বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

Reverse World (part 1)

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Muhammad Abdullah Rafi (০ পয়েন্ট)

X ______ নিথর হয়ে পরে রয়েছে জিকের দেহটা। আত্মাটা এভাবে বন্দি হয়ে থাকার কোন মানে হয় না। তাকে এখনো অনেক কিছু করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জিকের ভেতর থেকে কালো একটা ধোয়া বেরিয়ে আসে। ধোয়াটা কুন্ডুলি পাঁকিয়ে উঠে এসে জিকের মৃত্যু দেহটার পাশে অদৃশ্য একটা অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়ায়। বেশ গভীর ভাবেই ক্ষত হয়েছে জিকে। পেট থেকে এখনো রক্ত ঝরছে অল্প অল্প। কয়েক জায়গায় লোহিত কণিকা বেরিয়ে এসে রক্ত গুলোকে জমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সউল অফ জিকের এখন সেটা ভাবলেও চলবে না। তার প্রথমে মিশর যেতে হবে। এরপর যেতে হবে কানাডা। খুঁজে বের করতে হবে ভিক্টিমদের। একাই করতে হবে কাজগুলো। পরেদিনই মিশরের উদ্দেশ্যে ছুট দেয় সউল অফ জিকে। মিশরের রাজধানী কায়রোর বুকে পা রাখতে কোন বেগ পেতে হয় না তাকে। অদৃশ্য জিকেকে তো কেউ দেখেই না, তবে বেগ আসবে কোত্থেকে? তবে একটু দেরি করেই মিশরে আসতে হলো তাকে। সেদিন বিধ্বস্ত জিকেকে যদি সে সেখানে রেখেই চলে আসতো তবে যে কেউ তাকে মৃত ভেবে দাফনের ব্যবস্থা করে দিত। কিন্তু তাকে যে ফিরে আসতে হবে বডি অফ জিকের মধ্যে। সেরকমটা ভেবেই সউল অফ জিকে বডি অফ জিকেকে সেখান থেকে সরানোর বন্দোবস্ত করে। প্রথমে হাত দিয়ে সরাতে চাইলেও ব্যর্থ হয় সউল অফ জিকে। যতবারই সে বডি অফ জিকেকে ধরতে চায় ততবারই তার হাত বডি অফ জিকের ভিতরে চলে যায়। অনেক চেষ্টার পরেও সে যখন ব্যর্থ হয় তখন অন্য এক পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রথমে দুহাতের ইশারায় তৈরি করে প্রচন্ড বাতাস। সেই বাতাসের একটা চক্র বানিয়ে সেটার মধ্যে করে বডি অফ জিকেকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। উড়িয়ে নিয়ে একটা পাহাড়ের চূড়ায় রেখে দেয় বডি অফ জিকেকে। বেশ দূর্গম একটা জায়গা। এখনে কেউ জিকেকে খুঁজে পাবে না। তারপর সউল অফ জিকে সেখান থেকে চলে আসে সোজা মিশর। সারা মিশর তন্ন তন্ন খোঁজার পরেও যখন ভিক্টিমদের কোন খোঁজ মিলে না তখন আবার কানাডার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় সে। এরই মধ্যে ঘটে যায় এক বিপত্তিকর ঘটনা। একদিন সাহারা মরুভূমির মধ্য দিয়ে হাঁটছিল জিকে। হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে ডাক দেয় তাকে। তন্ত্রমন্ত্র পরে কেউ যদি প্রেতাত্মার উপর সেটা প্রয়োগ করে তবে যেমন ছটফটিয়ে লাফিয়ে উঠে, ডাকটা শুনেও প্রায় সেভাবেই লাফিয়ে ওঠে জিকে। এরপরই সাত পাচ না ভেবে সামনের দিকে একটা দৌঁড় মারে। কিন্তু এতেও ঘটে বিপত্তি। দৌঁড় দিতেই সামনে থাকা একটা অদৃশ্য নেটের সাথে ধাক্কা খেয়ে সেখানেই উত্তপ্ত মরুবালুর উপর পরে যায় জিকে। জিকের সামনে এসে দাঁড়ায় সাদা ধূতি পরিহিত একজন বৃদ্ধ লোক। গলায় বিভিন্ন সব ভয়ংকর পুঁতি দিয়ে গাঁথা অনেকগুলি মালা। সেই মালার সাথে আবার ছোট্ট একটা মাথার খুলিও ঝুলানো। হাতে একটা লাঠি, একটু বাঁকানো, দেখলে মনে হবে বড় কোন গাছের শিকর এটা। মুখে লম্বা গোফ ও দাড়ি। গোফের কারণে মুখটাও ভালো দেখা যাচ্ছে না। বয়সের কথা চিন্তা করলে জিকের পঞ্চম-ষষ্ঠ উর্ধ্বতন পুরুষের সমান তো হবেই। বেঁচে আছেন কিভাবে সেটা সেই জানে। হয়তো কোন আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়েই এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছেন তিনি! তবে এদের দেখলে স্পষ্ট বলে দেয়া যায় এরা অনায়াসেই যেকোন প্রেতাত্মাদের বন্দী করে রাখতে সক্ষম। বৃদ্ধ দরবেশ মত লোকটার দিকে তাকিয়ে কাঁপতে শুরু করে দেয় সউল অফ জিকে। এখন তাকে আটকে ফেললে তার যে আর কোন উপায় থাকবে না। কিন্তু পালোনোর পথও তো আর নেই। জিকে ভেবে পায় না কি করবে। হঠাৎ তাকে অবাক করে দিয়ে বৃদ্ধ দরবেশ বলে ওঠে, - “শোন জিকে, আমি জানি তুমি অরিজিনাল জিকে নও। তুমি হচ্ছ সউল অফ জিকে। যদি তুমি সউল অফ জিকে না হতে, তবে এই ক্ষুদ্র নেটের মত বাধা তোমার মত “পাওয়ার অফ জিকে”কে আটকাতে পারতো না।” কথাটা শুনে দরবেশ মত লোকটার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে সউল অফ জিকে। তার তখনো জানা ছিল না যে, তিনিই সত্যিকারের “পাওয়ার অফ জিকে।” . . . _______ ল্যাবের মধ্যে একটা মনিটরের সামনে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখে যাচ্ছে মধ্যবয়স্ক একজন লোক। নাম ইকবাল মাহমুদ। বয়স আনুমানিক চল্লিশের কাছাকাছি হবে। তবে দেখলে মনে হবে তাঁর আর কয়েক বছরই অধিকার আছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার। শরীরের চামড়া গুলোতে ভাঁজ পড়েছে অনেকটা। মাথায় একটা চুলও অবশিষ্ট নেই। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে তিনি নাকি জন্মের পর থেকেই টাক। কথিত আছে, যাঁরা টাক হয়ে জন্মায় তাঁরা বড় হয়ে বিজ্ঞানী হয়। লোকটাও তাই। লন্ডনের ভার্সিটি থেকে জিন তত্ত্বের উপর পি এইচ ডি করেছেন। তারপর থেকে তাকে সবাই ড. ইকবাল স্যার বলেই জানে। জিন তত্ত্বের একটা বিশেষ থিম নিয়ে বেশ কিছুদিন রিসার্চ করে যাচ্ছেন ড. ইকবাল মাহমুদ। তাঁর কাছে জিন তত্ত্বের সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে এভুলিউশন। _____ এভুলিউশন বা অভিব্যক্তি হলো- একটি বায়োলজিক্যাল থিওরি, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবের গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমাগতভাবে হতে থাকা ক্রমপরির্তনকে বুঝায়। আদি দর্শন শাস্ত্র থেকেই বিবর্তনের চিন্তাধারা সাইনটিস্টদের মাঝে প্রভাব ফেলে এবং পরবর্তীতে সেটা বিজ্ঞানমহলে বহুল আলোচিত থিম হয়ে দাড়ায়। অ্যানাক্সিমেন্ডার ও এমপেডোক্লিসের মতই কয়েকজন সক্রেটিস-পূর্ব গ্রিক দার্শনিক প্রথম এমন ধারনা দেয় যে, কোন জীব অন্য কোন জীব হতে উৎপত্তি লাভ করতে পারে। মূলত জিনরাশিই বংশপ্রবাহে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। যা একটি জীবের বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য দায়ী তা-ই জিন। জিনের মিউটেশন সংঘটিত হলে জীবের নির্দিষ্ট কোনো বংশধরদের মাঝে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে, আবার পুরনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনও হতে পারে। . মিউটেশন বা পরিব্যাক্তি হচ্ছে কোষ জিনোমের ডিএনএ গঠনের স্থায়ী পরিবর্তন। ডিএনএ রেপ্লিকেশনের সময়, বিশেষত মিয়োসিস কোষ বিভাজনের ভ্রান্তি ফলাফল হচ্ছে মিউটেশন। এছাড়া কারসিনোজেনের প্রভাবে ডিএনএ রিপেয়ার ভুল সিকোয়েন্সে হলেও মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিএনএ রেপ্লিকেশনের সময় ট্রান্সলেসন সিন্থেসিস ভুলের কারণেও মিউটেশন দেখা দেয়। আবার ডিএনএতে বাইরের কোন উপাদানের মাধ্যমে সিকুয়েন্সে নতুন উপাদান যুক্ত অথবা মুছে ফেলার দরুনও মিউটেশন সংঘটিত হতে পারে। মিউটেশন সংঘটিত হলে তা জিনের উপাদানে পরিবর্তন সংঘটিত হতে পারে, অথবা জিনের কার্যক্রমে বাধাদান করতে পারে, অথবা কোন প্রতিক্রিয়াই সম্পাদিত হলো না এমনও হতে পারে। ড্রসোফিলা নামের এক ধরনের মাছিতে করা রিসার্চের উপর প্রস্তাব করা হয়ছিল যে, মিউটেশনে যদি জিন কর্তৃক সৃষ্ট প্রোটিনে পরিবর্তন আসে, তবে তা ক্ষতিকারক হতে পারে। যেখানে উক্ত মিউটেশনের সাত-দশমাংশই ক্ষতিকারক প্রভাব থাকে এবং বাকি অংশ নিরপেক্ষ বা সামান্য উপকারী হতে পারে। যদিও একটি প্রজন্মে জীবের মধ্যে যে পরিবর্তন হয়ে থাকে, তা খুবই সামান্য। কিন্তু পর্যায়ক্রমে তা উল্লেখযোগ্য হয়ে দেখা দেয় এবং এমনকি একসময় তা নতুন প্রজাতির উদ্ভবেরও কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। এই বিষয়টাই একটু জটিল। . বিবর্তনের ভিত্তি হচ্ছে বংশপরম্পরায় জিনের সঞ্চারণ করা। এই জিনগুলোর বিভিন্নতার কারণে নির্দিষ্ট একটি জাতির মধ্যকার বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে বংশগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সংঘটন বা নতুন প্রকরণ সৃষ্টি হতে পারে। বিবর্তন মূলত দুটি বিপরীত নিয়ামকের ফল : একটি প্রক্রিয়ায় ক্রমাগতভাবে নতুন প্রকরণ সৃষ্টি হয়, আর অন্যটির প্রভাবে এই প্রকরণগুলোর কোনো কোনোটির সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং কোনো কোনোটির সংখ্যা কমে যায়। আবার নতুন প্রকরণ উৎপন্ন হয় দুটি প্রধান উপায়ে ; জিনগত মিউটেশনের ফলে এবং বিভিন্ন জীবগোষ্ঠী বা প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক ট্রান্সফার ঘটালে। . শেষের এই একটি বিষয়ই ড. ইকবাল মাহমুদকে এতদূর এনেছে। বিবর্তনের এই একটি বিষয়ই তাঁর কাছে নির্ভরযোগ্য। কৌতুহলের শুরুটাই এখানেই। এই বিষয়টার উপর ভিত্তি করেই তাঁর বায়োলজিক্যাল সাইন্সে জিন তত্ত্বের উপর স্টাডি করা। আসলে এটাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা অভিযোজিত বিবর্তন বললেও ভুল হবে, এটাকে আরো একটা নতুন সৃষ্টি বলা যেতে পারে। যখন নির্দিষ্ট কোন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে অন্য কোন জীবগোষ্ঠীর ডিএনএ ট্রান্সফার করে নতুন একটা জাতি গঠন করা যেতে পারে তখন সেটাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা অভিযোজিত বিবর্তন বলা যাবে না। বরং সেটাকে শুধু নতুন সৃষ্টিই বলতে হবে। একটা জাতি বা গোত্রের ডিএনএ অন্য একটা জাতি বা গোত্রের মাঝে ট্রান্সফার করে দিয়ে তাদের বৈশিষ্ট্য পাল্টে দেয়া যায়। একটা জীবগোষ্ঠীর ডিএনএ ট্রান্সফার করে হয়তো অন্য জীবগোষ্ঠীকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দেয়া যেতে পারে। মানুষকেও হয়তো বানিয়ে ফেলা যেতে পারে হিংস্র। কিন্তু ইকবালের ভাবনাটা একেবারেই অন্যরকম! “যদি অনেকগুলো হিংস্র ও পাওয়ারফুল জীবগোষ্ঠীর ডিএনএ একত্র করে একটা জীবগোষ্ঠীর মাঝে ট্রান্সফার করা যায়, তবে কেমন হয়?” বিষয়টা জটিল! এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা একটামাত্র জীবগোষ্ঠী পক্ষে কি নিতে পারা সম্ভব হবে? যদি সম্ভবও হয় তবে ইকবালকে অনেক খাটতে হবে। তাকে তৈরি করতে হবে একটা শক্তিশালী ভ্রুণ! তবে এটাকে ইকবাল কিভাবে বিবর্তন বলবে সেটা নিয়েও তার একটু আপত্তি আছে। বিবর্তন তত্ত্বকেও ইকবাল মাহমুদ কখনো পুরোপুরি মানেও নি। নিজের টার্গেট পয়েন্টে পৌছানোর জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিবর্তনের ভুয়া তত্ত্বকে নিয়েও জানতে হয়েছে তাকে। বিবর্তন নিয়ে জানার জন্য যখন তিনি “অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস” বইটা পড়েছিল, তখন ইচ্ছে হয়েছিল, যদি চার্লস ডারউইনকে তিনি সামনে পেতেন তবে ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দিতেন। মানুষের পূর্বপুরুষ একজন বানর হয় কিভাবে!? ভাবতেই তো ঘেন্না লাগে! সেটাও নাকি আবার প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা অভিযোজিত! প্রাকৃতিক নির্বাচন হচ্ছে, যে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে একদিকে একটি জীবগোষ্ঠীর অস্তিত্বের অনুকূল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সদস্য বা মভ্যারিয়্যান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও কালক্রমে তা কমন বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। প্রজন্মান্তরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ছোট ছোট র্যান্ডম বা দৈব পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমান্বয়ে জীবগোষ্ঠীতে প্রকট হয়ে দেখা দেয় এবং এভাবে সেই জীবগোষ্ঠী তার পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়। আসলে এভাবেই অভিযোজিত হয় নাকি অভিযোজন হয়ে থাকার কারণেই প্রকৃতিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে টিকে থাকতে সক্ষম হয় সেটাও বিতর্কের বিষয়। তবে বিষয়টাতে ডিএনএ ট্রান্সফারের কথা বলা হলে মানা যেত। তবে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়, যদি মানুষের অস্তিত্বই তখন না থাকতো তবে কার থেকে ডিএনএ ট্রান্সফার করে বানরের মাঝে স্থাপন করা হয়েছিল? তখন তো প্রযুক্তিও ছিল না। . মোটকথা, সব মিলিয়ে ইকবাল মাহমুদের কাছে বিবর্তন হচ্ছে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বানানো আলু ভর্তা। যা হতে পারে, তবে কারো মাধ্যম ছাড়া হবে না। তাই বলে সেটা বানর থেকে মানুষ হয়ে যাওয়া বিষয়টাক বোঝাতে পারে না। তবে হয়তো সেই সামান্য জিনগত মিউটেশনের মাধ্যমকে বিবর্তনের থিওরি থেকে উত্থাপন করে অন্যত্র বর্ণনা করতে হবে, নয়তো বিষয়টা থেকে বিবর্তন শব্দটাকে বাদ দিয়ে অন্য একটা নাম প্রদান করতে হবে। চাইলে সেটা ‘সিক্রেট ক্রিয়েট পয়েন্ট অফ গড’ হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে। ইকবাল মাহমুদ একজন সাইনটিস্ট হলেও নিজের ধর্মের প্রতি অনুগত। তাই তার কখনো সেটা মানারও কথা না। অবশ্য দার্শনিক হলে অন্য কথা ছিল। তিনি কখনো কিছুর রহস্য জানতে চাইলে মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ বিজ্ঞানময় কুরআনের ভাষার লজিক ব্যবহার করেই জেনে নেন। তার কথা হচ্ছে, যেখানে সাইন্স বলছে একটা সুচও যখন কারো মাধ্যম ছাড়া তৈরি হতে পারে না, তবে মানব জাতি কিভাবে স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে? প্রত্যেক সৃষ্টিকেই তো কোন না কোন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। সেই স্রষ্টা যদি বলেন তিনি আমাদেরকে মানুষ বানিয়েই সৃষ্টি করেছিলেন তারপরও যদি আমরা বলি যে আমাদের পূর্বপুরুষ হল একজন বানর তবে সেটা নেহাতই পাগলের কথা বার্তা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। যেমন ধরুন, আপনি একটা মাটির পুতুল বানিয়েছেন, এরপর আপনি সবাইকে বলে দিলেন এটা মাটির পুতুল। তারপরও যদি কেউ সেটা শক্ত বা মজবুত হওয়ার কারণে বলে যে, না ওটা কাঠের বা তামার পুতুল, তবে তাকে আপনি পাগল ছাড়া কি-ই বা বলতে পারবেন? . ইকবাল মাহমুদের এই প্রশ্নটাই তাকে এখনো বিবর্তন থিওরিকে বিশ্বাস করাতে পারে নি। এছাড়াও আরো অনেক প্রশ্নই তাকে বিবর্তনের বিশ্বস্ততার দ্বারে পৌঁছে দিতে পারে নি। তার প্রশ্ন হলো- যদি বানর থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের অভিযোজন থিওরি অনুযায়ী মানুষ হয়েও থাকে, তবে বাকি বানরগুলো বিলুপ্ত অথবা মানুষ হয়ে যায়নি কেন? তারা কিভাবে টিকে আছে? তাঁর এক খ্রিষ্টান বন্ধু একবার তাঁকে বিষয়টাকে বোঝাতে চেয়েছিল, কিন্তু ইকবাল মাহমুদ তাঁর প্রশ্নগুলো ছুরে মারতেই লোকটা মূর্খতার বনে হারিয়ে গিয়েছিল। ফিরেছে কিনা জানা নেই। তবে আর কখনো এই ব্যার্থ চেষ্টা করে নি। তবে যে বিষয়টা ড. ইকবালের মধ্যে কৌতুহল বাড়িয়ে দিয়েছিল সেটাই তাকে আজকের এই জায়গায় দাড় করিয়ে রেখেছে। এখন সেটার উপরেই একটা রিসার্চ চালিয়ে যাচ্ছেন বিগত এগারো বছর ধরে। ইকবালের সাথে তাঁর রিসার্চজেবল ওয়ার্কে ছিল কয়েকজন বন্ধু। কিন্তু কোন কারণে তাদেরকেও বাদ দিয়ে নিজেকে একাই চালিয়ে যেতে হচ্ছে এই গবেষণা। . সবার থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন একটা অদ্ভুত জায়গায় বাড়ি করেছে ইকবাল। তার বাড়িটার চারপাশে কোন ঘরবাড়ি নেই। সবুজের বিস্তৃত একটা খোলা মাঠের মধ্যে ব্যঙের ছাতার মত মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তাঁর ঘরটা। আধা মাইল পেরিয়ে যেতে হয় মেইন সড়ক। তারপর আরো মাইল খানেক চললে পাওয়া যায় নগরায়নের দেখা। একেবারেই সভ্যতার ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে ইকবাল মাহমুদ। . সেই বাড়িটার মধ্যেই ইকবাল তৈরি করেছে বেশ সিকিউর সমৃদ্ধ একটা ল্যাব। তার মধ্যেই সে তাঁর রিসার্চ করে। যে ল্যাবটার মধ্যে ইকবাল রিসার্চ করে সেটাতে তাঁর নিজস্ব বডি চেকিং পয়েন্ট সেন্সর লাগানো রয়েছে। যে কেউ সেটার ভিতর আসা যাওয়া করতে পারবে না। আজ একটু বেশই মনোযোগ দিয়ে ইকবাল তাঁর গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সেটাও অন্য সব দিনগুলির মত নয়, একটু বেশিই খেয়াল তাঁর আজকের রিসার্চজেবল ওয়ার্কে। চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর। ইকবাল যা দেখছে তাতে সে তাঁর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আজ! তাঁর আনন্দও এখন আর ধরে না। তাঁর অনুভূতিটাও ব্যক্ত করার মত নয়। টান টান উত্তেজনা নিয়ে মনিটরের সামনে বসে দ্রুত বেশ কয়েকটা বোতাম চেঁপে কাঁপা কাঁপা হাতে ওকে বাটনের দিকে হাতটা এগিয়ে দেয় ইকবাল। ঠিক তখনই বাইরে থেকে কেউ ভেতর প্রবেশ করতে চাওয়ায় মেইট গেট থেকে টিট্ টিট্ শব্দ করে সিগন্যাল আসে। সিগন্যালর সাউন্ডে খেয়াল আসতেই ইকবালের হাতটা ওকে বাটনে না পরে মিক্সড মিউটেশন বাটনে গিয়ে পড়ে। ততক্ষণে সবকটা মেশিন অন করে দেয়া হয়েছিল। সাথে সাথে মনিটরের স্ক্রিন কাঁপতে শুরু করে দেয়। ভিতর থেকে একটা ঝাঝালো পোড়া গন্ধ এসে ঠেকে ইকবালের নাকে। মুহূর্তেই পুরো ল্যাবরেটরি রুমটাও কাঁপতে শুরু করে দেয়। কি হতে চলেছে সেটা আর বুঝতে বাকি রয় না ইকবালেরর। দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে ল্যাবের সিকিউর গেটের দিকে দৌঁড় দেয় সে। দরজায় সীমানা অতিক্রম করার আগেই বিকট এক শব্দ করে পুরো রুমটাই ব্লাষ্ট হয়ে যায়। স্ফুলিঙ্গের ন্যায় চারদিকে ছড়িয়ে পরে সব জিনিসপত্র। তারই সাথে দরজার ওপাশে গিয়ে ছিঁটকে পরে ইকবাল মাহমুদও। . . আহত ইকবালকে নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। টানা দুদিন আই সি ইউতে রাখার পর ফিরিয়ে দেয়া হয় অসুস্থ ইকবালকে। কয়েকটা টেস্ট দেওয়ার পর ডাক্তাররা জানায় তারা আর ট্রেডমেন্ট চালাতে পারবে না। ব্রেইনে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। ইংল্যান্ড নিতে হবে। ইকবালের তখন প্রিয়জন বলতে ছিল তার সুন্দরী স্ত্রী আর একমাত্র ছেলে, খালিদ। মাকে একা দেশে রেখে আহত বাবাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের ব্যাস্ত নগরী ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় খালিদ নিজেই। . অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ইংল্যান্ডের রাজধানী সিটি অফ লন্ডনে পৌঁছতে কোন বেগ পেতে হয় না ২৪ বছরের জোয়ান ছেলে খালিদকে। ইংল্যান্ডের রাজধানী এবং পৃথিবীর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাস্ত শহর হচ্ছে সিটি অফ লন্ডন। সেখানেই সেন্ট্রাল হসপিটালে এডমিট করানো হয় ইকবালকে। কিছু প্রাইমারি টেস্ট দেওয়ার পর ডাক্তাররা জানায়, পুরো ৫০ হাজার পাউন্ড স্টার্লিং লাগবে। ব্রেইন ইস্যু, অতো সহজ কাজ নয়। তবে ৩৫ হাজার পাউন্ড স্টার্লিং এ্যডবাঞ্চ দিতে হবে। বাকি ১৫ হাজার পাউন্ড স্টার্লিং পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর দিলেই হবে। এত মোটা অংকের একটা পরিমাপের কথা শুনে নৈরাশ হলেও থেমে যায় না খালিদ। ডাক্তারের কথামতই চলতে থাকে ইকবালের চিকিৎসা। টানা সাতদিন-ছয়রাত ইকবালকে আই-সি-ইউ তে রাখার পর সাতদিনের মাথায় ইকবালকে বের করে আনা হয়। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো মাস খানেক লাগবে। কিন্তু এতদিন হাসপাতালে পরে থাকার তো কোন মানে হয় না। আবার এই অচেনা শহরে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে খালিদ কোথায় যাবে সেটাও চিন্তার বিষয়। শেষে অনলাইন থেকে শ’তিনেক পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে একটা ফ্লাট বুকিং করে নেয় সে। রাতটা হসপিটালেই থেকে পরেরদিন ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠবে এমনটাই ভাবনা তাদের। এরপর যেই ভাবা সেই কাজ। অসুস্থ ইকবালকে নিয়ে রাতের মত হসপিটালেই থেকে যায় খালিদ। কিন্তু এতেই ঘটে অঘটন। খালিদ হঠাৎ রাতে জেগে উঠে দেখে ইকবালের বেড খালি। বুকের পানি যেন শুকিয়ে যায় তার। পুরো হসপাতাল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও পাওয়া যায় না ইকবালকে। পরের দিনই থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে জিডি করে আসে খালিদ। একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর এসে হসপিটালের কয়েকজন ডাক্তারকে রেসপন্সিবিলিটির অজুহাতে একটু রাগারাগি করে আবার চলে যায়। ব্যাপারটা খালিদের কাছে মোটেও ভালো লাগে না। সে উপরমহলের পুলিশের কাছে গিয়ে সবটা জানায়। বিশেষ একজন ডাক্তারের নামে ডায়েরিও করে আসে। ডাক্তারটাকে খালিদের প্রথম থেকেই সাসপেক্ট হয়েছিল। পরেরদিন সকালে জানতে পারে সেই ডাক্তারকে কেউ মার্ডার করে দিয়েছে। ব্রেইন শূন্য করে মারা হয়েছে তাকে। ব্যাপারটা একটু খটকা লাগে খালিদের কাছে। একজন মানুষকে কেউ ব্রেইন শূন্য করে কেন মারবে? কিন্তু হাল ছেড়ে দেবার মত পাত্রও খালিদ নয়। তাকে যে করে হোক এ জটলার সমাধান করতে হবে। অন্য দশজনের চেয়ে খালিদ বেশি বৈ কম যায় না। পুলিশের এরকম আচরণ আর ডাক্তারের মার্ডার হওয়ার পর খালিদের সাসপেক্ট চলে যায় পুলিশের উপর। কিন্তু পুলিশকেও বা সে কিভাবে দোষারোপ করবে। তবে যে করেই হোক তাকে এ জটলার সমাধার করতেই হবে। হঠাৎই খালিদের মাঝে একটা ভাবান্তর চলে আসে। আস্তে আস্তে সবকিছু তার কাছে কেমন যেন ক্লিয়ার হয়ে যেতে থাকে। . . . চলবে!....... . #রিভার্স_ওয়ার্ল্ড লেখা : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ রাফি ____ কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন কিন্তু!! ????????


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৭৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ Reverse World (Part 3)
→ Reverse world (part 2)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Muhammad Abdullah Rafi
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    মেহেদি ভাইয়া, দ্বিতীয় পর্ব আপলোড হইছে।

  • Mehedi Hasan Prova
    User ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    একদম অন্যরকম লেগেছে। অসাধারণ!!! পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি......gjgjgj

  • হৃদয়
    GJ Writer ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    ভালো লেগেছে।পরের পর্ব,দিন

  • SHUVO SUTRADHAR
    Golpobuzz ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    এক কথায় অসাধারণ। পরের পর্বটা শিঘ্রই দাও।