মেঘের উপারে।

X কারও স্বপ্ন ছুটে চলে বিদ্যুৎ গতিতে, কারও স্বপ্ন মাঝপথে হারিয়ে যায়, কারও স্বপ্ন আবার হারিয়ে যায় অন্ধকারে। স্বপ্ন তাদের কাছে কিছুক্ষনের জন্যে একটি শান্তনা। তেমনি এক ছেলে বাবলু। সারাদিন কেটে যায় রাস্তায় ব্যস্ত মানুৃষের যাওয়া আসা দেখে কখনও আবার নীল আকাশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কখনও আবার প্রকৃতির দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সে ভাবে একই মাটিতে একই আকাশের নীচে সবার জন্ম তাহলে তার জীবন এমন কেন? সে ভাবনা বিরামহীন চলতেই থাকে কিন্তুু এর কোন উওর খুজে পায় না সে। তার কোন আকাশছোয়া স্বপ্ন নেই তারকাছে জীবনের মানে তিন বেলা পেট ভরে খেতে পাওয়া।কখনও হয় আবার কখনও হয়ে উঠে না তাতে কী প্রকৃতির বিশাল উৎসহ পানির অভাব হয় না কখনও। চলে যায় এমনিভাবে।বাবলু মাঝে মাঝে শহরের সুউচ্চ বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবে তারও যদি এমন একটি বাড়ি থাকত সেখানে সে তার পরিবার নিয়ে থাকত তাহলে কেমন হত! এই মূহূর্ত্বটায় বাবলুর চোখ উজ্জল হয়ে যায়। কারন তখন সে ভাবতে থাকে তার পরিবারে আর কে কে থাকত! বাবা- মা ভাই-বোন বাবলু সবার ছোট হলে ভালো হত নাকি সবার বড় হলে ভালো হত? এটা সে কিছুতেই বুঝতে পারে না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন দুপুর গড়িয়ে আসে তা বুঝতেই পারে নি সে। দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্হাটা এখনো হয়ে উঠে নি যে! কিন্তুু বাবলুর মনে কোন ভাবনা নেই আজকেরটা নাহয় নাই খেল একদিন না খেলে কিছুই হয়না। তার স্বপ্ন দেখতে এখন ভালো লাগছে খুব। তাই সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে তো ভাবছেই মাঝে মাঝে তার মুখে হাল্কা একটা হাসি ফুটে উঠে কেন জানি! সামনে দিয়ে ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত মানুষের যাওয়া আসা চলছেই। বিশাল এই ব্যস্ত নগরীতে বাবলুর আজ নিজেকে অসহায় লাগছে। এমনসময় সে দেখল এক লোকের সাথে তার সমবয়সী একটা ছেলে কাধে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পায়ে হেটে চলছে বাবলুর কৌতুহল জাগল। সে তৎক্ষনাৎ উঠে গিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞাস করল কোথায় যাচ্ছেন আপনারা? লোকটি বাবলুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল সড় তো রাস্তা থেকে! তার সমবয়সী ছেলেটি বলল উনি আমার আব্বু আমাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাবলু বলল স্কুল! আমিও যাব।আচ্ছা স্কুলে পড়লে কী হয়? তখন লোকটি বলল এহ শখ কত স্কুলে পড়বে! তুই রাস্তার ছেলে তোকে কে স্কুলে ভর্তি করবে? বাবা- মায়ের নাম জানিস তুই? এই বলে লোকটি ছেলেটিকে সাথে নিয়ে চলে গেল। বাবলু একদৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে আসছে। সে আবারও বসে বসে ভাবনার সাগরে ডুব দেয়। সে ভাবে সত্যিই তো জন্মের পর থেকে সে তার বাবা- মায়ের মুখ দেখে নি। সে রাস্তায় কী করে আসল ভেবে পায় না।তাহলে কে তার বাবা- মা? সে কী এই ব্যস্ত নগরীর এতই মূল্যহীন মানুষ! লোকটি বলল স্কুলে ভর্তি হতে হলে বাবা- মায়ের নাম লাগে। তখন সে ভাবল জন্মের পর একটি শিশু প্রথম যার ছোয়া পায় সেই তো মা। তখন তার মনে পড়ল জন্মের পর সে প্রথম এই স্নিগ্ধ মাটির মায়াবী পরশ পেয়েছিল তাই তার মা হলো এই দেশের মাটি। আচ্ছা তাহলে বাবা কে? তারপর যার ছায়ায় একটি শিশু বড় হয়ে উঠে সেই তো বাবা। বাবলু এটার অর্থ খুব সহজেই বের করে ফেলল। সে জন্মের পর থেকে ঐ নীল আকাশের ছায়ায় বড় হয়েছে তাই তার বাবা ঐ নীলআকাশ। বাবলু এমন সময় উৎফুল্ল হয়ে উঠে সে তার বাবা মায়ের নাম পেয়ে গেছে এবার সে স্কুলে ভর্তি হতে পারবে। এই দেশের মাটি তার মা ঐ নীল আকাশ তার বাবা। এসব ভাবতে ভাবতে সে শরীফের কাছে চলে যায়। সেই ছোটবেলা থেকেই বাবলুকে সে শিখিয়ে এসেছে কীভাবে অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেচে নিজে বাচতে হয়। কিন্তুু বাবলু এটা করে না কারন সে জানে এটা তার নৈতিকতার বিরুধী। সে এটাও ভাবে সে যদি এসব করেও তবে তার জন্য সে দায়ী নয়। পরিস্হিতিই তাকে এসব করতে বাধ্য করেছে। কেউ যদি তার পাশে দাড়াত তাহলে তো আর সে এসব করত না। সেও তো দেশের জন্যে মানুষের জন্যে কাজ করতে চায় কিন্তুু তাকে কেউ কেন সুযোগ করে দেয়না? সে কী এই দেশেরই সন্তান নয়! তবুও কেন তার জীবন সবার থেকে অন্যরকম! প্রশ্নর মধ্যে প্রশ্ন চলে আসে কিন্তুু কোন উওর বাবলু বের করতে পারে না। এসব ভাবতে ভাবতে বাবলু শরীফের কাছে গিয়ে বলে ভাইয়া আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন আমি স্কুলে পড়ব। শরীফ বলল স্কুলে পড়বি! ভালো কথা তোর বাবা মা কে জানিস তুই?বাবলু বলল হুম জানি মাটি আমার মা আকাশ আমার বাবা। শরীফ হেসে বলল তুই কী পাগল! স্কুলে পড়তে হবে না যাহ তো এখান থেকে? বাবলু মন খারাপ করে চলে গেল। সে বরাবরের মতো আবারও ভাবনার সাগরে ডুব দেয় সে ভাবছে তার জীবন কী এভাবেই একদিন শুকনো ফুলের মতো ঝড়ে পড়বে! সে কি কখনও কারও কোন উপকারে আসতে পারবে না? জীবনের মানে সে খুজে পাচ্ছে না। হয়ত তার জীবন অন্ধকারেই কেটে যাবে হয়ত আবার কারোর হাতের ছোয়ায় তার জীবন আলোকিত হয়ে যাবে। এই আসায়ই দিন কাটায় বাবলু। দিন যায় কতকিছুর পরিবর্তন হয় তবে কী কোন একদিনও তার জীবন পরিবর্তন হবে না! নাকি তার জীবন মেঘের আড়ালে এভাবেই ডেকে যাবে একদিন! ----------------------------সমাপ্ত----------------------- ভুল-ক্রটি ক্ষমা করবেন।