বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
-‘সব জিনিসেরই ভাল-মন্দ দুটিই আছে!’
দার্শনিক পর্যায়ের এই কথা যে কোন বড় মানুষের মুখে মানায়, তবে ক্লাস থ্রি’তে পড়া ছেলের মুখে শুনলে তা একটু কানে লাগে। অবশ্য শ্রোতা যদি কোন অশিক্ষিত রাখাল হয় সেক্ষেত্রে সে অবাক বা বিরক্ত কোনটাই হবে না। কোন কিছু না বুঝেই গম্ভীরভাবে মাথা নাড়বে।
ছোটনের কথা শুনে মন্টুও কিছু না বুঝে মাথা নাড়ল।
ওর মাথা নাড়া দেখে ছোটন যেন আরেকটু উৎসাহ পেল। এতক্ষণ ধরে চুষে খেতে থাকা পাকা আমের আঁটিটি দূরের এক ছাগলের দিকে লক্ষ্য করে মারল। গায়ে লাগতেই ছাগলটা পাগলের মত লাফ দিতেই হেসে উঠল ছোটন। মনোযোগী শ্রোতার দিকে ঘুরে আবার কথা শুরু করল-
-এই দেখ না মন্টু মামা! বিশ দিনের গরমের ছুটিতে দাদুবাড়ি আসলাম, অথচ আম্মু বলল এই ছুটিতে নাকি বাংলা আর ইংরেজি গ্রামার পুরোটা শেষ করতে হবে!! তুমিই বল, ছুটিতে পড়তে ইচ্ছে করে??
-ভাইগ্না, না পড়লে বিলাত যাইবা কেমনে?
-মামা, তুমি সবসময় খালি বিদেশে যাওয়ার কথা বল কেন? আমি বিদেশে যাব না। সব সময় আম্মু-আব্বুর সাথে থাকব।
এর জবাবে কি বলবে ভেবে পেল না মন্টু মিয়া। তার জীবন মূলতঃ ছোটনের দাদাবাড়ির সব গৃহপালিত পশুকে ঘিরেই। দশটা ছাগল আর আটটি গরু একাই দেখা-শুনা করে। নিজের কেউ নেই, এই বাসাতেই ছোটবেলা থেকে আছে। বয়স ৩০-৩২ হলেও দেখে মনে হয় চল্লিশোর্ধ। বিয়ে থা করেনি।
-ছোটন কোথায় গেলি? হঠাৎ বাড়ির ভেতর থেকে মায়ের গলা শোনা গেল।
এক ছুটে ভেতরে চলে গেল ও।
-কি করছিলি এতক্ষণ?
-আম খাচ্ছিলাম আর মন্টু মামার সাথে গল্প করছিলাম। জানো মা, মন্টু মামা নাকি ডুমুরের ফুল নিজের চোখে দেখেছে? বাগধারাতে লেখা ওটার মানে ‘অদৃশ্য বস্তু’ তো তাহলে ভুল, তাই না?
-আর লোক পেলি না! ভাল কথা, আম খেয়ে এখনো হাত ধুস নি কেন? সন্ধ্যা হয়ে গেছে, যা হাত-ধুয়ে পড়তে বস।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোটন বাথরুমের দিকে এগোল।
২।
-আচ্ছা মা ‘গভীর জলের মাছ’ এর অর্থ কিভাবে খুব চালাক লোক হয়?
ছোটনের কথায় দিশা রহমান হাতের লেখা থামাল। পেশায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও অবসর সময়ে লেখালিখির অভ্যাস আছে। অনেকদিন ধরেই ছোটদের একটি উপন্যাস লিখছে ও। ছোটনের স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি হতেই নিজেও বড় ছুটি নিয়েছে, ইচ্ছে আছে উপন্যাসটা শেষ করার। ছোটনের বাবা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করে, দুর্ভাগ্যবশত ছুটি নিতে পারে নি- অফিসে কাজের অনেক চাপ!
ছোটন খাটে বসে পড়ছে, খাটের পাশের টেবিলে দিশা লিখছিল।
-পুকুরের উপর দিকে ছোট ছোট মাছ থাকে। বড়শি দিয়ে কিংবা জাল ফেলে ওদের সহজেই ধরা যায়। কিন্তু যে মাছগুলো একটু বেশি বড় ওরা পানির নিচের দিকে থাকে, সহজে ধরা যায় না। এজন্য, মনে করা হয় ওরা খুব চালাক। তাই চালাক মানুষদেরও গভীর জলের মাছ বলা হয়।
-আমিও তো অনেক চালাক। আমি কোথাকার মাছ, আম্মু?
-তুই হলি পুঁটি মাছ। নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস। আসলে তুই বোকা। গত দু’দিন ধরে কি কি করে বেড়াচ্ছিস ভেবেছিস আমি জানি না? সব জানি। আচ্ছা, গতকাল নাকি উত্তর পাড়ার কামালদের বাড়িতে একটা কৈ মাছকে লাঠি দিয়ে মেরেছিস? কেন?
-বাহ! বইতেই তো লেখা কৈ মাছ নাকি সহজে মরে না, আমি তাই টেস্ট করে দেখছিলাম। আসলেই মরে না! খালি, লাফাতে থাকে!!
-খবরদার এরকম করবি না। তাহলে তোকেই পিটাবো কিন্তু, বলে রাখলাম!!
-ঠিক আছে। এবার বল ‘অর্ধচন্দ্র’ মানে গলা ধাক্কা কেন?
-কাছে আয়। বলে দিশা ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের আদলে করল। দেখে মনে হল ও কিছু ধরতে চাচ্ছে। এবার ছোটনকে দেখিয়ে বলল,
-মানুষ যখন অন্যের ঘাড় ধরে তখন হাতের আঙ্গুলগুলো এরকম থাকে। এটাকে দেখতে কেমন লাগছে?
-উম…’ইউ’ এর মত লাগছে! কিছুক্ষণ চিন্তা করে ছোটন বলল।
-ভেরি গুড। তবে আরেকটি জিনিসের মতনও লাগছে-ঈদের চাঁদের মতন লাগছে না? গত রোজার ঈদে নানু বাড়িতে দেখেছিলি, মনে আছে?
-আরে! তাই তো! ছোটন যেন কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
-অর্ধেক চাঁদের মতন দেখায় বলে একে বলে ‘অর্ধ চন্দ্র’, বুঝেছিস?
-হ্যাঁ, একদম বুঝে গেছি! ছোটনের মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কিছুদিন আগে ওর মাড়ির দু’টি দাঁত পড়েছে, ফলে ফোকলা দাঁতে ওর হাসিটা আরও অনেক সুন্দর দেখা গেল।
৩।
পরদিন দুপুর বেলা।
উঠোনে ছোটনকে এক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল দিশা।
-রোদে দাঁড়িয়ে কি করছিস রে, ছোটন?
-মাথার ঘাম পায়ে ফেলার চেষ্টা করছি, আম্মু। খুব কঠিন কাজ!
নিচে নেমে কানটা ধরে ওকে ঘরে নিয়ে গেল দিশা।
-মাথার ঘাম এভাবে পায়ে ফেলে? তোকে নিয়ে আর পারি না!! মাথার ঘাম পায়ে ফেলা মানে কঠিন পরিশ্রম করা। কৃষক, কামার, কুমার, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা…এরা সবাই যখন শারীরিক পরিশ্রম করে তখন ঘাম মাথার উপর থেকে চুল বেয়ে ধীরে ধীরে নিচে পড়তে থাকে। এটাকেই বলে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা। ইচ্ছে করে রোদে দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে ফেলা না!
বলতে বলতে কান ছেড়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে ওর কপাল, চোখ, মুখের ঘাম মুছে দিল দিশা।
-এমনি দাঁড়িয়ে ফেলাও অনেক কঠিন। অনেকক্ষণ ধরে নিরিখ করেও পায়ে ফেলতে পারলাম না! ছোটনের মুখটা রোদে একেবারে লাল হয়ে আছে।
-আজ থেকে আপাতত তোর বাগধারা পড়া বন্ধ। এই বাগধারা পড়তে গিয়ে কি করতে, কি করবি- কে জানে! আর এখন থেকে কোথাও যাবার আগে আমাকে বলে যাবি। তোর চিন্তায় আমার কোন কাজ এগোচ্ছে না! মনে থাকবে?
-কিন্তু অন্য কিছু তো বাগধারার মত মজার না!
-না হলে নাই! তোর বাবার সাথে এসব মজা করে পড়িস। এখন বাগধারা পড়া বন্ধ। ব্যাস!
ছোটনের মুখটা ভার হয়ে গেল!
৪।
দুপুরের খাওয়ার পর ইংরেজি গ্রামার পড়ছিল ছোটন। একেবারেই ভাল লাগছিল না! মা’কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি চাপল। আস্তে করে উঠে ব্যাগ থেকে বাংলা ব্যাকরণ বই বের করল। বাগধারার চ্যাপ্টার বের করে পড়তে শুরু করল। এরপরের বাগধারাটি লেখা আছে ‘পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া!’ অর্থ লেখা অন্যকে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করা। এত কঠিন অর্থ!! পুরোপুরি বুঝতে পারল না।
চট করে মনে পড়ল দাদুর খাটের নিচে কয়েকটি কাঁঠাল রাখা আছে! এরমধ্যে একটি নাকি পেকেও গেছে। আজকে রাতে ভাঙ্গা হবে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।
কয়েক মিনিটের মধ্যে ছোট পাকা কাঁঠালটি হাতে করে মন্টু মামার খোঁজ করা শুরু করল। আশা করছে মামা ঘুমিয়ে আছে!!! তাহলে, হেব্বি একটা এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে!
ওর মুখে আবার সেই বিখ্যাত সেই ফোকলা দাঁতের হাসি দেখা গেল!
লেখক: জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now