বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

হিমুর পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণ

"স্মৃতির পাতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Mujakkir Islam (০ পয়েন্ট)

X স্মৃতিচারণ ----------------- হিমুর পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ হুমায়ূন আহমেদ . . . . . কলকাতা থেকে দেশ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত হয়৷ একটা পত্রিকা কতদূর ক্ষমতাধর তা দেশ পত্রিকা না দেখলে আমি জানতাম না৷ বলা হয়ে থাকে যেকোনো অগা মগা বগা লেখককে এই পত্রিকা আসমানে তুলে দিতে পারে৷ মহান লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে৷ আবার সত্যিকারের মহান কোনো লেখককেও ধরাশায়ী করতে পারে৷ এই পত্রিকায় কারও লেখা ছাপা হওয়ার মানে (বিশেষ করে শারদীয় সংখ্যায়) লেখক হিসেবে কপালে স্থায়ী সিল পড়ে যাওয়া৷ এই সিলের কালি অলেপনীয়, ধুলেও যাবে না৷ কপালে জ্বলজ্বল করতে থাকবে৷ এক সকালে দেশ পত্রিকার এক প্রতিনিধি আমার বাসায় উপস্থিত৷ তার সঙ্গে নানা গল্প হচ্ছে৷ গল্প তিনি করছেন আমি শুনছি৷ আমি ক্লাসে যাব, দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ ভদ্রতার খাতিরে বলতেও পারছি না৷ হাজার হলেও বিদেশি মেহমান৷ এক পর্যায়ে ভদ্রলোক বললেন, আমরা আপনার একটা উপন্যাস শারদীয় সংখ্যায় ছাপাব৷ তবে দেশে ছাপাব নাকি আনন্দবাজারে ছাপাব, নাকি সানন্দায় ছাপাব তা বলতে পারছি না৷ সাগরময়দা ঠিক করবেন৷ ভদ্রলোক হয়তো ধারণা করেছিলেন তার কথা শুনে আনন্দে আমি এমন লাফ দেব যে সিলিংয়ে মাথা ঠেকে যাবে৷ আমি তা না করে শুকনো গলায় বললাম, হুঁ৷ ভেবে দেখি৷ কী ভাববেন? পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কত বড় সুযোগ৷ আমি ঠাণ্ডা মাথায় বললাম, ভাই আমি সুযোগ সন্ধানী মানুষ না৷ আমি লেখক৷ লেখক কখনো সুযোগের সন্ধান করে না৷ সুযোগ লেখকদের সন্ধান করে৷ তার মানে আপনি লিখবেন না? আমি বললাম, শুধুমাত্র দেশ পত্রিকা যদি তার শারদীয় সংখ্যায় লেখা ছাপে তাহলেই পাণ্ডুলিপি পাঠাব৷ দেশ পত্রিকা ছাড়া না৷ ভদ্রলোক মোটামুটি হতভম্ব অবস্থাতেই উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, যাই৷ নমস্কার৷ আমি ধরেই নিয়েছিলাম এই বিষয়ে আর কিছু শুনব না৷ আশ্চর্যের ব্যাপার, পনেরো দিনের মাথায় দেশ পত্রিকার সম্পাদক চিঠি দিয়ে জানালেন তারা আমার একটি উপন্যাস শারদীয় দেশ পত্রিকায় ছাপাতে চান৷ হিমুকে নিয়ে লেখা একটা উপস্যাস পাঠালাম৷ ছাপা হলো৷ পরের বছর আবার চিঠি এবারও তারা একটি উপন্যাস ছাপাবেন৷ পাঠালাম আরেকটা হিমু৷ পর পর ছয় বছর কিংবা সাত বছর আমি শারদীয় দেশ পত্রিকায় লেখা পাঠিয়েছি৷ বেশির ভাগই হিমুবিষয়ক রচনা৷ পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা আমার সাহিত্য প্রতিভা (?) সম্পর্কে কোনো ধারণা পেয়েছেন কি না জানি না৷ হিমু বিষয়ে ভালোই ধারণা পেয়েছেন৷ তার প্রমাণও পেলাম৷ কলকাতায় গিয়েছি কোনো এক বইমেলায়৷ সে দেশে চেহারা দেখে আমাকে কেউ চিনবে না, কাজেই লেখকসুলভ নকল গাম্ভীর্য নিয়ে হাঁটাহাঁটি করার প্রয়োজন নেই৷ আমি মনের সুখে আড্ডা দিচ্ছি, হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে একজন আমার পা ছুঁয়ে বলল, দাদা আমি হিমু৷ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ধুতি পরা হিমু দেখছি৷ পাঞ্জাবি হলুদ রঙের৷ পায়ে জুতা নেই – খালি পা৷ লক্ষণ বিচারে হিমু তো বটেই৷ আপনি কত দিন ধরে হিমু? দুই বছরের উপর হয়েছে দাদা৷ আমি বললাম, পাঞ্জাবির কি পকেট আছে? পকেট নেই৷ টাকা-পয়সা রাখেন কোথায়? ভদ্রলোক পাঞ্জাবি উঠিয়ে দেখালেন, কেমারের কালো ঘুনসির সঙ্গে কাপড়ের ব্যাগ লাগানো – টাকা-পয়সা সেখানেই থাকে৷ দাদা, আমি দুজনের ভক্ত৷ আপনার এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসের৷ আপনাদের দুজনের ছবি ঠাকুরঘরে আছে৷ আমি চমৎকৃত৷ সাত বছর দেশ পত্রিকায় লেখালেখির কারণে যদি কারও ঠাকুরঘরে ঢুকে যেতে পারি সেটা কম কী? গলায় সুর থাকলে গাইতাম অকত অধম জেনেও তো তুমি কম করে কিছু দাওনি৷ বিদেশে বেশ কিছু হিমুর দেখা পেয়েছি৷ বিদেশের হিমুরা কঠিন প্রকতির৷ একশ পার্সেন্ট খাঁটি ভেজালবিহীন হিমু৷ জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের হিমুর কথা বলি৷ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা৷ বরফ পড়বে পড়বে করছে, এখনো পড়া শুরু করেনি৷ এই ঠাণ্ডায় খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবি পরে একজন উপস্থিত৷ গাল ভর্তি হাসি দিয়ে বলল, স্যার আমি হিমু৷ কতদিন ধরে? তিন বছরের বেশি হয়েছে৷ দেশেও হিমু ছিলাম৷ ছেলেটা এমনভাবে কথা বলছে যে হিমু একটা ধর্ম৷ সে ধর্ম পালন করছে৷ এর বেশি কিছু না৷ আমি হিমু ধর্ম প্রচারক৷ গত বইমেলায় এক কাণ্ড ঘটল৷ মধ্যবয়স্ক একজন ভিড় ঠেলে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, স্যার, আমি ঠিক করেছি মার্চের তিন তারিখ থেকে হিমু হব৷ হিমু হওয়ার নিয়মকানুন কী? আমি বললাম, মার্চের তিন তারিখ থেকে কেন? আমার জন্মদিন মার্চের তিন৷ এখন স্যার নিয়মকানুন বলেন৷ আমি নিয়মকানুন কী বলব? ভদলোকের দিকে তাকিয়ে আছি৷ কী বলব ভেবে পাচ্ছি না৷ আমাকে উদ্ধারের জন্য অন্যপ্রকাশের কমল এগিয়ে এল৷ সে গম্ভীর গলায় বলল, নিয়মকানুন সব বইয়ে দেওয়া আছে৷ বই পড়ে জেনে নিন৷ হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে হাঁটবেন৷ এইটাই প্রাথমিক বিষয়৷ প্রতি পূর্ণিমায় জোছনা দেখতে জঙ্গলে যেতে হবে? গেলে ভালো হয়, তবে দু-একটা মিস হলেও ক্ষতি হবে না৷


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৩০ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • মোহাম্মদ মফিজুল হোসেন
    User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    wowwow অসাধারণ হয়েছে

  • SIAM The Deadman
    User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    স সাইম ভাই হাই

  • হিমুর রূপালী রাত্রি
    User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে
    ১৯ শে জুলাই থেকে আমি পুনরায় হিমুগিরি শুরু করব।ঐদিন আমার জন্মদিন আর হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু দিন।করোনা ব্যাটার জন্য কিছুদিন হিমুগিরি বন্ধ রাখতে হয়েছে।১৯ শে জুলাই থেকে আবার শুরু করবই করব।