বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
নীল পদ্মরাগ (শার্লক হোমসের বাংলা গোয়ন্দা গল্প) পর্ব-১
X
এই অনুবাদটির অনুবাদস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুবাদকের
বিনা অনুমতিতে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি!
বড়োদিনের দিন দুয়েক পরে সকালের দিকে
আমার বন্ধু শার্লক হোমসকে উৎসবের শুভেচ্ছা
জানাতে গিয়েছিলাম। হোমস তার পার্পল-রঙা
ড্রেসিং গাউনটা পরে সোফায় হেলান দিয়ে
বসেছিল। তার ডানদিকে পাইপ রাখার তাক আর
হাতের কাছে ছড়ানো ছিল একগাদা সদ্যপঠিত
প্রভাতী সংবাদপত্র। সোফার পাশে চেয়ারে
ঝুলছিল একখানা জীর্ণ পুরনো ফেল্ট হ্যাট। টুপিটা
জায়গায় জায়গায় ফাট–ব্যবহারের অযোগ্য।
চেয়ারের উপর রাখা লেন্স আর ফরসেপস দেখে
বুঝলাম, ওটা ভাল করে পরীক্ষা করার জন্যেই
ওভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বললাম, “তুমি ব্যস্ত মনে হচ্ছে। আমি হয়ত এসে
কাজে বাধা দিলাম।”
“মোটেও না। বরং এই যে তোমার মতো এক বন্ধুর
সঙ্গে আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুটো কথা কইতে
পারি, এটা কতো আনন্দের বলো তো। এই
ব্যাপারটা খুবই সামান্য।” তারপর টুপিটার দিকে
অঙ্গুলিনির্দেশ করে সে বলল, “কিন্তু ওই
জিনিসটার সঙ্গে এমন কিছু বিষয় জড়িত যেগুলো
শুধু মনোহারীই নয়, যথেষ্ট শিক্ষণীয়ও বটে।”
বাইরে খুব বরফ পড়ছিল। জানলার কাঁচ ঢেকে
গিয়েছিল পুরু বরফের আস্তরণে। আরামকেদারায়
বসে ফায়ারপ্লেসের গনগনে আগুনে হাতটা
সেঁকতে সেঁকতে বললাম, “মনে হচ্ছে, এই
সাদাসিধে দেখতে টুপিটার সঙ্গে বেশ একটা
মারকাটারি গল্প জড়িয়ে আছে আর তুমি এটার
সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান করে অপরাধীকে
শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছো।”
হোমস হেসে বলল, “না না, অপরাধ নয়। আসলে
কয়েক মাইল এলাকার মধ্যে চল্লিশ লক্ষ লোক
গুঁতোগুঁতি করলে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যায়। এটাও
সেই রকমই একটা ঘটনা। এত লোকের ক্রিয়া-
প্রতিক্রিয়ার মধ্যে, এত সম্ভাব্য ঘটনীয় ঘটনার
মধ্যে অনেক ছোটোখাটো ঘটনাও থাকে, যেগুলো
খুব উল্লেখযোগ্য ও অদ্ভুত ধরনের হয়, কিন্তু সবসময়
তার সঙ্গে কোনো অপরাধের যোগ থাকে না।
আমরা তো আগেও এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি।”
আমি বললাম, “দেখিনি আবার! আমি শেষ যে ছ-
খানা কেস নোট করেছি, তার মধ্যে তিনটের
সঙ্গেই তো–আইনের চোখে যাকে অপরাধ বলে–
তার কোনো যোগ নেই।”
“ঠিক বলেছো। আইরিন অ্যাডলারের কাগজ উদ্ধার,
মিস মেরি সাদারল্যান্ডের সেই অভূতপূর্ব কেস
আর সেই বাঁকা-ঠোঁটওয়ালা লোকটির রহস্যের কথা
বলছো তো। এই ব্যাপারটাও যে একই রকম নিরীহ,
তা হলপ করে বলতে পারি। কমিশনেয়ার [*]
পিটারসনকে চেনো তো?”
“হ্যাঁ, চিনি বৈকি।”
“জিনিসটা সে-ই জুটিয়েছে।”
“এটা পিটারসনের টুপি?”
“না না, পিটারসন এটা কুড়িয়ে পেয়েছে।
মালিকের পরিচয় অজ্ঞাত। হাতে নিয়ে দ্যাখো।
ফুটো টুপি বলে অবছেদ্দা কোরো না। জেনো,
এটাও একটা বৌদ্ধিক সমস্যা। ও হ্যাঁ, এর এখানে
আগমনের ইতিবৃত্তটাও আগে শুনে নাও। বড়োদিনের
সকালে একটা নধর রাজহাঁস আর এই টুপিটা নিয়ে
পিটারসন হাজির। হাঁসটা খুব সম্ভবত এখন
পিটারসনের রান্নাঘরের উনুনে। ঘটনাটা এই রকম:
বড়োদিনের দিন ভোর চারটে নাগাদ পিটারসন
টটেনহ্যাম কোর্ট রোড ধরে নিজের বাড়িতে
ফিরছিল। সামনের রাস্তায় গ্যাসের আলোয় সে
দেখল একটি লম্বা লোক একটু যেন টলতে টলতে
হাঁটছে। লোকটার কাঁধে ছিল একটা সাদা হাঁস।
গুজ স্ট্রিটের কোনার দিকে যেতেই একদল গুন্ডার
সঙ্গে লোকটার ঝামেলা বাধল। একটা গুন্ডা
লোকটা টুপিটা তার মাথা থেকে খুলে ফেলে
দিল। লোকটা আত্মরক্ষার জন্য নিজের লাঠিটা
মাথার উপর তুলে ঘোরাতে গেল। কিন্তু তাতে
তার পিছনের দোকানের জানলার কাঁচটি ভেঙে
চুরমার হয়ে গেল। তুমি জানো, পিটারসন সৎ
ছেলে। সে লোকটাকে গুন্ডাদলের হাত থেকে
বাঁচানোর জন্য ছুটে গেল। এদিকে জানলার কাঁচ
ভেঙে লোকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থায়
একটা উর্দিপরা পুলিশ-গোছের লোককে ছুটে
আসতে দেখে হাঁসটা ফেলেই দৌড় লাগালো
টটেনহ্যাম কোর্ট রোডের পিছনদিককার ছোটো
গলিপথের গোলকধাঁধার দিকে। পিটারসনকে
দেখে গুন্ডাদলও পালাল। সেই অকুস্থল থেকেই এই
ছেঁড়া টুপি আর সেই অনবদ্য বড়োদিনের
ভোজটিকে উদ্ধার করে আনল পিটারসন।”
“আর তারপর নিশ্চয় জিনিসগুলো তার মালিকের
কাছে পৌঁছে দিয়ে এল?”
“এখানেই তো সমস্যা, বন্ধু। হাঁসটার বাঁ পায়ের
সঙ্গে একটা ছোটো কার্ড আটকানো ছিল। তাতে
লেখা ছিল ‘মিসেস হেনরি বেকারের জন্য’।
টুপিটার লাইনিং-এর উপর ‘এইচ. বি.’ লেখাটাও
স্পষ্ট। কিন্তু আমাদের শহরে কয়েক হাজার বেকার
পদবীধারী লোক পাওয়া যাবে, যাদের মধ্যে
অন্তত কয়েকশো লোকের নাম হেনরি বেকার। এই
হারানো সম্পত্তিটি তার সঠিক মালিকের হাতে
তুলে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়!”
“ও! তাই পিটারসন হাঁসটা তোমার কাছে নিয়ে
এল?”
“পিটারসন জানে যে, ছোটোখাটো ব্যাপারেও
আমার আগ্রহ আছে। তাই বড়োদিনের দিন সকালেই
হাঁস আর টুপিটা আমার কাছে নিয়ে এল। হাঁসটা
আজ অবধি আমার এখানেই ছিল। কিন্তু দেখলাম,
ঠান্ডা সত্ত্বেও জিনিসটায় পচ ধরছে। তাই আর
দেরি না করে, যে ওটা কুড়িয়ে পেয়েছিল,
তাকেই ওটার সদ্ব্যবহারের দায়িত্ব দিলাম।
বেচারা ভদ্রলোকের বড়োদিনের ডিনারটা মাঠে
মারা গেল। টুপিটা রেখে দিয়েছি। এখন দেখি
এটা অন্তত ওঁকে ফেরত দেওয়া যায় কিনা।”
“ভদ্রলোক হারানো-প্রাপ্তির বিজ্ঞাপন দেননি?”
“না।”
“তুমি তাহলে কী সূত্র পেলে?”
“পর্যবেক্ষণ করে যতটুকু অনুমান করা যায়, ততটুকুই।”
“এই টুপিটা পর্যবেক্ষণ করে?”
“হ্যাঁ।”
“ঠাট্টা করছ? এই পুরনো ফুটো টুপিটা পর্যবেক্ষণ
করে তুমি কী অনুমান করলে শুনি!”
“আমার পদ্ধতি তোমার জানা। এই লেন্সটা নাও।
দ্যাখো তো, জিনিসটা পর্যবেক্ষণ করে তুমি এর
মালিক সম্পর্কে কী ধারণা পাও।”
জিনিসটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখলাম। খুব
সাধারণ কালো রঙের একটা গোল টুপি।
শক্তপোক্ত, তবে অবস্থা খুব খারাপ। ভিতরে
রংচটা লাল রেশমের লাইনিং। নির্মাতার নাম
নেই। তবে, হোমস যেমন বলেছিল–‘এইচ. বি.’
আদ্যক্ষরটা এককোণে খুব এবড়োখেবড়ো হরফে
লেখা। দু-পাশে টুপি আটকানোর ছিদ্র। তবে
ইলাস্টিকটা ছেঁড়া। ছেঁড়াফোঁড়া, ধুলোমাখা
টুপি। জায়গায় জায়গায় দাগ। আবার কালি
লাগিয়ে দাগগুলো ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে।
টুপিটা আমার বন্ধুর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললুম,
“কিছুই তো দেখতে পেলুম না।”
“ভুল করছ, ওয়াটসন, সবই দেখতে পেয়েছো। শুধু
জানতে পারোনি যে দেখতে পেয়েছো। আসলে
কার্যকারণগুলো ঠিকঠাক মেলাতে পারছো না।”
“তাহলে দয়া করে তুমিই বলো এই টুপি থেকে কী
কার্যকারণ আবিষ্কার করলে?”
টুপিটা হাতে তুলে নিয়ে নিজের স্বভাবসিদ্ধ
অদ্ভুত পর্যবেক্ষণ ভঙ্গিতে সেটার দিকে
খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল হোমস। তারপর বলল,
“সবটা হয়তো সঠিক জানা যাবে না। তবে
কয়েকটা জিনিস খুব স্পষ্ট; অন্যগুলোর সম্ভাবনাও
বেশ উজ্জ্বল। যেমন, এই লোকটা যথেষ্ট বুদ্ধি ধরে।
গত তিন বছরের মধ্যে কোনো এক সময় তার অবস্থা
বেশ ভাল ছিল। তারপর কোনো কারণে
অর্থসংকটে পড়ে। আগে লোকটার বেশ দূরদৃষ্টি
ছিল। এখন সেই দূরদৃষ্টি আর নেই। পকেটের জোর
কমে যাওয়ায় স্বভাবটাও একটু খারাপ হয়েছে।
মদ্যপানের মতো খারাপ উপসর্গও সম্ভবত জুটেছে।
তাছাড়া, খুব জোর দিয়ে বলা চলে, ভদ্রলোকের
স্ত্রী আর তাঁকে আগের মতন ভালবাসেন না।”
“বটে!”
আমার ব্যঙ্গোক্তি ধর্তব্যের মধ্যে না এনে হোমস
বলে চলল, “তবে কিছুটা আত্মমর্যাদাবোধ এখনও
লোকটার মধ্যে রয়ে গেছে। লোকটা অলস
প্রকৃতির। বেশি বাইরে বেরোয়-টেরোয় না। শরীরও
বিশেষ দেয় না। মাঝবয়সী। মাথায় কাঁচাপাকা
চুল। কিছুদিন আগেই কেটেছে। মাথায় লাইম-ক্রিম
মাখে। এই টুপি থেকে এই ব্যাপারগুলোই নিশ্চিত
করে বলে যায়। আর হ্যাঁ, খুব সম্ভবত লোকটার
বাড়িতে গ্যাসের আলো নেই।”
“ঠাট্টা করছ, হোমস?”
“এক বর্ণও না। এত কথার পরেও বলে দিতে হবে যে,
কি করে এগুলো জানতে পারলাম?”
“আচ্ছা, আমি না হয় বোকাসোকা লোক। তোমার
কথার কিছুই বুঝি না। কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে
যে, এই লোকটা বুদ্ধিমান?”
উত্তরে হোমস টুপিটা নিজের মাথায় পরল। তার
কপাল ঢেকে দিয়ে তার নাকের ডগা অবধি নেমে
এল সেটা। সেটা দেখিয়ে হোমস বলল, “টুপিটার
আকারটাই বলে দেয়, এত বড়ো মাথা যার, তার
মগজেই নিশ্চয় কিছু আছে।”
“কী করে বুঝলে লোকটার অবস্থা আগে স্বচ্ছল
ছিল; কিন্তু এখন অবস্থা পড়ে গেছে?”
“এই টুপিটা বছর তিনেকের পুরনো। এই রকম বাঁকা
ধারওয়ালা টুপি তখনই বাজারে উঠেছিল। এমনিতে
এটা খুব ভাল মানের টুপি। রেশমের বেড় আর
লাইনিং-এর কাপড়টা দ্যাখো। বেশ দামি। যদি
লোকটা তিন বছর আগে এই টুপিটা কিনতে পারে,
এবং তারপর আর টুপিটা না পালটায় তাহলে বুঝতে
হবে তাঁর অবস্থা এখন ভাল যাচ্ছে না।”
“আচ্ছা বেশ, বোঝা গেল। কিন্তু তাঁর দূরদর্শিতা ও
আত্মসম্মানবোধের কী প্রমাণ পেলে?”
শার্লক হোমস হাসল। ছোট্টো চাকতি আর আঙটার
উপর হাত রেখে বলল, “এখানেই আছে দূরদৃষ্টির
পরিচয়। এগুলো টুপিতে লাগানো থাকে না।
লোকটা নিশ্চয় অর্ডার দিয়ে বানিয়েছে। এর
থেকেই বোঝা যায় যে, লোকটার দূরদৃষ্টি আছে।
টুপিটা যাতে হাওয়ায় না উড়ে যায় এটা তারই
ব্যবস্থা। কিন্তু দ্যাখো, এর ইলাস্টিকটা ছিঁড়ে
গেছে। লোকটাও সেটা নতুন করে লাগায়নি। তার
মানে দূরদৃষ্টি তার আগের থেকে কমে এসেছে।
এটা স্বভাবের দুর্বলতার লক্ষণ। অন্যদিকে এই
দাগগুলো কালি দিয়ে ঢাকার চেষ্টাটাই বলে
দিচ্ছে লোকটা এখনও তার আত্মমর্যাদাবোধ
সম্পূর্ণ হারায়নি।”
“হুম! তুমি যা বলছ, তা একেবারে ফেলে দেওয়া
যায় না!”
“আরও শুনবে? এই লোকটা মাঝবয়সী, মাথায়
কাঁচাপাকা চুল, সম্প্রতি চুল কেটেছে, লাইম-ক্রিম
ব্যবহার করে–এসবের প্রমাণ কী? লাইনিং-এর
নিচের অংশটুকু খুব কাছ থেকে পরীক্ষা করে
দ্যাখো। লেন্স দিয়ে দেখলে দেখবে, নাপিতের
কাঁচিতে কাটা চুলের কয়েকটা ডগা চিটে আছে।
আর লাইম-ক্রিমের একটা আবছা গন্ধ পাবে। এই যে
ধুলো দেখছো, এটা রাস্তার খড়খড়ে ধূসর ধুলো নয়,
এই রকম হালকা বাদামি ধুলো বাড়ির ভিতরেই
দেখা যায়। তার মানে এটা বেশির ভাগ সময় ঘরের
মধ্যেই টাঙানো থাকে। টুপির ভিতরে ঘামের দাগ
দেখে বুঝবে লোকটা খুব ঘামে। কারোর মাথা
এতো ঘামা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়।”
“কিন্তু কিভাবে বুঝলে যে, তাঁর স্ত্রী তাঁকে আর
আগের মতন ভালবাসেন না?”
“এই টুপিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ ব্রাশ পড়েনি।
ওয়াটসন, তোমার বউ যদি তোমাকে এই রকম
ধুলোমাখা টুপি পরে বাইরে যেতে দেয়, তাহলে
জানবে তুমি একটি হতভাগা। তোমার বউ আর
তোমাকে ভালবাসে না।”
“সে তো অবিবাহিতও হতে পারে।”
“না। সে বাড়িতে একটা হাঁস নিয়ে যাচ্ছিল
স্ত্রীকে তুষ্ট করতে। হাঁসের পায়ের কার্ডটায় কী
লেখা ছিল মনে করে দ্যাখো।”
“হুম! তোমার কাছে দেখছি সব কিছুরই উত্তর আছে।
কিন্তু কী করে বুঝলে লোকটার ঘরে গ্যাসের
আলো নেই?”
“টুপিতে একটা-দুটো ট্যালোর[†] দাগ থাকাটা
স্বাভাবিক। কিন্তু দ্যাখো পাঁচ-পাঁচটা দাগ। এ
থেকে নিঃসন্দেহে ধরে নেওয়া যায়, লোকটা খুব
ঘন ঘন ট্যালো জ্বালে। রাতের অন্ধকারে এক
হাতে টুপি আর অন্য হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি ধরে
উপরে ওঠে। গ্যাসজেট থেকে ট্যালোর দাগ পড়ে
না। কি, মিলছে তো?”
আমি হেসে বললাম, “নিঃসন্দেহে অসামান্য
তোমার পর্যবেক্ষণ শক্তি! কিন্তু তুমি বলছো,
কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটেনি। একটা হাঁস
খোয়া-যাওয়া ছাড়া কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
তাহলে আর এই সব পাঁচ-সাত ভেবে মাথা খারাপ
করছো কেন হে?”
হোমস একটা কী বলার জন্য মুখ খুলেছিল। কিন্তু
এমন সময় দড়াম করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে এল
কমিশনেয়ার পিটারসন। তার চোখমুখ লাল। একটা
হতভম্ব ভাব।
“মিস্টার হোমস, ওই হাঁসটা! ওই হাঁসটা, মশায়!” সে
হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
“অ্যাঁ? কী হয়েছে ওই হাঁসটা? ওটা কী আবার
জ্যান্ত হয়ে উঠে ডানা মেলে জানলা দিয়ে উড়ে
পালিয়ে গেছে?” উত্তেজিত লোকটার মুখটা ভাল
করে দেখার জন্য সোফায় বসেই শরীরটাকে মোচড়
দিল।“না মশায় না! দেখুন, আমার বউ ওই হাঁসটার পেট
থেকে কী পেয়েছে!” এই বলে পিটারসন নিজের
হাতটা মেলে ধরল। একটা জ্বলজ্বলে নীল পাথর।
মটরশুঁটির দানার চেয়েও ছোটো। কিন্তু এত চকচকে
যে মনে হচ্ছিল পিটারসনের হাত থেকে বিজলি
আলো ঠিকরাচ্ছে।
একটা শিস দিয়ে উঠে বসল হোমস। “বাই জোভ,
পিটারসন! তুমি যে গুপ্তধন পেয়েছো হে।
জিনিসটা কী জানো তো?”
“মশায়, এটা কী হিরে? হিরে তো খুব দামি পাথর।
কাঁচ কাটা যায়।”
“এটা যে-সে দামি পাথর নয়। এটা হল সবচেয়ে
দামি পাথর।”
আমি বলে ফেললাম, “কাউন্টেস অফ মরকারের
নীল পদ্মরাগ নয় তো!”
“হ্যাঁ, সেটাই। এটা কেমন দেখতে তা আমার আগেই
জানা ছিল। ‘দ্য টাইমস’-এ প্রায়ই এটার সম্পর্কে
একটা বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছে। আশ্চর্য পাথর এটা।
এর আসল দাম শুধুই অনুমান করা যায়। এটার উপর
১০০০ পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে
সেটা এর আসল দামের যে কুড়ি ভাগের এক ভাগও
নয়, তা বলাই যায়।”
“এক হাজার পাউন্ড! হা ভগবান!” কমিশনেয়ার ধপ
করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। তারপর আমাদের
দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল।
“হ্যাঁ, এক হাজার পাউন্ড। আমার মনে হয় এটার
সঙ্গে কাউন্টেসের কিছু অমূল্য মধুর স্মৃতি জড়িয়ে
আছে। এটা ফিরে পাওয়ার জন্য উনি অর্ধেক
সম্পত্তি হাতছাড়া করতেও অরাজি হবেন না।”
আমি বললাম, “যতদূর মনে পড়ছে, এটা হোটেল
কসমোপলিটান থেকে খোয়া গিয়েছিল।”
“ঠিক বলেছো। বাইশে ডিসেম্বরের ঘটনা। ঠিক
পাঁচ দিন আগে। কলের মিস্ত্রি জন হরনারকে
গ্রেফতার করা হয় লেডির গয়নার বাক্স থেকে
এটা সরানোর অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে প্রমাণ
এতই অকাট্য ছিল যে তাকে অ্যাসিজেসে [‡]
পেশ করা হয়। আমার কাছে এই ঘটনার কাগজপত্র
আছে মনে হয়।” হোমস কাগজপত্র হাতড়ে,
তারিখের উপর চোখ বুলিয়ে, একটাকে বের করে
আনল। তারপর সেটা দু-ভাঁজ করে পড়তে শুরু করল:
হোটেল কসমোপলিটান থেকে চুরি রত্ন। এমাসের
২২ তারিখে কাউন্টেস অফ মোরকারের গয়নার
বাক্স থেকে নীল পদ্মরাগ নামে একটি মহামূল্য
রত্ন চুরির অভিযোগে জন হরনার নামে এক
ছাব্বিশ বছর বয়সী কলের মিস্ত্রিকে গ্রেফতার
করা হয়েছে। হোটেলের প্রধান-পরিচারক জেমস
রাইডারের সাক্ষ্য থেকে জানা গিয়েছে যে,
রাইডার হরনারকে কাউন্টসের ড্রেসিং রুমে
নিয়ে এসেছিল একটা ফায়ার প্লেসের একটা
ভাঙা শিক ঝালাই করানোর জন্য। রাইডার
কিছুক্ষণ হরনারের সঙ্গে ছিল। তারপর রাইডারের
ডাক পড়ায় সে কিছুক্ষণ হরনারকে একলা রেখে
কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায়। ফিরে এসে সে
দেখে হরনার চলে গেছে। ঘরের দেরাজ ভাঙা।
যে ছোট্টো মরোক্কীয় বাক্সে কাউন্টসে রত্নটি
রাখতেন, সেটি খালি অবস্থায় ড্রেসিং
টেবিলের উপর খোলা পড়ে আছে। রাইডার সঙ্গে
সঙ্গে অ্যালার্ম বাজায়। সেই দিন সন্ধ্যেবেলাই
হরনারকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু রত্নটা তার
কাছে বা তার ঘরে কোথাও পাওয়া যায়নি।
কাউন্টেসের খাস-পরিচারিকা ক্যাথারিন কাসক
রাইডারের চিৎকার শুনে ছুটে আসে। তার
সাক্ষ্যের সঙ্গে রাইডারের সাক্ষ্য হুবহু মিলে
গেছে। বি ডিভিশনের ইনস্পেক্টর ব্র্যাডস্ট্রিট
হরনারকে গ্রেফতার করার কথা জানান। তিনি
বলেন, হরনার গ্রেফতারের সময় পাগলের মতো
ছটফট করছিল এবং খুব কড়া ভাষায় নিজেকে
নির্দোষ বলে দাবি করছিল। তার বিরুদ্ধে আগেও
ডাকাতির অভিযোগ থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট
চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাকে
অ্যাসিজেসে পাঠিয়ে দেন। অভিযুক্ত অত্যন্ত
বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের রায় শুনে
সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন তাকে ধরাধরি করে
কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।
কাগজটা পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হোমস
খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “হুম! এই হল পুলিশ-
কোর্টের ব্যাপার। এখন আমাদের কাছে প্রশ্ন হল,
গয়নার বাক্স থেকে খোয়া যাওয়ার পর টটেনহ্যাম
কোর্ট রোডের হাঁসের পেটে রত্নটা গেল কী
করে? দেখলে তো, ওয়াটসন, আমাদের ওই
একটুখানি পর্যবেক্ষণজনিত অনুমান কতটা গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে উঠেছে! ব্যাপারটাকে আর নেহাতই নিরীহ
ব্যাপার বলা চলে না। এই পাথরটা বেরোলো
হাঁসের পেট থেকে। হাঁসটা মিস্টার হেনরি
বেকারের–যে ভদ্রলোকের খারাপ টুপি আর
অন্যান্য চরিত্রবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে
তোমাকে এতক্ষণ বিরক্ত করছিলাম। এবার
আমাদের সবার আগে কাজ হবে ভদ্রলোককে খুঁজে
বের করা এবং এই ছোট্টো রহস্যটায় তাঁর কী
ভূমিকা রয়েছে সেটা জানা। তা করতে হতে
আমাদের প্রথমে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি অবলম্বন
করতে হবে। সন্ধ্যের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন
দিতে হবে। কাজ না হলে, তখন অন্য পদ্ধতি ভাবব।”
“কী বলবে বিজ্ঞাপনে?”
“একটা পেনসিল আর একটুকরো দাও দেখি। হ্যাঁ,
এবার শোনো:
গুজ স্ট্রিটের কোণ থেকে একটা হাঁস ও একটা
কালো ফেল্ট টুপি পাওয়া গিয়েছে। মিস্টার
হেনরি বেকার নামে কারোর এই জিনিস দুটি
খোয়া গিয়ে থাকলে তিনি আজ সন্ধ্যে সাড়ে
ছটায় ২২১বি বেকার স্ট্রিটে এসে দেখা করুন।
খুবই পরিস্কার ও সংক্ষিপ্ত।”
“কিন্তু এটা কী তাঁর চোখে পড়বে?”
“অবশ্যই। ভদ্রলোক নিশ্চয় কাগজের দিকে নজর
রাখবেন। গরিব মানুষ। তাঁর কাছে এই খোয়া
যাওয়াটা বড়ো ব্যাপার। ভুল করে একটা জানলার
কাঁচ ভেঙে ফেলেছিলেন। তারপর পিটারসনকে
দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যান। পরে হাঁসটা
ওভাবে ফেলে আসার জন্য ভদ্রলোক নিশ্চয় খুব
আফসোস করেছেন। তাছাড়া তাঁর নাম উল্লেখ
করা হয়েছে। এতে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ
হবে। তাঁকে যারা চেনে, তারাই তাঁকে
বিজ্ঞাপনটা দেখিয়ে দেবে। পিটারসন, শোনো।
বিজ্ঞাপন এজেন্সিতে গিয়ে এটাকে সন্ধ্যের
কাগজে ছাপানোর ব্যবস্থা করো দেখি।”
“কোন কাগজটা, মশায়?”
“‘গ্লোব’, ‘স্টার’, ‘পল মল’, ‘সেন্ট জেমস’স’, ‘ইভনিং
নিউজ স্ট্যান্ডার্ড’, ‘ইকো’ আর অন্যান্য, যাতে
তুমি ভাল বোঝো।”
“খুব ভাল কথা, মশাই। আর পাথরটা?”
“ও হ্যাঁ, পাথরটা আমি রাখছি। ধন্যবাদ। আর,
শোনো, পিটারসন, ফেরার পথে একটা হাঁস কিনে
আমাকে দিয়ে যেয়ো তো। তোমরা তো ওই হাঁসটা
দিয়ে আজ ভোজ করবে। আমাকে তো ভদ্রলোককে
ওটার বদলে কিছু একটা দিতে হবে।”
কমিশনেয়ার চলে গেলে, হোমস পাথরটা আলোর
সামনে তুলে ধরে বলল, “জিনিসটা বেশ, তাই না!
কেমন চকচক করছে দ্যাখো। আলো ঠিকরে পড়ছে
যেন। সত্যি বলতে কী, এই পাথরটাই যত নষ্টের
গোড়া। শুধু এই পাথর কেন, যে কোনো রত্নই এমন হয়
– শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় টোপ। যেসব রত্ন বেশ
বড়ো আকারের বা বয়সে প্রাচীন, সেসব রত্নের
সঙ্গে একটা না একটা খুনখারাপির ঘটনা জড়িত
থাকবেই। পাথরটার বয়স তো এখনও কুড়িও হয়নি।
এটা পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ চীনের অ্যাময়
নদীর তীরে। আকার-আকৃতি গুণাবলি সব পদ্মরাগের
মতো, শুধু পদ্মরাগ হয় চুনির মতো লাল, এটা নীল।
বয়সের কম হলে কী হবে, এর ইতিহাস খুব
হেলাফেলার নয়। এখনই এর সঙ্গে দুটো খুন, একটা
ভিট্রিওল-হামলা, একটা আত্মহত্যা, কয়েকটা
ডাকাতির ঘটনা জড়িয়ে পড়েছে। আর এই সব কিছুর
জন্য দায়ী এই চল্লিশ গ্রেন ওজনের কাঠকয়লার
স্ফটিকটা। কে বলবে, এমন সুন্দর খেলনাটা আসলে
ফাঁসিকাঠ আর জেলখানার রসদদার? এটাকে
আমার স্ট্রং বক্সে[§] তুলে রাখি আর
কাউন্টেসকে লিখে দিই যে আমরা এটা
পেয়েছি।”
“তোমার কী মনে হয়, এই হরনার লোকটা নির্দোষ।”
“বলতে পারব না।”
“ও! আর এই অন্য লোকটি? হেনরি বেকার? ইনিও
কী এই ব্যাপারে জড়িত?”
“আমার কী মনে হয় জানো? এই হেনরি বেকার
লোকটি সম্পূর্ণ নির্দোষ। যে হাঁসটা সে বয়ে
নিয়ে যাচ্ছিল, তার আসল দাম যে একটা নিরেট
সোনার হাঁসের দামের চেয়েও বেশি, এই
ব্যাপারটা সেটা লোকটার সম্পূর্ণ অজানাই
থেকে গিয়েছিল। আমাদের বিজ্ঞাপনের উত্তর
পেলে আমি একটা ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমেই
সেটা প্রমাণ করে দিতে পারব।”
“আর ততক্ষণ কিছুই করবে না?”
“কিচ্ছু না।”
“তাহলে আমি এক চক্কর রোগী দেখে আসি। তবে
সাড়ে ছটার আগেই ফিরে আসব। এই আজব রহস্যের
সমাধান কিভাবে করো সেটা আমাকে দেখতেই
হবে।”
“সেই ভাল। আমি সাতটায় ডিনার করি। আজ একটা
উডকক [**] এসেছে মনে হচ্ছে। ও হ্যাঁ, আজকাল যা
সব ঘটছে, তাতে করে আমি মিসেস হাডসনকে
আমাদের পাখিটার পেট একবার পরীক্ষা করে
দেখে নিতে বলেছি।”
একটা রোগীকে দেখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।
বেকার স্ট্রিটে পৌঁছোতে পৌঁছোতেই সাড়ে ছ-
টা বেজে গেল। গিয়ে দেখি বাড়ির সামনে স্কচ
বনেট টুপি আর কোট পরা একটা লোক থুতনি-অবধি
বোতাম আটকিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা
করছে। ফ্যানলাইটের [††] উজ্জ্বল অর্ধবৃত্তাকার
আলো এসে পড়েছে তার উপরে। দরজার কাছে
আসতেই দরজা খুলে গেল। আমরা দু-জনে একসঙ্গে
হোমসের ঘরে ঢুকলাম।
হোমস চট করে আরামকেদারা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
হাসিমুখে অতিথিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল,
“আপনিই নিশ্চয় মিস্টার হেনরি বেকার। আসুন,
অনুগ্রহ করে আগুনের ধারে এসে বসুন, মিস্টার
বেকার। আজ খুব শীত পড়েছে, আপনার স্বাস্থ্যও
এই শীতের অনুকূল বলে মনে হচ্ছে না। আহ্,
ওয়াটসন। একেবারে ঠিক সময়ে এসেছো। ওই
টুপিটা কী আপনার, মিস্টার বেকার?”
“হ্যাঁ, মশাই, নিঃসন্দেহে ওটা আমারই টুপি।”
ভদ্রলোকের চেহারা লম্বা। কাঁধটা চওড়া।
মুখখানা বুদ্ধিদীপ্ত। মুখে কাঁচাপাকা ছুঁচলো
দাড়ি। নাক আর গালটা ঈষৎ লাল। হাতটা সামনের
দিকে বাড়াতে একটু কেঁপে উঠল। তখনই লোকটার
অভ্যাস সম্পর্কে হোমসের অনুমানের কথা মনে
পড়ল। লোকটার ধুলোট কালো ফ্রক-কোটটা
সামনের দিকে উপর পর্যন্ত বোতাম আঁটা।
কলারটা তোলা। সরু কব্জিটা কোটের হাতার
ভিতর থেকে বেরিয়ে ছিল, কোনো কাফ বা
শার্টের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। খুব ধীরে সুস্থে
থেমে থেকে কথা বলছিলেন। খুব সন্তপর্ণে শব্দ
চয়ন করছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, ভদ্রলোক
পণ্ডিত মানুষ; কিন্তু ভাগ্যের ফেরে অবস্থান্তরে
পড়েছেন।
হোমস বলল, “এই জিনিসগুলো দিনকয়েক ধরে
আমাদের কাছে আছে। আমরা ভেবেছিলাম,
আপনি আপনার ঠিকানা জানিয়ে বিজ্ঞাপন
দেবেন। কিন্তু আপনি বিজ্ঞাপন দিলেন না দেখে
একটু অবাকই হয়েছি।”
লজ্জিত একটা হাসি হেসে আগন্তুক ভদ্রলোক
বললেন, “এখন আর আমার আগের মতো অর্থসামর্থ্য
নেই। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, যে গুন্ডাদল
আমাকে আক্রমণ করেছিল, তারাই আমার টুপি আর
হাঁস নিয়ে পালিয়েছে। তাই ওগুলোর ফিরে
পাওয়ার বৃথা আশায় আর নিরর্থক অর্থব্যয় করার
সাহস হয়নি।”
“খুবই স্বাভাবিক। ও হ্যাঁ, হাঁস বলতে মনে পড়ল।
আমরা ওটা খেয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছি।”
ভদ্রলোক আঁতকে উঠে বললেন, “খেয়ে ফেলেছেন!”
“হ্যাঁ, তা না করলে ওটা একেবারেই নষ্ট হয়ে
যেত। তবে ওই সাইডবোর্ডের উপর আর একটা হাঁস
রাখা আছে। মনে হয়, ওটা আপনার চাহিদা পূরণ
করতে পারবে। জিনিসটা ওজনে প্রায় এক আর
বেশ তাজা।”
মিস্টার বেকার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
বললেন, “ও হ্যাঁ, অবশ্যই অবশ্যই।”
“অবশ্য আমরা আপনার নিজের হাঁসটার পালক, পা,
নাড়িভুড়ি ইত্যাদি রেখে দিয়েছি, যদি চান
তো…”
ভদ্রলোক এবার হো হো করে হেসে উঠলেন।
বললেন, “আমার সেই অভিযানের স্মৃতি হিসেবে
সেগুলো মূল্যবান বটে। কিন্তু তাছাড়া আমার সেই
পুরনো সঙ্গীর দেহাবশেষ আমার আর কী কাজে
লাগবে, তা ভেবে পাচ্ছি না। না মশাই, যদি
অনুমতি করেন, তাহলে আপনার সাইডবোর্ডে রাখা
ওই চমৎকার হাঁসটাই নিয়ে যেতে চাই।”
হোমস আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ
কাঁধ ঝাঁকালো।
মুখে বলল, “তবে এই নিন আপনার টুপি আর আপনার
হাঁস। হ্যাঁ, ভাল কথা, আপনি আমাকে বলতে
পারেন ওই আগের হাঁসটা আপনি কোত্থেকে
পেয়েছিলেন? হাঁস-মুরগি খাওয়াটা আমার শখ
বলতে পারেন। কিন্তু এমন নধর হাঁস আমি খুব কমই
দেখেছি।”
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...