্টা করেন।গত এক মাসে আপনি কি বাজারে কারো সাথে তর্কে জড়িয়েছিলেন?
-না সেটা মনে করতে পারছি না।
-গত একমাসে কতবার বাজারে গেছেন?
-প্রতি শুক্রবারে যাই।চার পাচবার তো হবেই।আর বেশিরভাগ সময়ই আমার চাকর শহীদ যায় বাজার করতে।
-তাতো জানি।
-ওহ হ্যা!আমি গত মাসের প্রথম সপ্তাহে একজনের সাথে তর্ক করেছিলাম বাজারে।
-কি নিয়ে?
-দেশের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে উনি যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিলেন।আমার রাগ উঠে গেছিলো।
আমিও বলে দিয়েছিলাম,"জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে কি আপনার জমির জায়গা কমে যাচ্ছে সাহেব?"
উনি তখন আমার সাথে কতক্ষণ বকবক করেছিল।আর মারাত্মক রেগে গিয়েছিল।আমি তার রাগ বাড়ানোর জন্য তাকে পাত্তা না দিয়ে চলে আসি।
-দেখতে কেমন?
-দেখলেই মনে হয় সাধারণ চাকরি করে। যেভাবে দামদর করছিল!
-দামদর করলেই কি লোকে ছোট চাকরি করে?
-সেটা বলিনাই।তবে ওই লোকের শার্টের পকেটে ৫০ বছর পূর্তি-২০২০ তারপর একটা বড় সংগঠনের নাম লিখা ছিলো।
-নামটা কি মনে পড়ছে?
-না সেটা পড়ছে না!তবে আমি নিশ্চিত সরকারি কোনো সংগঠন।মানে শায়িত্বশাসিত কোনো সংগঠন হবে।
আমি বুঝতে পেরেছি কারণ কোনো প্রাইভেট কোম্পানি আমাদের শহরের আশেপাশেও নেই যেটার বয়স অর্ধশত হবে।তাহলে আমার খুজতে হবে সেই প্রাইভেট কোম্পানির নামটা।
বাসায় এসে আমার সাংবাদিক বন্ধুকে সোজা ফোন দিলাম।সে জনপ্রিয় একটা পত্রিকার সাংবাদিক। নিশ্চয়ই এই সংগঠনের পূর্তির নিউজ ছেপেছে সে।আমি কল দিলাম আসিফকে।
-আসিফ আমাকে এক্ষুনি একটা খবর বের করে দে তো।এই বছরে কি তোদের পত্রিকায় কোনো কোম্পানির অর্ধশত বছরের পূর্তির নিউজ ছাপানো হয়েছে?
-তুই কি বিসিসিআই এর কথা বলছিস?হ্যা গত মার্চেই তো গেলো।
-পত্রিকার কপিটা তোর কাছে আছে?
-তুই একবার অফিসে আয় আমি তোকে দিয়ে দিচ্ছি।
[ | | | ]
আমি আসিফের অফিসে পৌছালাম।আসিফ আগে থেকেই পত্রিকার কপি রেডি করে রেখেছিল।আসিফ কি হয়েছে জানতে চাইলে আমি তাকে সব খুলে বলি।
সে খুব দুশ্চিন্তায় বলল,"আসলেই তো চিন্তার ব্যাপার।মনে হয় আংকেলকে কেউ হুমকি দিচ্ছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের কর। আর আমাদের মনে হয় পুলিশকে জানিয়ে দেয়া উচিত।"
-না আরেকটু অপেক্ষা কর।লোকটি অবধি পৌছাই আগে। তারপর না হয় পুলিশকে খবর দিলাম।
আমি অফিস থেকে ফেরার পথে "ব্লু বার্ড প্রিন্টিং প্রেস" থেকে একটা নেমপ্লেট ছাপিয়ে নিলাম আংকেলের নামে।
আংকেলের গেটের সামনে সেটা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকে পত্রিকা বের করলাম।দেখলাম বিসিসিআইয়ের পূর্তি উপলক্ষে একটা বড় কলাম ছাপানো হয়েছে।সাথে একটা ছবিও আছে।সবাই মিলে বেলুন উড়াচ্ছেন।আর সবাই একই ধরনের গেঞ্জি পড়া ঠিক যেমন আংকেল বলেছিলেন।আমি দেখালাম, "দেখেন তো এখান থেকে সেই লোককে বের করতে পারেন কিনা।"
প্রায় দশ বারো মিনিট দেখার পর বলে উঠলেন,"আই ফাইন্ড হিম মাই বয়।মারভেলাস ওয়ার্ক।"
আমাকে দেখালেন।আমি আর দেরি না করে আংকেলকে নিয়ে বাজারে গেলাম।
-আংকেল বলুন কোন জায়গায় আপনি ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন।
তিনি সবজি হাটের সামনে নিয়ে বললেন,"আমি এখান থেকে সবজি কিনছিলাম আর আমার অপজিটেই উনি ছিলো।"
আমি জানতাম তার আইডেন্টিটি আমি বের করে ফেলবো।কারণ দেশকে নিয়ে সমালোচনাকারী তাও আবার সবজিবিক্রেতার সাথে সেরকম লোক এখানে এক দুজনই আসবে।আমি সবজিওয়ালার থেকে এক কেজি পটল কিনলাম।পঞ্চাশ চাইলো আমি ষাট দিলাম।সাথে সাথেই খুশি হয়ে গেলো।আক বেটাকে পটিয়ে ফেললাম।এখন তার ব্রেইন থেকে ডোপামিন রিলিজ হবে আমার জন্য। এই সুবাদে তাকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে নেওয়া যাবে।পত্রিকা বের করে তার গাছে গিয়ে বললাম,"মামা বলো তো আমারে একবার এই লোকটারে চিনো নাকি।"
সে চোখগুলোকে পত্রিকা থেকে প্রায় দশ সেন্টিমিটার দূরে রেখে কিছুক্ষণ দেখলো।এরপর একটা হাসি দিলো।
-আরে মামা এতো আমার রেগুলার কাস্টমার। কিনে আর দরদাম করে। টাকা বেশি দেয় না।
-উনার বাসা কই বলতে পারবেন?
উনি ছোট্ট একটা ছেলের দিকে ইশারা দিয়ে বলে দিল,"ওয় বলতে পারব।উনার বাজার আমি ওরে দিয়ে বাসায় পাঠাইছি অনেকবার।ওই হাসিব যাতো মামুরে বাসাডায় লইয়া যা ওই মকবুল সাহেবের বাসাত।"
আমার সমীকরণ খুব সুন্দর করে মিলে যাচ্ছে।এখন মকবুল সাহেব অবধি পৌছিয়ে দেখতে হবে উনি এরকম কাজ করেছেন কিনা।নাহলে অন্য পথ বাছতে হবে।
[ || ]
মকবুল সাহেবের বাসা চারতলায়।উঠতে উঠতে বুঝতে পারলাম খুব বড় পদের চাকুরিজীবী তিনি নন। কারণ বাসার অবস্থা তেমন ভালো না। যেই মালিক বাড়িটা করছে সে মনে হয় ঠেকায় পড়ে করেছে।পাচতলা বিল্ডিংয়ের পাচতলা অসম্পূর্ণ। আর সেখানেও কোনো ব্যাচেলর মনে হয় থাকে।মকবুল সাহেবের বাসার সামনে এসে কলিং বেল চাপলাম।আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর কলিং বেলের সাউন্ড বেজে উঠল।যেটার আওয়াজ চড়ুই পাখির মতো।একজন দরজার ওপাশ থেকে ফুটো করা ছিদ্র দিয়ে আমাদের দেখছে। অনেকক্ষণ দেখার পর দরজা খুললেন।একজন লুঙ্গি পড়া লোক, বয়স্ক,চশমা পড়া আমার দিকে তাকিয়ে, "কি চাই?"
-মকবুল সাহেবকে।
মকবুল সাহেব বোধহয় উনার ছেলে তাই জোরে একটা ডাক দিলেন," মকবুল মকবুল বলে।"
মকবুল সাহেব ছুটে এলেন। আমাদের দেখে বোধহয় চিনলেন না।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,"কেমন আছেন?"
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনারা কে? ঠিক চিনতে পারলাম না।
-চিনবেন চিনবেন।
বলে আমি আজিজ আংকেলকে সামনে আনলাম,"উনাকে চিনেন?"
কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললেন,"জ্বি না, চিনি না! "
-উনার সাথে আপনার ঝগড়া হয়েছিল বাজারে?মনে আছে?
-না,মনে পড়ছে না।আপনারা ভেতরে আসুন?
আমি তার কথার ভঙ্গিতেই বুঝে ফেলেছি ইনি রেগুলার একজনের সাথে এভাবে ঝগড়া করেন দেশের অবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে।
আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
ফেরার সময় আজিজ আংকেল খুব হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।যেই ক্লু বের করেছিলাম সেটা একেবারে ভেস্তে গেলো।
-এখন কি হবে?
-আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না। কাল আপনি আবার হাটতে যাবেন। আর কালই আমরা নেমপ্লেট চোরকে ধরব।
-কিভাবে?আবার যদি চুরি যায় আর যদি ধরতে না পারি?
-চিন্তা করবেন না।
বাজার থেকে ফেরার পথে একটা মিনি সিসি ক্যামেরা কিনে নিলাম। একদম বাড়ির সামনে এমনভাবে ফিট করব যাতে কেউ বুঝতেও না পারে এখানে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে এবং মনিটরিং করা হচ্ছে।
আমি সব ম্যানেজ করে একদম ঘরের দু'তলা ছাদের সামনের টবের পিছনে লাগালাম।একেবারে গেটটাকে ভালোভাবে কভার করেছে আর কেউ ধরতেও পারবে না।আমি আংকেলকে বলে রেখেছি কাল আরেকটু তাড়াতাড়ি বের হতে। আর আমি আমার বাসা থেকে সব কিছু মনিটরিং করব।
[ | | ]
এখন ঠিক ৫ টা বাজে। এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম। ৫ টা ২০ এই বের হবেন আংকেল। আমি আমার কম্পিউটারের পাওয়ার বাটন অন করলাম। সিসিটিভি এক্টিভেট করলাম এবং যথারিতি আংকেলও হাটতে বের হলো। আমার বাড়ির সামনে দিয়েই বের হলেন। আমি শিওর হলাম। আমার টেবিলে আগে থেকেই কফি আর একটা বিস্কুট এনে রেখেছি।প্রতি চুমুকে মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে কিছু একটা হবে।এখন ৫ টা চল্লিশ বাজে। কেউ আসেনি। আমি আংকেলকে ফোন করলাম,"কোথায় আছেন এখন?"
-আমি এখন ক্রিকেট খেলতে মাঠে ঢুকেছি।
দশ মিনিট গেলো কেউ এলো না।তাহলে কি সে জানতে পেরে গেছে আমরা ফাদ পেতে বসে আছি?
ঠিক ৬টা বাজে দেখলাম বাড়ির সামনে একটা ছেলে এসে দাড়াল।বয়স খুব বেশি না।দেখে মনে হচ্ছে ক্লাস ফাইভে বা আরেকটু উপরের ক্লাসে পড়ে।কতক্ষণ চারপাশে তাকাল এরপর পকেট থেকে একটা স্ক্রু-ড্রাইভার বের করলো।আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে এলো।একটা বাচ্চা এই কাজ করছে তাহলে!নাকি তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। আজিজ সাহেবের নেমপ্লেট যেই জায়গায় লাগানো ছিলো তার স্ক্রু গুলো ঢিলা ছিলো;তাই সহজেই খুলে ফেলা যায়।আমি আমার টেবিল থেকে উঠে বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হলাম।এই ছেলেকে ধরতে হবে। আস্তে আস্তে আজিজ সাহেবের বাগানের পিছন দিক থেকে এসে তার কাধে হাত রাখলাম।সে একেবারে বড়সড় ভয় পেয়ে বসল।তার হাত পা কাপছে, আমার দিকে ভয়ে তাকাতেও পারছে না।
-কি বাবু?শেষে কিনা নেমপ্লেট?পত্রিকায় এই আর্টিকেল ছাপালে তো তুমি ফেমাস হয়ে যাবে।
ছেলেটা আমার পা ধরে বলল,"ভাই আমি কোনো চোর না, প্লিজ আমাকে কিছু করবেন না।"
দেখে মনে হচ্ছিল ভালো পরিবারেরই সন্তান।মজার ছলে হয়তো এসব করেছে।আজিজ সাহেবকে ফোন করলাম দেখি তিনি দৌড়ে এদিকেই আসছে।তিনি বাচ্চাটাকে দেখে মনে হয়ে চিনেছেন।কাছে এসে বললেন,"আরে শাফিন! তুই এখানে কি করিস?"
তার উত্তর দেয়ার বদলে আমিই দিলাম,"আপনার নেমপ্লেট উধাও হওয়ার পেছনে তারই হাত আছে।"
-বলো কি? তাই নাকি?
আমরা তাকে পার্কে নিয়ে গেলাম। সেখানে থেকে একটা আইসক্রিম কিনে দিলাম।এরপর খুব সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম,"আচ্ছা শাফিন তুমি নেমপ্লেট গুলো এভাবে উধাও করলে কেনো?"
-আমি তো আমার কথা রেখেছি৷ আজিজ আংকেল রাখেননি।
-কি রকম কথা?
-প্রতি শুক্রবারে উনি আর আমি একটা ম্যাচ খেলি পাচ ওভারের ম্যাচ। যে হারবে তাকে মাঠে পাচবার রাউন্ড দিতে হবে।আমি সবসময় তার কাছে হারি তাই রাউন্ডটা আমাকেই দিতে হয়।
সেদিন আংকেল আমাকে এসে বললেন,"এই ওভারে আমাকে যদি আউট করতে পারিস তাহলে আমি আমার নাম তুলে ফেলব।"
আর আমি তাকে প্রথম বলেই আউট করে দেই।এরপর উনি আমার সাথে না খেলেই চলে যান।বিনিময়ে আমাকে কিছু দেননি সাথে নিজের নামও তুলেননি।
আমি হাসলাম।সাথে শাফিনকে একটা বাহবা দিলাম।নাম তুলে ফেলার এই অভিনব পদ্ধতি যে তারই আবিষ্কার!
আজিজ আংকেলকে সাথে বললাম,"আংকেল এর পর থেকে যা ওয়াদা করবেন তা পালন করবেন।দেখলেন তো ওয়াদা ভঙ্গকারীদের কি পরিণতি?"
সব শেষে আমরা তিনজনেই জোরে জোরে হেসে উঠলাম।
নেমপ্লেট চোর
নাজমুস আলভী
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now