বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ভেতরটা ফেটে গেলেও বাহির থেকে নিজেকে খুব শক্ত করে রাখছিলাম। ওর দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বলছিলাম,' তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।' কিন্তু মাইশা তো জানে সে আর বাঁচবেনা। তাইতো কেঁদে কেঁদে নিচের বালিশটি ভেজাচ্ছিল। আমি ওর হাতটি ধরে রাখছি খুব শক্ত করে। আমার প্রথম ভালোবাসা আমার সামনে এভাবে শেষ হয়ে যাবে! আমার মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। শান্তনা দেয়ার ভাষা হয়তো আমার নেই কিন্তু এই ক'দিন ওকে আগলে রাখতে তো পারবো। ভাবলাম' এটাই তার জন্য খুবই ভালো হবে।' কিছুসময় পর মাইশা মুখ থেকে অক্সিজেন সরালো। যদিও আমি সরাতে বাঁধা দিয়েছিলাম, কিন্তু সে তো আমার কথা কখনও শুনেনি আজও শুনবে না এটাই স্বাভাবিক। বুঝতে পারছিলাম মহাকষ্টে আছে মেয়েটা! কারণ তার কথাই আমাকে সেটার সাক্ষ্য দিচ্ছিলো। ভাঙ্গা কণ্ঠে বলতে লাগলো,
“জানো রাজ, আমি না আর বাঁচবোনা! ডাক্তার আমার বাবাকে বলছেন আমি শুনেছি। জানো, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, সহ্য করতে পারিনা আমি। আমাকে কি এখান থেকে নিয়ে যাবে তুমি? তোমার কাছে থাকলে একটু শান্তিতে মরতে পারতাম।”
ওর কথাগুলো আমার বুকে এতোটা জোরে আঘাত করলো, আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। মাইশকে জড়িয়ে ধরেই কান্না শুরু করে দিলাম। আশেপাশের মানুষগুলো হা করে তাকিয়ে আছে। আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ সেদিকে নেই। শুধু চেয়ে আছি মাইশার মুখের দিকে। এই কয়দিনে মাইশার মুখটি শুকিয়ে কেমন অচেনা হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে আছে। তবুও আমার সামান্যতম ঘৃণা হচ্ছেনা। আমি এখনও চাই, সে এভাবেই থেকে আমার জীবনে অাসুক! যাকে আমি অনেক ভালোবাসতে চাই।
মাইশা তার শুকিয়ে যাওয়া হাত দিয়ে আমার
মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে লাগলো। আমার কান্না তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে বুঝতে পেরে আমি নিজেকে স্থির করে নিলাম। মাইশা আমাকে তুহিকে ডেকে আনার জন্য অনুরোধ করে। আমি উঠে গিয়ে তুহিকে ডেকে আনলাম। আলগা দাঁড়িয়ে থাকলাম। তুহি মাইশাকে দেখেই বাচ্চাদের মতো ঠোঁট বাকা করেই কাঁন্না করে দেয়। সোজা গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাইশাকে! এ যেন আপন দুই বোন! আমি কাছে গিয়ে তুহিকে মাইশার কাছ থেকে আলগা করলাম। তুহি বসে আছে ওর হাত ধরে। শান্তনা দিচ্ছে মাইশাকে,
“দোস্ত তোর কিচ্ছু হবে না, তুই এমনিতেই ভালো হয়ে যাবি।”(তুহি)
“এই আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি। বাঁচবো! এই চিন্তা করলে আজ তোর হাতে রাজকে তুলে দিতাম না। আমিই আজ তাকে বিয়ে করতাম। জানিস, ওই পাগলটাকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিল? কত আশা ছিল? কত ভালোবাসা ছিল ওর জন্য! সারা জীবন থেকে একটু একটু করে স্বপ্ন দেখেছিলাম তাকে নিয়ে। আমরা বিয়ে করবো, সুন্দর একটা বাসরঘর হবে আমাদের! যেখানে আমি আর ও থাকবো! আমাদের সংসারটা হবে সাজানো গোছানো। আমি সবসময় ওকে জ্বালাবো, মাঝে মাঝে অভিমানও করবো আর সে আমার রাগ ভাঙ্গাবে! আমার একটা ছোট বেবি হবে, তারপর আমরা দুজনেই ওকে ভালোবাসবো। জানিস দোস্ত, আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। খোদা চাননি, আমার স্বপ্ন সত্যি হোক। এখন শুধু একটাই চাওয়া, তোকে বললে তুই রাখবি?”(মাইশা)
“আজ পর্যন্ত তোর কোনো কথা কখনও ফেলিনি, আশা করছি এবারও জীবন দিয়ে হলেও রাখবো।”(তুহি)
“আমার কাছে প্রমিস কর, রাজকে কখনও কষ্ট দিবিনা।”(মাইশা)
“কথা দিলাম, তোর কথার কোনো হের ফের করবোনা। এখন আমার একটা কথা তোকে রাখতে হবে।”(তুহি)
“আমার কি সেই সাধ্য আছে? এখানে শুয়ে আছি, কবে ডাক পাবো আর চলে যাবো বহুদূরে! যেখানে তোরাও কেউ থাকবেনা।৷ আমি কথা কেমনে রাখতে পারি বল?”(মাইশা)
“তুই পারবি, আমি জানি।”(তুহি)
“পারলে অবশ্যই রাখবো। বল?”(মাইশা)
“একটা মিনিটে অপেক্ষা কর, আমি রাজের সাথে কিছু কথা বলে এসে তোর সাথে কথা বলছি।”(তুহি)
তুহি আমার কাছে চলে আসে। আমাকে নিয়ে মাইশার চোখের আড়ালে চলে যায়। তারপর বলে,
“আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি, আশা করি তুমি আমার ডিসিশনকে স্বাগত জানাবে যেহেতু তুমি মাইশাকে ভালোবাসো।”(তুহি)
“বলো। কি ডিসিশন?”
“মাইশাকে আজ বিয়ে করবে তুমি। আর আমি পাশে থেকে তোমাদের বিয়ে দেবো।”(তুহি)
“এটা কি বলছো? মাইশার কি এখন বিয়ে করার কোনো অবস্থা আছে?”
“প্লিজ না করোনা। আমার বান্ধবীটা সারাজীবন তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে। বিয়েটাও এরই মধ্যে অন্যতম। তুমি যদি বিয়েটা করো তাহলে মেয়েটা হয়তো একটু শান্তিতে মরতে পারবে। একমিনিটের জন্য হলেও তোমাকে স্বামী হিসেবে পাবে।”(তুহি)
তুহির কথায় আমি রাজি হয়ে গেলাম। তুহি আমার বাবা-মা ও মাইশার মা-বাবাকেও রাজি করিয়ে ফেলে। এখন মাইশাকে রাজি করানোর পালা। মাইশা তুহিকে কথা দেওয়ায় সে না করতে পারলোনা। তুহি বাহিরে গিয়ে একজন কাজীকে নিয়ে আসে।হাসপাতালের ওয়ার্ডটাকে সুসজ্জিত করে। একটা বিয়েতে যা আয়োজনের প্রয়োজন তুহি সবগুলোই করে। আমার আর মাইশার বিয়ের একজন সাক্ষীও সে হয়। অবশেষে হাসপাতালেই মাইশা আর আমার বিয়েটা হয়ে যায়। আর তার কিছুক্ষণেই মধ্যেই মাইশা একটা হাসি দিয়ে আমার কাছে অনেক দুরে চলে যায়। আমাদের সবাইকে করে দেয় স্তব্ধ! তুহিকে বানিয়ে দেয় পুরো পাগল। যার কারণে আজ পাঁচবছর পরও সে মাইশার জন্য কাঁদে। ওর প্রতি মৃত্যু বার্ষিকীতে সারা দিনরাত কেঁদে কেঁদে সম্পূর্ণ বাসা একাকার করে দেয়। প্রতিদিন সকালে ওর ছবি দেখে দু ফোটা চোখের জল ফেলা আর ছবিটি আঁকড়ে ধরে মিনিটের পর মিনিট থাকা কেবল আমার বউয়ের দ্বারাই সম্ভব! এই পাঁচ বছরের মধ্যে এমন কোনো দিন নেই যেইদিন তুহি মাইশার ছবিটিতে ফুলের মালা দেয়নি! ও এতোটাই ভালোবাসতো তার বান্ধবীকে যার স্মৃতিস্বরুপ আমাদের একমাত্র মেয়ের নামও রেখেছে মাইশা। সে চায়, এই মাইশাকে নিয়েই তার বান্ধবীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখবে, আর মাইশার মনে আঁকা সেই সাজানো গোছানো সংসারটাকে সাজিয়ে তুলবে। আমিও সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
(সমাপ্ত)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
MH2 (Mysterious Some one)
GJ Writer ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বেSIAM The Deadman
User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে★★Samir★★
User ৩ বছর, ১২ মাস পুর্বেআকাশ
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেআকাশ
User ৪ বছর, ৪ মাস পুর্বেMobarak
User ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বেIshika
User ৪ বছর, ৮ মাস পুর্বেতরী
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেSayemus Suhan
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেSayemus Suhan
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেতরী
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেSAIMA
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেবকুল রায়
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেJobayer (super user)
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বে