বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
--- রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো মেয়ের দিকে তাকাবিনা।
--- আচ্ছা, তাকাবনা।
--- নিচের দিকে তাকিয়ে হাটবি, ডানে বামে তাকিয়ে গাড়ী দেখে তারপর যাবি।
--- আচ্ছা ঠিক আছে।
--- টিফিনের টাকা যেন পকেট থেকে না হারায়, খেয়াল রাখবি।
--- আচ্ছা, খেয়াল রাখব।
--- টিফিন করে ক্লাসে বসে পড়বি, খেলাধুলা করে হাত পা ভাঙ্গার দরকার নেই।
--- আচ্ছা, খেলবনা।
--- এবার কপাল কাছে নিয়ে আয়।
কপাল কাছে নেয়ার পর মা কপালে চুমো দিল। তারপর বলল, "এবার লক্ষ্মী ছেলের মতো স্কুলে যা, স্কুল ছুটি হলে সোজা বাড়ি চলে আসবি।
.
এটা স্কুলে যাওয়ার সময় মায়ের আর আমার প্রতিদিনকার রুটিন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেন কোনো মেয়ের দিকে না তাকাই সেটা বলার একটা বিশেষ কারণ আছে। অামার মা অনেক কষ্টে উনার নাম লিখাটা শিখেছেন। মা লেখাপড়া জানেনা। কিন্তু মায়ের অনেক বড় স্বপ্ন, আমি এলাকার সব ছেলে মেয়ের চাইতে বেশি শিক্ষিত হবো। সেটা বাবাও চায়। আর সেজন্য যেদিন প্রাইমারী ছেড়ে হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাব সেদিন বাবা বলেছিল,
তিনটি কারনে ছাত্রজীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
১, ছাত্র জীবনে টাকার প্রতি লোভ থাকলে।
২, নেশাগ্রস্থ হলে।
৩, প্রেমে-ভালোবাসায় জড়ালে।
অার আমার মা সেজন্য সবকিছু সাবধান করার পাশাপাশি এটাও সাবধান করে দেয় যেন রাস্তাঘাটে কোনো মেয়ের দিকে না তাকাই।
অামার বাবা মা অামার বন্ধুর মত। সবকিছুই সহজভাবে বুঝাবে, সতর্ক করবে। অামার খুব ভালো লাগে।
যখন গাল আর ঠোটের উপর দিয়ে ছোট ছোট লোম গজাচ্ছিল তখন বাবা বলেছিল, খবরদার বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে সেভ করতে যাসনে কিন্তু। তাহলে এই বয়সেই প্রতি সপ্তাহে সেভ করতে হবে। বছর খানেক যাক, সেভ করার বয়স হলে আমরাই তোকে বলব। অামিও চেষ্টা করি বাবা মায়ের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য। সেজন্য এলাকায় আমাকে কিছু বলার আগে বাবা মায়ের কথা বলে। অমুকের ছেলেটা সোনার ছেলে।
.
সংসারের সারাদিনের খাটুনির পর মা ঢুলু ঢুলু চোখে কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে আমার পাশে বসে থাকত, আমি পড়তাম। যখন আমি বলতাম অাম্মু অামার ঘুম পেয়েছে। তখন পাশের রুমে বিছানা করে মশারি টাঙ্গিয়ে দিত। শুয়ে পড়ার সাথে সাথেইতো আর ঘুম আসতনা। প্রতিদিনই যখন চোখ বুজে শুয়ে থাকতাম, মা মশারী সরিয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে কপালে টুপ করে একটি চুমো দিয়ে আসত। মা চুমো দেবার পর আমার চোখে ঘুম আসত। মায়ের সেই চুমোর কত বড় শক্তি সেটা আমি জানি। প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বের হলেও মা কপালে চুমো দিত। জিজ্ঞেস করতাম, মা প্রতিদিন কপালে চুমো দাও কেন? বলত, আমারতো একটি মাত্র ছেলে। তাই কপালে চুমো দেই, যেন অামার ছেলে আমার কাছে অাবার ফিরে আসে।
তো একদিন চরাঞ্চল থেকে নৌকায় ফিরে আসছিলাম। একটি ট্রলার ধাক্কা দিলে নৌকার মাচার উপরের মানুষগুলো নদীতে পড়ে যাই, আমি সহ। ইঞ্জিন চালিত নৌকার সাইটে সবাই সাতরিয়ে ধরতে পারলেও আমি ছিলাম খানিকটা দূরে। প্রাণপন লড়ে সাতার কেটে যাচ্ছি নৌকাটি ধরার জন্য। ইঞ্জিন বন্ধ করলেও গতি কমছিলনা। মনে মনে ভাবতছি, আমি কি আর মায়ের চুমো খেতে পারবনা? এই মাঝনদীতে ডুবে মরব?
হঠাৎ পিছন দিয়ে দুইজন যাত্রী নিয়ে এক স্পীড বোড আসল। অামার কাছাকাছি এসে স্পীডবোড থামিয়ে দিল। সামনে নৌকা ইঞ্জিন বন্ধ করে অপেক্ষা করছিল আর আমি স্পীডবোডে করে সেই নৌকায় পৌঁছলাম।
.
আমাদের এলাকায় একটি ভাঙ্গা রাস্তা ছিল। ২০০৪ এর বন্যায় সে রাস্তা দিয়ে ছোটরা গেলে ডুবে যেত। বড়দেরই বুক পানি ছিল। বাবা আমাকে কাঁধে করে সে জায়গাটুকু পাড়ি দিতেন। একদিন বলেছিলাম, বাবা তুমিতো আমার অনেক বড়। আমি যে তোমার কাঁধে চড়ছি আমার গুনাহ হবেনা? বাবা বলল, পাগল ছেলে। বাবার কাঁধে চড়েইতো ঘোড়া দৌড়াবি। আবারো বললাম, বাবা তোমার কষ্ট হয়না? বলেছিল এই কষ্টটা, এই ব্যথাটা তোর কাঁধে চড়েও আমি দেব। জিজ্ঞেস করেছি, কবে বাবা? বলেছিল, আমি যেদিন মরে যাব সেদিন আমার লাশের খাটটা তোর কাঁধে করে নিয়ে যাবি।
ধুর, পারলামইনা চোখের পানিকে আটকাতে। বাবা মা তার সন্তানকে এত ভালোবাসে কেন? আরো কম ভালোবাসতে পারেনা? তাদের ভালোবাসায় হিংসে হয় আমার।
.
একমাত্র বাবা মা'ই পারে সন্তানের ভাতের থালায় পাতিলের শেষ মাছের টুকরো তুলে দিয়ে বলতে, " আমি একটু আগে খেয়েছি, তুই খেলেই আমার খাওয়া হবে।"
বাবা মা'ই পারে সন্তানের অসুখে রাত জেগে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে বলতে, " আল্লাহ আমার সন্তানের অসুখ আমাকে দিয়ে আমার সন্তানকে ভাল করে দাও। সন্তান দেখে ফেললে বলবে, আমি কাঁদছিনাতো, চোখে কী যেন একটা পড়ছে।
আমি বলছি, তোমার ঘরের বউ তোমাকে ছাড়া ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু তুমি বাইরে থাকলে মায়ের চোখে কোনোদিন ঘুম আসবেনা।
কতদিন কত আস্তে আস্তে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে চেয়েছি, তাও আবার গভীর রাতে। মা পাশের রুম থেকে বলে উঠত, শুভ আইছস???
আবারো পানি আটকাতে পারলামনা চোখের।
.
হ্যা মা, আমি অনেক অনেক ভালো আছি দূর প্রবাসে। শুধু তোমাদের কথা মনে পড়ে আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। এত ভালো ভালো খাবারও তোমাদের হাতে তুলে দেয়া খাবারের কাছে কিছুইনা।
আজ আমার পাশে বাবা নেই। বাবাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি। একটা মরণব্যাধি অসুখ হয়েছিল বাবার। বাচাঁতে পারিনি বাবাকে। কিছুই করতে পারিনি আমি বাবার জন্য। অনেক কেদেঁছি সেদিন। আজও কাদিঁ। বাবাকে দেখতে বড্ড ইচ্ছা করে। অনেক মিস করি তোমায় বাবা।
আমার বাবা নেই। কিন্তু মা আছেন। আমি আমার মা কে ভীষণ ভালবাসি, কখনোই আমার মা কে আমি হারাতে চাই না।
বাবা মা থাকতে তাদের সেবা করুন, তাদের মনে কষ্ট দিয়েননা। কারণ আজকে আপনার যে দিনগুলো গত হয়ে যাচ্ছে, সে দিন গুলা হয়তো আপনি আগামীতে না ও পেতে পারেন। ভালবাসা হয়তো আপনি পাবেন। কিন্তু মায়ের মতো আপনাকে কেউ কখনো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে পারবে না। মায়ের মতো পারবে না কেউ রাত জেগে আপনার জ্বরে পুরে যাওয়া কপালে জলপট্টি দিয়ে দিতে।কিংবা বাবার মতো পারবে না কেউ মনুষত্ব্য ও সাহসীকতার গল্প শুনাতে।একমাত্র বাবা মা ই পারেন তাদের সন্তান কে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে।
আমি তোমাদের এত্তগুলা ভালবাসি মা।
আমি তোমাদের এত্তগুলা ভালবাসি বাবা।
লেখক:- অলিভার কুইন (শুভ)।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
DREAM GIRL
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেSAIMA
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেShalik
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেOliver Queen(ShuvO)
Author ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেOliver Queen(ShuvO)
Author ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেNamika✨
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেOliver Queen(ShuvO)
Author ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেShatu
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেJobayer (super user)
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেTaharim Tayen
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেবকুল রায়
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেIshika
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেবকুল রায়
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে