বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ঘুরে আসুন নিঝুম দ্বীপ
নিঝুম দ্বীপ। ‘ওসমানের চর’ নামেও ডাকত
সবাই, নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক সম্পদ আর
অপার সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরের
কোলঘেঁসে জেগে ওঠা নোয়াখালীর
হাতিয়ায় জেগে ওঠা দ্বীপ ‘নিঝুমদ্বীপ’।
আয়তনে খুব বড় না হলেও প্রকৃতি তার নিজ
হাতে অপরূপ সাজে সাজিয়ে রেখেছে
দ্বীপটিকে। একদিকে তার বঙ্গোপসাগরের
উত্তাল তরঙ্গ, অন্যদিকে ছুটে আসা হিমেল
হাওয়া আর সবুজের সুবিশাল ক্যানভাস
দ্বীপটিকে দিয়েছে ভিন্ন রূপ বৈচিত্র।
১৯৫০ সালের দিকে প্রায় ১৪,০৫০ একর এলাকা
জুড়ে জেগে ওঠে নিঝুমদ্বীপ । ওসমান
নামের এক লোক প্রথম এই দ্বীপটিতে
বসতি স্থাপন করে। যে কারণে এই
দ্বীপটিকে স্থানীয়রা ‘ওসমানের চর’ নামেও
ডাকত। প্রায় ৬৩ বর্গমাইল আয়তনের এ
দ্বীপটি হাতিয়ার মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ৬০
কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে এ দ্বীপটি প্রায় ৬ ফুট উঁচু।
দ্বীপের তিন দিকে আরো নতুন নতুন চর
জেগে উঠেছে। পুরো দ্বীপটি একটি খাল
দিয়ে দু ভাগে বিভক্ত। এর একটির নাম চর ওছমান
এবং অন্যটির নাম চর কমলা। দূর থেকে নিঝুম
দ্বীপটিকে দেখতে মনে হয় যেন একটি
ভিন্ন গ্রহ। ১৯৭০ সালের দিকে নিঝুম দ্বীপে
স্থায়ীভাবে মানুষ বসবাস শুরু করে। যদিও
১৯৯৬ সালে ভ্রমন পিপাসু মানুষের কথা মাথায়
রেখে একে জাতীয় উদ্যান হিসেবে
ঘোষণা করা হয়।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
মানুষেরও এই দ্বীপটি নিয়ে আছে
সীমাহীন কৌতূহল। যেমন কৌতুহল দ্বীপটির
নাম নিয়ে তেমনি এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ,
মানুষের জীবনযাত্রা আর সর্বোপরি হরিণের
অভয়ারণ্য হিসেবে ইতোমধ্যেই বিশ্বমান
চিত্রে জায়গা করে নিয়েছে দ্বীপটি।
সৌরজগতের গ্রহগুলো দিকে তাকালে
দেখতে পাই যেমন একটি অন্যটি থেকে
বিচ্ছিন্ন, মাঝে বিশাল শূণ্যতা, ঠিক তেমনি বিশাল
জলরাশির মধ্যে বিচ্ছিন্ন একটি ভূখন্ড
নিঝুমদ্বীপ। ঘন সবুজের বন, মাঝে মধ্যে
খাল,বিল, খালের উপর গাছের সাঁকো আর
বনের মাঝখানে সবুজ সমতলভূমি। তার মাঝে
তাঁবুর মতো সারি সারি বাড়ি ঘর দ্বীপটিকে
স্বপ্নে আঁকা ছবির চেয়ে আরো সুন্দর
করে তুলেছে। সম্প্রতি বন বিভাগ
দ্বীপটিতে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এসব বনের অধিকাংশ গাছ হচ্ছে কেওড়া। বনে
হরিণ আর বানরসহ নানা রকম পশু-পাখির বসবাস।
দ্বীপের দক্ষিণে বৃত্তাকারে প্রায় ১২
কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বিশাল বেলাভূমি।
চিকচিকে মোটা বালুকা সৈকত ঢালু হয়ে চলে
গেছে সমুদ্রের গভীরে। ভাটার সময়
জেগে ওঠে দীর্ঘ বেলাভূমি। সে
বেলাভূমিতে সাগরের ফেনিল উর্মিমালা
আছড়ে পড়ার অপূর্ব দৃশ্য আর চন্দ্রালোকে
জোয়ার-ভাটায় এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি
হয়। দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে একই জায়গা
থেকে অবলোকন করা যায় সূর্যোদয় ও
সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
নিঝুম দ্বীপের গহিন অরণ্যে রয়েছে প্রায়
৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির
পাখি ও ১৬ প্রজাতির সাপ। বনজ সম্পদের মধ্যে
রয়েছে ২১ প্রজাতির ও ৮৩ প্রজাতির গুল্ম যা
নিঝুম দ্বীপের সবুজ আচ্ছাদনের যোগ
করেছে নতুন মাত্রা। এ দ্বীপে বর্তমানে
প্রায় ২৫ হাজার হরিণ রয়েছে। নিঝুম দ্বীপে
এসব মায়াহরিণ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
শীতের সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি এ
দ্বীপে এসে আশ্রয় নেয়। এসময়
নিঝুমদ্বীপের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে হরেক
রঙ্গের পাখপাখালির গানে। তাই বলে এ
দ্বীপের কোন মানুষ পশু-পাখি শিকার করে
না। এমনকি বাহির থেকে কেউ এখানে এসে
পশু পাখি শিকার করতে পারে না।
আইন কাঠামো :দ্বীপটির আইন শৃংখলা
রক্ষার্থে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প
রয়েছে। দ্বীপের মধ্যে একটু আধটু
মনোমালিন্য ছাড়া দ্বীপের আইন শৃঙ্খলা
পরিস্থিতি বেশ শান্ত। দ্বীপের মধ্যে মোট
৪ টি বাজার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ৪টি
ঘূর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
দ্বীপের পর্যটন আগমন: একটি আকর্ষনীয়
লাভজনক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নিঝুম
দ্বীপে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সমুদ্রের
ডাক শুনতে মানুষ ছুটে যায় কক্সবাজারে।
টেকনাফ এবং সাম্প্রতিক সময়ে পটুয়াখালীর
কুয়াকাটা। অথচ নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপের
বিস্তীর্ণ সমুদ্রতট ও তার মায়াবী হাতছানি
এখনো অনেকের চোখের আড়ালে
রয়ে গেছে। এ সৈকতে দাঁড়ালে গভীর
সমুদ্র থেকে ভেসে আসা শব্দ শোনা যায়।
বেড়াতে চাইলে নিঝুম দ্বীপ আদর্শ স্থান।
দ্বীপের দক্ষিণে বৃত্তাকার প্রায় বার
কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বিশাল বেলাভূমি।
বেসরকারী ২টি প্রতিষ্ঠান ২টি পরিপূর্ণ আবাসন
ব্যবস্থা গড়ে তুললেও তা প্রয়োজনের
তুলনায় নগণ্য। তবে বিকল্প ব্যবস্থায়
ফেব্রিকেটেড কটেজ নির্মাণ করে পর্যটন
মৌসুমে আবাসনের ব্যবস্থা করে অভয়ারণ্য
হিসেবে ঘোষণা করে এর ভেতরে ছোট
ছোট চ্যানেলে পর্যটকদের দৃশ্য
অবলোকনের জন্য ব্যবস্থা করা যেতে
পারে। যে ভাবে দেশি বিদেশী বিভিন্ন
পর্যটক নিঝুমদ্বীপের প্রতি আগ্রহী হয়ে
উঠেছে তাতে এ আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে
এখানে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয়
পর্যটন কেন্দ্র। শীতের মৌসুমই হচ্ছে
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো
সময়। কারণ এ সময় সাগর শান্ত থাকে।
যে ভাবে আসবেন: রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ
বাস টার্মিনাল থেকে নোয়াখালীর বাসে
জেলা শহর মাইজদী এসে নামতে হবে।
চেয়ার কোচ, বিলাস অথবা একুশে পরিবহনে
ভাড়া পড়তে পারে ৩৫০ টাকা। পথে জ্যাম না
থাকলে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।
মাইজদী এসে জেনে নিতে হবে বয়ারচর
চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়ার সি-ট্রাক ছাড়ার
সময়। এদিন মাইজদী রাত্রিযাপন করতে হবে।
এখানে রয়েছে অনেকগুলো মধ্যমানের
আবাসিক হোটেল। হোটেল গুলোর ভাড়া
৭৫ থেকে ১৫০টাকার মধ্যে। এছাড়া অনুমতি
নিয়ে থাকা যাবে সার্কিট হাইজ, বনবিভাগ ও জেলা
পরিষদের উন্নতমানের সরকারি ডাক
বাংলোতে। আর একই দিন হাতিয়ার উদ্দেশ্যে
যাত্রা শুরু করতে হলে মাইজদী থেকে
বেবী ট্যাক্সীতে যেতে হবে
সোনাপুর-চর জাব্বার রোড়ে অথবা
সোনাপুর-চেয়ারম্যান ঘাট রোড় হয়ে বয়ারচর
চেয়ারম্যান ঘাট। ভাড়া রিজার্ভ ৩০০-৪০০ টাকা। এ
ছাড়া অন্যদের সঙ্গে যেতে ভাড়া ৫০-১০০
টাকা। তারপর সি-ট্রাকে হাতিয়ার নলচিরাঘাট পর্যন্ত।
ভাড়া পড়বে ৫৫টাকা। সময় লাগবে ২ ঘণ্টার একটু
বেশি। সেখান থেকে আবার বেবি ট্যাক্সি,
টেম্পো অথবা বাসে যেতে হবে
ওছখালীস্থ্য উপজেলা সদরে। ভাড়া সর্বোচ্চ
৬০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। সময় লাগবে
আধা-এক ঘণ্টার মতো। এছাড়া ঢাকা থেকে
প্রতিদিন বিকেল ৫টায় একটি তিনতলা বিশিষ্ট লঞ্চ
এমভি টিপু-৫ ও পানামা ছাড়ে পরদিন সকালে হাতিয়া
এসে পৌছায়। ভাড়া কেবিন ১২০০ টাকা। এরপর
হাতিয়া উপজেলা সদরে রাত যাপন করতে হবে।
এর জন্য রয়েছে উপজেলা পরিষদের সরকারি
ডাকবাংলো, আবাসিক হোটেল ও দ্বীপ
উন্নয়ন সংস্থার উন্নতমানের রেস্ট হাউজ।
ভাড়া আবাসিক হোটেলগুলোতে ২০০-৩০০
টাকা। আর দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার রুমে ৫০০
টাকার মতো। পরদিন ভোরে বেবি ট্যাক্সিতে
যেতে হবে জাহাজমারা হয়ে মোক্তারিয়া
ঘাটে। ভাড়া রিজার্ভ ট্যাক্সি ২৫০টাকা। সময় লাগবে
এক ঘণ্টার চেয়ে একটু বেশি। তবে খুব
ভোরে বেবি-টেক্সি পাওয়া নিশ্চিত হওয়ার
জন্য আগের দিন রাতে বলে রাখা ভালো।
এবার মোক্তাইরা ঘাট থেকে ট্রলারে ১০
মিনিটের পথ ফেরিয়ে নিঝুমদ্বীপে পৌঁছানো
যায় প্রতি ১ঘণ্টা পর ট্রলার এপার ওপার যাওয়া আসা
করে। ভাড়া ১৫ টাকা। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে
এভাবে। কেউ চাইলেই ঐদিনই হাতিয়া ফিরে
আসতে পারেন । দ্বীপের চার পাশ ও
বনের মধ্যে দেখার জন্য ট্রলার রিজার্ভ
করে যাওয়ায় ভালো। সে ক্ষেত্রে ভাড়া
পড়বে ৫০০ টাকার মতো। নিঝুমদ্বীপে
ব্যক্তি মালিকানায় হোটেল, জেলা পরিষদ,
রেড় ক্রিসেন্ট ও বন বিভগের ৫ টি বাংলোয়
যে কেউ থাকতে পারেন। খাওয়ার জন্য
নিঝুমদ্বীপে রয়েছে ছোট ছোট বেশ
কয়েকটি হোটেল। খাওয়ার হোটেলগুলো
দেখতে খুব একটা পরিপাটি না মনে হলেও
এগুলোয় খাওয়ার মান বেশ ভলো। এসব
হোটেলে সাধারণ দ্বীপের জেলেদের
ধরা তাজা মাছ পাওয়া যায়।
বন্ধুরা/পাঠক শীতের এই মৌসুমে ঘুরে আসুন
মায়া হরিনের দেশ বঙ্গোপসাগরের
কোলঘেঁসে নোয়াখালীর হাতিয়ায় জেগে
ওঠা দ্বীপ নিঝুম দ্বীপে। সঙ্গে ক্যামেরা
আনতে ভুলবেন না। হয়তো আপনারই
ক্যামেরার সামনে এসে ধরা দেবে অদ্ভুত
সুন্দর মায়াবী হরিন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now