বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গিটারের ছেঁড়া তার

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান আরমান হোসেন (০ পয়েন্ট)

X গিটারের ছেঁড়া তার .. .. নীলা তাদের সদ্য নতুন নির্মিত তিনতলা বাড়ির ছাদে বসে আছে। মাত্র চারদিন হলো তারা এই বাড়িতে উঠেছে। গরমে মোটামুটি সেদ্ধ হওয়ার অবস্থা সবার। ঘরের ভেতর কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছিল তার। তাই নীলা তাদের ছাদে উঠেছে। তবে উঠে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। ছাদে একটু বাতাসও নেই। তবে লাভ এতটুকুই যে, দমবন্ধ ভাবটা এখন কেটে গেছে নীলার। সে একমনে ফেসবুকের দুনিয়ায় তার বন্ধুদের সাথে আলাপে ব্যস্ত। এদিকে কখন যে রাত সাড়ে সাতটা বেজে গেছে তা সে টেরই পায়নি। .. হঠাৎ একটা শব্দ শুনে নীলা চমকে উঠলো। শব্দটা তার খুবই পরিচিত। এই শব্দের মোহে পড়েই সে একসময় কোন একজনকে ভালবেসেছিল। গিটারের শব্দ। প্রথমে একটু টুং টাং শব্দ, তারপর শব্দটা থেমে গেল। শব্দটা আসছে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে। নীলাদের ছাদ আর পাশের বাড়ির ছাদ প্রায় একসাথে লাগানো। চাইলেই এই ছাদ থেকে ওই ছাদে চলে যাওয়া যায়। কিছুক্ষন পর আবারো সেই গিটারের শব্দ ভেসে এলো। এখন একটানা বেজে চলেছে। খুবই করুন একটা সুর ফুটে উঠেছে গিটারের মাধ্যমে। নীলা তন্ময় হয়ে শুনতে লাগলো এই গিটারের সুর। একসময় সে তলিয়ে গেল অতীতের অতলে। .. আবির কলেজের সবচেয়ে স্মার্ট আর সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। সে সবার সাথে খুব সহজেই মিশতে পারে। আর তার সবচেয়ে বড় গুন ছিল তার গিটার বাজানোর পারদর্শীতা। মটরবাইক এবং গিটার, মেয়েদের পাগল করে দেওয়ার জন্য এই দুইটা জিনিসই একটা ছেলের জন্য যথেষ্ট। আর আবিরের এই দুইটা জিনিসই ছিল। আবিরের জন্য কলেজের অনেক মেয়েই পাগল ছিল। নীলাও ছিল তেমনি একজন। আবিরের গিটারের সুর তার হৃদয়ে এক অপরিচিত শিহরনের সৃষ্টি করতো। যার টানেই নীলা আবিরের প্রেমে পড়ে যায়। .. তবে নীলা অন্য মেয়েদের থেকে একটু আলাদা ছিল। সে সরাসরি তার ভালবাসার কথা আবিরকে বলেনি। সে প্রথমে আবিরের সাথে বন্ধুত্ব করেছে। তারপর ধীরে ধীরে সে আবিরকে তার মনের কথা প্রকাশ করেছে। .. তারপর থেকেই শুরু তাদের পথচলা। হাতে হাত রেখে হাঁটা, বাদাম খাওয়া, রাতভর ফোনে কথা বলা ছিল তাদের প্রতিদিনের রুটিন। এভাবেই হয়তো এগিয়ে যেতে পারতো তাদের ভালবাসার গল্পটা। কিন্তু না, গল্পটা কিছুদিন পর একটা অন্য রাস্তায় মোড় নেয়। তাদের সম্পর্কের কিছুদিন পর থেকেই নীলা লক্ষ্য করলো আবিরের মাঝে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সে এখন তাদের সম্পর্কটাকে অন্য দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। অর্থাৎ রুম ডেট। নীলা যথাসম্ভব এসব থেকে দূরে থাকলো। যার ফলে একসময় আবির নীলাকে এড়িয়ে চলতে লাগলো। ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করেও নীলা আবিরকে ফোনে পেত না। সে তখন অন্য কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। এভাবে আর কতদিন চলে? তারপর একদিন হয়েই গেল তাদের ব্রেকআপ। তারপর নীলার চোখের সামনে থেকে একের পর এক সরে যেতে লাগলো সকল পর্দা। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটি রঙ্গমঞ্চ। যেখানে অভিনেতা আবির, কিন্তু অভিনেত্রী একেক সময় একেকজন। যেমনটা কিছুদিনের জন্য ছিল নীলা। নীলা অনেক কেঁদেছিল সেদিন। কারন মিথ্যা ভালবাসার মোহে সে তার সত্য ভালবাসাকে দূরে ঠেলে দিতে একটুও দ্বিধা করেনি। .. - কিরে আপু আম্মু তোকে সেই কখন থেকে খুঁজছে। আর তুই এখানে? চল নিচে চল। অতীতের অলিগলিতে যখন নীলা হাঁটছিল তখনই তার ছোটবোন রুনু এসে তাকে উপরের কথাটা বললো। অগত্য নীলাকে অতীত থেকে বর্তমানে নেমে আসতে হলো। - আম্মু খুঁজছে? আচ্ছা চল নীচে যাই। নীচে নেমে যাওয়ার আগে নীলা আরেকবার পাশের ছাদের দিকে নজর বুলিয়ে নিল। কিন্তু নাহ কাউকেউ দেখা যাচ্ছে না। তবে গিটারের শব্দটা এখনো চলছে। .. পরদিন নীলা বিকেলে তার ছোটবোনকে নিয়ে ছাদে উঠে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করলো। যেহেতু এলাকায় তারা নতুন সেহেতু এখানের কাউকেই সে চেনেনা। বিকেলবেলা খুবই একঘেয়ে হয়ে উঠছে নীলার কাছে। একটু পরেই পাশের বাড়ীর ছাদের দিকে নজর গেল নীলার। একটা মেয়ে হাতে গিটার নিয়ে ছাদে উঠেছে। মেয়েটা নীলার থেকে তিন বছরের ছোট তো হবেই। তারমানে মেয়েটাই এই গিটার বাজায়। নীলার মন চাইলো মেয়েটার সাথে একটু আলাপ করতে। .. - এইযে গিটারের রংটা খুবই সুন্দর। নীলা পাশের ছাদের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো। মেয়েটা কিছুক্ষন নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, - ধন্যবাদ। আমি তানিয়া, আপনার নাম কি? - আমি নীলা। - আসুন আমাদের ছাদে। আপনারা এখানে নতুন এসেছেন। আপনাদের সাথে আরো আগেই পরিচিত হওয়ার দরকার ছিল। - আচছা আসছি। .. নীলার বোন রুনুকে নীচে পাঠিয়ে দিয়ে নীলা পাশের ছাদে চলে গেল। - তানিয়া, তুমি তো খুব সুন্দর গিটার বাজাও। কার কাছ থেকে......। - আরে আমি তো গিটার বাজাতে পারিনা। আমি শুধু একটু টুং টাং শব্দ তুলতে পারি। এর বেশি কিছু না। - তাহলে গতকাল সন্ধ্যার দিকে কে বাজাচ্ছিল? - আমার ভাইয়া বাজায়। - ওওওও। আমি মনে করলাম তু................ .. নীলার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই কেউ একজন জোরে তানিয়ার নাম ধরে হাঁক দিল। - ওইতো ভাইয়া আসছে। দাঁড়ান আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। - আচ্ছা। .. তানিয়ার ভাইকে দেখে নীলা সম্পূর্নরুপে হতবাক হয়ে গেল। নীলা ঠিক যতটা অবাক হয়েছে ঠিক ততটাই অবাক হয়েছে তানিয়ার ভাই নিজেই। কারন কেউই আশা করেনি যে প্রায় দুইবছর পর তাদের দুজনের আবারো দেখা হবে। .. নীলা যেমন আবিরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, ঠিক তেমনি নীলার প্রেমেও আরেকজন হাবুডুবু খাচ্ছিল। কলেজের সবচেয়ে বোকা আর ক্ষেত বলে পরিচিত রায়হান। যে কিনা নীলার প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিল। আর নীলা আবিরের প্রেমে। রায়হান সচরাচর কারো সাথে খুব একটা কথা বলতো না বা কেউ ওর সাথে কথা বলতে চাইতো না। কারন বর্তমানে এই স্টাইলের যুগে কে এমন ঢোলা শার্ট আর প্যান্ট পরে? কে চুলে এমন জবজবে করে তেল মেখে আসে? চোখের চশমাটাও ছিল দেখার মত। ভারি ফ্রেমের উপর ভারি কাঁচ। রায়হান ছিল ক্ষেতের পুরো কমপ্লিট প্যাকেজ। আর এই রায়হান প্রেমে পড়লো কিনা কলেজের সেরা পাঁচ সুন্দরী মেয়েদের একজনের, ভাবা যায়? .. রায়হান মাঝে মাঝে কথা বলার চেষ্টা করতো নীলার সাথে। কিন্তু নীলা পাত্তা দিত না। শুধু নীলা কেন? কলেজের কেউই রায়হানকে পাত্তা দিত না। এভাবেই এগিয়ে চলতে লাগলো রায়হানের না বলা ভালবাসার গল্প। তবে সবকিছুর একটা সীমা আছে। ঠিক তেমনি মনের কথা পেটে চেপে রাখার ও একটা সীমা অব্যশই আছে। রায়হান সেই সীমা পার করে ফেলেছে। সে তাই একদিন বাধ্য হয়েই নীলাকে তার ভালবাসার কথা বলেছিল। তারপর কি হলো জানেন? কি হলো সেটা না বলে শুধু এতটুকুই বলতে পারি যে, কোন মেয়েকে প্রোপোজ করার জন্য যে এতটা অপমানিত হতে হবে তা হয়তো রায়হান জানতোই না। নীলা সেদিন রায়হানকে চরম পরিমানে অপমান করেছিল। তারপর থেকে নীলা আর কখনো রায়হানকে কলেজে দেখেনি। নীলা সেদিন আবিরের প্রেমে অন্ধ হয়েই রায়হানের ভালবাসাকে অপমান করেছে। এটাই ছিল সত্যিকার ভালবাসা। .. - কি ব্যাপার ভাইয়া এভাবে হা করে কি দেখছিস? তানিয়ার কথায় নীলা এবং রায়হান দুজনেই অতীত থেকে বর্তমানে নেমে এলো। আর সাথে সাথেই রায়হান অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। নীলা আর তানিয়া অবাক। এমন বিদঘুটে হাসি তারা হয়তো কখনো দেখেনি। - কিরে ভাইয়া হাসছিস কেন? - তানিয়া জানিস গিটারের তার যখন ছিড়ে যায় তখন কি হয়? - নাহ জানিনা ভাইয়া। - তার ছিড়ে গেলে সেই ছেঁড়া তার ফেলে দিয়ে নতুন আরেকটা তার লাগানো হয়। তখন আর পুরনো তারের কোন মুল্যই থাকেনা। - এসব কেন বলছিস? - নাহ এমনি বললাম। দে আমার গিটার দে। .. তানিয়া হয়তো বুঝতে পারেনি এই গিটারের ছেঁড়া তারের ব্যাপারটা। কিন্তু নীলা ঠিকই বুঝেছে। নীলা হচ্ছে সেই তারের মত যে কিনা বেশকিছুদিন গিটারের মালিকের ইচ্ছায় বেজেছে। কিন্তু যখনই তার প্রয়োজন শেষ তখনই তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। নীলা তো নিজেই গিটারের সেই ছেঁড়া তারের মতই যে আবিরের ভালবাসায় হাবুডুবু খেয়েছে কিন্তু যখনই আবির বুঝতে পারলো যে নীলার থেকে সে কিছুই পাবেনা তখনই নীলাকে ছুড়ে ফেলেছে অবহেলার কারাগারে। .. আসলে বাস্তবতা এমনই। ভাল মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেনা, আর খারাপ মানুষ ভাল মানুষদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে দেয় না। সত্যিকারের ভালবাসা হালে পানি পায় না আর শুধু শরীরের ভালবাসাই বর্তমানে রাজত্ব করে সবখানে। এটাই বাস্তবতা, এটাই জীবন। .. লেখকঃ আরমান হোসেন


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৬৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • HM.RAFAY
    User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বে
    golpota valo chilo

  • আবরার রাহমান
    Guest ৬ বছর, ২ মাস পুর্বে
    খুব সুন্দর...