বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নন্দিনী (পর্ব-৩)

"রোমাঞ্চকর গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Sayemus Suhan (০ পয়েন্ট)

X এক তরফা গালি কারই বা ভাল্লাগে। ডিব্বার ক্ষেত্রে সেটিই হলো। আমার হাসি দেখে গালি থামিয়ে মুখ ভেংচি কেটে চলে যায় আমার রুম থেকে। টিয়াও হাসছে ওসব দেখে। দুইটাই জমজ বোন হলেও মনে হয় আলাদা দুই মেরুর প্রাণী। টিয়া সবার সম্মুখে পুরোটা সাধু মানুষ যদি ভেতরে ভেতরে শয়তানের হাড্ডি! আর অপরদিকে আদিবা থুক্কু ডিব্বা প্রচন্ড রাগি, অভিমানী, সাথে রগচটাও। যদি পুরোপুরি ক্ষেপে যায় তাহলে মাথাটা তার ঠিক থাকেনা। যা সামনে পাবে সবকিছু ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে ফেলবে, এরফলে রাগ নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। তবে একদিকে বোন দুটির অনেক মিল আছে, তাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া লাগেনা। দুজনেরই খুব ভাব। ঝগড়া শুধু আমার সাথেই করে। তাই বলে এটা ভাববেন না, আমার বোনরা ঝগড়াটে, বা খারাপ। সত্যি বলতো আমার বোনরা অনেক লক্ষী। হ্যা এটাই সবচেয়ে বড় সত্য কথা। যাক ওদিকে আর না যাই। রাত অনেক হয়ে গেছে। আমার কাঁপুনি অনেক কমে গেছে। মা এসে ডাক দিলেন, রাতের খাবার খেয়ে নাকি মাকে উদ্ধার করতে হবে। সত্যিই তো এই শীতের রাতে কতক্ষণ জেগে থাকা যায়। যত তাড়াতাড়ি বিছানায় এসে কম্বলের নিচে আশ্রয় নেয়া যায়, সেদিকেই সবার খেয়াল থাকে। আমি যে অলরেডি কম্বলের নিচে আছি। উঠতে মন চাইছেনা। না খেয়ে ঘুমানোও যাবেনা। মা এসে জোর করে তুলে খাওয়াবেনই। মাকে কষ্ট দিয়ে লাভ নাই, তার চেয়ে বরং উঠে পড়ি। যেমনি কম্বলটা উপর থেকে সরিয়ে নিলাম, ওমনি শীত এসে জাপটা মেরে আমাকে আঁকড়ে ধরল। কোনো রকম ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম। মা খাবার এনে দিলেন। যত কম খাবো ততই মঙ্গল, তাড়াতাড়ি কম্বলের নিচে যাওয়া লাগবে। যে শীত লাগছে, মনে হচ্ছে আস্ত একটা বরফের চাকা এসে আমাকে বন্দি করে রাখছে। খাওয়া শেষ করে চলে আসলাম রুমে। কোনো দিকে না তাকিয়ে সরাসরি বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লাম। কম্বলটা অনেক কষ্টে গরম করছিলাম এখন আবার ঠান্ডা হয়ে গেছে। কেঁপে কেঁপে কম্বলের নিচে শ্বাস ছাড়ছিলাম, যাতে তাড়াতাড়ি উনি গরম হয়ে আমাকে একটু শান্তি দেন। এখন বুঝতে পারছি, বেশিরভাগ মানুষ কেনো এই শীতের সময়ে বিয়ে করে? শরমের কথা! আর বলবো না। যাক, শরীরটা গরম হয়ে আসছে। একটু শান্তিতে ঘুমানো যাবে। মৃদু ঘুমটাও চলে আসলো চোখে। মনের আনন্দে চোখের পাতা এক করলাম। ঘুমটা আসতে না আসতেই আবার ভেঙ্গে গেল। তবে আমি ইচ্ছা করে ভাঙিনি। আজকের দিনে ঘটে যাওয়া সেইসব অদ্ভুতুড়ে ঘটনা আমার চোখ দুটিকে এলোমেলো করে দিল। চোখে কিনারে মনের কল্পনাতে নন্দিনী নামের কেউ একজন নাড়া দিয়ে ওঠে। কি মায়াবী মুখ, অপ্সরীকে হার মানানো সেই দুটি চোখ। কম্পন দেয়া ঠোট গুলো যেন বিশ্বের সেরা আবেদনময়ী। আর হাসির তো কোনো তুলনাই নেই। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্জির আঁকা মোনালিসা ছবিটিতে যে হাসি ছিল, এতোদিন এটাই মনে করতাম আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর হাসি। কিন্তু আজ নন্দিনীর হাসি দেখে মনে হলো, আমি যা ভাবতাম সেটা আসলে ভুল। মোনালিসার ওই মৃদু হাসির মায়াজালকে হার মানাতে নন্দিনীই যতেষ্ট। চেহারার সাথে খাপ খাইয়ে কি সুন্দর ভাবে কথা বলে, হাঁটতেও দেখেছি আমি, কি সুন্দর করে হাঁটে। সব কিছু মিলে পারফেক্ট একটা মেয়ে। যেকারোই ক্রাশ। এখন মনে হয় আমিও ক্রাশ খেয়ে ফেললাম। হ্যা সত্যিই তো নন্দিনীকে এখন খুব মনে পড়ছে। মানুষ বলে এটা তো প্রেমে পড়ার পূর্বলক্ষণ। আর প্রেমে না পড়ার কোনো কারণও দেখছিনা। একটা মেয়ে হয়েও সামান্য একটা ভুলের জন্য এতোক্ষণ অপেক্ষা করলো আমার জন্য। আমার মনটাই কেড়ে নিল! এক দেখাতেই ভালোবাসা! বিষয়টা নিজের কাছেও অদ্ভুত মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই, প্রেমে তো পড়ে গেছি। তবে এখনও জানি না, নন্দিনীর সাথে আমার প্রেম হবে কিনা? আগেই তো একজনকে এরকমই ভালোবেসেছিলাম, কিন্তু যেইদিন প্রপোজ করলাম ঐদিনই ঐদিনই সে আমাকে বিয়ে কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ করে! প্রেম করার আগেই ছ্যাকা খেয়ে এতোদিন খুব ভালোই ছিলাম। কিন্তু আজ আবার নন্দিনী এসে আমার মনে ঝড় তুলে ফেলল। বুঝতে পারছিনা আমার কি হবে? হয়তো আরেকটা ছ্যাঁকা আমার জন্য অপেক্ষায় আছে। তবে যাইহোক, মনিষীগণ বলে গেছেন যেকোনো কাজের জন্য চেষ্টা রাখতে, তাহলে একদিন সুমিষ্ট ফল আসবে। আমি এটাই বিশ্বাস করে এগিয়ে যাবো। ঘড়ির দিকে তাকালাম, রাত ১টা বেজে গেছে। আমার মতো ঘুমবাবুর ঘুম নেই চোখে! মোবাইল হাতে নিয়ে ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম। আমার ঘুম না আসলে এই পদ্ধতিটাই সবচেয়ে বেশি কাজ করে। এবারো কাজ হলো, গান শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়ি। শীতের সময়ের একটা দোষ হলো কাজ না থাকলে খুব ভোরে জেগে ওঠতে কোনো ইচ্ছেই হয়না। তাই সকাল ৯.৩০ মিনিটে ঘুম থেকে ওঠলাম। সামান্য নাস্তা করে ব্যাট হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম খেলার উদ্দেশ্যে। পুকুরপাড়ে রাস্তার সামনে যেয়েই দেখি তপু আসছে আমাদের বাড়ীতে। এতোক্ষণ নন্দিনীর কোনো কথা আমার মনে ছিলনা। তপুকে দেখে মনে পড়ে গেল। তপু আমার সামনে এসে দাড়ায়। তারপর বলে, 'কিরে খেলাতে যাচ্ছিস নাকি?' 'হ্যা, তুই যাবিনা' 'তুই কি জানিস না? আজকে সকালে যে খেলা হবে না।' 'ওহ সিট্ট, আমি পুরোটাই ভুলে গেছি' 'এখন কি করবি?' 'কি আর করবো? চল দুজন মিলে ঘোরাঘুরি করি' 'আচ্ছা ঠিক আছে, পরে ঘুরবো। আগে তোর বাড়ী চল, খালাকে দেখে আসি' 'হ্যা চল' তপুকে নিয়ে বাড়ীর দিকে যাচ্ছি। মনে মনে ভাবছি, তপু কি আসলেই মাকে দেখতে আসছে নাকি আমার বোন টিয়ারে পটাইতে আসছে? আমি কয়েকদিন যাবত লক্ষ্য করতেছি, তপু টিয়ার পেছন পেছন ঘুরছে, আর কেমন লোভী চোখে তাকাচ্ছে। তপু অনেক ভালো ছেলে, টিয়ার সাথেও বেশ ভালো মানাইতো। কিন্তু তপু ভুল জায়গা এসে পড়েছে। আমার বোনকে পটাইতে পারবে বলে মনে হয়না। প্রেমটেম কিছুতেই বিশ্বাসী নয় টিয়া। আগেও দুজন দুর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই আমাদের বাড়ীতে এসে তাকে প্রপোজ করছিল, তারপর ছলে বলে কৌশলে টিয়া ওদেরকে উঠোনে এনে দাঁড় করিয়ে চিৎকার করে সবাইকে জানিয়ে দেয়! আত্বীয়রা লজ্জায় আমাদের বাড়ী ত্যাগ করে। আর কখনও আমাদের বাড়ীতে তাদেরকে দেখতে পাইনি। তপুর কপালেও হয়তো এসবই লেখা। মামুর বেটা যদি ডিব্বাকে পছন্দ করতো তাহলে হয়তো প্রেম করতে পারতো। তপুর ভবিষ্যতে যে খারাপ সময় অপেক্ষা করছে সেটা ভেবে তার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম। অবুঝ ছেলেটার জন্য টিয়া কতবড় বাঁশ তৈরি করছে, সেটা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। দুজনই বাড়ীতে আসলাম। ব্যাট বারান্দায় রেখে রুমে গিয়ে বসলাম। তপু এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। মানে টিয়াকেই খুজছে। আমি কিছু না বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম। মনে মনে তপুকে বলতে লাগলাম, ‘যতই এদিকে সেদিক করো বন্ধু টিয়াকে আজকে দেখবেনা, টিউশনিতে অনেক আগেই চলে গেছে’ তপু আমাকে রুমে রেখে ‘খালাকে দেখে আসি’ বলে চলে গেল রান্নাঘরে। একটু পর চলে আসে আবার। মুখ কিছুটা মলিন দেখা যাচ্ছে। আমাকে এসে বলল, ‘কিরে সায়েম খালা কোথায় গেছেন? কোনো রুমেই দেখলাম না যে।’ ‘হয়তো ডোবাতে গেছেন, চল সেখানে যাই’ ‘নাহ, ডোবাতে যেতে ইচ্ছে করছেনা। আচ্ছা আদিবাকে দেখলাম ভাবীর সাথে বসে গল্প করছে কিন্তু টিয়াকে দেখলাম না, সে কই?' হ্যা দোস্ত এইবার লাইনে আসছো। আমি যেটা ভাবছিলাম সেটাই ঠিক। যাইহোক তার উত্তরটা দিয়ে দেই। বললাম, ‘টিউশনিতে গেছে’ 'ও আচ্ছা, চল এখন আমরা কোথাও থেকে ঘুরে আসি।' ‘কেনরে? তুইতো আসলি মায়ের সাথে দেখা করার জন্য, এখনকি দেখা করবিনা?’ ‘অন্য একদিন আসবো এখন চল’ দুজনই বেরিয়ে আসলাম বাড়ী থেকে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে সময় কাটাচ্ছি। গল্প করে করে দুজনই কালকের ঐ জায়গাতে এসে পৌছালাম। পাশ থেকে তপুকে কেউ ডাক দিল, "তপু ভাইয়া, একটু দাড়ান" সুমিষ্ট কণ্ঠ শুনে তাকাই ওইদিকে, এই তো নন্দিনী আসছে। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৯০৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now