বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমি জামাল আহাম্মেদ প্রথম যখন আগ্রা গিয়েছিলাম।তখন তাজমহল দেখতে গেছিলাম।সেই দিনটার কথা এখনও আমার স্মৃতিতে যেন জ্বলজ্বল করে।ট্রেন তখনও আগ্রা স্টেশনে পৌছায় নি।ট্রেনের মধ্যে এক সহকারী বললো ওই যে তাজমহল দেখা যাচ্ছে।দূর থেকে দিনের আলোয় তাজমহল দেখলাম।দেখে একটু অবাক হলাম। দেখে মনে হচ্ছিল যেন চুনকাম করা একটা মসজিদ।আমার কাছে যেন মসজিদের মতই লাগছিল।কিন্তু এই তাজমহল যে ভালোবাসার প্রতিক।ভালোবাসার এক জীবন্ত উদাহারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই তাজমহল।সম্রাট শাহাজাহান তার স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে তৈরি করেছে এই তাজমহল।যার প্রতিটা কোণার মাঝে যেন লুকিয়ে আছে মমতাজের প্রতি শাহাজানের ভালোবাসা।সেই তাজমহলে স্ত্রী মমতাজের পাশে শায়িত হয়ে আছে মুঘল সম্রাট শাহাজাহান।তাজমহল নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম।আসলে তাজমহল কে বাস্তবে যারা দেখবে হয়তো তারাও ভাবনার সাগরে চলে যাবে।যাই হোক যেদিন প্রথম দেখলাম তাজমহল সেই দিন রাতে আবার তাজমহল দেখতে গেলাম।এবার যেন আরেকটু ভালো ভাবে তাজমহল কে অনুধাবন করার সুযোগ হলো।রাত টা জোসনার রাত।আকাশ ভরা তাঁরা,পরিষ্কার চাঁদ আকাশে, নেই কোনো মেঘ চারিদিকে যেন রাতের বেলাতেও দিনের মতো আলো হয়ে আছে।চাঁদের আলোতে তাজমহল যেন ঝলমল করছে।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তাজমহলের দিকে।এই তাজমহল আজ যা বিশ্বের এক সপ্তম আশ্চর্য।সারাদিন দেশি বিদেশি কত মানুষ এই তাজমহল দেখতে আসে।স্ত্রীর প্রতি স্বামির ভালোবাসার এক অসাধারণ নিদর্শন এই তাজমহল দেখে মানুষ অভিভূত হয়।ভালোবাসার যেন একটা নতুন সংঙ্গা খুজে পায় মানুষ।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে।কোন কন্ট্রাক্টর তাজমহল চুনকাম করে কে কত টাকা পেয়েছে,তাজমহল দেখতে এসে কে ভাবনায় ডুবে গেছে,হোটেল মালিকরা তাজমহলের দৌলতে কত ধনি হয়ে গেছে,তাজমহল কে কেন্দ্র করে কে তার ব্যাবসায় সফল হয়েছে বা কত টাকা লাভ করেছে,বাইরের পর্যটকেদের ঠকিয়ে তাজমহলের আশেপাশের ব্যাবসায়ীরা কত টাকা কামাই করছে ইত্যাদি অনেক খবর ও পুরাতন হয়ে গেছে।
তাজমহল অনেকবার দেখেছি যে এখন তাজমহলের পাশ দিয়ে গেলেও আর কিছু মনে হয় না।তাজমহলের প্রতি আমার আগ্রহ যেন অনেকটা কমে গেছে।এখন তাজমহঅলের পাশ দিয়েই রোজ যাতায়াত করতে হয় আমায়।কারণ আগ্রার কাছেই এক দাতব্য চিকিৎসালয়ে চিকিৎসক হয়ে এসেছি আমি।
কিছুদিন পর একদিন হাসপাতালে রাউন্ড দিয়ে রোগিদের দেখে হাসপাতালের বারান্দা থেকে নিচে নেমে দেখি একটা বৃদ্ধ লোক বয়স তার দেখে মনে হল সত্তর বছর।আবার দেখলাম বৃদ্ধ লোকটির ঘারে এক বিশাল বড় ঝুড়ি।ঝুড়ির ভারে আহারে বৃদ্ধ লোকটির মেরুদণ্ডই যেন বাঁকা হয়ে গেছে।আমি ভাবলাম লোকটি কোনো ফেরিওয়ালা নাকি।কিন্তু ঝুড়িটা নামাতে দেখলাম লোকট কোনো ফেরিওয়াল না।ঝুড়ির মধ্যে একজন বোরখা পড়া মহিলাকে বসে থাকতে দেখলাম।আর বৃদ্ধ লোকটিকে দেখতে বাউলের মত আর তার ধবধবা সাদা দাঁড়ি।বৃদ্ধ লোকটি এগিয়ে এসে আমায় সালাম দিয়ে বললো পিঠে করে স্ত্রী কে নিয়ে হাসপাতাল এ এসেছে আমাকে দেখানোর জন্য।সে অনেক গরিব।তাই বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়ে দেখাবে সেই সামর্থ্য নেই তার।আমাকে বললো তাই যদি আমি দয়া করি একটু।তারপর আমি মহিলার কাছে যেতেই ভীষণ একটা দুর্গন্ধ পেলাম।যাইহোক এবার হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বোরকা খুলতেই(অবশ্য বোরখা খুলতে তিনি অনেক আপত্তি করছিলেন) বুঝতে পারলাম।ক্যাংক্রাম অরিস।মুখের আধখানা পচে গেছে।ডানদিকের গালটা নেই।আর দাতগুলো বের হয়ে আছে।প্রচন্ড দুর্গন্ধ বেরে হচ্ছিল মহিলাটির কাছ থেকে।তাই হাসপাতালের অন্য রুগিদের কথা ভেবে ভিতরে রাখা গেল না মহিলাটিকে।বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় রাখলাম।কিন্তু তারপর বারান্দা তেও রাখা গেল না।অনেক দুর্গন্ধর জন্য অন্য রোগীরা অভিযোগ করছিল।তাই মহিলাটিকে হাসপাতালের সামনে একটা বড় গাছের নিচে রাখলাম।দুর্গন্ধের জন্য মহিলার কাছে কেউ ঘেষতে পারছিল না।কিন্তু বৃদ্ধ লোকটির যেন কোনো সমস্যা হচ্ছিল না।দিন রাত নিজের স্ত্রীর সেবা যত্ন করে যাচ্ছিলেন।হয়তো এটাই ভালোবাসা।ভালোবাসায় যে কোনো প্রতিবন্ধকতা কাজ করে না বৃদ্ধ লোকটিকে দেখলেই বুঝা যায়।যাই হোক বৃদ্ধ লোকটি হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ওষুধ নিয়ে যেত।আমি মাঝে মাঝে গিয়ে ইনজেকশন দিয়ে আসতাম।এভাবেই চলছিল মহিলাটির চিকিৎসা।
একদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল।আমি রোগী দেখে বারান্দা তে এসে দেখলাম বৃদ্ধ লোকটি একটা চাঁদর তারা স্ত্রীর সামনে ধরে তাকে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।আর বৃদ্ধ লোকটি নিজে বৃষ্টিতে ভিজছে।এবার আমি একটা ছাতা নিয়ে বৃদ্ধ লোকটির কাছে গেলাম।গিয়ে দেখি মহিলাটি ভিজে চুপসে গেছে।আধখানা মুখেই যেন একটু বিভৎস হাসি লেগে আছে মহিলার।আরো দেখলাম যে মহিলাটি ঠক ঠক করে কাপছে এবং জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।
আমি বৃদ্ধ লোকটিকে বললাম এখন আপাততো হাসপাতালের বারান্দায় নিয়ে চলো তোমার স্ত্রী কে।
বৃদ্ধ লোকটি হঠাৎ আমায় প্রশ্ন করলো এর কি বাঁচার কোনো আশা আছে?
আমি বললাম সত্যি কথা বলতে নাহ আর কোনো বাঁচার আশা নেই।
আমার মুখে এই কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।আমি চলে গেলাম।
পরেরদিন দেখলাম হাসপাতালের সামনের ওই বড় গাছের নিচে কেউ নেই।পুরো জায়গাটা ফাকা।কোথায় যে গেল বৃদ্ধ লোকটি তার স্ত্রী কে নিয়ে বুঝতে পারলাম না।হয়তো আমার মুখে গতকাল সেই অপ্রিয় কঠিন কথাটা শুনে বৃদ্ধ লোকটি কষ্ট পেয়েছে বা মনে আঘাত পেয়েছে।আসলে কেই বা দেখতে চায় যে নিজের স্ত্রীকে নিজের চোঁখের সামনে এভাবে কষ্ট পেতে পেতে মরে যেতে।
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে।আমি একদিন একটা মাঠের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম।তখন আমি সেই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখতে পেলাম।মাঠের মধ্যে কি যেন করছিল বৃদ্ধ লোকটি।খাঁ খাঁ রোদ এর মধ্যে কি করছে বৃদ্ধ লোকটি?মূমূর্ষ স্ত্রী কে নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়লো নাকি তাই আমি এগিয়ে গেলাম।এগিয়ে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ লোকটি কত গুলো ভাঙ্গা ইট আর কাদা নিয়ে কি যেন গাথছে।
আমি এবার বললাম "কি হচ্ছে এখানে চাচা?"
আমায় দেখে বৃদ্ধ লোকটি আমার দিকে ঝুকে সালাম দিল আমাকে।
"স্ত্রীর কবর গাথছি সাহেব"
"কবর"?
"হ্যা হুজুর।"
বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে চুপ করে রইলাম।কিছুক্ষণ অসস্থিকর চুপ করে থেকে নিরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেশ করলাম "তুমি থাক কোথায়?"
"আগ্রার আশে পাশেই থাকি সাহেব এবং ওখানেই ভিক্ষা করে বেড়াই গরিব মানুষ তো।"
"আগে তো কখনো তোমাকে দেখি নি।তোমার নাম কি?"
"ফকির শাজাহান।"
নামটি শুনে......
নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
[গল্পটি লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছি বালাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়(বনফুল) এর তাজমহল গল্পটি পড়ে।গল্পের শিক্ষা আর আমার কল্পনা এই দুটো কে একসাথে করে গল্পটি লিখার চেষ্টা করেছি আশা করি সবার ভাল লাগবে।]
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now