বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন - জে. কে. রাওলিং (২য় পর্ব)
X
হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন
লেখিকাঃ জে. কে. রাওলিং
???? চাবির রক্ষক
বুম। বুম। দরোজায় আবার ধাক্কার শব্দ। ডাডলি লাফ দিয়ে জেগে উঠল।
কামানের শব্দ? সে বোকার মত প্রশ্ন করল।
তাদের পেছনে একটি বিকট শব্দ শোনা গেল। আঙ্কল ভার্নন ভয়ে বিবর্ণ হয়ে ঘরে ঢুকলেন। তার হাতে একটি রাইফেল। এখন তারা বুঝতে পারল তিনি সরু লম্বা প্যাকেটে কি এনেছিলেন।
কে ওখানে? আঙ্কল ভার্নন চিৎকার করে উঠলেন–সাবধান, আমার হাতে অস্ত্র আছে
কিছুক্ষণ নীরবতা।
তারপর আবার…
ধ পা স
দরোজায় এমন জোরে ধাক্কা লাগল যে কান–ফাটানো আওয়াজে দরোজার সব পাল্লা মাটিতে পড়ে গেল। দরোজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে এক অতিকায় মানুষ–দৈত্য বললেও ভুল হবে না। চুল–দাঁড়িতে মুখ প্রায় ঢাকা। জ্বলজ্বলে চোখ। তার মাথা গিয়ে ঠেকেছে ঘরের ছাদ পর্যন্ত। মাথা নত করে পিঠ বাঁকিয়ে কুঁজো হয়ে দৈত্যটা ঘরে ঢুকে গেলেন। সে মাথা নিচু করে দরোজাটি হাতে তুলে নিলেন এবং জায়গামতো বসিয়ে দিল। বাইরে ঝড়ের গর্জন কিছুটা কমল। দৈত্যটা সবার দিকে তাকাল।
আমাকে কি এক কাপ চা বানিয়ে দেয়া যায়? পথে যা ধকল সহ্য করেছি।
তারপর সে সোফার দিকে এগিয়ে গেল যেখানে ডাডলি ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে।
দৈত্য বলল-এই মটু উঠে দাঁড়া।
ডাডলি ভয়ে জড়সড় হয়ে মাকে আড়াল করে লুকোবার জন্য ছুটল। আঙ্কল ভার্ননের পেছনে তিনিও ভয়ে কাঁপছিলেন।
আরে এইতো হ্যারি। দৈত্য হ্যারিকে দেখে বলল। হ্যারি দৈত্যাকার লোকটার দিকে তাকাল। লোকটার মুখে স্মিত হাসি।
দৈত্যাকার লোকটা হ্যারিকে বলল–আমি তোমাকে প্রথম যখন দেখি তখন তুমি মাত্র একটি ছোট্ট শিশু। তোমাকে ঠিক তোমার বাবার মত দেখাচ্ছে। অবশ্য তোমার চোখ দুটো তোমার মায়ের মতো।
আঙ্কল ভার্ননের গলায় ঘাড় ঘ্যাঙ শব্দ।
তিনি বললেন–তুমি এক্ষুণি এখান থেকে চলে যাও। এটা আমার হুকুম। তুমি দরোজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছো।
চুপ করো, নির্বোধ–দৈত্য দাপটের সাথে ধমক দিল। সে সোফার পেছনে গিয়ে আঙ্কল ভার্ননের হাত থেকে রাইফেলটি নিয়ে নিল। রাইফেলটাকে বাঁকিয়ে ঘরের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলল। এত সহজে যেন রাবারের তৈরি কোন জিনিস দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিল। আঙ্কল ভার্নন মৃদুকণ্ঠে কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু অদ্ভুত কিছু শব্দ করা ছাড়া তার গলা দিয়ে কথা বেরুল না।
দৈত্য হ্যারিকে উদ্দেশ্য করে বলল–হ্যারি, যাহোক, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
এর পর দৈত্যটা তার জামার পকেট থেকে একটা বাক্স বের করে হ্যারিকে দিল। হ্যারি কাঁপা কাঁপা হাতে বাক্সটা খুলল। একটা বড়ো চকোলেট কেক। কেকের ওপর সবুজ রঙের আইসক্রিম দিয়ে লেখা হ্যাপি বার্থ–ডে হ্যারি।
হ্যারি দৈত্যের দিকে তাকিয়ে বলতে চাইছিল–তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু তার মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো–কে তুমি?
দৈত্যটা প্রথম একটু আমতা আমতা করল। তারপর বলল–আমারই ভুল হয়ে গেছে। প্রথমেই আমার পরিচয় দেয়া উচিত ছিল। আমার নাম রুবিয়াস হ্যাগ্রিড। আমি হোগার্টসে থাকি। সেখানকার দরোজার চাবি আমার হেফাজতে আর মাঠের দেখাশোনা করি।
হ্যারির সাথে করমর্দন করার জন্য দৈত্যটি বিশাল হাত বাড়িয়ে দিল। করমর্দনের সময় হ্যারির মনে হলো তার হাতটা বুঝি খসে পড়ছে।
চা পাওয়া যাবে? হ্যাগ্রিড মনে করিয়ে দিলেন। চা যদি একটু কড়াও হয় তাতেও আমার আপত্তি নেই।
এবার হ্যাগ্রিডের দৃষ্টি গেল ঘর গরম করার ফায়ার প্লেস-এর দিকে। তিনি ঘরের ফায়ার প্লেস-এর কাছে একটু কুঁজো হলেন। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে গনগনে আগুন জ্বলে উঠল। ঘর এত গরম হলো যে হ্যারির মনে হল, সে যেন একটা হট বাথ নিচ্ছে। আগুনে গোসল করে নিচ্ছে।
হ্যাগ্রিড এবার সোফায় বসে পড়লেন। মনে হল গদিটি বুঝি ডুবে যাবে। এবার হ্যাগ্রিডের জামার পকেট থেকে হরেক রকমের জিনিস বেরুল–তামার কেতলি, এক প্যাকেট শূকরের মাংসের সসেজ, লম্বা মগ, বোতল, চা ইত্যাদি। হ্যাগ্রি তার কাজ শুরু করে দিলেন। সসেজের আগুনে ঝলসানোর শব্দ ও পোড়া মাংসের গন্ধে ঘর ভরে গেল। তিনি যখন ছয়টি মোটা, রসে ভরা এবং কিছুটা পুড়ে যাওয়া সসেজ লোহার শিকের কড়াই থেকে বের করল ডাডলি লোভাতুর দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকাল। আঙ্কল ভার্নন কড়াভাবে বললেন–ডাডলি, ওর দেয়া কোন জিনিস স্পর্শ করবে না।
হ্যাগ্রিড মুচকি হেসে রসিকতা করে বললেন–তোমার ছেলে ডাডলি তো একটি আস্ত থলথলে পুডিং, ওর জন্য চর্বির প্রয়োজন হবে না। তোমার কোন চিন্তার কারণ নেই।
হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে সসেজ বাড়িয়ে দিলেন। হ্যারি এত ক্ষুধার্ত ছিল যে খেয়ে মনে হলো এর আগে কখনো সে এত সুস্বাদু খাবার খায়নি। যদিও সে ভয়ের চোখে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে ছিল।
হ্যারি হ্যাগ্রিডের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল। তারপর নিজ থেকেই বলল–আমি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি আপনি কে?
হ্যাগ্রিড এক ঢোক চা গিললেন। হাতের তালু দিয়ে মুখ মুছলেন।
বললেন–সবাই যেমন ডাকে–তুমিও আমাকে হ্যাগ্রিড বলে ডাকবে। তোমাকে একটু আগেই বলেছি, আমি হোগার্টসের চাবির রক্ষক। ধীরে ধীরে তুমি হোগার্টস সম্পর্কে সব জানতে পারবে।
না। হ্যারি বলল।
হ্যাগ্রিড একটু ধাক্কা খেলেন মনে হলো; তিনি হ্যারির এই উত্তর আশা করেনি।
আমি দুঃখিত। হ্যারি দুঃখ প্রকাশ করল।
এবার হ্যাগ্রিড ডার্সলি পরিবারের অন্য সবার দিকে তাকাল। হ্যারি, তোমার দুঃখিত হবার কোন কারণ নেই। দুঃখিত হবার কারণ তো ওদেরই। আমি জানি–তোমাকে লেখা একটি চিঠিও ওরা তোমাকে দেয়নি। হোগার্টসের ব্যাপারেও তারা তোমাকে কিছু জানায়নি। তোমার বাবা–মার ব্যাপারেও ওরা তোমাকে কিছু বলেনি।
আমার বাবা–মার সম্পর্কে কী? হ্যারি আগ্রহ ভরে জানতে চাইল।
তুমি কিছুই জানো না! হ্যাগ্রিড বিস্ময় প্রকাশ করল। বলল–ঠিক আছে, এক সেকেন্ড অপেক্ষা করো।
হ্যাগ্রিড এত ক্ষেপে গেলেন যে মনে হল মুহূর্তেই বাড়িটা লন্ডভণ্ড করে ফেলবেন। ডার্সলি ভয়ে পেছনে হটে দেয়ালে পিঠ ঠেকালেন।
হ্যাগ্রিড হুংকার দিয়ে বললেন–তোমরা আমাকে বল, ছেলে-এই ছেলেটা–মানে হ্যারি কি কিছুই জানে না?
হ্যারির মনে হলো–হ্যাগ্রিড একটু বাড়াবাড়ি করছেন। সে তো স্কুলে পড়ছে। লেখাপড়ায় সে খুব একটা খারাপ নয়।
হ্যারি বলল–আমি পড়াশোনা করি। আমি অঙ্কে ভালো।
হ্যাগ্রিড হ্যারির কথায় কান না দিয়েই ডার্সলি পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রশ্ন করলেন আপনারা কি ওকে ওর পরিবার, ওর বাবা–মার ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানাননি?
হ্যাগ্রিড যেন উত্তেজনায় ফেটে পড়ছিলেন।
আঙ্কল ভার্নন ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে পড়লেন। হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–তোমার বাবা–মা সম্পর্কে তোমার জানা উচিত। তারা খ্যাতিমান ব্যক্তি ছিলেন। তুমিও সেই হিসেবে খ্যাতিমান।
কী বললেন? আমার বাবা–মা খ্যাতিমান ছিলেন? হ্যারি বিস্ময়ে হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞেস করল।
তুমি একেবারে কিছুই জানো না? হ্যাগ্রিড বিস্ময়ে হ্যারির দিকে তাকালেন।
অনেকক্ষণ পর আঙ্কল ভার্নন কিছু বলার সাহস পেলেন। তিনি বললেন–হ্যারির বাবা–মা সম্পর্কে কিছু না বলার জন্য তোমাকে অনুরোধ করছি।
এতে হ্যাগ্রিডের রাগ কমল না। হ্যাগ্রিড রাগের সাথেই বললেন আপনি তো কখনো তাকে বলেননি চিঠিগুলোতে কী লেখা ছিল? ডাম্বলডোর হ্যারিকে এই চিঠিগুলো পাঠিয়েছিলেন আমার সামনেই। আপনি এতগুলো বছর হ্যারির কাছ থেকে সবকিছু গোপন রেখেছেন। তাই না?
কী লুকিয়ে রেখেছেন? হ্যারি কৌতূহলী হয়ে উঠলো।
চুপ কর, এসব কথা বলতে আমি কি তোমাকে নিষেধ করিনি? আঙ্কল ভার্নন বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
আন্ট পেতুনিয়ার চেহারায়ও আতঙ্কের ছাপ দেখা গেল।
আপনারা দুজন মাথা গরম করলেও কিছু হবে না। হ্যারি তুমি একজন জাদুকর। হ্যাগ্রিড বলল।
ঘরের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। শুধু কেবল সাগরের গর্জন আর বাতাসের শির শির আওয়াজ ভেসে আসছে।
আমি একজন কী? হ্যারি আরো কৌতূহলী হলো।
তুমি একজন জাদুকর। হ্যাগ্রিড বললেন–তোমার কাছে পাঠানো চিঠিগুলো তোমার পড়া উচিত ছিল। এই বলে হ্যাগ্রিড একটি হলুদাভ খাম হ্যারির হাতে দিলেন।
হ্যারি খামটি হাতে নিল। খামের ওপর হালকা সবুজ কালিতে লেখা ছিল
মি, এইচ পটার
দি ফ্লোর, হার্ট অন দি রক
সমুদ্র
হ্যারি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো–
হোগার্টসের জাদু বিদ্যালয়
প্রধান শিক্ষক : আলবুস ডাম্বলডোর
প্রিয় মি. পটার,
আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আমাদের জাদু বিদ্যালয়ে তোমার জন্য একটি আসন রাখা আছে। চিঠির সাথে প্রয়োজনীয় বইপত্র ও সরঞ্জামাদির তালিকা দেয়া হলো।
আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে কোর্স শুরু হবে। ৩১শে জুলাইয়ের ভেতর তোমার কাছে পেঁচা প্রত্যাশা করছি।
ইতি
মিনার্ভা ম্যাকগোনাগল
উপ–প্রধান শিক্ষক
হ্যারির মাথায় একগাদা প্রশ্ন কিলবিল করছিল। সে ভেবে পাচ্ছিল না, কোন প্রশ্নটা আগে করবে। কয়েক মিনিট পর অস্ফুটস্বরে বলল, তারা আমার পেঁচার জন্য অপেক্ষা করবে, এর অর্থ কী? একহাতে নিজের কপাল চেপে হ্যাগ্রিড বলল, এতক্ষণে মনে পড়েছে তার অপর হাতটি ওভারকোটের পকেটে ঢুকিয়ে একটি জীবন্ত পেঁচা, একটি লম্বা পালকের কলম ও মোটা কাগজের রোল বের করলেন। হ্যাগ্রিড তার দাঁতে পাখির পালক চেপে কাগজে কিছু লিখলেন যা বুঝতে হ্যারির একটুও অসুবিধে হলো না।
হ্যাগ্রিড লিখলেন :
প্রিয় মি, ডাম্বলডোর,
হ্যারিকে তার চিঠি দেয়া হয়েছে। তার জিনিসপত্র কেনার জনা আমি আগামীকাল বেরুব। আবহাওয়া দুর্যোগময়। আশা করি আপনি ভালো আছেন।
ইতি
হ্যাগ্রিড
লেখাটা ভাঁজ করে হ্যাগ্রিড পেঁচাকে দিলেন। পেঁচা এটা ঠোঁটে চেপে ধরল। এবার পেঁচাটিকে জানালা দিয়ে হ্যাগ্রিড আকাশে উড়িয়ে দিলেন। এমন স্বাভাবিকভাবে হ্যাগ্রিড ফিরে এসে বসলেন, যেন এইমাত্র ফোনে কথা বলে এলেন। এরপর আঙ্কল ভার্নন হুংকার দিয়ে উঠলেন–হ্যারি তুমি কোথাও যাবে না। হ্যাগ্রিড রেগেমেগে আগুনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবং বললেন–আমি দেখতে চাই তোমার মতো একটা মাগল তাকে কীভাবে আটকায়।
মাগল। মাগল কী? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–মাগল হলো যে সব লোক জাদুর মর্ম বোঝে না। তোমার দুর্ভাগ্য এরকম একটি মাগল পরিবারে তুমি বড় হয়েছে।
এবার আঙ্কল ভার্নন এগিয়ে এসে বললেন–আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা তাকে এ ধরনের ভোজবাজি থেকে দূরে রাখব। তার ওই ধরনের জাদু–টাদু শেখার ইচ্ছা চিরকালের জন্য আমরা শেষ করে দেব।
হ্যারি বলল–তোমরাও কি জানো যে আমি একজন–জাদুকর।
অবশ্যই জানি। পেতুনিয়া জবাব দিলেন-এটা কী করে হয় যে আমি আমার বোন সম্পর্কে কিছু জানবো না। সেও সেই স্কুল থেকে এরকম চিঠি পেয়েছিল এবং একদিন উধাও হয়ে গিয়েছিল। ছুটির সময় সে বাড়িতে আসতো–তার পকেটে থাকতে ব্যাঙের পা, চায়ের কাপকে সে ইঁদুর বানাতো। একমাত্র আমিই জানতাম, সে একটি ভণ্ড! কিন্তু আমার মা–বাবার কাছে সে ছিল প্রিয়–সবকিছুতেই তারা লিলিকে নিয়ে গর্ব করতো। সবসময় বলতে লিলি এটা… লিলি ওটা…। তারপর তোমার বাবার সাথে স্কুলে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে ঘনিষ্টতা এবং বিয়ে। ওরা দুজনেই পাগল, অদ্ভুত, অস্বাভাবিক। তারপর তোমার জন্ম হয়। আমি জানতাম তুমি তাদের মত হবে। তারা একদিন বিস্ফোরণে শেষ হয়ে গেল। তারপর থেকে তুমি আমাদের কাছে।
কথাগুলো শুনে হ্যারির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। একটু পর হ্যারি মুখ খুলল–বিস্ফোরণ! তোমরা না বলেছিলে, আমার বাবা–মা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে?
গাড়ি দুর্ঘটনায়! হ্যাগ্রিড গর্জন করে উঠলেন। ডার্সলি পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হ্যাগ্রিড প্রশ্ন করলেন-এটা কি বিশ্বাস করা যায় যে লিলি আর জেম্স্ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এটা অসম্ভব। এটা নিছক গুজব। বানোয়াট গল্প। এটা বদনাম। আমাদের জগতের প্রতিটা শিশুই হ্যারি পটারের নাম জানে। এটা কি করে হয় যে সে নিজেই তার সম্পর্কে জানে না। কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা ঘটলো। হ্যাগ্রিড কঠিন ভাষায় প্রশ্ন করলেন।
হ্যাগ্রিডের ক্রোধ খুব দ্রুতই উদ্বেগে পরিণত হলো। উদ্বিগ্ন স্বরে হ্যাগ্রিড বললেন–আমি এটা কখনোই আশা করিনি। আমি তখন বুঝতে পারিনি ডাম্বলভোর কেন আমাকে বলেছিলেন তোমাকে নিতে অনেক বাধা–বিপত্তি পেরুতে হবে। তুমি যে অনেক কিছু জানো না-এটাও আমার জন্য কম বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। তোমাকে আমার অনেক কিছুই বলার আছে। তবে সবটুকু এখন বলা যাবে না। আমি ততটুকুই বলব যতটুকু আমার পক্ষে বলা সম্ভব।
ডার্সলি পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হ্যাগ্রিড হ্যারিকে বলতে লাগলেন–বিষয়টি এই, আমার মনে হয় একটা লোক, নাম–কিন্তু আশ্চর্য তুমি তার নাম জানো না! পৃথিবীর সকলে তার নাম জানে।
লোকটা কে? হ্যারি প্রশ্ন করে বসে।
তার নাম …বলতে গিয়ে হ্যাগ্রিড থেমে গেলেন। হ্যাগ্রিডের মুখ থেকে নামটি বেরুল না।
আমি তার নাম বলতে পারব না। কেউই তার নাম উচ্চারণ করে না হ্যাগ্রিড বললেন।
কিন্তু কেন? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড বললেন–ঘটনার সাথে আরেকজন জড়িত। তার নাম গালপিন গারগোয়েলেস। সে একজন ভেলকিবাজ ও বদমায়েশ। খুবই জঘন্য, জঘন্যের চেয়েও জঘন্য। তার নাম বলা… আচ্ছা ঠিক আছে, তার নাম ভোলডেমর্ট। দ্বিতীয়বার তার নাম নিতে বলবে না। তার জগতটাই ছিল জাদুলীলা, ডাইনি আর ভেলকিবাজদের নিয়ে। প্রায় বিশ বছর আগে সে তার অনুসারী বানাবার জন্যে লোকজন খুঁজতো। সে বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে। সে কয়েকজনকে খুন করেছে। বিশেষ করে তার বিরোধী মতের লোকদেরকে। একমাত্র ডাম্বলডোরকেই সে ভয় পেতো। তার স্কুলটাকে সে নিতে সাহস পায়নি।
হ্যাগ্রিড বলে চললেন–তোমার বাবা মা খুব ভাল জাদুকর ছিলেন। তাদের তুলনা হয় না। ছাত্রাবস্থায় হোগার্টস স্কুলে তারা হেড বয় ও হেড গার্ল ছিলেন। তবে এটা অজানাই থেকে গেল যে কেন ভোলডেমর্ট তাদেরকে পক্ষে নেয়ার চেষ্টা কখনো করেনি। এর কারণ হতে পারে যে তোমার বাবা–মা ডাম্বলডোরের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তখন তোমার বয়স মাত্র এক বছর। ভোলডেমর্ট তোমাদের বাড়ি যায়। তোমার বাবা–মাকে হত্যা করে। এ সময় ইউ–নো–হু তোমাকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। তাই তোমার কপালের এই দাগ দেখে আমি বিস্মিত হইনি। এটাও তো কম কষ্ট নয়। এটা একটি শক্তিশালী অভিশাপের পরিণাম। শাপটা তোমার ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এজন্যই তুমি খ্যাতিমান হ্যারি। কারণ সে যাকে মারতে চাইতো তার বাঁচার কোন উপায় থাকত না। একমাত্র তুমিই তার ব্যতিক্রম।
গ্রিডের কথা শুনে হ্যারির মন বিষাদে ভরে গেল।
করুণ দৃষ্টিতে হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকালেন।
হ্যাগ্রিড বলনেল–ডাম্বলডোরের নির্দেশেই আমি তোমাকে সেই ভাঙা বাড়ি থেকে উদ্ধার করি। তবে শেষ পর্যন্ত তুমি যেখানে আছ–অর্থাৎ ডার্সলিদের পরিবারে–সেটাও তো তোমার জন্য ভালো হয়নি। এটা তো তোমার জন্য একটি নরক।
ইতোমধ্যে আঙ্কল ভার্নন তার সাহস কিছুটা ফিরে পেয়েছেন। তিনি বললেন–আমি স্বীকার করি হ্যারির ভেতর অদ্ভুত কিছু জিনিস আছে। সে ডাইনি জগতের লোক। হয়ত শাসন করে তাকে বশে আনা যাবে অথবা যাবে না। তবে আমি চাই না সে ওই জগতের সাথে কোন সম্পর্ক রাখুক।
আঙ্কল ভার্ননের কথা শুনে হ্যাগ্রিড সোফা থেকে লাফ দিয়ে উঠলেন। তার প্যান্ট থেকে একটা ভাঙা ছাতা বের করে সেটাকে তরবারির মতো করে আঙ্কল ভের্ননের সামনে উঁচিয়ে ধরলেন। তারপর বললেন–ডার্সলি, আমি তোমাকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, তুমি আর একটি কথাও বলবে না।
ছাতার খোঁচা খাবার ভয়ে আঙ্কল ভার্নন একেবারে চুপসে গেলেন।
হ্যাগ্রিড পুনরায় সোফায় বসলেন।
ভোলডেমর্টের কী হলো? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড বললেন–সে সেদিন পালিয়ে গেল। পরের রাতে সে তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। তবে ওর ব্যাপারটাও রহস্য রয়ে গেছে। কেউ বলে ও মারা গেছে। কেউ বলে ও এখনও জীবিত।
আন্তরিকতা ও উষ্ণতার সাথে হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকালেন। ওঁর কথায় হ্যারি খুশি ও গর্বিত হওয়ার পরিবর্তে বরং মনে করলো কোথাও বড় ধরনের ভুল হচ্ছে। সে জাদুকর! সে কীভাবে জাদুকর হয়? সে তো ডার্সলি পরিবারে আঙ্কল ভার্নন এবং আন্ট পেতুনিয়ার কাছেই প্রতিপালিত হয়েছে। সে যদি জাদুকরই হবে তাহলে তাকে কেন যাযাবরের জীবন কাটাতে হচ্ছে? কেন কাবার্ডের ওপর ঘুমোতে হয়। সে যদি খ্যাতিমানই হবে তাহলে ডাডলি কেন সব সময় তাকে ফুটবলের মতো লাথি মারে।
হ্যারি হ্যাগ্রিডকে বলল–আপনি বোধহয় ভুল করছেন। আমার মনে হয় না, আমি একজন জাদুকর।
হ্যারির কথায় হ্যাগ্রিড মৃদু হাসলেন।
তুমি জাদুকর হবে না কেন? জাদুবিদ্যাকে কি তুমি ভয় পাও?
হ্যারি আগুনের দিকে তাকাল। এখন সে ভাবতে লাগল ভার আঙ্কল আন্ট তার সাথে কেন দীর্ঘদিন এমন ওলট–পালট ও অস্বাভাবিক ব্যবহার করেছেন।
হ্যারি হাসিমুখে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে দেখল, হ্যাগ্রিডের মুখে তখনও স্মিত হাসি। আঙ্কল ভার্ননের উদ্দেশ্যে হ্যাগ্রিড বললেন–তুমি কি দেখতে চাও হ্যারি জাদু জানে কিনা।
আঙ্কল ভার্নন বলল–আমি তোমাকে বলেছি হ্যারি কোথাও যাবে না। ও স্টোনওয়াল হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। তোমাদের ফালতু চিঠি আমি পড়েছি।
হ্যারি হোগার্টসে যদি যেতে চায়। তোমার মত একজন বড় মাগলও কিছুতেই তাকে রুখতে পারবে না–হ্যাগ্রিড বললেন। তুমি কি পাগল, ভাবছো, লিলি ও জেমস-এর ছেলের হোগার্টস যাওয়া বন্ধ করতে পারবে। জন্মের পরেই ওর নাম এ স্কুলে লেখা হয়ে গেছে। সে সেখানে হোগার্টসের ইতিহাসে যার মত বড় শিক্ষক হননি সেই আলবাস ডাম্বলডোরের অধীনে পড়াশোনা করবে।
তাকে ম্যাজিকের কারসাজি শেখানোর জন্য কোন মাথা খারাপ বৃদ্ধকে আমি এক কানা কড়িও দিচ্ছি না। আঙ্কল ভার্ননের কণ্ঠে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
শেষ পর্যন্ত তিনি খানিকটা বেশিই বলে ফেললেন। হ্যাগ্রিড আবার ছাতাটি তরবারির মতো করে আঙ্কল ভার্ননের সামনে তার মাথার ওপর শূন্যে ঘুরালেন। আর বলল–হুঁশিয়ার আলবাস ডাম্বলডোরের বিরুদ্ধে তুমি একটা কথা বলবে না।
হিশ… শব্দ করে ছাতাটি যখন ডাডলির সামনে চলে এল, বেগুনি রঙের আলোর ঝলকানি, আতশবাজির মত একটা শব্দ, এক তীব্র চিৎকার এবং পরমুহূর্তেই ডাডলি তার নিতম্বে দু হাত চেপে তীব্র ব্যথায় বিকট শব্দ করে উঠল। হ্যারি দেখলো একটি শূকরের লেজ ডাডলির ট্রাউজার খুঁড়ে বের হচ্ছে। আঙ্কল ভার্নন আর্তনাদ করে উঠলেন। তিনি এত ভয় পেলেন যে তৎক্ষণাৎ আন্ট পেতুনিয়া আর ডাডলিকে দ্রুত টেনে অন্য ঘরে নিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় যখন দরোজা বন্ধ করছিলেন তখন তার চেহারায় ভীষণ আতঙ্কের ছাপ। হ্যাগ্রিড তার দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে ছাতার দিকে তাকিয়ে বললেন, মাথা গরম করা ঠিক নয়, কিন্তু অনেক সময় এটা কাজ করে। মানে… ওকে শূকর বানানো, তবে সে এমনিতেই দেখতে শূকরের মতো।
হ্যারি হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞেস করল–আপনি জাদু দেখান না কেন?
একথার কোন জবাব না দিয়ে হ্যাগ্রিড তাঁর কোটটা হ্যারির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, তুমি আমার কোটটি পরে নাও। খেয়াল রেখো। এর ভেতরে আরো কিছু জিনিস আছে।
???? ডায়াগন এলি
পরদিন খুব সকালেই হ্যারির ঘুম ভাঙল। যদিও সে জানে চারদিক ফরসা হয়ে গেছে। তবুও চোখ বন্ধ করে রইল।
তার মনে হলো রাতে সে স্বপ্ন দেখেছে যে হ্যাগ্রিড নামে এক দৈত্য এসে তাকে জাদুবিদ্যার স্কুলে ভর্তি হতে বলেছে। হ্যারি মনে মনে বলল, এখন আমি চোখ খুললেই দেখবো বাড়িতে আমি আমার কাবার্ডের ওপর শুয়ে আছি।
ঠিক এই সময় দরোজায় ঠক–ঠক আওয়াজ। মনে হচ্ছে আন্ট পেতুনিয়া দরোজায় শব্দ করছেন। তবুও সে চোখ বন্ধ করে থাকল। কারণ গত রাতে সে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে।
আবার দরোজায় ঠক–ঠক আওয়াজ।
হ্যারি বলল–আমি আসছি।
হ্যারি উঠতেই তার গা থেকে হ্যাগ্রিডের দেয়া কোটটা নিচে পড়ল।
চারদিকে সুর্যের আলো। ঝড় থেমে গেছে। হ্যাগ্রিড তখনও সোফায় ঘুমোচ্ছেন। একটা পেঁচা জানালায় ডানা ঝাপটাচ্ছে। ঠোঁটে একটা খবরের কাগজ। হ্যারি উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিল। পেঁচাটা ঘরে ঢুকে হ্যাগ্রিডের গায়ের ওপর খবরের কাগজটা ফেলে দিয়ে হ্যাগ্রিডের কোটে আক্রমণ করল। হ্যারি পেঁচাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করল। হ্যাগ্রিড চোখ না খুলেই হ্যারিকে বললেন–ওকে কিছু পয়সা দিয়ে দাও।
–কত দেব? হ্যারি জানতে চাইল।
–দেখ, আমার পকেটে কী আছে।
হ্যাগ্রিডের কোটের পকেটে চাবির গোছা, ব্রোঞ্জ মুদ্রা, টি–ব্যাগসহ নানা কিসিমের জিনিস পাওয়া গেল।
অবশেষে হ্যারি অদ্ভুত ধরনের কিছু মুদ্রা বের করল।
তাকে পাঁচটি নাট দিয়ে দাও। হ্যাগ্রিড হ্যারিকে বললেন।
নাট! অবাক হয়ে হ্যারি প্রশ্ন করল।
হ্যাগ্রিড বললেন–হ্যাঁ, ব্রোঞ্জের ছোট ছোট মুদ্রাগুলো। হ্যারি গুণে গুণে ব্রোঞ্জের পাঁচটি মুদ্রা বের করল। পেঁচা পা বাড়িয়ে দিতেই হ্যারি একটি পুটুলিতে মুদ্রাগুলো রেখে পুটুলিটি পেঁচার পায়ের সাথে বেঁধে দিল। পেঁচা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আকাশে উড়াল দিল।
হ্যাগ্রিড ঘুম থেকে উঠে বসলেন। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে আজকে অনেক কিছু করতে হবে। বললেন–লন্ডন যেতে হবে। লন্ডন যাবার আগে জাদুবিদ্যার স্কুলের দরকারি সব জিনিসপত্র কিনতে হবে।
হ্যারি হ্যাগ্রিডের উদ্দেশ্য বলল–আমার কোন টাকা পয়সা নেই। আর আপনিও শুনলেন জাদুবিদ্যার স্কুলে ভর্তি হবার জন্য আমার আঙ্কল আমাকে কোন টাকা দেবেন না।
এ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। হ্যাগ্রিড বললেন–তুমি কি মনে করেছো যে, তোমার বাবা তোমার জন্য কিছুই রেখে যাননি? তোমার বাবা তোমার জন্য প্রচুর ধন–সম্পদ রেখে গেছেন।
কিন্তু তাদের বাড়ি তো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল–হ্যারি বলল।
তারা তাদের সোনা–দানা বাসায় রাখেননি। আমাদের কাজ হবে প্রথমে গ্রিংগটস উইজার্ড ব্যাংকে যাওয়া। নাও সসেজ খাও। খুব বেশি ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি। তোমার জন্মদিনের কেকও খেতে পার… তোমার যা ইচ্ছে। হ্যাগ্রিড বললেন।
জাদুকরদের কি ব্যাংক থাকে? হ্যারি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ, তাদের একটাই ব্যাংক আছে। গ্রিংগটস উইজার্ড ব্যাংক।
বিকেলে হ্যাগ্রিড পাহাড়ে গেলেন। সাথে হ্যারিও গেল। আকাশ নির্মেঘ, পরিষ্কার, সমুদ্রে সূর্যাস্তের প্রতিফলন। ভাড়ার একটি নৌকা ঘাটে বাঁধা আছে। নৌকার তলায় বৃষ্টির পানি জমেছে।
অন্য একটি নৌকার সন্ধান করে হ্যারি হ্যাগ্রিডকে প্রশ্ন করল–আপনি এখানে এলেন কী করে?
উড়ে এসেছি। হ্যাগ্রিড বলল।
উড়ে এসেছেন–মানে? হ্যারি অবাক হলো।
হ্যাঁ–আমরা এটাতেই ফিরে যাব। হ্যাগ্রিড় বলল–আমি যখন এটা পেয়েছি এখন আর জাদুবিদ্যার সাহায্য দরকার নেই।
তারা দুজন নৌকায় উঠলেন। হ্যারি তখনও হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়েছিল এবং কল্পনা করছিল কিভাবে হ্যাগ্রিড উড়ছেন।
হ্যাগ্রিড বলেছেন নৌকা বাওয়াটা লজ্জার ব্যাপার। তাহলে কি নৌকাটা উড়বে–হ্যারি ভাবছিল।
হ্যাগ্রিড বললেন–আমি যেখানেই থাকি সেখানে সবকিছুর গতি বেড়ে যায়। তুমি কি হোগার্টসে গিয়ে এসব বিষয়ে গল্প করবে? হ্যাগ্রিড হ্যারির দিকে তাকালেন।
অবশ্যই না। হ্যারি জবাব দিল।
হ্যাগ্রিড তার গোলাপী ছাতাটা বের করে দুভাগ করলেন। নৌকার পাশে ধরতেই নৌকাটা দ্রুতবেগে পাড়ের দিকে রওনা হলো।
আপনি গ্রিংগটস থেকে টাকা আনার জন্য এত ব্যস্ত হলেন কেন? হ্যারি জানতে চাইল।
জাদুবিদ্যা কাজে লাগিয়েছি। পত্রিকার ভাঁজ খুলতে খুলতে হ্যাগ্রিড বললেন–বলা হয় ড্রাগন নাকি ব্যাংকের ভল্টগুলো পাহারা দিচ্ছে। গ্রিংগটস লন্ডন থেকে শত শত মাইল দূরে। সমুদ্রের নিচ দিয়ে যেতে হবে। ওখানে যেতে হলে তুমি খিদেয় মারা যাবে। হ্যারি বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল। ডেইলি প্রফেটের পাতা ওল্টাতে ওল্টাভে হ্যাগ্রিড মন্তব্য করলেন জাদু মন্ত্রণালয় সব সময় গোল পাকায়।
জাদুর জন্য কি আবার একটি মন্ত্রণালয় আছে নাকি? হ্যারি বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
অবশ্যই আছে। হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–সরকার চাচ্ছিলেন ডাম্বলডোর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিক। কিন্তু ডাম্বলডোর হোগার্টসের জাদুবিদ্যার স্কুল ছেড়ে মন্ত্রী হতে আগ্রহী নন।
জাদুবিদ্যা মন্ত্রণালয়ের কাজ কী? হ্যারি জানতে চাইল।
হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–মাগলদের হাত থেকে জাদুবিদ্যা শাস্ত্রকে রক্ষা করা।
নৌকা ঘাটে ভিড়ল। তারা নৌকা থেকে নেমে সড়কপথে হাঁটতে লাগল। পথচারীরা অবাক দৃষ্টিতে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে রইল। তাদের দোষ দেওয়া যায় না। হ্যাগ্রিড এত লম্বা যে, তিনি সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
লন্ডন যাওয়ার জন্য তারা স্টেশনে পৌঁছল। পাঁচ মিনিটের ভেতরই লন্ডনের জন্য ট্রেন পাওয়া যাবে। মাগলদের টাকার ব্যাপারে হ্যাগ্রিডের কোন ধারণা ছিল না। সে টাকাকে মাগল টাকা বলে থাকে। তাই টিকিট করার জন্য হ্যারিকে টাকা দিলেন। ট্রেনের দিকে না তাকিয়ে সবাই শুধু হ্যাগ্রিডের দিকে তাকায়। হ্যাগ্রিড দুটো আসন নিয়ে বসলেন।
তোমার চিঠি কি তোমার সাথে আছে? হ্যাগ্রিড হ্যারিকে জিজ্ঞেস করলেন।
হ্যারি হলুদ খামের চিঠিটা পকেট থেকে বের করলো।
ঠিক আছে। হ্যাগ্রিড বললেন, তোমার কী কী লাগবে তার একটা বিস্তারিত তালিকা চিঠিতে লেখা আছে।
হ্যারি কাগজের দ্বিতীয় অংশটার ভাঁজ খুলল। রাতে সে কাগজটা লক্ষ্যও করেনি এবং পড়েওনি। হ্যারি পড়তে শুরু করল–
হোগার্লস স্কুল অফ উইচক্রাফট এবং উইজারডি
ইউনিফর্ম
প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবশ্যক
১। তিন সেট স্বাভাবিক কাজের পোশাক (কালো)
২। দিনে পরার জন্য একটা সাধারণ চোখা হ্যাট (কালো)
৩। একজোড়া দস্তানা (ড্রাগন ও অনুরূপ প্রাণীর চামড়ার তৈরি)
৪। শীতের একটা পোশাক (কালো–রূপালী এবং টিলা)
লক্ষ্য করুন–প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর পোশাকে নেইম–ট্যাগ থাকতে হবে।
নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক
প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তালিকাভুক্ত প্রত্যেকটা বইয়ের একটা করে কপি রাখতে হবে
(ক) The Standard Book of Spells (Grade–1) by Miranda Goshawk
(খ) History of Magic by Bathilda Bagshot
(গ) Magical Theory by Adalbert Wafting
(ঘ) A Beginners Guide to Transfiguration by Emeric Switch
(ঙ) One Thousand Magical Herbs and Fungi by Phyllida Spore
(চ) Magical Drafts and Potions by Arsenius Jigger
(ছ) Fantastic Beasts and Where to Find Them by Newt Scamander
(জ) The Dark Forces–A Guide to Self–Protection by Quentin Trimble
অন্যান্য যন্ত্রপাতি
একটা জাদুর কাঠি
একটা কলড্রন (পিউটার স্ট্যান্ডার্ড সাইজ–২)
এক সেট গ্লাস অথবা স্কটিক ফিঅল
একটি দূরবীন
এক সেট তামার স্কেল
ছাত্রছাত্রীরা একটা পেঁচা বা একটা বিড়াল অথবা একটা ব্যাঙ আনতে পারবে।
অভিভাবকদের জানানো যাচ্ছে যে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের নিজস্ব ঝাড়ুলাঠি ব্যবহার করতে দেয়া হয় না।
এগুলো সবই লন্ডনে কিনতে পাওয়া যাবে? হ্যারি প্রশ্ন করল।
কোথায় পাওয়া যাবে সেটা তোমার জানা থাকলে অবশ্যই পাওয়া যাবে–হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন।
হ্যারি এর আগে কখনও লন্ডন যায়নি। সে যে কোথায় যাচ্ছে-এটাও তার জানা ছিল না। তবে যাওয়ার পথ ও পদ্ধতি খুব বিচিত্র। ট্রেনের আসনগুলো ছোট, গতি খুবই কম। জাদুবিদ্যার সাহায্যে এরা এসকেলেটর দিয়ে উঠল। এই তো রাস্তা। এই তো সারি সারি দোকান।
হ্যাগ্রিড এত বিশালদেহী যে ভিড় ঠেলে যেতে কোন অসুবিধেই হলো না। আর হ্যারির কাজ হলো পেছনে থেকে তাকে কেবল অনুসরণ করা। তারা বইয়ের দোকান, মিউজিকের দোকান, ফাস্টফুডের দোকান এবং সিনেমা হল পার হয়ে গেল, কিন্তু কোথাও তারা জাদুর কাঠি বিক্রি হতে দেখল না। রাস্তায় লোকজনের ভিড়। এখানে মাটির তলায় কোন জাদুকরের গুপ্তধন কি লুকিয়ে থাকতে পারে? জাদুবিদ্যার বইপত্র, জাদু ঝাড়ু কোথায় বিক্রি হয়? এটা নিশ্চয়ই ডার্সলিদের তৈরি বড় রকমের কৌতুক নয়? হ্যারি যদি জানত যে ডার্সলিদের কোন রসবোধ নেই, তাহলে হয়তো সে রকম কিছু একটা ভাবত। যদিও হ্যাগ্রিড তাকে যা যা বলেছেন তার অনেক কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। হ্যারি তাকেও খুব একটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
এক জায়গায় এসে হ্যাগ্রিড বললেন–আমরা এসে গেছি, এ জায়গার নাম লিকি কলড্রন এটা খুব বিখ্যাত স্থান।
এটা দেখতে অনাকর্ষণীয় ছোট পাব। হ্যাগ্রিড যদি তাকে না দেখাতেন তাহলে হ্যারি বুঝতেই পারত না যে এটা পাব।
এটা বিখ্যাত কোনও স্থানের মত নয়, অন্ধকার ও অপরিষ্কার। কয়েকজন বয়স্কা মহিলা এক কোণায় বসে ছোট গ্লাসে শেরি পান করছিলো। তাদের মধ্যে একজন লম্বা পাইপে ধূমপান করছিলো। একজন ছোট খাটো লোক টাকমাথা বৃদ্ধ বার–ম্যানের সাথে কথা বলছিলো। তারা ভেতরে ঢুকতেই কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। সবাই হ্যাগ্রিডকে দেখে হাসলো ও হাত নেড়ে সম্ভাষণ জানালো। মনে হলো হ্যাগ্রিডকে সবাই এখানে চেনে। বার-ম্যান গ্লাস বের করে বলল, তোমার সেটাই দেবো?
একজন লোক বেরিয়ে এল, হ্যাগ্রিডের পূর্ব পরিচিত। হ্যারির সাথেও তার আলাপ হলো! আরও বেশ কয়েকজনের সাথে হ্যারির পরিচয় হলো। তারা বেশ একটু ঘুরে দেখল। এখানে হ্যাগ্রিডকে সবাই চেনে।
হ্যারির কাঁধে হাত রেখে হ্যাগ্রিড বললেন–না টম, আমি হোগার্টসের কাজে এখানে এসেছি।
গুড লর্ড ভদ্রলোক বললেন-এ কি সে?–তা কি করে হয়? লিকি কলড্রনের দোকানপাট মুহূর্তের মধ্যেই সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেল।
আমার আত্নাকে আশীর্বাদ করুন। বারের বৃদ্ধ লোকটা বললেন আমার কী সৌভাগ্য যে হ্যারি পটার আপনার সাথে দেখা হলো। কি সম্মানের বিষয়.. !
বৃদ্ধ বার-ম্যান বারের পেছন থেকে বের হয়ে হ্যারির দিকে ছুটে আসলেন। তিনি হ্যারির হাত ধরলেন–তার চোখে জল।
মি. পটার, তোমাকে পুনরায় স্বাগতম, মি. পটার তোমাকে পুনরায় স্বাগতম। কী বলবে হ্যারি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। হ্যারি অবাক হয়ে দেখল–সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। হ্যাগ্রিডের মুখে স্মিত হাসি। বৃদ্ধা মহিলাটির তামাক শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তিনি পাইপ টেনেই চলছেন সেদিকে খেয়াল না করে।
তারপর চেয়ার টানাটানির শব্দ শোনা গেল। পরক্ষণেই হ্যারি দেখল যে লিকি কলড্রনের প্রত্যেকেই তার সাথে করমর্দন করছেন।
আমি ডরিস ক্রকফোর্ড, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না, তোমার সাথে দেখা হবে, মি. হ্যারি পটার।
তোমার সাথে দেখা হওয়ায় আমি নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি, মি. পটার।
তোমার সাথে করমর্দন করার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আজ আমার আনন্দের দিন।
তোমার সাথে দেখা হওয়াতে আমি যে কত আনন্দিত হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না–মি. পটার’ ডিডালুস ডিগল বললেন।
জবাবে হ্যারি বলল–আমি আপনাকে আগে দেখেছি। একটা দোকানে আপনি আমাকে বো করেছিলেন।
ডিডালুস সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন–তোমরা কি দেখেছ–সে আমাকে এখনও মনে রেখেছে এখনও।
হ্যারি সবার সাথে করমর্দন করল। ডরিস ক্রকফোর্ড প্রায় সময়ই হ্যারির কাছাকাছি থাকলেন।
একজন তরুণ উদ্বিগ্নভাবে হ্যারির দিকে এগিয়ে এলেন। হ্যাগ্রিড বললেন–হ্যারি, ইনি অধ্যাপক কুইরেল। হোগার্টসের জাদুবিদ্যা স্কুলে তিনি তোমার একজন শিক্ষক।
প-প-পটার তোতলাতে তোতলাতে অধ্যাপক কুইরেল বললেন হ্যা…রি। তোমার সাথে দেখা… হওয়াতে আমি যে ক–কত খুশি হয়েছি ভা-ভা-ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
আপনি কী ধরনের জাদু শেখান, অধ্যাপক কুইরেল।
কালো জাদুর বিরুদ্ধে আত্নরক্ষার জাদু–অধ্যাপক কুইরেল জবাব দিলেন।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে হ্যারির–প্রায় দশ মিনিট লেগে গেল।
হাতে আর সময় নেই। হ্যারি, তাড়াতাড়ি কর। হ্যাগ্রিড তাগিদ দিলেন।
ডরিস ক্রকফোর্ড হ্যারিকে বিদায়ী করমর্দন করলেন। এরপর ওরা দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন।
আমি কি তোমাকে বলিনি তুমি খ্যাতিমান? হ্যারির উদেশ্যে হ্যাগ্রিড বললেন। তোমার সাথে দেখা করে অধ্যাপক কুইরেল প্রায় কাঁপছিলেন।
তিনি কি সব সময় এরূপ নার্ভাস থাকেন? হ্যারি জানতে চাইল।
অবশ্যই। হ্যাগ্রিড বললেন–তিনি অত্যন্ত মেধাবী, যখন তিনি পড়াশোনা করতেন তখন সবই ঠিক ছিল। যখন তিনি অভিজ্ঞতার জন্য এক বছর হাতে–কলমে কাজ করতে গেলেন তখনই গোল বাঁধল। কেউ কেউ বলেন, যখন থেকে তিনি রক্তচোষাদের সাক্ষাৎ শুরু করলেন তখন থেকেই তার এই অবস্থা। ছাত্রদের দেখলেও তিনি ভয় পেয়ে যান। যাক সে কথা। আমার ছাতা কোথায়? হ্যাগ্রিড জানতে চাইলেন।
হ্যারি রক্তচোষাদের কথা ভাবছিল।
হ্যারি, সোজা হয়ে দাঁড়াও। হ্যাগ্রিড হ্যারিকে নির্দেশ দিলেন।
হ্যাগ্রিড ছাতার মাথা দিয়ে দেয়ালে তিনবার আঘাত করলেন। দেয়াল নড়ে উঠল। দেয়ালের মাঝখানে একটি গর্ত দেখা গেল। গর্তটি ধীরে ধীরে বড় হলো ও সিংহদ্বারে পরিণত হলো। গর্তের ভেতর দিয়ে হ্যাগ্রিডের মত বিশাল দেহের ব্যক্তিও প্রবেশ করতে পারে। ডায়াগন এলিতে স্বাগতম হ্যাগ্রিড বললেন।
হ্যারির বিস্মিত সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তিনি মুচকি হাসলেন। হ্যারিও গর্তের ভেতর প্রবেশ করল। হ্যারি ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো সিংহদ্বারটা ছোট হতে হতে দেয়ালে মিলিয়ে গেল। বাইরে দোকানগুলোর কলড্রনের সারির ওপর সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে। জল গরম করার কলড্রনগুলোর ওপর একটা সাইনবোর্ডও ঝুলছিল। কলড্রনস–অল সাইজেস–রূপা, পিতল, পিউটের, তামা সেলফ–স্টিয়ারিং–কলাপসিবল।
হ্যাগ্রিড হ্যারিকে বললেন–তোমারও পানি গরম করার একটা কলড্রন লাগবে। তার আগে চলো তোমার টাকা উঠিয়ে নিই।
হ্যারি ভাবছিল তার যদি আরো আটটা চোখ থাকত। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখ চারদিকে ঘুরতে লাগলো। দোকানপাট, লোকজন সবকিছু সে দেখার চেষ্টা করল। হ্যারি দেখল তার বয়সের কিছু ছেলে ঝাড়ুর দোকানের জানালার গ্লাসের ওপর তাদের নাক ঘষে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যারি তাদের একজনকে বলতে শুনল–দেখো, নিউ নিম্বাস টু থাউজেন্ড। এটাই সবচে দ্রুতগামী। বিভিন্ন দোকানে পোশাক, দূরবীন ও রূপার অদ্ভুত যন্ত্রপাতি বিক্রি হচ্ছিল। যা হ্যারি এর আগে কখনোই দেখেনি। তারা হাঁটছেন। এক সময় হ্যাগ্রিড বললেন–আমরা গ্রিংগটসে এসে পড়েছি।
তারা একটা তুষার শুভ্র ভবনের সামনে এলো যা অন্যান্য ছোট দোকানগুলোর অনেক উঁচুতে। এক ব্যক্তি তাদের স্বাগতম জানাল। এই তো গবলিন, হ্যাগ্রিড বললেন। লোকটা উচ্চতায় হ্যারির চেয়েও খাটো। তার চেহারায় একটা ধূর্ত ভাব আছে। খাড়া খাড়া কুঁচলো দাঁড়ি। হ্যারি লক্ষ্য করল যে লোকটির আঙুল ও পা অনেক লম্বা। এবার তার দরোজার দ্বিতীয় অংশে এল দরোজার ওপর একটি কবিতা ঝোলানো ছিল।
আগন্তুক, তুমি মন দিয়ে শোনো
লোভের পাপের কি শাস্তি হয় জানো?
যারা শুধু নেয়, অর্জন করে না কিছুই
তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে, মানো।
আমাদের মেঝের নিচে যে গুপ্তধন
সেগুলো তোমার নয়, তবুও বলি
যদি তুমি হুঁশিয়ার না হও, করো চুরি
তাহলে দেখবে সেখানে
গুপ্তধন ছাড়াও আছে ‘অন্য কিছু’।
আমি বলেছি না, তোমারও এ ধরনের একটি পোশাক নিতে হবে। হ্যাগ্রিড বললেন।
দুজন গবলিন তাদের বো করল। তারা তখন মর্মরের তৈরি বিশাল হল রুমে। আরো প্রায় একশ গবলিন উঁচু চেয়ারে বসেছিল। তারা বড় বড় লেজারে লিখছিল, তামার দাঁড়িপাল্লায় মুদ্রার ওজন নিচ্ছিল এবং চোখে লাগানো ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে মূল্যবান পাথর পরীক্ষা করছিল।
সুপ্রভাত হ্যাগ্রিড বললেন–হ্যারি পটারের সিন্দুক থেকে কিছু টাকা ওঠাবার জন্য আমরা এখানে এসেছি।
আপনাদের কাছে কি চাবি আছে?
হ্যাঁ, আছে হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন। তারপর তিনি তার পকেট খালি করে সমস্ত জিনিসপত্র কাউন্টারের ওপর রাখতে শুরু করলেন। হ্যারি ডানদিকে লক্ষ্য করে দেখল যে গবলিনটা একটা মুক্তার স্তূপ ওজন করছে।
পেয়েছি সোনালী চাবিটা হাতে পেয়ে হ্যাগ্রিড বললেন।
গবলিন চাবি পরখ করে বলল–ঠিক আছে।
হ্যাগ্রিড বেশ গুরুত্বের সাথে বললেন–আমি ডাম্বলডোরের কাছ থেকে একটি চিঠিও নিয়ে এসেছি। চিঠিটা ইউ–নো–হোয়াট, সাতশত তের ভল্টের বিষয়ে। গবলিন মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়ল। ঠিক আছে। গবলিন হ্যাগ্রিডকে চিঠিটা ফেরত দিয়ে বলল–ভলটে যাবার জন্য আমি এই বলে গবলিন গ্রিপহুককে ডাকলো।
গ্রিপহুকও একজন গবলিন। হ্যাগ্রিড সব ডগ–বিস্কুট পকেটে ভরার পর তারা দুজন গ্রিপন্থককে অনুসরণ করল।
৭১৩ নং ভলটে ইউ–নো–কী করে? হ্যারি জানতে চাইল। হ্যাগ্রিড জবাব দিলেন–আমি তোমাকে তা বলতে পারব না। এগুলো হোগার্টসের গোপনীয় জিনিস। ডাম্বলডোর বিশ্বাস করে আমাকে যতটুকু কাজ দিয়েছেন-এর বাইরে আমার কিছু করার নেই।
গ্রিপহুক তাদের জন্য দরোজা খুলে দাঁড়ালো। ভেতরে ঢুকেই হ্যারি বিস্মিত। ঘরে মশাল জ্বলছে। যাওয়ার রাস্তাটা সরু এবং নিচের দিকে ঢালু হয়ে চলে গেছে। মেঝেতে বেশকিছু রেল লাইন। গ্রিপহুক বাঁশি বাজাতেই একটা ছোট বাহন তাদের সামনে এল। তারা চড়ে বসলো। অবশ্য হ্যাগ্রিডের বিরাট শরীর নিয়ে একটু কষ্ট হল উঠতে। বাহনটা ছুটতে শুরু করল। খুব দ্রুত ছুটছে। আঁকা–বাঁকা পথ দিয়ে। হ্যারি ডাইনে বায়ে উডয়দিকে তাকাল। কিছুই দেখতে পেল না শুধু বাহনটার চলার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। বাহনটা সবুজ আলোকিত এক স্থানে থামলো। হ্যাগ্রিডের পা ঝিম ঝিম করছিল, সে দাঁড়াতে পারছিলো না, পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। সরু পথের দেয়ালে একটা দরজা। গ্রিপহুক দরজার তালা খুললো।
ঘরের ভেতর রাশি রাশি স্বর্ণমুদ্রা। রূপোর স্তম্ভ। পাহাড়প্রমাণ ছোট ছোট ব্রোঞ্জের টুকরো। এবার স্মিত হেসে হ্যাগ্রিড হ্যারির উদ্দেশ্যে বললেন-এসবই তোমার। স্বর্ণগুলো হলো গ্যালিওন আর রূপোগুলো হলো সিকেল।
সব আমার, বলেন কী? অবিশ্বাস্য। হ্যারির কণ্ঠে বিরাট বিস্ময়।
মুদ্রাগুলো ব্যাগে ভরার ব্যাপারে হ্যাগ্রিড হ্যারিকে সাহায্য করলেন, হ্যাগ্রিড বললেন–সিন্দুক আর ভল্টে আরো আছে।
গ্রিপহুক বলল–ধীরে ধীরে সেগুলোও পাবে।
তারা আগে বাড়তে লাগল। তারা যতই আগে বাড়ল ততই তারা শীত অনুভব করতে লাগল।
মাটির নিচে একটা ছোট নদী। ওরা নদী অতিক্রম করল। তাদের সামনে সাতশ তের নাম্বার ভল্ট, কিন্তু চাবি ঢোকাবার ছিদ্র নেই। গ্রিপহুক বলল–সরে দাঁড়াও। বলেই তার লম্বা আঙুল ভল্টের গায়ে লাগিয়ে দিল। ভল্টের দেয়াল সরে গেল। গ্রিপহুক বলল–গ্রীংগট গবলিন ছাড়া অন্য কেউ হলে দরোজা ওদের শুষে নিত এবং ওরা এর ভেতর আটকে যেত।
হ্যারি জিজ্ঞেস করল–কেউ ঢুকেছে কিনা তা দেখার জন্য তুমি কতদিন পর পর পরীক্ষা কর।
গ্রিপহুক জবাব দিল–দশ বছরে অন্তত একবার। গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা নির্ভর ভল্টে কিছু অসাধারণ ঘটনা ঘটে থাকে। হ্যারি নিশ্চিত ছিল, এখানে অসাধারণ কিছু সে দেখবে। ঘর ভর্তি অলংকার। হঠাৎ একটা ছোট প্যাকেটের ওপর তার দৃষ্টি পড়ল। হ্যাগ্রিড মাটি থেকে প্যাকেটটা তুলে তার কোটের ভেতর রাখল। হ্যারি জানতে চাইল, ভেতরে কী!
চলে এসো। এই মাটির তলার বাহনে। হ্যাগ্রিড কললেন–আমার সাথে এখন কোন কথা বলবে না।
আমার এখন কোন কথা না বলাই ভাল। হ্যারি ভাবছে এত ভারী বস্তা ভর্তি টাকা পয়সা নিয়ে তারা কোথায় এবং কিভাবে যাবে।
একটা বাহনে করে ঝড়ের গতিতে তারা গ্রীংগটসের বাইরে চলে এলো। বাইরে তারা সূর্যের আলোর রেখা দেখতে পেল।
তার এখন জানার দরকার নেই কত গ্যালিওনে এক পাউন্ড হয়। এত অর্থ নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে যা সারা জীবনেও সে দেখেনি–সারা জীবনে ডাডলিও দেখেনি।
এখনও হ্যারির ইউনিফর্ম কেনা বাকি। মাদাম মালকিনের দোকানে কি ইউনিফর্ম পাওয়া যাবে?
মাদাম মালকিনের সঙ্গেও আলাপ হলো।
অবশ্যই পাওয়া যাবে। তিনি বললেন–হোগার্টস থেকেও একটি ছেলে এসেছে, তাকেও ইউনিফর্ম দিয়েছি।
সেই ছেলেটার সাথেও হ্যারি আলাপ করল। তাদের মধ্যে বেশ কিছু কথাবার্তা হলো। স্কুল সম্পর্কেও তাদের মধ্যে কথা হলো। তার কাছ থেকে একটা নাম শোনা গেল–কিডিচ। কিডিচ কী? কিডিচ এক ধরনের খেলা। খেলাটা অনেকটা ফুটবল খেলার মতো। এ খেলায় কিছু ঝাড়ু লাগে।
ফ্লারিশ ব্লট নামে এক বইয়ের দোকান থেকে হ্যারির জন্য স্কুলের বই কেনা হলো। এই দোকানে বইয়ের স্ট্যাকগুলো সিলিং পর্যন্ত পৌঁছেছে।
চামড়া বাঁধাই বিরাট বিরাট বই, সিল্ক কাপড়ের বাঁধাই ডাকটিকেটের মতো ক্ষুদ্র বই, বিচিত্র রকমের প্রতীক চিহ্নের বই আবার কিছু বই আছে যেখানে কিছুই ছাপা নেই। এমনকি ডাডলির মতো ছেলে–যে মোটেও বই পড়ে না, এসব বই পাওয়ার জন্য সেও নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেত।
বই দেখতে দেখতে এক জায়গায় হ্যারি থেমে গেল, বইটা ছিল শাপ ও প্রতিশাপ… কারসেস এন্ড কাউন্টার কারসেস। বন্ধুদের কিভাবে বোকা বানানো যায় বা শত্রুদের কিভাবে ক্ষতি করা যায়। লেখক অধ্যাপক ভিনডিকটাস ভিরিডিয়ান।
হ্যাগ্রিড এখান থেকে হ্যারিকে প্রায় ঠেলেই সরালেন। আমি দেখছিলাম, ডাডলিকে অভিশাপ দেয়ার কিছু পাওয়া যায় কিনা।
মন্দ নয়, আমি বলবো না যে আইডিয়াটা খারাপ হ্যাগ্রিড বললেন, কিন্তু তুমি তো বিশেষ কোন কারণ ছাড়া মাগলদের ওপর শাপ দিতে পারবে না। এটা নিষিদ্ধ। তাছাড়া তুমি এ কাজ পারবেও না। এর জন্য তোমাকে যথেষ্ট পড়াশোনা করতে হবে।
হ্যাগ্রিড হ্যারিকে স্বর্ণের তৈরি কলড্রন কিনতে দেননি। তবে জাদুপানীয় তৈরির উপাদান মাপার নিক্তি ও ভাঁজ করা যায় এমন একটি স্কেল কিনে দিলেন। এরপর ওরা গেল ওষুধের দোকানে–ফার্মেসিতে। পচা ডিম ও পচা পাতাকপির বিশ্রী গন্ধ এক ধরনের ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করেছে সেখানে। মেঝেতে পিপা ভর্তি কিছু সরু জিনিস, জারভর্তি ভেষজ, শুকনো শিকড় ও চকচকে উজ্জ্বল গুড়ো পদার্থ দেয়ালে লাইন করে সাজানো।
পাখার বান্ডেল, ছাদ থেকে নিচে পর্যন্ত ঝোলানো সুতোয় বিষধর সাপের দাঁত, পাখির হাড়ের তৈরি অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি। হ্যারি নিজে একুশ গ্যালিওন দিয়ে ইউনিকর্নের দুটো রূপার শিং কিনলো।
দোকান থেকে বের হয়ে হ্যাগ্রিড হ্যারির জন্য ক্রয় তালিকা বের করলেন। ও, তোমার জন্মদিনের উপহার তো কেনা হয়নি। হ্যারি লজ্জা পেয়ে বলল, না এর কোন প্রয়োজন নেই।
না, এ কথাটা তোমাকে আমার বলার দরকার ছিল না। তোমার জন্য ব্যাঙ কিনবো না। এটা কেউ এখন পছন্দ করে না। বিড়ালও না। বিড়াল থাকলে আমার হাঁচি হয়। তোমার জন্য কিনবো পেঁচা। এটা এখনকার ছোটরা খুব পছন্দ করে। খুবই প্রয়োজনীয়। চিঠিপত্রও নিয়ে যায়। তোমার অন্য জিনিসপত্রও নিয়ে যেতে পারবে।
আউল এমপোরিয়ামটা ছিল সম্পূর্ণ অন্ধকার। পেঁচার ঝটপটানির শব্দ। একটা সাদা পেঁচাকে একটা সুন্দর বড় খাঁচায় ভরে হ্যারি অগ্রসর হতে লাগল।
কুড়ি মিনিট পরে ওরা আউল এমপোরিয়াম অতিক্রম করে শেষ দোকানে পৌঁছল। সরু এবং নোংরা রাস্তা। দরোজায় লেখা আছে অলিভ্যান্ডার্স–সুন্দর জাদুদণ্ড প্রস্তুতকারক, স্থাপিত খ্রি. পূ. ৩৮২।
তারা দোকানের ভেতর প্রবেশ করার সাথে সাথেই দোকানের বেশ ভেতর থেকে টুং করে ঘণ্টা বাজল। কেউ আসলেই এটা বাজে। ভেতরটা খুবই ছোট, বসার জন্য একটা মাত্র চেয়ার। সেখানে হ্যাগ্রিড বসলেন। সেখানকার নিস্তব্ধতা হ্যারির কাছে মনে হলো যেন কোন পাঠাগারে তারা প্রবেশ করছে। ছোট ছোট বাক্সে সিলিং পর্যন্ত বই। ধুলো জমেছে। পিন পতন নিস্তব্ধতা। গুড আফটারনুন শব্দ কানে ভেসে আসায় হ্যারি চমকে উঠল। হ্যাগ্রিডও চমকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। এক বৃদ্ধ লোক তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার চোখ দুটো চাঁদের আলোর মত জ্বল জ্বল করছে।
***
আহ্ হা, দোকানে বৃদ্ধ লোকটি হ্যারিকে বললেন–হ্যাঁ, হ্যারি আমি ভাবছিলাম–তোমার সাথে শিগগিরই আমার দেখা হবে। তোমার চোখ ঠিক তোমার মায়ের মতো। মনে হচ্ছে যেন গতকালই তিনি এখানে এসেছিলেন। তার জাদুদণ্ড কিনছেন। জাদুকাঠির দৈর্ঘ্য ছিল সোয়া দশ ইঞ্চি।
তোমার বাবা মেহগনি কাঠের জাদুকাঠি পছন্দ করতেন। তার কাঠির দৈর্ঘ্য ছিল ১১ ইঞ্চি।
মি. অলিভাল্ডার হ্যারির কপালের বিদ্যুৎ চমকানোর সাদৃশ্য কাটা দাগে তার লম্বা ও সাদা আঙ্গুল স্পর্শ করলেন। তারপর বললেন, আমি দুঃখিত, যে জাদুর কাঠি এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমিই বিক্রি করেছি। সাড়ে তের ইঞ্চি লম্বা খুবই শক্তিশালী এই কাঠি ভুল মানুষের হাতে পড়েছিল। আমি যদি জানতাম এই জাদুকাঠিটা পৃথিবীতে কি করতে যাচ্ছে…।
তিনি সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হ্যারির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তার চোখ পড়লো হ্যাগ্রিডের দিকে, রুবিয়াস। রুবিয়াস হ্যাগ্রিড! কি ভাল লাগছে তোমাকে দেখে… ওফ, ষোল ইঞ্চি, একটু বাঁকা, তাই না?
জী স্যার, ওটা তা-ই ছিল, হ্যাগ্রিড বললেন।
ওটা খুবই ভাল জাদুকাঠি ছিল। তুমি যখন বহিষ্কৃত হলে তখন ওরা ওটাকে দুটুকরো করে দিয়েছিল, ঠিক তাই না। মি. অলিভান্ডার পেছন ফিরে বললেন।
হ্যাঁ, তারা দু টুকরো করেছিল। পদচারণা করতে করতে হ্যাগ্রিড বললেন খণ্ডগুলো অবশ্য আমার কাছেই আছে। কথাটা বলে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
কিন্তু তুমি তো ওগুলো এখন ব্যবহার করো না?
মি. অলিভান্ডার বেশ জোর দিয়ে বললেন।
না স্যার—হ্যাগ্রিড দ্রুত উত্তর দিলেন।
হ্যারি লক্ষ্য করলো হ্যাগ্রিড যখন কথা বলছেন, তখন তিনি খুব শক্ত করে তার গোলাপী ছাতা আঁকড়ে ধরেছিলেন।
তারপর মি. অলিভান্ডার হ্যারির দিকে ফিরে বললেন। এখন কি ধরনের জাদুর কাঠি চাই তোমার? তিনি মাপ নেওয়ার জন্য তার পকেট থেকে রূপোর দাগ দেওয়া লম্বা মাপের ফিতা বের করলেন। তিনি হ্যারিকে মাপলেন, কাঁধ থেকে আঙ্গুল, তারপর কব্জি থেকে কনুই, কাঁধ থেকে ভূমি, কনুই থেকে বগল ও মাথা চক্রাকারে। তিনি যখন মাপ নিচ্ছিলেন তখন বলে চলছিলেন, প্রত্যেকটি অলিভান্ডার জাদুর কাঠিতে শক্তিশালী জাদুর পদার্থ থাকে মি. পটার। আমরা ইউনিকর্নের চুল, ফিনিক্সের লেজ ও ড্রাগনের হার্টস্ট্রিং ব্যবহার করি। তবে সব জাদুকাঠি এক হয় না। যেমন সব ইউনিকর্ন, ড্রাগন বা ফিনিক্স সমান হয় না। এটা নিশ্চিত যে তুমি এর চেয়ে ভাল জাদুকাঠি আর কোথাও পাবে না। এক সময় হঠাৎ করে হ্যারি দেখলো মাপার ফিতাটি নিজে নিজেই তার মাপ নিচ্ছে। মি. অলিভান্ডার তখন বিভিন্ন তাক খুঁজে বাক্স নামাচ্ছিলেন। এটাই তোমার জন্য ভাল হবে। মি. অলিভান্ডার বললেন, পরীক্ষা করে দেখ। বীচ কাঠ এবং ড্রাগন হার্টস্ট্রিং-এর তৈরি। নয় ইঞ্চি লম্বা। সুন্দর এবং বাঁকানো যায়। এটা নিয়ে ঢেউয়ের মত নাড়াও।
হ্যারি কাঠিটি নিয়ে যেই একটু ঢেউ খেলালো এবং কোন কিছু অনুভব করার আগেই মি, অলিভান্ডার দ্রুত তার হাত থেকে কাঠিটি কেড়ে নিলেন। না-এটা দেখ! এবনি গাছের কালো কাঠের এবং ইউনিকর্ন চুলের, সাড়ে আট ইঞ্চি। দেখ, চেষ্টা কর।
হ্যারি চেষ্টা করে। একের পর এক কাঠি দিয়েই যাচ্ছেন মি. অলিভান্ডার। হ্যারি বুঝতেই পারে না, ঠিক কোনটার জন্য মি. অলিভাণ্ডার অপেক্ষা করছেন। উঁচু টুলটিতে একের পর এক জাদুকাঠি জমে এক বড় স্তূপে পরিণত হলো। মি. অলিভান্ডারের যেন কোন কষ্টই হচ্ছে না, আনন্দেই একের পর এক জাদুরকাঠি তাক থেকে নামাচ্ছেন আর হ্যারিকে দিয়ে চেষ্টা করছেন।
আমরা ঠিক কাঠিটাই পেয়ে যাব।
তিনি স্বগতোক্তি করলেন। হ্যাঁ বোধহয় এটাই–বেরি গাছের কাঠ মাঝখানে ফাঁপা এবং ফনিক্স পাখির পাখা, এগার ইঞ্চি, সুন্দর ও বাঁকানো। যায়।
হ্যারি জাদুর কাঠিটা হাতে নিল। সে তার আঙ্গুলে হঠাৎ করে তাপ অনুভব করলো। কাঠিটা সে তার মাথারও উঁচুতে উঠালো এবং শো শো করে নিচে নামালো, কাঠিটির প্রান্ত থেকে তারা বাতির মতো লাল ও সোনালী আলো বিভূতির মতো বিচ্ছুরিত হলো, ঘরের দেয়াল আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। হ্যাগ্রিড তালি দিয়ে উঠলেন। মি. অলিভান্ডার চিৎকার করে উঠলেন, ওহ, ব্রাভো, খুব ভালো, ঠিক… ঠিক… কি আশ্চর্য… তিনি হ্যারির জাদুর কাঠিটি বাক্সে ভরলেন, এবং বাদামী কাগজে মোড়াতে মোড়াতে বিড় বিড় করে বললেন, কি অদ্ভুত… কি অদ্ভুত…
আপনি আশ্চর্য হলেন কেন? হ্যারি জিজ্ঞেস করলো। মি. অলিভান্ডার হ্যারির দিকে বিষণ্ণভাবে তাকালেন আমার স্মরণ আছে, প্রত্যেকটি জাদুকাঠি যা এ পর্যন্ত আমি বিক্রি করেছি, মি. পটার। প্রত্যেকটি জাদুকাঠিই। তোমার জাদুকাঠিতে যে ফিনিক্স পাখিটার লেজের পালক দেওয়া হয়েছে সেই পাখিরই আর একটা পালক–শুধু আর একটাই মাত্র। আশ্চর্যজনক, তোমার ভাগ্য নির্ধারিত ছিল এই জাদুদন্ডটাতেই এই জোড়ার অপরটা তোমার কপালের এই দাগের কারণ।
হ্যাঁ–সেটাই, সাড়ে তের ইঞ্চি। সত্যিই কি আশ্চর্যভাবে এটা হলো। আমার স্পষ্ট স্মরণ আছে এর অপরটি কোন জাদুকর কিনেছিলেন। আমি তোমার কাছে অনেক বড় কিছু আশা করি মি. পটার… বড় কিছু… যিনি অপরটি কিনেছিলেন নিশ্চয়ই তিনি বড় মহান কিছু করেননি। তিনি বড় ধরনের সাংঘাতিক খারাপ কাজ করেছিলেন।
হ্যারি কেঁপে উঠলো। মি. অলিভান্ডারকে তার খুব একটা পছন্দ হয়নি। জাদুর কাঠিটার জন্য সে স্বর্ণের সাত গ্যালিওন দিল এবং মি. অলিভান্ডার মাথা নিচু করে অভিবাদন জানিয়ে তাদের বিদায় দিলেন।
বিকেলে আকাশে সূর্য যেন নিচু হয়ে ঝুলছিল। ওরা ডায়াগন এলি থেকে বেরিয়ে এল সেই লিকি কলড্রন অতিক্রম করে। পথে হ্যারি কোন কথা বলল না। আশপাশের লোকজনের দিকেও তাকায়নি।
ব্যাগ কাঁধে তুলে হ্যাগ্রিড বললেন–ট্রেন ধরার আগে খাবার জন্য কিছু সময় আছে।
হ্যাগ্রিড হ্যারির জন্য একটি হ্যামবার্গার কিনলেন। তারা প্লাস্টিকের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। হ্যারি চারদিকে তাকাচ্ছে। সবকিছু তার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে।
হ্যারি সব কিছু ঠিক আছে তো? হ্যাগ্রিড জানতে চাইলেন। হ্যারি নিজকে ঠিক প্রকাশ করার ভাষা পাচ্ছিল না। এই প্রথম সে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ জন্মদিন পালন করেছে। সে হ্যাম্বারগারে কামড় দিল।
একটু থেমে হ্যারি বলল–আমার কাছে সবকিছু অপূর্ব লাগছে। লোকজন, লিকি কলড্রন, অধ্যাপক কুইরেল, অলিভান্ডার সবই অপূর্ব। কিন্তু আমি তো জাদুবিদ্যার কিছুই জানি না। কীভাবে তারা আমার কাছে থেকে বড় কিছু আশা করেন। আমি বিখ্যাত, কিন্তু আমি জানি না–কেন আমি বিখ্যাত–আমার বাবা মা যে রাতে মারা যান সে রাতে কি ঘটেছিল। টেবিলের অপর প্রান্তে হ্যাগ্রিডের ভ্রূ ও দাঁড়ি ভেদ করে একটি সদয় স্মিত হাসির রেখা দেখা দিল।
হ্যাগ্রিড তাকে অভয় দিয়ে বললেন–হ্যারি, তুমি চিন্তা করো না। তুমি দ্রুতই সব জানতে পারবে। সবাইকে হোগার্টসে প্রথম থেকেই শুরু করতে হয়, তুমি সেখানে ভালোই করবে। আমি জানি এটা কঠিন। তবে, তোমাকে সেখানে ভিন্নভাবে দেখা হবে, তোমার কাছে বেশি… আশা করা হবে, এটা সব সময় কঠিন। তবে হোগার্টসে তোমার সময় ভালোই কাটবে।
হ্যাগ্রিড হ্যারিকে ট্রেনে উঠতে সাহায্য করলেন। এই ট্রেনে করেই হ্যারি ডার্সলিদের পরিবারে ফিরে যাবে। বিদায় নেয়ার আগে হ্যাগ্রিড হ্যারিকে একটা খাম দিয়ে বললেন, হোগার্টসে যাবার জন্য তোমার টিকিট, পহেলা সেপ্টেম্বর–কিংস ক্রস, এটা ওয়ানওয়ে টিকেট। ডার্সলি পরিবারে যদি তোমার কোন সমস্যা হয় পেঁচার মাধ্যমে তুমি আমাকে চিঠি দিও।
তোমার সাথে শিগগিরই দেখা হবে।
ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করল। যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ হ্যারি হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে রইল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now