বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
_ফ্রী আছো ?"
_না , টিউশনিতে আসছি পরে কথা বলবো ।"
_তুমি কী বিজি ?
_আমি একটু বাইরে, আড্ডা দিচ্ছি, ফিরতে
দেরী হবে, পরে ফোন দিব কেমন পাখি ?
_কী করো ? কথা বলি একটু?"
_ধূর! কী যে করোনা তুমি ,
জানোনা এখন আমার পড়ার সময় ?
নিজেও পড়বা না আমাকেও
পড়তে দিবা না ..."
_কী করছো ? তুমি না বলছিলা অনেক
কথা জমা আছে"
_হুম বলছিলাম , কিন্তু এখন বিজি, বড়
ভাইদের সাথে মিটিং আছে , রাখছি ।
.
হতাশ হয়ে একসময় ফোনটা রেখে দেয়
মেয়েটা । গত কয়েকটা মাস
ধরে এভাবেই চলছে । সবসময় ব্যস্ততা ,
সব কিছুর জন্য সময় আছে , শুধু ওর জন্য
কোন সময় নেই ছেলেটার । সারা ক্ষণ
কিছু না কিছু করছে । সম্পর্কের শুরুর
দিকটার কথা খুব মনে পড়ে মেয়েটার
। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর
দিনগুলোতে খুব হৈ হুল্লোর
করে চলতো ও , সারাদিন
আড্ডা ঘুরাঘুরি। তারপর
কীভাবে কীভাবে যেন ক্লাসের
সবচাইতে শান্ত
মুখচোরা ছেলেটাকে ভালো লেগে গেলো ।
কী থেকে যে কী হয়ে গেলো ...
সবাই ওদের লাভবার্ড বলতো ।
মেয়েটা হুট করে দুষ্টু থেকে শান্ত
শিষ্ট হয়ে গেলো আর
ছেলেটা ক্লাসের স্বীকৃত দুলাভাই
হিসেবে অনেকগুলো শালা পেয়ে গেলো.
.
.
আজ প্রায় দুবছর বেশি হলো ওদের
সম্পর্কের । ইদানিং অনেক
বেশি দূরত্ব তৈরীহচ্ছে ওদের মধ্যে ।
এমন
না যে ছেলেটা মেয়েটাকে ভালোবাসে
না ,
কিন্তু বড় বেশি ব্যস্ত সে । তার উপর
ফোর্থ ইয়ারের পরীক্ষাও সামনে ।
আগে ফোন দিলে একটু হলেও
কথা বলতো , এখন ফোন ধরারও টাইম
নেই তার । কেঁদে কেঁদে বহুবার
বালিশ ভিজিয়েছে মেয়েটা । এখন
আর কাঁদে না । আগে ছেলেটার
কাছে খুব অভিযোগ করতো এসব
নিয়ে । এখন করে না । শেষ
কবে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আইসক্রিম
খেয়েছে মনে পড়ে না । অথচ একসময়
বৃষ্টি হলেই দুজন ব্যাঙাচির
মতো লাফিয়ে উঠতো । ছেলেটার
ঠান্ডার
সমস্যা দেখে মেয়েটা ভিজতে চাইতো না ,
কিন্তু ছেলেটাই ওকে হাত
ধরে বৃষ্টিতে নামিয়ে আনতো । সবই
স্মৃতি এখন । মেয়েটা আর জোর
করে না এখন । যে যেমন থাকতে চায়
তাকে তেমন থাকতে দেওয়া উচিত্ ।
ছেলেটা যদি এভাবেই
ভালো থাকে তাহলে মেয়েটাও
ভালো থাকবে । বুক ভরা অভিমান
নিয়ে সবার সাথে খুব
ভালো থাকার , হাসিখুশি থাকার
অভিনয় করে মেয়েটা । কার
কী এসে যায় তাতে !
.
.
সন্ধ্যাবেলা ঘুম ভাঙে মেয়েটার ।
আজকাল ওর সব নিয়ম কানুন ওলট পালট
হয়ে গেছে । কিছুই
ভালো লাগে না । ওর ঘুম
ভাঙতে দেখে মা এগিয়ে আসে ।
যাক , তোর ঘুম ভাঙলো । মায়ের
খুশি খুশি চেহারা দেখে একটু অবাক
লাগে তার ।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো বাড়িতেই
উত্সব উত্সব ভাব । অনেক মেহমান
এসেছে । মা হাসিমুখে বলেন ,
"রাকিবের বাড়ির
বড়রা আসছে তোকে দেখতে । পছন্দ
হলে আজই আকদ ।
ওতো তোকে আগে থেকেই পছন্দ
করে রেখেছে ।" অবাক হয়ে প্রশ্ন
করে মেয়েটা , কার
কথা বলছো মা ?"
"হায় হায় , ভুলে গেছিস ? তোর
ফিরোজ আঙ্কেলের ছেলে । কদিন
আগে এমবিএ করে ফিরেছে দেশে ।
তোকে না বলেছিলাম কদিন
আগে ?"
অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে মেয়েটার ।
তখন মায়ের
কথা সিরিয়াসলী নেয়নি।
ভূতে পাওয়া মানুষের মত ফোন
হাতে নেয় । ব্যস্ত হাতে ছেলেটার
নাম্বার ডায়াল করে ।
ওপাশে ডায়াল টোন
বাজতে থাকে । একবার । দুবার ।
তিনবার । কেউ রিসিভকরে না ।
.
.
হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে মেয়েটা ।
আবার ডায়ালকরতে থাকে ।
অসংখ্যবার ডায়াল করার পর ফোন
রিসিভকরে ছেলেটা । রিসিভ
করেই ধমকে উঠে , "উফ ,
আমাকেকী একটু শান্তিতেও
থাকতে দিবা না তুমি?" চোখের জল
মুছে ভাঙ্গা গলায় বলে মেয়েটা ,
"আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । প্লিজ
কিছু করো ।"
বিরক্ত হয়ে ছেলেটা বললো ,
তাহলে বিয়ে করো ।
আমাকে বলছো কেন ?
কান্নাভেজা কন্ঠে প্রায় আর্তনাদ
করে উঠে মেয়েটা , বিয়ে করবো !
অন্য কাউকে ! কী বলছো এসব ?
ভুলটা কী বললাম ? বিজি আছি ,
ডিস্টার্ব করো না । ফোন
কেটে দেয় ছেলেটা । আবার ফোন
দেয় মেয়েটা । কেটে দেয় । আবার
ফোন । এবার বন্ধ । ফোন বন্ধ
করে মনে মনে গজ গজ
করতে থাকে ছেলেটা , কোন
কমনসেন্স নেই মেয়েটার । এমনিতেই
এত পড়া আর কাজের
চাপে মাথা ঠিক নাই , আরো যতসব
আজগুবি কথা । কী দেখে যে এই
মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম !
আয়নার সামনে শেষবারের মত
নিজেকে দেখে নেয় মেয়েটা ।
.
.
বিয়ের সাজে অপূর্ব লাগছে ওকে ।
বাবা মা অসম্ভব খুশি । তাদের
থুশী দেখে নিজেরও
ভালো লাগছে ওর । যেই মানুষটার
কাছে ওর কোন মূল্য নেই তার
কথা ভেবে আর কষ্ট
পেতে দেবে না নিজেকে ।
বরং যেই মানুষটা ওর সব কিছু জেনেও
ওকে আপন
করে নিতে চেয়েছে তাকে নিয়ে এখন
থেকে স্বপ্ন দেখবে ও । সব
চোখের জল
মুছে ফেলে প্রতিঙ্গা করলোআর
কাঁদবেনা । রাত এগারোটার
দিকে একরাশ খুশি আর আনন্দ
নিয়ে বিয়েটা হয়ে গেলো।
,
,
সপ্তাহখানেকপর হঠাত্ একদিন ফিল
করে ছেলেটা , ওকে এখন আর কেউ
বিরক্ত করে না । খুশী হওয়ার
বদলে একটু মন খারাপ হয় ছেলেটার ।
সেদিনকী একটু
বেশী বকে দিয়েছিলো মেয়েটাকে ?
মেয়েরা বড় বেশি অভীমানি হয় ।
এখনো নিশ্চয় ঠোঁট
ফুলিয়ে রেখেছে । থাক , আজ নাহয়
ওকেই একটু টাইম দেওয়া যাক । কান
ধরে একবার স্যরি বললেই সব অভিমান
গলে জল হয়ে যাবে । মেয়েটার
নাম্বার ডায়াল
করতে থাকে ছেলেটা । প্রায় তিন
বছর পর এই প্রথম একটা বিশ্রি মেয়েকন্ঠ
বার বার ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে ,
আপনি যে নাম্বারে ডায়াল
করেছেন তা এইমুহুর্তে বন্ধ আছে
,
,
ছেলেটা এখন মস্ত বড় চাকুরিজীবি ।
বাড়ি গাড়ি সম্মানজনক
চাকরি ভালো সেলারি সবই
আছে তার । তবু জীবনটাবড্ড
বেশি ফাঁকা ফাঁকা লাগে । যার
জন্য একদিন ভালো ক্যারিয়ার
দরকার ছিল ক্যারিয়ারের
পেছনে ছুটতে ছুটতে তাকেই
যে হারিয়ে ফেলেছে সে !
,
,
এখনো মাঝরাতে কারো ঘুম
ভেঙ্গে যায় ।
আলতো পায়ে বারান্দায়
এসে দাঁড়ায় সে । একরাশ অভিমান
আর বহু পূরোনো মিষ্টি কিছু
স্মৃতি মনকে দোলা দিয়ে যায় ।
অভিমান
গুলো কান্না হয়ে ঝরে পড়ে ।
মিশে যায় রাতের
কালিগোলা আধাঁরের সাথে
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...