বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আইন জালুত - এক চিতাবাঘের গর্জন

"যুদ্ধের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান জাহিন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (০ পয়েন্ট)

X আইন জালুতের প্রান্তর। এটি সেই প্রান্তর যেখানে মঙ্গোলদের অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যেখানে থেমে গিয়েছিল মঙ্গোলদের বিজয় রথ।এ প্রান্তরেই তারা তাদের সমকক্ষ কাউকে খুঁজে পেল আর এই প্রান্তর পরিণত হল ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন। তাইতো জার্মান প্রফেসর মেয়ার বলেছেন,” তা ছিল ইতিহাসের অন্যতম এক নিষ্পত্তিমূলক সন্ধিক্ষণ; মঙ্গোলদের অপরাজয়েতার উপাখ্যান ভেঙ্গে গেল বরাবরের জন্য, থেমে গেল উত্তর- আফ্রিকা পানে তাদের পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণ প্রয়াস, নিশ্চিত হল ইসলামের চলমান অস্তিত্ব এবং সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে প্রতিষ্ঠিত হল মামলুকদের সার্বভৌমত্ব।” এটা সে সময়ের ঘটনা যখন গোটা সভ্য জগতই মঙ্গোলদের হামলায় কেঁপে উঠেছিল।যখন মঙ্গোল নেতা চেঙ্গিস খানের পৌত্র হালাকু খানের নির্মমতা ও নৃশংসতায় তৎকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানী বাগদাদ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, বিলীন হয়ে যায় শত শত বছর ধরে সঞ্চিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাণ্ডারগুলি।শুধু বাগদাদ নয় একে একে তারা দখল করে নেয় দামেস্ক ও আলেপ্পো নগরী। যেখানে তাদের পৌঁছুবার সম্ভাবনা কম ছিল সেখানেও তাদের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই ঐতিহাসিক গীবন তার Decline and fall of Roman empire নামক বিখ্যাত গ্রন্থে লিখেছেন-“সুইডেনের অধিবাসীরা রাশিয়ানদের মারফত মঙ্গোল ঝাঞ্চার খবর শুনে এতটাই ভীত হয়ে পড়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত মঙ্গোলদের ভয়ে তারা তাদের চিরাচরিত অভ্যাস পরিত্যাগ করে ইংল্যান্ডের সমুদ্রকূলে মৎস্য শিকার বন্ধ করে দিয়েছিল।” কোন কিছুই যেন মঙ্গোলদের অগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করতে পারছিল না। Cambridge history of Medieval age নামক বইয়ের লেখকগণ লেখেন-“মঙ্গোলদের আক্রমণ প্রতিরোধ করা ছিল মনুষ্য-শক্তিবহির্ভূত। মরু প্রান্তরের সমস্ত বাধা-বিপত্তি তাদের কাছে হার মানে। পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, সমুদ্র ও আবহাওয়াগত প্রতিবন্ধকতা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী কিছুই তাদের যাত্রা পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। যে কোন দুর্গই তাদের আক্রমণের মুখে টিকতে পারত না।নিপীড়িত ও মজলুম কোন আদম-সন্তানের ফরিয়াদই তাদের হৃদয়ে দাগ কাটত না।…………” কিন্তু মঙ্গোলদের প্রতিরোধ যে মামলুকদের মাধ্যমে হবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি। কারণ তারা পূর্বে ছিল দাস ,যারা কিছুকাল পূর্বে মিশরের শাসনভার গ্রহণ করে। তাই তাদের কাছ থেকে এতটা আশা করা যাচ্ছিল না যে, তারা মঙ্গোলদের অগ্রাসনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। হঠাৎ করেই যেন তখন ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন সাহসী ও বীর সুলতান কুতুয ও তার সেনাপতি বাইবার্স। এই সেই বাইবার্স যিনি পরবর্তীতে সুলতান হয়েছিলেন, যার দুঃসাহসিকতা, ক্ষীপ্রতা, চতুরতা আর বীরত্ব দেখে পশ্চিমা জগত থমকে গিয়েছিল তাই তারা বাইবার্সের নাম দিয়েছিল দ্য প্যান্থার। ১২৬০ সালের বসন্তের শেষের দিকে বাতাস গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিচ্ছিল। সুলতান সায়ফুদ্দিন কুতুয তার কায়রোর প্রসাদে অবস্থান করছিলেন। এসময় তার কাছে পৌঁছল মঙ্গোল যুবরাজ হালাকু এর ভয়াবহ বার্তা।যাতে লেখা ছিলঃ”রাজাদের রাজা মহান খান এর কাছ থেকে থেকে এসেছে এই বার্তা মামলুক কুতুয এর কাছে যে কিনা আমাদের তলোয়ার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পালিয়েছে। তোমরা প্রাচীর ভেঙ্গে আত্মসমর্পণ কর। তাহলে তোমাদের শান্তি দেওয়া হবে আর নাহলে যা ঘটার তাই ঘটবে যা ঘটেছে অন্যান্য দেশে। তোমরা আমাদের সেনাবাহিনীর নির্মমতা থেকে মুক্তি পাবে না। তোমরা কোথায় পালাবে? কোন রাস্তা ব্যবহার করবে আমাদের হাত থেকে পালানোর জন্য? আমাদের ঘোড়াগুলো দ্রুতগামী, তীরগুলো ধারালো, তলোয়ারগুলো বজ্রসম, আমাদের হৃদয়গুলো পাহাড়ের মত কঠিন,আমাদের সৈন্যসংখ্যা বালুর কণার মত অগণিত।কোন দুর্গ আর বাহুবল আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা আমাদের বিরুদ্ধে কোন কাজে লাগবে না।……যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত হওয়ার আগেই ভেবে নাও কি করবে, তোমরা যদি আমাদের প্রতিরোধ করতে চাও তাহলে দুঃসহ বিপর্যয় দেখার জন্য প্রস্তুত হও। আমরা তোমাদের মসজিদগুলোকে ভেঙ্গে টুকরো-টুকরো করে ফেলব তখন তোমরা তোমাদের খোদার দুর্বলতা অনুভব করতে পারবে। আমরা তোমাদের শিশু এবং বৃদ্ধদেরকে একত্রিত করে হত্যা করব। বর্তমানে তোমরাই আমাদের একমাত্র শত্রু যাদের বিরুদ্ধে আমার সৈন্যদের মার্চ করা বাকি আছে।” সুলতান তার সভাসদদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইলেন। মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে ভয় এবং ক্রোধে দ্বিধা বিভক্ত ছিল কায়রো। অধিকাংশ মামলুক আত্মসমর্পণের পক্ষে ছিল।তারা বলল তাতারদের সাথে তাদের কোন তুলনা হতে পারে না।কিন্তু নির্ভীক সুলতান এ কাপুরুষচিত আত্মসমর্পণের পক্ষে ছিলেন না। তিনি দরাজ কণ্ঠে বললেন-“কেউ যদি আমার সাথে নাও যায় তবুও আমি একাই তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব।” আর তার সাথে ছিল তার সেনাপতি বাইবার্স। যিনি ছিলেন গোল্ডেন হোর্ড থেকে পালানো একজন তাতার। যুদ্ধ অনিবার্য করতে তিনি মঙ্গোল দূতকে হত্যা করেছিলেন। ক্রুদ্ধ হালাকু খান সৈন্য সমাবেশ করতে লাগল একই সময় সুলতান কুতুয তার পুরানো শত্রুদের সাথে শান্তিচুক্তি করতে লাগলেন। সুলতান বুঝতে পেরেছিলেন মঙ্গোলরা যদি আগে-ভাগেই তার উপর চড়াও হয় তাহলে দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে এবং স্বাধীনতা রক্ষা করা কষ্টকর হবে। অতএব, মিসরের অভ্যন্তরে থেকে আত্মরক্ষার পরিবর্তে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে সিরিয়ায় মঙ্গোলদের ওপর আক্রমণাত্মক হামলা পরিচালনা করাকেই তিনি সমীচীন মনে করলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই হালাকু খানকে ইরানে ফিরে যেতে হয় কারণ মহান খান মঙ্গকি তখন মৃত্যু বরণ করেন।তিনি তার সেনাপতি কিতাবুকার কাছে সেনা বাহিনীর দায়িত্ব দিয়ে ইরানে চলে যান। কিতাবুকা ছিলেন একজন খ্রিস্টান।তাই অনেক ক্রুসেডার নেতারা তার সাথে মিত্র বাহিনী রূপে যোগদান করল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জেরুজালেমকে আবার তাদের দখলে নেওয়া। ১২৬০ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর(৬৫৮ হিঃ,২৫ রমজান) গাযার কাছে আইন জালুতে উভয় বাহিনীই পরস্পরের মুখোমুখি হয়। মামলুক বাহিনী মুখোমুখি হল কিতাবুকার ডিভিশনের।উভয় পক্ষেই ছিল প্রায় ২০০০০ মত সৈনিক। এ এলাকা সম্পর্কে মামলুকদের ভাল জ্ঞান ছিল।তাই সুলতান কুতুয তার অধিকাংশ সৈনিককে পার্বত্য এলাকায় লুকিয়ে রাখলেন। আর বায়বার্সকে অল্প কিছু সৈনিক দিয়ে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে মাঠে নামালেন, যাতে মঙ্গোলদের প্রলুব্ধ হয়ে তার ফাঁদে পড়ে। দুই বাহিনীই কয়েক ঘণ্টা নির-বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ করতে লাগল। বায়বার্স তার সৈন্যদের দিয়ে মার এবং সরে পড় এই কৌশলে যুদ্ধ করছিল। তার এ কৌশল অবলম্বন করার কারণ ছিল, প্রথমত মঙ্গোলদের উত্তেজিত করা আর দ্বিতীয়ত তার অধিকাংশ সৈনিককে অক্ষত রাখা।যখন মঙ্গোলরা একটি বড় আক্রমণ শুরু করল তখন বাইবার্স পিছু হটতে লাগলেন। তিনি মঙ্গোলদের সেই পার্বত্য এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হলেন যেখানে মামলুক সৈন্যরা গাছ-পালা আর পাহাড়ের আড়ালে ওত পেতে ছিল। বাইবার্স পুরো মঙ্গোল বাহিনীকে মামলুক সৈন্যদের এম্বুসের মাঝে নিয়ে আসলেন।কিতাবুকা বাইবার্সের চাল বুঝতে পারেনি, তাই সে তার সৈন্যদের পলায়নপর বাইবার্সের পিছনে ছুটতে আদেশ দিলেন। যখনই মঙ্গোলরা পার্বত্য এলাকার কাছে গিয়ে পৌঁছল ,তখই মামলুক সৈন্যরা তাদের সামনে আবির্ভূত হল। মামলুক অশ্বারোহীরা তীর ছোড়া শুরু করল। এবার মঙ্গোল সৈন্যরা আবিষ্কার করল যে, মামলুক সৈন্যরা চতুর্দিক থেকেই তাদেরকে ঘিরে রেখেছ। মঙ্গোলরা এবার খুব ভংকরভাবে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করল। তাদের আক্রমণে মামলুকদের বাম বুহ্য প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এবার এ পথ দিয়েই মঙ্গোলরা পালানোর রাস্তা খুঁজতে চেয়েছিল। কিন্তু সুলতান কুতুয যখন এ অবস্থা দেখলেন তিনি তার মাথার হেলমেট ছুড়ে ফেলে দিলেন, ফলে তার সৈন্যরা তাকে চিনতে পারল। তিনি তখন তার সৈন্যদের উত্তেজিত করতে সক্ষম হলেন। মামলুক সৈন্যরা এবার যুদ্ধের ময়দানে ভংকররূপে আবির্ভূত হল; ফলে যুদ্ধের মোড় মামলুকদের দিকে সরে আসল। মঙ্গোল সেনাপতি কিতাবুকা নিহত হল আর পরাজয় বরণ করল মঙ্গোলরা। এভাবে “তাতারীদের পরাজয় অসম্ভব”- এই প্রবাদ বাক্য মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। আইন জালুতের যুদ্ধের পর বাইবার্স সুলতানের পক্ষ হয়ে মঙ্গোলদের তাড়িয়ে দিলেন জেরুজালেম থেকে।জেরুজালেম মামলুকদের অধিকারে আসল।মামলুকরা মঙ্গোলদের বিতাড়িত করল দামেস্ক এবং আলেপ্পো থেকে।এরপর মঙ্গোলরা আর কখনো এই এলাকায় আসার সাহস দেখায়নি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৪৩ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Rehnuma Ahmed
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    ভালো লাগলো।

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    আপনার গল্প এর নাম কি

  • M.H.H.RONI
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    হুমম বলো???

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    রনি ভাই ....

  • M.H.H.RONI
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    gjgjgj

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    কিছু না ভাই gj

  • M.H.H.RONI
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    মফিজ কি হলো??

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    gjgj

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    gj

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    gj

  • M.H.H.RONI
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    এগুলোই এখন সান্তনা।খুউব ভালো লিখছ ভাইgj

  • Mofizul
    Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে
    অনেক সুন্দর গল্প gj: