বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রূপ আর বাবা মা’র গল্প

"স্মৃতির পাতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Rocky (০ পয়েন্ট)

X এখানে হুট করেই সন্ধ্যা নামে। মুরং পাড়ার ওপাশে শেষ ঝুপড়িটার ধার ঘেঁষে সূর্যটা হারিয়ে যায়। আঁধার নেমে এসে ঢেকে দেয় পাহাড়ের মাঝখানে দূরত্বটা। অনেক গুলো জোনাকি হঠাত করেই জেগে ওঠে আলোর মিছিল নিয়ে। একটা তক্ষক নিজের মনেই ডেকে ওঠে, একটানা, অনেকক্ষন ধরে। তারপর কোত্থেকে একটা ব্যাঙ, অনেক গুলো নাম না জানা পোকা থেকে থেকে ডেকে চলে। পৃথিবীর এক প্রান্ত যেন, অদ্ভুত নীরব, অনেকটা অন্যরকম। সন্ধ্যা নামে এই পাহাড়ে। একই রকম করে প্রতিদিন। হয়ত বদলে যায় অন্য ঋতুতে, একটুখানি। কিন্তু দুই পাহাড়ের মাঝখানে হুট করে সন্ধ্যা নেমে আসার এই গল্পটা বোধকরি একই থাকে প্রতিদিন, আজন্মকাল ধরে। একটা অন্যরকম গল্প আছে, রোজ সন্ধ্যায় একজন বৃদ্ধ আসে, হাতে ধুনচি নিয়ে। নির্জন এইখানে। ওই আমার একমাত্র কথা বলার সময়। সৌম্যকান্তি একজন মানুষ, ঘুরে ঘুরে ধুপ দিয়ে যায়, আমি একটু একটু করে ওর গল্প শুনি। কত রকম গল্প, ছেলেটার বড় হওয়ার গল্প, বিশ শতক জমি কেনার গল্প, এই বয়সে ঐ হতচ্ছাড়া পাহাড়ে চড়ার গল্প আর হঠাত করেই সেই বহুদূর সমতলে ফেলে আসা পাঁচ ক্লাশে পড়া মেয়েটার জন্য মন কেমন করার গল্প।বুড়ো বয়সের সন্তানের জন্য মায়াটা বোধ হয় একটু বেশিই টানে। ওর অনেক কাজ। গুচ্ছের কাজ ফেলে আমার সাথে এত্ত প্যাঁচাল পাড়ার সময় কই ওর। ধুপের ধোঁয়ায় ঘরটাকে ঢেকে ফেলে ও চলে যায়। এইপাশ থেকে দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে আমি আবার নিজের মত, সাপ, ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ শুনি। রাত বাড়ে। আমার কাছে শব্দেরা ফিরে আসে বহুদিন পর।অনেক অনেক দিন পর। ফেলে আসা শহরের কত্তগুলো বছর, জীবন আর জিবিকারা শক্ত সব ইংরেজির জালে খুব করে জাপ্টে ধরেছিল। নিজের মত করে ভাবার একরত্তি সময় হয়নি আমার। কাল রাতে অনেক দিন পর সেই একযুগ আগের মত লম্বা সময় কথা হল রুপার সাথে।যদিও সেই সব দিনের মত নতুন নতুন স্বপ্ন বোনার বদলে সংসারের খুটিনাটি, রুপের নিত্য নতুন দুষ্টুমির খবর আর সামনের দিনগুলোতে কি করা যায় তাই নিয়ে, তবুও… হোক না। অনেক অনেক চিঠি লেখার দিন ছিলো তখন। দু’টাকার হলুদ খামে দিন তিনেকের পথ পেরিয়ে কত কত স্বপ্নেরা তখন পৌঁছে যেত একই ঠিকানায়। তারপর বদলে গেল সবকিছু। ঐ সময়ের হাজার স্বপ্নের একটা ছিল … আমাদের বাসার কোন এক কোনে একটা বাক্স থাকবে, চিঠির বাক্স। হয়নি, অনেক কিছুই আর শেষতক ঠিকমত হয়ে ওঠে না। একছাদের নিচের দিন গুলোতে এত এত ব্যস্ততা কত কিছু কেড়ে নেয়। ইচ্ছেগুলো বুদবুদ হয়ে মনের ভেতর বাড়তে থাকে, তারপর একদিন ঐ ব্যস্ততা বাড়তে থাকা বুদবুদটাকে বাস্তবতার সূচে আলতো করে হুল ফোটায়। প্রেয়সীরা ভুল বোঝে, আগেতো এমন ছিলে না তুমি। আমি আর আমরা এখানে অনাহুত, সাপ, ব্যাং আর ঝিঁঝিঁ পোকারা মানতে চায় না আমাদের সহাবস্থানের প্রস্তাব। নিজের খুশিতে একে বেকে পথ চলতে চলতে তাই হিসহিস শব্দ করে সাপেরা পথ আগলে দাড়াতে চায়। চারদিকে কার্বলিক এসিডের শিশিগুলো প্রবল চেষ্টায় আটকে রাখে বসতিতে ওদের অবাধ আনাগোনা। টর্চের আলো ফেলে লাল মাটির পথ ধরে যেতে যেতে একটু ভয় ভয় লাগে। লাগুক না, ওদের ডেরায় এসে অনাহুত অতিথির এটুকু ভয় ন্যায্য প্রাপ্য। একটা ময়না আছে, ওই দূরে, শেষ টিলাটার ওপরে। কথা জানে।ভাত খায়, এত্তগুলো মরিচ মাখানো ভাত।হলুদ রঙের খাচাটার ভেতর দিনমান বসে থাকে আর থেকে থেকে রকি নামে কাউকে ডেকে ওঠে। সামনে গিয়ে দাড়ালে চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। চিনতে চেষ্টা করে। একবার তাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি রকি নই, বুঝে ফেলে। আমি জানি, সামনের দিনগুলোতে ও আমাকে চিনতে পারবে, মুখ ঘুরিয়ে নেবে না। একটা মাত্র ময়নার কথা বললাম, আরো আছে, তিনটা তিতির। একটা পুরুষ আর দু’জন নারী।এদের গল্পটা এখনো বুঝিনি ভাল করে, তবে তিতির সাহেবের রাজকীয় চলন বলন শব্দের চেয়ে ছবিতে ভালো ফুটবে বোধহয়। ভোর হলে একটা লম্বা পথ পাড়ি দেব কাল। রুপের সাথে কথা হয়নি সারাদিন। আমার দুষ্টু ছেলেটাকে অদ্ভুত সুন্দর শোনায় টেলিফোনে, অনেক মায়া ওর আমার আর ওর মা’র জন্য। আমাদেরও……রুপের জন্য। আজকের খবরগুলো বড় অন্য রকম। মন খারাপ করা। লেখক: রেশাদ (১৯৯৩ -৯৯)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৮৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now