বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ছোটবেলায় হাই জাম্প না দিলেও নিজাম সাহেব ভালই লাফ দিলেন। রিকশার পাটাতনে গড়িয়ে পড়লেন। মোতালেব তাকে সীটে টেনে তুললো। নিজাম সাহেব বললেন–রিকশায় প্যাসেঞ্জার উঠলে আমরা কি করব?
মোতালেব হাই তুলতে তুলতে বলল, কোন সমস্যা নেই। তখন আমরা প্যাসেঞ্জারদের কোলে বসে থাকব। ভূত হবার এও এক মজা। মানুষের কোলে বসে বসে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।
মানুষের কোলে বসে জীবন কাটিয়ে দেবার ব্যাপারটা নাজিম সাহেবের খুব রুচিকর মনে হল না। তিনি কিছু বললেন না। রিকশার হুড ধরে বসে রইলেন। হঠাৎ তার মনে হল, তিনি পিঠে এক ধরনের ব্যথা অনুভব করছেন। অস্বস্তিকর ব্যথা। যেন মেরুদণ্ড ধরে কেউ একজন হালকাভাবে তাকে পেছন দিকে টানছে। ব্যথাটা শুরুতে হালকা থাকলেও রিকশা যতই এগুচ্ছে ততই বাড়ছে। মোতালেবকে ব্যাপারটা বলবেন কি না তিনি বুঝতে পারছেন না। ভৌতিক ব্যাপার হয়ত সে অনেক ভাল জানে। রিকশায় চড়লে সব ভূতদেরই হয়ত পিঠে ব্যথা করে। এটাই নিয়ম। ব্যথাটা বাড়ছে, কিছুতেই যাচ্ছে না। ব্যথা কমাবার জন্যে নিজাম সাহেব খুক খুক করে কাশলেন। মোতালেব মাথা ঘুরিয়ে বিস্মিত গলায় বলল, কাশছেন কেন?
কাশি আসছে এই জন্যে কাশলাম। ভূতদের কি কাশা নিষেধ?
কাশা নিষেধ না। আপনার কাশির ধরনটা ভাল না। পিঠে ব্যথা আছে?
নিজাম সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, হ্যাঁ আছে।
মেরুদণ্ডে?
জ্বি।
সর্বনাশ! লাফ দিয়ে নামুন দেখি রিকশা থেকে।
নিজাম সাহেব রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নামলেন। ভীত গলায় বললেন, কি হয়েছে?
সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে। পিছন দিকে দেখেন।
নিজাম সাহেব পিছন ফিরে দেখলেন–তার পেছনে রঙিন এক ফিতা–ফিতার এক মাথা তার পিঠে লাগছে, অন্য মাথা বহু দূর চলে গেছে।
মোতালেব বিরক্ত হয়ে বলল, কিছু বুঝতে পারছেন?
জি না।
আরে ভাই, আপনি তো এখনো মরেন নাই। মনে হয় ডাক্তার আপনার জীবন বাচানোর চেষ্টা করছে। কিছু নির্বোধ ডাক্তার আছে না, রোগীকে বাঁচাবার জন্যে জীবন দিয়ে দেয়। একজন মরতে চাচ্ছে মরতে দাও–তা দেবে না। বাঁচিয়ে তুলবে। বাচিয়ে তুলে লাভটা কি?
নিজাম বললেন, ফিতার ব্যপারটা বুঝতে পারছি না।
আপনার রক্ত মাংসের শরীরের সঙ্গে এই ফিতা লাগানো। ফিতায় টান পড়ছে, তার মানে হল আপনাকে ঐ শরীরে ঢুকতে হবে। ব্যথা, যন্ত্রণা, চিকিৎসা চলবে–ওই, শরীরে ঢুকতে চান?
বুঝতে পারছি না।
কোন দরকার নাই। যা আছেন ভাল আছেন। দেখি চেষ্টা করে ফিতা ছিড়তে পারি কিনা। আপনিও হাত লাগান। আরো কয়েকজন ভূত পেলে ভাল হত–একসঙ্গে টানাটানি করে ছিড়ে ফেলতাম। আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন–আমি দেখি কয়েকজনকে নিয়ে আসি। খবর্দার, যাবেন না। এই টেলিফোনের খামা ধরে দাঁড়ান। দু হাতে শক্ত করে খামা ধরে থাকুন, নয়ত ফিতার টানের চোটে উঠে চলে যাবেন। মহাবিপদে পড়লাম দেখি।
নিজাম সাহেব টেলিফোনের খামা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। পিঠের টান বাড়ছে। তার একবার মনে হল খামাশুদ্ধ তাকে বুঝি উড়িয়ে নিয়ে যাবে, এমন টান। ইতিমধ্যে মোতালেব তিন-চারজন ভূত নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। তারা ফিতা ছেড়ার চেষ্টা করছে। লাভ কিছু হচ্ছে না। এক সময় টান প্রবল হল–নিজাম সাহেব টেলিফোনের খামা ছেড়ে দিলেন। তার মনে হল তিনি ঝড়ের মত ছুটে যাচ্ছেন। ভয়াবহ অবস্থা! মানুষ (নাকি ভূত?) এমন বিপদে পড়ে!
নিজাম সাহেবের মাথার অপারেশন শেষ হয়েছে। নিউরোলজির সার্জেন্ট প্রফেসর ইফতেখারুল ইসলাম–হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে বললেন, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে বলেই আমার ধারণা। রোগীর বেঁচে থাকার কথা। অবশ্যি চব্বিশ ঘণ্টা পার না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না–তারপরেও আমি আশাবাদী। চোখের মণিতে আলো ফেলে দেখুন তো রিফ্লেক্স একশান কেমন?
একজন ডাক্তার নিজাম সাহেবের চোখের মণিতে আলো ফেললেন। চোখের মণি বড় বড় হয়ে আছে। নিজাম সাহেবের ভূত তার শরীরের কাছেই বসা। তিনি শরীরের ভেতর ঢোকার তীব্র আকর্ষণ বোধ করছেন–কোন দিক দিয়ে ঢুকবেন বুঝতে পারছেন না।
স্যার।
নিজাম সাহেব চমকে তাকিয়ে দেখেন মোতালেব চলে এসেছে। বোধহয় দৌড়ে এসেছে। হাপাচ্ছে।
নিজাম সাহেব মোতালেবের দিকে তাকালেন। মোতালেব বলল, খামাখা আর বসে আছেন কেন? এরা তো মনে হয় আপনাকে বাচাবেই–শরীরে ঢুকে পড়ুন।
কোন দিক দিয়ে ঢুকব?
চোখের মণি দিয়ে ঢুকে পড়ুন। চোখের মণি দিয়ে ঢোকাটা সহজ হবে।
ভয় লাগছে তো।
কচি খোকা নাকি, ভয় লাগছে! ভাবীর সঙ্গে দেখা হয়েছে?
না।
সেকি, হাসপাতালের বারান্দায় লম্বা হয়ে পড়ে আছে। ভাবীর সঙ্গে আপনার ছোট মেয়েটাও আছে। বেচারী বোধ হয় খুব বাপ ভক্ত। কান্নাকাটি যে ভাবে করছে বলার না।
খুব কাঁদছে?
আহারে, শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট। ঢুকে পড়ুন তো।
নিজাম সাহেব তার চোখের মণির ভেতর দিয়ে নিজের শরীরে ঢুকলেন।
যে ডাক্তার চোখের মণির উপর আলো ফেলছিল সে আনন্দিত গলায় বলল, রিফ্লেক্স একশান ভাল। চোখের মণি ছোট হচ্ছে। এ যাত্রা বোধ হয় টিকে গেল। ট্রাকের নিচে পড়েও বেঁচে যায়–এই প্রথম দেখলাম। একেই বলে ভাগ্য।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
✪AS✪ABID☯
User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বে