বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

খুন রহস্য

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান সঞ্জয় গোস্বামী জ্যোর্তিময় (০ পয়েন্ট)

X খুন রহস্য **প্রথমত** খুনটা এত নিঁখুত ভাবে করা হয়েছিল যে বোঝাই যাচ্ছিল না এটা খুন। খুনিই বুঝতে পেরেছিল যে এটা একটা খুন। থানার দারোগা বাবুও রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা উল্লেখ করে। তবে আরেকজনও বুঝতে পেরেছিল যে এটা খুন। কারণ সে খুনটা নিজ চোখে দেখেছিল। খুনি অত্যন্ত চতুর। খুনি যে খুনটা রাগের মাথায় করেছে সেটা না। তার মাথায় মূলত একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতি সপ্তায় একটা করে খুন না করলে নার্ভাস ব্রেকডাউনের শিকার হবে। খুনি একজন ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চেকআপ করত। সেই ডাক্তার কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে যে এটা খুন নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু। সেইজন্যেই পোস্টমার্টেমের ফলাফলের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেই খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় সপ্তার মাথায় আবার খুন। খুনি যে ধরা ছোঁয়ার বাইরে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুনি এতই চতুরতার সাথে খুন দুটি করেছে যে খুন দুটোর মধ্যে যোগ সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ভেবেছে খুন দুইটি আলাদা দুজনের হবে। দারোগা বাবুর রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়ে গেলেও গোয়েন্দাদের অনুরোধে লাশটি দ্বিতীয় লাশটি পোস্টমার্টেম করতে দিয়েছেন। এই খুনের দিন দুঁয়েক পর এলাকার একজন তার ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগালেন। যিনি ক্যামেরা লাগিয়েছেন তিনি খুনটার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তিনি কারও কাছে ঘটনাটি প্রকাশ করতে পারেননি। আবার ঘটনাটা এমনভাবে ঘটে যে বলতে গেলে তিনিই দোষী সাব্যস্ত হবেন। তাই তিনি চেপে যাওয়াই যুক্তিসঙ্গত মনে করলেন **দ্বিতীয়ত** কয়েকদিন পর এলাকার দুই শখের গোয়েন্দা তদন্ত শুরু করল। তারা এলাকার কৃতী ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে অনার্স পড়ছে। একজনের চোখে চশমা। সে "চাশমিশ ভাই" নামে পরিচিত। আরেকজন পরিচিত "গণিত ভাইয়া" নামে। দুইজনই এলাকায় এসেছে দিন পাঁচেক হলো। খুনের ঘটনা ঘটার আগের দিন তারা বাড়ি আসে। আর স্বভাবতই কৌতূহল থেকেই তারা তদন্ত শুরু করে। চাশমিশ ভাই এর বাড়ি তাদের হেড কোয়ার্টার। গণিত ভাইয়ার বিশ্বাস ডাক্তার খুন আর এই খুন দুটোই একই ব্যক্তির করা। কিন্তু চাশমিশ ভাই সম্পূর্ণ দ্বিমত। পুলিশের কাজ আগে কয়েকবার সাহায্য করায় এখন তাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে তথ্য নেওয়ার উপর ক্লিয়ারেন্স আছে। সেইজন্যে তারা পোস্টমার্টেমের ফলাফল দুটো দেখার সুযোগ পেয়েছিল। দুটোতেই নিশ্চিত ভাবে বলা হয়েছে দুটোই খুন। গণিত ভাই চাশমিশকে বলল, "তুই এখানকার বিষয় গুলো দেখে রাখ। আমি শহরে যাচ্ছি ডাক্তার খুনের ব্যাপারে তথ্য জানতে।" চাশমিশ ভাই বলল, "আমিও যাই তোর সাথে?" গণিত ভাই তখন বলল, " না, থাক। আমি একাই যাই। আজ রাত ১১:০০টায় আমার টিকেট কাটা হয়েছে।" গণিত ভাই চাশমিশের হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল এইগুলো কিনে রাখিস। রাত দশটার সময় গণিতকে বিদায় দিল চাশমিশ। গণিত যখন বেরিয়ে গেল তখন তার গমন পথের দিকে চিন্তিত ভাবে তাকিয়ে থাকল চাশমিশ। কেমন যেন একটা খটকা লাগছে। অতপর ড্রয়ার থেকে টাকা বাহির করে জেনারেল স্টোরের দিকে চলল আপেল কিনতে। পাঁচ মিনিটের পথ। এক ডজন আপেল কিনে নিয়ে বাড়ি আসল এগারোটার সময়। তার খটকাটা দূর হচ্ছে না। দ্বিতীয় খুন হওয়ার পর সাত দিন পার হয়ে গেল, আজ অষ্টম দিন। এখনও কোনো সুরহা হলো না। পকেট থেকে সেলফোন বের করে গণিতকে ফোন দিল। : "কি রে? গাড়িতে উঠেছিস?" - "তা উঠেছি বৈকি। তুই কি করিস?" : "এখন ঘুমাতে যাব। যা জানবি ফোন দিয়ে জানাস। ওকে?" - "হুম।" : "তাহলে রাখলাম।" - "আচ্ছা।" **তৃতীয়ত** সকাল সাড়ে আটটার সময় জনপ্রিয় একটা গানের ব্যাক মিউজিক বেজে উঠল। ঘাড় ফিরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকাল চাশমিশ। থানার দারোগা বাবু ফোন করেছেন। ফোন ধরেই চাশমিশ বলল," জ্বী, বলেন দারোগা বাবু।" - আবার তো একটা খুন হয়েছে। : বলেন কি! - হ্যাঁ। আমার তো মনে হয় খুনি একটা প্যাটার্ন ধরে খুন করছে। প্রতি এক সপ্তা পর পর একটা করে খুন হচ্ছে। : আপনি একটু বসেন। আমি থানায় আসছি। তারপর একসাথে ঘটনাস্থলে যাব। - আসো তাহলে। ফোন কেটে দিল দারোগা বাবু। দ্রুত প্যান্ট আর শার্ট পরেই থানায় চলল চাশমিশ। দারোগা বাবু চাশমিশের জন্য বসে ছিল। ও আসতেই বলল চল পুলিশ অনেক আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি শুধু তোমার জন্য বসে ছিলাম। খুন হয়েছে সে, যে তার বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছে। খুনটা করা হয়েছে ছুরি দিয়ে। পাঁচ ইঞ্চি ব্লেডের পুরো সাড়ে তিন ইঞ্চি ব্লেডই গলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে খুনি। লাশটা থানায় পাঠিয়ে দিয়েই ঘরে কোনো মেটিভ আছে কিনা খুঁজে দেখতে শুরু করল তারা। সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে দেখ তারা। কিন্তু ক্যামেরায় কোনো মেমোরি নেই। তাহলে খুনি হয়তো মেমোরি খুলে নিয়ে গেছে। ক্যামেরাটা খুলে নিয়ে আরও কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করে তারা থানায় চলে আসল। থানায় এসে দারোগা বাবু বলল, "বুঝলে চাশমিশ, খুন গুলো এতো সর্তকতার সাথে করা হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।" চিন্তুিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল চাশমিশ। "আগে গণিতকে খবর দিয়ে নিই। ও আসুক তারপর তদন্ত শুরু করব আমরা।" গণিতকে ফোন করলেন দারোগা বাবু, "তোমার ওদিকের খবর কি?" - " এইতো ভালোই।" : " এদিকে ঘটনা ঘটে গেছে। আবার একটা খুন হয়েছ।" - " তাই! কে খুন হয়েছে?" : "ঐযে যে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল।" - " কখন?" : " সম্ভবত গতকাল রাত্রে। আজ সকালে লাশ দেখলাম। তো তুমি কখন আসছ?" - " এই দিন দুয়েক পর। চাশমিশকে বলে দিয়েন।" : "আচ্ছা। রাখছি তাহলে।" - "আচ্ছা।" ফোনটা কেটে দিলেন দারোগা বাবু। এবার চাশমিশের দিকে ফিরলেন, "আমাদের আরও দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে। গণিত এখনও দুইদিন পর ফিরবে। তুমি এ কদিন বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নাও। বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরে এল চাশমিশ। কয়েকদিন তাহলে তার আর তেমন কোনো কাজ নেই, শুধুই অপেক্ষা। **চতুর্থত** পরদিন সকালেই হাতে একটা ফাইল নিয়ে বাস থেকে নামল গণিত। নেমেই চাশমিশের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াল ততক্ষণে ফাইলটা ব্যাগের মধ্যে চালান হয়ে গেছে। বেল বাজাতেই দরজা খুলল চাশমিশ। খুলেই অবাক হল, "তুই যে বললি আরও একদিন দেরি হবে?" "বলেছিলাম। কিন্তু কোনো কিছুই পেলাম না তাই চলে আসলাম।" বলল গণিত। ঘরে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে দুই কাপ কফি, চারটা টোস্ট আর একটা ডিম সাবাড় করে নাস্তা শেষ করল। ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে চাশমিশকে বলল, "তুই এখন বাড়ি থাক। আমি একটু থানা থেকে ঘুরে আসি।" মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল চাশমিশ। থানার উদ্দেশ্যে পা বাড়াল গণিত। "এবার কি বুঝলেন আপনি?" জিজ্ঞেস করল গণিত। "শুধু এই কাগজ পড়েই প্রমাণ হয় না যে ও খুনি ।" উত্তর দিলেন দারোগা। সিসিটিভি যে রুমে ছিল সেই রুমের খাটের নিচ থেকে পাওয়া একটা সাউন্ড রেকর্ডার এগিয়ে দিল গণিত, "এবার তাহলে এটা শোনেন।" সাউন্ডরেকর্ডারে ইয়ারফোন লাগিয়ে প্লে করে মিনিট দশেক শুনলেন দারোগা বাবু। তারপর মুখ খুললেন দারোগাবাবু, "হুম..বুঝলাম।" একটু থেমে আবার বললেন, "চলো তাহলে পাকড়াও করে আসি।" "সঙ্গে আরও জন পাঁচেক পুলিশ নিয়েন।" বলল গণিত। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে দশটা বাজে। ও বাড়ি থেকে বেরিয়েছে সেই আটটার সময়। ওয়ারেন্ট নিয়ে দারাগোবাবু ও গণিত সাথে চারজন পুলিশ নিয়ে খুনি ধরতে বাহির হলো। "চাশমিশ, বেরিয়ে এসো। তোমাকে এ্যারেস্ট করা হলো।" চেঁচিয়ে যাচ্ছেন দারোগা বাবু। কিন্তু বাড়িতে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকল তারা। বাইরে চারজন পুলিশকে দাড় করিয়ে রেখে আসল। চাশমিশের ঘরে ঢুকে তারা দেখল বিছানার উপর পড়ে আছে নিথর লাশ। নিজের গলায় নিজেই ছুরি চালিয়েছে। সাত ইঞ্চি ধারালো ফলা একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেকপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আর টেবিলের উপর চাপা দিয়ে রাখা ছোট্ট একটা চিঠি। সম্মোধন ছাড়াই শুরু চিঠিটা : "আমি জানতাম তুমিই পারবে বন্ধু। খুঁজে বের করতে পারলে কিন্তু ধরতে পারলো না। খুনগুলো আমিই করেছি। ডাক্তারের রেকর্ড পড়ে তুমি তো নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ কারণটা। আমার মানসিক সমস্যাই মূলত দায়ী। শেষ খুনটা করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু ও যেহেতু আমার দ্বিতীয় খুনটা দেখে ফেলে তাই ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এখন আমি নিজেও সরে গেলাম। ভালো থেকো বন্ধু, বিদায়!"


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৮৯৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ খুন রহস্য (পর্ব ২)
→ খুন রহস্য (পর্ব ১)
→ রহস্যময় খুন
→ রহস্যময় খুন
→ রহস্যময় খুন!

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Rehnuma Ahmed
    Golpobuzz ৪ বছর, ৬ মাস পুর্বে
    Hmm. Nice..gj