বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমার বেহেশতের দরকার নাই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এক লেখায় একজন ডাক্তার মন্তব্য করলেন -
" আমার বেহেশতের দরকার নাই, কি হবে শরাবের নহর দিয়া দুনিয়া যদি মানবতার কাজে না লাগাই? খোদা আমার না খ্রিষ্টান, না বৌদ্ধ, না হিন্দু, না মুসলমান, তিনি সবারই জন্য সমান"
SHARIF ABU HAYAT OPU
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
হঠাৎ মনে হতে পারে, ঠিকই তো বলেছে। নাহ, ঠিক বলেনি। কেন ঠিক বলেনি তার জবাব দিয়ে একটা মেইল লিখেছিলাম।
আস সালামু আলাইকুম, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে মন্তব্যটি পড়ে মনে হয়েছে কিছু কথা বলা আমার কর্তব্য।
আপনি একজন ডাক্তার। আপনি মানুষের সেবা করেন, অসুস্থদের চিকিৎসা দেয়ার মাধ্যমে। কাজটি আপনি কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত চেম্বারে করেন। আপনার কাজ এবং সময়ের বিনিময়ে আপনি হাসপাতাল/ক্লিনিক থেকে বেতন/সম্মানী পান। ব্যক্তিগত চেম্বারে আপনি রোগীদের কাছ থেকে একটি ভিজিট ফি নেন। পুরো ব্যাপারটাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, আপনি চিকিৎসা সেবা দেয়াটাকে রিযিক অর্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
কেউ যদি বলে, আপনাকে কোনো বিনিময় ছাড়াই কাজ করতে হবে তাহলে সেটা ভ্রান্ত কথন। আয় না করলে আপনি খাবেন কী? থাকবেন কোথায়? আপনার পরিবার খাবে কী? পরবে কী? থাকবে কোথায়?
আপনি খুব উদারমনা হয়ে থাকলে হয়ত বেশ কিছু রোগী বিনিময় ছাড়াই দেখে দেন। তবে সেটা হয়ত মাসে একবার মেডিক্যাল ক্যাম্পে। হয়ত সপ্তাহে ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিকে। হয়ত প্রতিদিন নিজের চেম্বারে আপনি ৫ জনকে ফি ছাড়াই দেখে দেন। তবে এটা মূলধারা নয়, দিনে দশ ঘন্টা কাজের মধ্যে বিনিময় ছাড়া কাজের পরিমাণ আধ ঘন্টা হবে কী? বিনিময়ের বিনিময়ে কাজ করাই মৌলিক, প্রাকৃতিক।
এখন এই উদাহরণটাকে পরকালের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি। আমরা এই পৃথিবীতে যাই করি--ভালো বা খারাপ, পরকালে তার একটা মূল্যায়ন আছে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এভাবেই--তাকে ভালো-খারাপ দুটো করার সামর্থ্য দিয়েছেন। এরপর মানুষকে তার বিবেক-বুদ্ধির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন স্বেচ্ছায় একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য। ইবাদাত মানে আল্লাহ যে কাজে খুশি হন তা করা আর যে কাজ ছেড়ে দিলে খুশি হন সে কাজ ছেড়ে দেয়া।
যারা বেশি ইবাদাত করবে অর্থাৎ ভালো কাজ বেশি করবে এবং খারাপ কাজ কম করবে সে ততবেশি আল্লাহর প্রিয়পাত্র হবে। আল্লাহ তাকে ততবেশি ভালোবাসবেন। যারা খারাপ কাজ বেশি করবে তাদের অবস্থা এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তার বিচার করবেন শেষ দিবসে। খারাপ কাজের শাস্তি হিসেবে থাকবে জাহান্নাম। ভালো কাজের পুরষ্কার জান্নাত। ভালো-খারাপের মানদণ্ড ঠিক করে দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহ একটা দাগ টেনেও দিয়েছেন--এর চেয়ে বেশি খারাপ কাজ করলে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে ফেলে। সেই খারাপ কাজটি হচ্ছে শির্ক--আল্লাহর জায়গায় কাউকে উঠিয়ে আনা অথবা আল্লাহকে তার সৃষ্টির জায়গায় নামিয়ে আনা।
দুটি উদাহরণ দিই।
১. আপনি একটা কাচের মগ কিনেছেন চা/পানি খাবেন বলে। দুদিন পরে মগটির তলা ফেটে গেল। মগটির স্থান হবে আবর্জনার ঝুড়িতে। কেন? কারণ মগটি তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য রক্ষা করতে পারছে না। মগটির কোনো কোণা ভেঙে গেলে, এমনকি হাতলটা ভেঙে গেলেও মগটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মগটিতে যদি তরল না রাখা যায় তবে মগটির অস্তিত্বটাই অদরকারী হয়ে পড়ে।
২. একটা জায়গা তার দিয়ে ঘেরা। তারের জালে লেখা আছে - হাই ভোল্টেজ, একটা খুলির ছবি। এরপরেও যদি কোনো মানুষ সেই তারের জাল ভেঙে ভেতরে ঢোকে, হাই ভোল্টেজের অংশগুলো স্পর্শ করে তাহলে সে এলেকট্রিক শকে মারা যেতে পারে। এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যা খুশি করতে গিয়ে মরে যাওয়ার পরে কেন বিদ্যুৎ প্রাণঘাতী সে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন।
মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদাতের জন্য; গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য না, ঈসা আলাইহিস সালামের কল্পিত ছবি বা মূর্তির সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করার জন্য না, দশভূজা প্রতিমাকে পূজা করার জন্য না, মৃত মানুষের কবরে সেজদা করার জন্য না। যদি কেউ করে তবে সে শির্ক করল, তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্যকে মিথ্যা করে দিল। তাকে নানাভাবে সাবধান করার পরেও সে সেই নিষিদ্ধ দাগটা অতিক্রম করল যার শাস্তি চির জাহান্নাম। এই জিনিসটা বোঝার পরে একজন মানুষের মুসলিম হয়ে একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকে না। হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ-কবরপূজারী -- প্রত্যেকটির পরিণাম জাহান্নাম, ইচ্ছাকৃতভাবে ৪৪০ ওয়াট স্পর্শ করা। সাবধানবাণী দেখে দূরে সরে যাওয়া মানুষ আর ৪৪০ ভোল্টে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মানুষ যেমন এক না, তেমন খ্রিষ্ঠান/ইহুদি/বৌদ্ধ/হিন্দু/মুশরিক বনাম মুসলিম সবাই আল্লাহর কাছে সমান নয়।
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপমা এমন--তিনি একটি সুন্দর প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে মানুষকে ডাকছেন ভেতরে চমৎকার একটি ভোজে অংশগ্রহণ করার জন্য। যারা আসছে তারা সুস্বাদু খাবার পাচ্ছে, যারা আসছে না, হেটে চলে যাচ্ছে; তারা আপন ইচ্ছায় বঞ্চিত হচ্ছে।
শুরুতে ফিরে যাই, আমরা এ পৃথিবীতে যেমন পার্থিব কাজ করি বিনিময়ের জন্য, তেমন পারলৌকিক কাজ-ও করি বিনিময়ের জন্য। বিনিময় দেবেন আল্লাহ সুবহানাহু যিনি পরকালের স্রষ্টা। যে ভালো কাজের বিনিময় আল্লাহর কাছে চায় না, তাকেও আল্লাহ বিনিময় দেন--তবে সেটা ইহকালে, পরকালে তার প্রাপ্তি শূন্য যেহেতু সে পরকালকে বিশ্বাসই করেনি।
ভালো কাজের পার্থিব প্রতিদানের মধ্যে মানুষ তাকে দানবীর বলে, সম্মান করে, প্রশংসা করে। এটাই তার বিনিময়। কিন্তু আখিরাতে তার কিছু নেই আগুন ছাড়া। বলা বাহুল্য এই আগুন তার ভালো কাজের পুরষ্কার নয়, অবিশ্বাসের শাস্তি, তার সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে মিথ্যা করে দেয়ার শাস্তি।
কিন্তু একজন বিশ্বাসী যখন কোনো ভালো কাজ করে সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করে। সে আশা রাখে আল্লাহ তাকে পুরষ্কার হিসেবে জান্নাত দেবেন আর শাস্তি জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর প্রতিশ্রুতিকে সে সত্য জ্ঞান করে। সে এই বিনিময়ের আশায় কাজ করে যায়।
আরেকটা উদাহরণ দিই।
রাস্তায় একটা ডাবের খোসা। আপনি মটর সাইকেল চালানোর সময় দেখে সাবধানে পাশ কেটে গেলেন। এরপর আপনি কী করবেন? রাস্তায় আপনি একা। আপনি কী আপনার মতো পথে চলে যাবেন? এরপরে আরেকজনের ঐ ডাবের খোসাতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি বলতেই পারেন--কেন ঘটবে? সে কেন দেখে গাড়ি চালাবে না?
আবার আপনি মটর সাইকেলে থামিয়ে সেখান থেকে নেমে ডাবের খোসাটা রাস্তার এক পাশে সরিয়ে রাখলেন। কেউ দেখেনি। কী লাভ আপনার কাজটা করে? সিটি কর্পোরেশন কোনো পুরষ্কার দেবে না। কেউ ধন্যবাদ দেবে না। কেউ জানবেই না যে তার একটা সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে আপনি তাকে রক্ষা করেছেন--ধন্যবাদ দেবে কীভাবে?
আপনি যদি মুসলিম হন তাহলে জানবেন যে কাজটা আল্লাহ দেখেছেন। এবং দেখবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এবং এও জানিয়ে দিয়েছেন যে ঈমানের সব চেয়ে ছোট শাখাটি হচ্ছে পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। এই কাজটা কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে তবে আল্লাহ তাকে পুরষ্কার দেবেন। কী পুরষ্কার? আপনি কতটা গতিতে যাচ্ছিলেন, গাড়ি থামিয়ে ডাবের খোসাটা সরাতে আপনার কতটা কষ্ট হয়েছিল, কতটা নিখাদ চিত্তে আপনি আল্লাহর কাছে এর বিনিময় চেয়েছিলেন তার ওপর নির্ভর করে তিনি পুরষ্কার দেবেন। আর তিনি অসীম দয়ালু হওয়াতে তিনি যখন পুরষ্কার দেন তখন কার্পণ্য করেন না। হয়ত এই ছোট্ট এক মিনিটের কাজের বিনিময়ে তিনি একটা পৃথিবী সমান সবুজ মাঠ আর সবুজ পাহাড় আর সাদা বালুতে আছড়ে পড়া একটা নীল সমুদ্র দিয়ে দিয়েছেন। আপনি এর মালিক।
আপনি যখন রাত দশটা পর্যন্ত চেম্বারে বসে কষ্ট করে প্রেসক্রিপশন লিখছেন তখন হয়ত আপনার মনে ইচ্ছে, আপনার স্ত্রীকে নিয়ে থাইল্যান্ডের ফুকেতে যাবেন চার দিন পাঁচ রাতের জন্য। খরচ হবে মাথাপ্রতি ৬০ হাজার টাকা। আপনি হয়ত হিসেব করছেন দুজনের ঘুরতে যেতে যে দেড় লাখ টাকা খরচ হবে সেটা তুলতে আপনার তিনশ জন রোগী দেখতে হবে। এই হিসেবটা যেমন স্বাভাবিক তেমনি একজন বিশ্বাসীর আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার আশায় রাস্তা থেকে ডাবের খোসাটা সরিয়ে দেয়াও স্বাভাবিক। শুধু স্বাভাবিক নয়, এটাই তার জীবনের উদ্দেশ্য--তার রবকে সন্তুষ্ট করা। এটা সহজ, এটা প্রাকৃতিক। যে রব আমাকে সৃষ্টি করেছেন এটা তার পাওনা। আপনার স্ত্রীকে ফুকেতে বেড়াতে নিয়ে গিয়েও তার সন্তুষ্টি আপনি নাও পেতে পারেন--কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি নিশ্চিত পাওয়া যাবে। আপনার স্ত্রী হয়ত কোনোদিনই বুঝবে না তিনশটা প্রেসক্রিপশন লিখতে আপনার কত কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ বুঝবেন তাকে খুশি করার জন্য ৫০ কিমি বেগে চালানো মটরসাইকেলটা থামিয়ে রাস্তার পাশে রেখে রাস্তার মাঝখান থেকে একটা তুচ্ছ ডাবের খোসা সরাতে আপনাকে কতটা নিজের সাথে যুদ্ধ করা লেগেছে।
তাই জান্নাতের দরকার নেই এটা একজন মুসলিম বলতে পারে না। শরাবের নদী সে চাইতেই পারে--এমন শরাব যা মানুষকে বেহুঁশ করে না। এই শরাবের আকাঙ্খাতেই সে পৃথিবীতে মদ স্পর্শ করেনি। আপনি বলতেই পারেন পৃথিবীতে মদ খেলে কী হয়? আল্লাহর অবাধ্যতা হয়। আল্লাহ কেন নিষেধ করেছেন? ২০১৩ সালে শুধু অ্যামেরিকাতে ১০,০৭৬ জন মানুষ মারা গিয়েছে কারণ আল্লাহর নিষিদ্ধ করা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে কিছু জীবন উপভোগকারীরা গাড়ি চালাচ্ছিল।
আমরা মানুষের জন্য সামান্য কিছু করি। করেও অনেক গালি খাই। আপনি দেখবেন আপনিও ডাক্তার হিসেবে অনেক গালি খান/খাবেন। মানবতার বিচারে পৃথিবীতে কিচ্ছুটি চলে না। যখন আল্লাহর বিচারে চলি তখন পার্থিব প্রাপ্তি না পেলেও পরকালীন প্রাপ্তির আশায় থাকি। আমাদের সব কাজগুলো সেই হিসেবেই করা।
লেখাটি
SHARIF ABU HAYAT OPU ভাই এর...
WEDNESDAY, DECEMBER 19, 2018
১১ই রবিউস সানি, ১৪৪০ হিজরি।
ভালো লাগলো তাই শেয়ার করলাম ...
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now