বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আজমত আলী আজ বেশ আনন্দে আছেন। শহর থেকে তার একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনীরা গ্রামে আসবে। বছরে একবার তিনি ওদের দেখতে পান। কখনোবা বছর ঘুরে গেলেও দেখা হয়ে উঠে না। এই প্রথম ঈদ ছাড়া ওরা গ্রামের বাড়িতে আসছে।
তিরানব্বই বছরের শুকনো শরীরটাকে কোনোরকমে বিছানা থেকে টেনে তুললেন আজমত। তারপর কাজের ছেলেটাকে বললেন পুকুর থেকে বড় দুইটা মাছ ধরতে। তার ছোট নাতনীটা বড় মাছের মাথা খেতে খুব পছন্দ করে।
তারপর লাঠিটা নিয়ে ঠকঠক করে উঠোনে এসে দাঁড়ালেন। তার শরীরটা আজকাল খুব দুর্বল যাচ্ছে।গ্রামের সব থেকে বয়োবৃদ্ধ মানুষটা আজমত আলী। কয়েকবার স্ট্রোক করে যায় যায় করেও কিভাবে যে বেঁচে আছেন তা এক বিস্ময়!
আজমত আলীর ছেলে ঢাকা শহরে বড় পদের চাকুরী করে।তার দুই নাতনী শহরের নাম করা স্কুল-কলেজে পড়ে। গত রাতে ছেলে ফোন করে জানিয়েছে যে ওরা আজ আসছে। দেশে নাকি কি এক আজব রোগ এসেছে! রোগী যাকে ছুঁবে তাকেই ধরবে।
আজমত আলীর যৌবনে কলেরা নামক রোগের কথা শুনেছিলেন। কলেরা মহামারীতে সেবার অনেক প্রাণহানিও হয়েছিল। কিন্তু কলেরা সেবার তাকে ছুঁতে পারেনি। এখন এই আজব রোগ কেমন,এই রোগ কী করে তাই দেখার বিষয়। সফেদ দাঁড়িগুলোয় আঙুল খুঁচিয়ে এসব ভাবছিলেন তিনি। তারপর স্ত্রীকে ডেকে বললেন, "মমতা, রানধার কাম কতদূর?"
আশি বছর বয়সী চামড়া কুঁচকানো ছোট শরীরের মহিলা মমতা রান্নাঘর থেকে জবাব দেন," রানধার দেরি নাই, তুমি পোলারে ফোন দিয়া দেখো তার পথ কতদূর!"
.
বিকেলের দিকে ছেলে, ছেলের বউ,আর নাতনীরা এসে পৌছালো বাড়িতে। আজমত আলী খুশিতে নাতনীদের জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলেন প্রায়, ঠিক তখন ছোট নাতনী লীনা বলে উঠল," দাদা কাছে এসো না,আমরা আগে হাত মুখ ধুয়ে নিই।"
আজমত আলী নিরস্ত হলেন। মমতা বেগম খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।নাতনীর কথা শুনে তিনি ওখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। নড়লেন না।
গোসল সেরে এসে নাতনীরা কুশল জিজ্ঞাসা করল। মমতা বেগম বললেন,"বনু রা, শহরে নাকি কি এক আজব রোগ আইছে, করুনা নাকি?"
দুই নাতনী তা শুনে হেসেই কুটিকুটি। বড় নাতনী দিনা বললো" করুনা নয় দাদী করোনা"।
মমতা বেগম কী বলবেন তা বুঝতে না পেরে বলে উঠলেন"এইটাই।এককথায় বনু ।"
.
ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষে পড়া দিনার কিছুই ভালো লাগছে না। এই অজপাড়াগায়ে কোনো নেটওয়ার্ক নাই। সে ফেসবুকে ঢুকতে পারছে না, বন্ধুদের সাথে কথা বলতে পারছে না। তাছাড়া অনলাইনে তাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু নেটওয়ার্ক ছাড়া কী করে ক্লাস করবে তা ভেবেই পাচ্ছে না সে।
তাই খুব মন খারাপ তার। লিনা পড়ে ক্লাস নাইনে।তার অবশ্য পড়াশোনা নিয়ে অত টেনশন নেই। কিন্তু গ্রামে তার মোটেও ভালো লাগে না। চারদিকে কেমন ভুতুড়ে জঙলে ভরা।
ইতিমধ্যে লীনা তার দাদা-দাদী দুজনকে করোনার ভয়াবহতা বুঝিয়ে বলেছে। চীন, ইতালী, ফ্রান্সে নাকি প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।এই কথা শুনে আজমত আলী আর মমতা বেগম ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলেন।দেশেও নাকি আবার অনেকের ধরা পড়েছে এই রোগ।এইজন্যই তো সরকার স্কুল,কলেজ,অফিস-আদালত সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে।ভয়ে মমতা বেগমের মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন কোরঅান খতম দেওয়ার কথা।এর বদৌলতে আল্লাহ যদি খুশি হয়ে দেশ থেকে করোনা ভাইরাস তুলে নেন।নয়তো আর রক্ষা কী!
.
রাতে টিভির সামনে বসে লীনা চেঁচিয়ে ডাকা শুরু করলো তার বাবা মাকে।এই বাড়িতে অবশ্য অনেকদিন ধরে টিভি ছাড়া হয় না।হজ্ব করে আসার পর আজমত আলী খুব একটা টিভি দেখেন না।
আজ নাতনীরা আসায় টিভি ছাড়া হয়েছে।একটা খবরে লীনা হঠাৎ চমকে উঠেছে,তাই মূলত বাবা মাকে এভাবে চেঁচিয়ে ডাকা। লীনা ওখান থেকেই বললো,"করোনায়
নাকি বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ৫০-৬০ বছরের উপরে যাদের বয়স তারা।আমাদের বেশি ঝুঁকি নেই....অন্যান্য দেশে নাকি বুড়ো লোকেরাই বেশি মারা পড়েছে। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।"
আজমত আলী পাশের ঘর থেকে কথাটা শুনতে পেলেন।শুনতে পেলেন মমতাও। তিনি
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসলেন তার স্বামীর পাশে। মমতার মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।
আজমত আলী তার ভীত সন্ত্রস্ত আশি বছরের স্ত্রীর কাঁপা হাতটা ধরে বললেন," ডরাইয়ো না মমতা... সব আল্লার হাওলা!"
#শেষ_বিকেলের_পাখিরা
~নিশাত জাহান হক
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now