বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নন্দিনী(পর্ব-১)

"রোমাঞ্চকর গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Sayemus Suhan (০ পয়েন্ট)

X দুপুর বেলা কঠিন রোদের তাপ সহ্য করতে না পেরে খেলা বাদ দিয়ে বাড়ীর দিকে চললাম। সাইকেলটাও বেশি ভালো না, পেডেল মারতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। খেলার মধ্যে যতটা ক্লান্ত হয়েছিলাম তারচেয়েও বেশি ক্লান্তি অনুভব করছি। আর মনে হয় সাইকেল চালানো সম্ভব হবে না। হঠাৎ পড়ে গেলাম। মাথা ফেঁটে রক্ত বেরোতে লাগলো। মাথার মধ্যে তো কোথাও আঘাত লাগেনি? তাহলে রক্ত বের হচ্ছে কেন? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। ভূত টুত আছে নাকি এখানে? পাশে তাকিয়ে দেখি কলা পাতার আড়াল থেকে কেউ একজন বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে একজন মেয়ে। "হ্যা সত্যিই তো একজন মেয়ে"। হাতে পাখি মারার কাটের বন্দুক । সামনে এসে, 'এই আপনার নাম কি?' 'আজব তো আপনাকে বলবো কেন?' 'বলবেন নাকি মাথা ফাটায়া দিমু' কিছুটা ভয় পেয়ে বলে দিলাম, 'সায়েম আমার নাম' 'আমি নন্দিনী' 'আমি কি আপনার নাম জিজ্ঞাসা করেছি?' 'আমি জানি, পরে জানতে চাইবেন। তো মিস্টার, টাকা বের করেন!' 'টাকা! কিসের টাকা?' 'ওই যে ওইখানে একটা পাখি বসা ছিল, আমি ঢিল ছুড়ছিলাম পাখিটি মারবো বলে কিন্তু আপনি সাইকেল নিয়ে ওইদিকে যাইতেছিলেন, যেমনি ঢিল ছুড়লাম ওমনি আপনার মাথায় গিয়ে পড়লো! আপনি সাইকেল থেকে পড়ে গেলেন, পাখিটি ভয় পেয়ে চলে গেল। এখন ওই পাখিটি বাবদ ১০০ টাকা আমাকে দিবেন! টাকাটা বের করেন তাড়াতাড়ী।' 'ও, তাহলে আমার মাথা ফাটানো চৌধুরী সাহেব আপনি? মাথা তো ফাটালেন, রক্তও বের করলেন। আবার উল্টো আমার কাছে টাকা দাবি করছেন! কি আজব রে বাবা? টাকা চাওয়ার কথা ছিল আমার, আর সে কিনা, আপনি চাচ্ছেন আমার কাছে! এটা তো রীতিমত ঢাকাতি'। 'ওই ছেলে এতো বকবক কইরো নাতো! টাকা না থাকলে পরে একদিন দিয়ে যাইয়ো, এখন তাড়াতাড়ীতে বাড়ীতে যাও মাথা ফেটে সত্যি অনেক রক্ত বের হচ্ছে।' মেয়েটি চলে গেল। কিছুদূর গিয়ে ফিরে তাকালো, "চরি" বলে মুচকি হেসে দৌড়ে পালালো। "সরি" না বলে "চরি"! আবার আমার সাথে টিটকারি! কি পাঁজি মেয়েরে বাবা? 'উফফ' মাথায় খুব ব্যাথা করছে। সাইকেলে চড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। হেঁটে হেঁটে সাইকেল নিয়ে রওনা হলাম। এমন রক্ত যাওয়া শুরু হইছে, মনে হচ্ছে এখনই অজ্ঞান হয়ে পড়বো। চোখের দুটি পাতা এক হওয়ার জন্য যারপরনাই লেগেছে, মনের জোরে এক করতে দিচ্ছিনা। দিলেই তো সর্বনাশ। এখানে পড়ে গিয়ে শুয়ে থাকতে হবে। কষ্ট করে বাড়িতে পৌছালাম। মা বোনদেরকে নিয়ে নানার বাড়ীতে বেড়াতে গেছেন। বাড়ীতে আমি একা। কিভাবে মাথাটা ব্যান্ডেজ করবো? বুঝতে পারছিনা। 'আইডিয়া' 'পাশের ঘরের ভাবি আছেন', আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হলেন আমার ভাবী। জীবনের সব পদক্ষেপেই তার কাছ থেকে আইডিয়া নেই। ভাবীর ঘরে গেলাম, 'কিরে সায়েম, তোর মাথায় রক্ত কেন? কোনো আকাম করে আসছোস নাকি '? 'না ভাবি, কিছু করিনাই আমি। একটা ঢাকাতনী আমার মাথায় ঢিল মেরে মাথা ফাটায়া দিছে'। 'কও কি দেবর সাহেব! কোন ঢাকাতনীর কাছে গিয়েছো'? 'ধুর ভাবী, তুমিও ফাজিল মেয়েটার মত ফাজলামি করতেছো? ব্যাথা করছে, ওষুধ একটু লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দাও'। 'আচ্ছা ব্যান্ডেজ না হয় করলাম, কিন্তু ব্যাপারটা কি আমাকে একটু খুলে কওতো?' 'ব্যান্ডেজ করো আগে, তারপর বলছি।' ভাবী আমার মাথার ঢিল মারা জায়গাটা পানি দিয়ে ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করলেন। তারপর কোথা থেকে কয়েকরকম গাছের পাতা এনে থেঁতো করে, আক্রান্ত জায়গা বসিয়ে দিলেন। খুব ঠান্ডা লাগছে আক্রান্ত স্থানে। এরপর ভাবী মাথা ব্যান্ডেজ করে দিলেন । বাপরে বাপ এখন জ্বালা শুরু হইছে। সহ্য করা সম্ভব হচ্ছেনা। ভাবীকে বললাম, 'ভাবী কি ওষুধ লাগাইছো? আমার মাথাটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।' 'একটু সহ্য করো দেবর সাহেব, কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বালা পোড়া কমে যাবে।' সহ্য করে, দাঁতে দাত চেপে রেখে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। সত্যি ভাবীর দেয়া ওষুধের গুন আছে। এখন আরাম লাগছে দেখছি। ভাবী এবার জিজ্ঞাসা করলো, 'কি করছিলা দেবর বাবু? যে মেয়েটা তোমার মাথা ফাটাইলো' শোনো তাহলে, 'আমি খেলা শেষ করে বাড়ীর দিকে ফিরছিলাম, কিছু রাস্তা আসার পর আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সাইকেল চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎ মাথা ঝিমম করে উঠে, তাৎক্ষণিকভাবে আমি মাটিতে পড়ে যাই। সাইকেল ছেড়ে দিয়ে একটি গাছে ধরে দাড়িয়ে থাকি। আমার মাথার কোথাও আঘাত লাগেনি। কিন্তু দেখি মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে! অবাক হয়ে যাই আমি। পাতার ঝড়ঝড় শব্দ শুনে পাশের দিকে তাকাই। দেখি একটা মেয়ে বের হচ্ছে। হাতে কিছু পাথর আর একটি কাটের বন্দুক। আমার কাছে এসে নাম জিজ্ঞাস করে, আমি প্রথমে বলিনি কিন্তু যখন পাখি মারার বন্দুক উচিয়ে আমাকে হুমকি দেয়, যদি আমি না বলি তাহলে আমার মাথা ফাটায়া দিবে! ভয় পেয়ে নাম বলে দেই। দ্রুততার সাথে তার নামও আমাকে বলে দেয়, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিনি। এরপর আমাকে বলে, তাকে নাকি ১০০ শত টাকা দিতে হবে! আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, টাকা কেনো দিবো? আমাকে বলে, তার পাখিটি নাকি আমি মারতে দেই নি, সে ঢিল দিয়ে একটি পাখিটি মারতেছিল, আমি তখন সামনে এসে পড়ি আর ঢিলটি আমার মাথায় লাগে! আমি পড়ে যাই, পাখটি চলে যায়।এর জন্য জরিমানা স্বরুপ এই টাকা দিতে হবে! আমি তখন আরো কি যেন বলছিলাম মনে পরছেনা, তবে তার একটি কথায় আমার মাথায় এখনও চুলকাচ্ছে। যখন মেয়েটি চলে যাচ্ছিল, তখন আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে ব্যঙ্গচিত্রে আমাকে "সরি" না বলে "চরি" বলে চলে যায়। এটা কি ঠিক হলো ভাবী তুমিই বলো' ভাবী হাহাহা করে হাসতে লাগলেন। আর সেজন্য আমার রাগ অনেক বাড়ছিল। বুঝতে পেরে ভাবী পরোক্ষণে হাসি থামিয়ে নিলেন। আমাকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, 'আচ্ছা সায়েম বলতো, মেয়েটি দেখতে কেমন?' আমি বুঝতে পারলাম, ভাবীকে যদি এবারোও সত্য কথাটা বলি তাহলে নিশ্চয় আরো বেশি ফাজলামি করবেন। তাই মিথ্যা বললাম, 'দেখতে খুব বাজে, এরকম কালো, নাক মোটা মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনাই' 'ছিছিছি, আর ঐ পথ দিয়ে যাস নারে ভাই। যদি মেয়েটি কোনোভাবে তোকে পটাইয়া ফেলে, তাহলে সর্বনাশ।' 'আচ্ছা ভাবী যাবোনা' বলে চলে আসলাম ঘরে। আসলে মেয়েটি সম্পর্কে এতো বাজে মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। দেখতে কত সুন্দর মেয়েটা। যেন রাতের আঁধারে ঝলসানো এক পরী। নামটাও কি সুন্দর,"নন্দিনী"। শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলাম। পেটে খুব ক্ষিধা লাগছে, কিছু না খেয়ে থাকাটা আর সম্ভব হবেনা, মনে হচ্ছে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি কিছুই রান্না করা নেই। নিজেও রান্না করতে পারিনা। মা কেন যে দুইটা বোনরে নিয়ে চলে গেল নানা বাড়ীতে। টিয়াকে রেখে গেলেই তো হতো, ডিব্বা থুক্কু আদিবা জানি ওইসব রান্না বান্না কিছুই করতে পারেনা। আস্ত একটা আলসে বান্দর। সারাদিন টিভি দেখা আর সুযোগ পেলে আমাকে বিপদে ফেলানোর ধান্দা করা এই নিয়েই থাকে সবসময়। যাক ওইসব আর না বলি। পেটে ক্ষিধা লাগছে, আগে তার মধ্যে কিছু দিতে হবে। ভাবীর ঘরে আবার গেলাম। ভাবী বিছানা পরিষ্কার করছেন।বাতিজা একটা ভিষণ দুষ্ট। সারাদিন উঠানে খেলাধুলা করবে আর যখন পস্রাবের চাপ বাড়বে বিছানায় উঠে তার কাজটা সারবে। দু-বছরের ছোট বাচ্ছা, ধমক দিয়ে কথাও বলা যায়না। তবে ভাবী অনেক শেয়ানা পাবলিক। ছেলের দুষ্টুমি থেকে বাঁচতে বিছানার ওপর তিনি পলিথিন দিয়ে রাখছেন। আর সেটা এখন পরিষ্কার করতেছেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম পাশেই। যখনই পরিষ্কার করা শেষ হলো তখন ভাবীকে বললাম, 'ভাবী খাবার কিছু থাকলে দাও, খুব ক্ষিধা লাগছে।' 'আছে, চল রান্না ঘরে।' ভাবীর পেছন পেছন রান্না ঘরে গেলাম। আমি খাটে বসা। ভাবী ভাত বেড়ে দিলেন। ইলিশ রান্না করেছেন। আহ তরকারীর কি ঘ্রাণ,প্রাণটা জুড়িয়েই গেলো। পেট ভরে খাওয়া দাওয়া করে, ভাবীকে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে চলে আসলাম। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১০৭৩ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now