বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
এই কবরটাতে একটা রহস্য আছে।
মোড়ল বাড়ির গোরস্থানের সবার দক্ষিণে এই
কবরটা। পারিবারিক কবরস্থান। তিন পুরুষ থেক এই
বংশের মরহুমদের দাফন করা হয় এখানে।
গাছপালায় ঘেরা এই কবরস্থানে সর্বশেষ দাফন করা
হয় শ্রাবনীকে।রহস্যটা এই কবরেই! তিন বছর আগে
মারা যাওয়া মেয়েটা বাবার একমাত্র সন্তান ছিল।
বিয়ের সাড়ে চৌদ্দ বছর পর জন্ম নেয় মেয়েটা।
অঝোর বর্ষার শ্রাবণ সন্ধ্যায় জন্ম নেয়া মেয়েটার
নাম রাখা হয় শ্রাবনী। শ্রাবনী নামটা বেশ দুঃখী
দুঃখী টাইপের। নামের সাথে একফোঁটা অজানা
দুঃখের শ্রাবনধারা সবসময় মিশে থাকে।
গত তিন বছর আগে শরতের রাতে মারা যায় শ্রাবনী।
আকাশ ভরা তারার রাতে; এতো মুগ্ধ পৃথিবী ছেড়ে
কেউ যেতে পারে? তারার রাতে বাবার মেয়েটা
কেমন করে আকাশের তারা হয়ে গেল? আপনকে পর
করে পরপারে চিরতরে কেমন করে যাওয়া সম্ভব হল?
বাবার আগে সন্তান চলে যাওয়া কোন নিয়ম হল?
মাঝে মাঝেই বিলাপ করে শ্রাবনীর বাবা। পাগলের
মত একরাশ প্রশ্ন ছুড়ে দেয় বিধাতার কাছে। স্থির
দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে বাবা। কোন
উত্তর আশে না। বিধাতা হয়তো হাসেন; অবাক হন
পাগল বাবার পাগলামিতে।
ভার্সিটির ছাত্রী ছিল শ্রাবনী। শরতের এক
বিকেলে হঠাৎ বাসায় আসে সে। ছুটি নেই; ক্লাস
আছে ভার্সিটিতে। এক্সট্রা ক্লাস হচ্ছে; ক্লাস
টেস্টও। তবুও বাসায় কেন আসলো কেউ আন্দাজ
করতে পারেনি।
বাবা অবাক হননি। বাবা-মার টান যে ক্লাস-
পরীক্ষার টানের চেয়ে বেশি। সন্তান বাবার কাছে
এসেছে; মায়ের কোলে ফিরেছে। ছুটি নাই তো কি?
সন্তান ফিরবেই। অবাক হবার কিছু নেই।
বাহারী রান্না করা হল। রাতে মা ডাকলেন
শ্রাবনীকে। খাবার টেবিলে এসে বাবার দিকে
অপলক তাকিয়ে রইল মোয়েটা। হঠাৎ চোখটা ভিজে
উঠছে। বাবা এবার অবাক হয়।মায়ের দিকে তাকিয়ে
মেয়েটা ডুকরে কেঁদে উঠে। খাবার টেবিলে হঠাৎ
মেয়েটা অমন করছে কেন? হঠাৎ ক্যাম্পাস ছেড়ে
চলে এল কেন? ও বিষন্ন কেন? কাঁদছে কেন?
বাবা বললেন; কি হয়েছে মা?
মা বলনেন; খুলে বল, কি হয়েছে?
মেয়েটা আবার বাবার দিকে চোখ তুলে তাকায়।
মায়ের দিকে ফিরে। কোন উত্তর নেই। বাবাকে
জড়িয়ে ধরে কাঁদছে মেয়েটা।
বোঝা গেল না রহস্যটা কি! আব্দার করে; মা-বাবার
সাথে আজ ঘুমাবে। অত বড় মেয়ে এতো ছোট্ট
মানুষের মত করছে কেন?
শরতের তারার রাত। চাঁদের পাশে অনেক তারা।
হাজার। লক্ষ। কোটি। মিট মিট করে জ্বলছে; নিভছে।
পাশাপাশি শুয়ে আছে তিনটা মানুষ। বাবা-মায়ের
মাঝে একটা চাঁদ। হঠাৎ ভোরে বাবা মায়ের মাঝে
শুয়ে থাকা মেয়েটা চলে গেল। চাঁদটা নিভে গেল
মিটিমিট তারার মত। হাউমাউ করে উঠলো মা। বাবা
এবার অবাক হলেন। সুর্য উঠা সকালে মোড়ল বাড়ির
সুর্যটা ডুবে গেল। কলিজার একটা অংশ ছিড়ে গিয়ে
ছিন্নভিন্ন কলিজার একজন বাবা পড়ে থাকলেন
পৃথীবির উপর।
বিকেলে দাফন করা হয় মেয়েটাকে। চোখের জলে
বিদায় জানাতে হল। এটাই নিয়ম। বাবা সেদিন
অনেকরাত পর্যন্ত গোরস্থানেই কবরটার পাশে বসে
ছিলেন। শ্রাবনীর জানাযায় একটা ছেলে এসেছিল।
খুব কেঁদেছিল। কেউ চিনতে পারে নি ছেলেটাকে।
বাবাও না। তবে এ নিয়ে উনি ভাবেন নি। মুসলমান
হয়ে মুসলমানের জানাযায় আসবে। এটাই নিয়ম।
কান্নাকাটি করবে, এটাও নিয়ম। অপরিচিত হতেই
পারে! সবাই লক্ষ্য করে নি। মেয়েটার বাবা লক্ষ্য
করেছে।
দিনটা গেল। রাতটাও গেল। সপ্তাহ।তারপর মাস।
তারপর...
চল্লিশ দিনের মাথায় গভীর রাতে একটা মানুষকে
দেখা গেল কবরের কাছে! এবারো বাবা দেখলেন।
সাদা পাঞ্জাবী পড়া একটা মানুষ। মাথায় টুপি।
সেটাও সাদা।
গাছ পালায় ঘেড়া নির্জন কবরস্থানে এতো রাতে
কে? তাও সাদা? বাবা এবারো অবাক হয়। তবে ভয়
পান নি। মেয়ের কবর; বংশের গোরস্থান! ভয় পাবার
কি আছে? আস্তে আস্তে কবরের কাছে যাচ্ছেন
শ্রাবনীর বাবা। এর মধ্যেই মানুষটা নেই। লক্ষ্য
করলেন মানুষটার দিকে। একটা বাইকে করে চলে
গেল মানুষটা। বাইকের আলো দেখা যাচ্ছিল। শব্দও
স্পষ্ট। ধীরে ধীরে শব্দটা নিশব্দ হয়ে গেল। মানুষটা
চলে গেল।
ঘন আঁধার। সুনসান নীরবতা। একটা নিশাচর পাখি
ডানা ঝাপ্টে কবরস্থান থেকে উড়ে গেল। ধীরে
ধীরে কবরটার কাছে গেলেন শ্রাবনীর বাবা। একগুচ্ছ
গোলাপ কবরের উপরে। তরতজা। তিনি গোলাপ গুচ্ছ
হাতে নিলেন। গুনে গুনে দেখলেন একুশটা গোলাপ।
কবরটা কবরের মতই আছে। ভিতরে শুয়ে আছে
কলিজার টুকরা। উপরে শ্রাবনীর বাবা; ছেড়া
কলিজার একটা হতবাক মানুষ। তাকে পাল্লা দিয়ে
সারা দুনিয়ায় আঁধারের রাজত্ব চলছে।
কে মানুষটা? কেন এসেছিল? গোলাপ কেন? এত
রাতে কেন? লুকিয়ে কেন? রহস্যটা কি?
এরপর থেকে প্রতি রাতে শ্রাবনীর বাবা খুজলেন
মানুষটাকে। আর আসে নি। পুরো বছরের কোন রাতেই
খুজে পাওয়া গেল না মানুষটাকে।
শ্রাবনীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সেই রাতেই আবার
গোলাপ পাওয়া গেল কবরটাতে। এবার বাইশটা
গোলাপ। গত বছরের চেয়ে একটা বেশি। নিশ্চয়ই ঐ
লোকটা এসেছিল। কখন অাসলো; কখন গেল টের
পাওয়া গেল না কেন? শ্রাবনীর বাবা ভাবতে
থাকেন।
পরের বছর একই ঘটনা। এবার গোলাপ তেইশ টা।
এবারো খুজে পাওয়া গেল না। অবাক হবার মত
কান্ড।কষ্টের পপ্রাচীর ভেদ করে চারাগাছের মত
চিরচির করে রহস্যটা আরো রহস্যঘন হয়ে উঠছে।
শ্রাবনীর বাবা রহস্যের একটু আন্দাজ করতে
পারলেন। বোঝা গেল সামনের মৃত্যুবার্ষিকীত
ে সাদা পাঞ্জাবির মানুষটা আবার আসবে।
চব্বিশটা গোলাপ হয়তো থাকবে সেই রাতে। প্রতি
বছর একটা করে গোলাপ বেশি নিয়ে আসে মানুষটা।
সহজ হিসাব।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলে যায় দিন। মাস।
তারপর বছর।
এবার এই রাতে শ্রাবনীর বাবা কবরের পাশে সাদা
কাগজে একটা চিঠি লিখে রাখলেন- "জানি আপনি
আজ আসবেন। কে আপনি? কেন এসব? আমাকে আর
কষ্ট দিবেন না। এবার দেখা করবেন, প্লীজ"
গভীর রাত। একটা মাইক্রোবাস হেডলাইট অফ করে
আসছে। সাউন্ড নাই। কবরের পাশে এসে দাড়িয়েছে।
আবার সেই একটা মানুষ। গাড়ি থেকে নেমে আসছে।
এক হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। আরেক হাতে একটা
গোলাপের চারা।
দূর থেকে শ্রাবনীর বাবা লক্ষ্য করছে সব। আঁধারটা
কম। সব বোঝা যাচ্ছে। লোকটা আজ মাইক্রোবাসে
আসলো কেন? লোকটা এতো রহস্যের জন্ম দিচ্ছে
কেন?
গোলাপ কবরে রাখতেই লোকটার চোখ পড়লো সাদা
কাগজটার দিকে। কাগজটা হাতে নিয়ে ফেলে দিল।
লোকটা ভাবলো, মাত্র তিন বছরেই মেয়েটাকে
ভুলে গেল সবাই! কবরে কাগজের টুকরা পড়ে থাকে;
ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে না বাড়ির লোকজন।
কি নিষ্ঠুর আশ্চর্য! এটা যে একটা চিঠি হতে পারে
লোকটা আন্দাজ করতে পারে নি। কাগজটাকে
বিরক্ত হয়ে কবরের পাশে ফেলে দেয়। তারাতারি
হাত দিয়ে কবর খুড়তে থাকে লোকটা।
সব শ্রাবনীর বাবা দুর থেকে দোখছেন। লোকটা কবর
খুড়ছে কেন? তিন বছর পরে লাশ টা তুলে চুরি করে
নিয়ে যাবে নাকি? এ জন্যই মাইক্রোবাস নিয়ে
এসেছে? এবার স্থির থাকতে পারলেন না। পাশে
গিয়ে দাঁড়ালেন শ্রাবনীর বাবা। বুঝতে পারে নি
লোকটা। সব নিস্তব্ধ। সব স্থির। শুধু লোকটা হাত
দিয়ে মাটি খুড়ছে! অল্প অল্প আলোতে সাদা
পাঞ্জাবিটা অদ্ভুত লাগছে।
-এই যে শুনুন!
-কে!
লোকটা উঠে দাঁড়ায়। চুনোপুঁটির মত ভীত কলিজা
নিয়ে কবুতরের মত ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে।
কাঁধে হাত দিয়ে অভয় দেয় শ্রাবনীর বাবা। বাসায়
নিয়ে যান লোকটাকে। চার গ্লাস পানি ঢক্ঢক্ করে
খেয়ে নিল লোকটা। রুমের লাইটে স্পষ্ট করে খুটিয়ে
খুটিয়ে দেখলেন মানুষটাকে। চিনতে পারলেন উনি।
-জানাযার নামাজে আসা ঐ ছেলেটা তুমি? খুব
কেঁদেছিলে সেদিন। তাই না?
-জ্বি এসেছিলাম।
-নাম কি?
-রাতুল।
-কবর খুড়ছিলে কেন? আমার সাথে কিসের শত্রুতা?
লাশ চুড়ি করবা?
-না; না
-এত বছর ধরে এত নাটক করার কি আছে? একজন
বাবাকে কষ্ট দেবার কি আছে? কে তুমি? কেন এসব?
রীতিমত আহাজারি করতে থাকে শ্রাবনীর বাবা।
তিন বছর আগে ছেড়া কলিজায় জন্ম নেয়া ক্ষত
থেকে আজ খুব বেশী রক্ত ঝড়ছে। বিক্ষত স্থানে
কেউ যেন চাকু দিয়ে থেমে থেমে আরো ক্ষত তৈরি
করছে।
শ্রাবনীর মা এর মধ্যে সব শুনেছেন। আড়াল থেকে।
তিনিও স্থির থাকতে পারলেন না। ভিতরের সুপ্ত
আগ্নেয়গিরি আবার দাউদাউ করে জ্বলতে লাগল।
ভুমিকম্প হয়ে গেল মায়ের হৃদয়ে। তিন বছর আগে
সন্তান হারা শোকটা আজ হঠাৎ আবার নতুন শোক
হয়ে গেল। ভিতরটা শূন্য শূন্য লাগছে ওনার। আঁচল
দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তিনি আড়াল থেকে রুমে
ঢুকলেন। স্বামির পাশে বসলেন। শ্রাবনীর বাবা
বুঝতে পারলেন, তার স্ত্রী সব শুনে ফেলেছে। আর
গোপন করার কিছু নাই।অবশেষে কথা বলা শুরু করলো
রাতুল। বাবা-মার চৈত্রের রোদে শুকিয়ে যাওয়া
খাঁ-খাঁ তপ্ত হৃদয়টা এক ফোঁটা করে বৈশাখি পানি
পেতে থাকল। কখনো কখনো কালবৈশাখী ঝড়ের মত
মা-বাবার হৃদয়টার একেকটা ডাল-পালা মট মট করে
ভেঙে দিচ্ছিল।
বলতে থাকলো রাতুল। ও শ্রাবনীর বন্ধু। খুব ভাল বন্ধু।
ক্লাসমেট। দুজনের একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা।
প্রতি মৃত্যুবার্ষিকীতে গোলাপ গুচ্ছ নিয়ে রাতুল-ই
আসত। তরতাজা গোলাপ গুলি না দিলে যে খুবই
অন্যায় হয়ে যেত। মেয়েটা গোলাপের প্রতি অনেক
দুর্বল ছিল। চলে যাবার শেষ দিন শ্রাবনী রাতুলের
কাছে একুশটা গোলাপ চেয়েছিল। তখন ওর বয়স একুশ
ছিল। মোয়েটার আব্দার ছিল; প্রতি জন্মদিনে ওর
বয়স যত হবে; ততগুলি গোলাপ তাকে উপহার দিতে
হবে। দিতেই হবে। আব্দার রক্ষা করতে পারে নি
রাতুল। জন্মদিনের আগেই মেয়েটার মৃত্যুদিন ধার্য
হয়ে যায়।
মাইগ্রেইনের ব্যাথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে
সর্বনাশ হয়ে যায় শ্রাবনীর। চেকআপ করা হয় অনেক।
কি যেন এক অসুখের নাম বলেন ডাক্তার। বেশি দিন
আর নাই শ্রাবনীর। শ্রাবনীর শ্রাবন সন্ধ্যা অচিরেই
নেমে আসছে। ডাক্তার বললেন, সুর্য ডুবি ডুবি।
শুধু রাতুল কে জানায় শ্রাবনী। মাকে না। বাবাকেও
না। শেষের দিনগুলিতে সবসময় বিষন্ন থাকত শ্রাবনী।
প্রায়ই কাঁদত ও। রাতুল সান্ত্বনা দিতে পারতো না।
জীবন-মৃত্যুর মোহনাটা অনেক গভীর হয়। সেখানে
সান্ত্বনা হারিয়ে যায়। বাবা-মাকে জানাতে
নিষেধ করে শ্রাবনী।
সেদিন শেষ বিকেল। নদীর পাড়ে যাবার বায়না ধরল
শ্রাবনী। সুর্যটা ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। হঠাৎ রাতুলের
চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "আচ্ছা রাতুল, আমি
যদি শেষ বিকেলের সুর্যের মত সত্যি ডুবে যাই! যদি
না থাকি তাহলে কি বাবা-মার জীবন অন্ধকার হয়ে
যাবে? ওরা খুব মিস করবে, নারে? আচ্ছা তুই কি ভুলে
যাবি? গোলাপ দিবি না?"
থমকে যায় রাতুল। এমন কথা কোন দিন এভাবে বলে
নি শ্রাবনী। অনেক খুজে যখন গোলাপ নিয়ে আসল
রাতুল; তখন মেয়েটা বাসায় চলে গেছে। গোলাপ
গুলি দেয়া হয় নি। অনেক দেনা জমা হয়ে গেছে।
বাকির খাতায় জমা হয় গোলাপ। প্রতিবছর একটা
করে দেনা বৃদ্ধি পায়। প্রতি জন্মদিনে তাকে ফুল
দেয়া হয় না। মৃত্যুবার্ষিকীত
ে শ্রাবনীর কষ্ট
কমানোর এক ব্যার্থ প্রয়াস রাতুলের।
স্কলারশীপ পেয়েছে রাতুল। অনার্স শেষ।
বেলজিয়ামে মাস্টার্স করবে ও। তিন বছর থাকতে
হবে ওখানে। এই তিন বছর গোলাপ দেয়া হবে না।
তাই গোলাপ গাছ নিয়ে এসেছে রাতুল। তারাতারি
গাছটা রোপন করতে চেয়েছিল ও। কবরের পাশটা
তাই হাত দিয়ে খুড়ছিল। কবরে একটা গোলাপ গাছ
থাকবে। রাতুল থাকবে না; কথা দেয়া কথা থাকবে।
গোলাপ থাকবে। বিষন্ন এক বিকেলে দখিনা বাতাস
রাতুলের পক্ষ থেকে গোলাপকে নাড়া দিবে।
কবরের উপর ঝড়ে পড়বে একেকটা গোলাপের লাল
লাল পাপড়ি। হৃদয়ের ঝড়ে যাওয়া রক্তে রাঙানো
লালচে পাপড়ি গুলো।
রাত ঘনিয়ে আসছে। অনেক রাত। অন্ধকার আর
অন্ধকার একাকার হয়ে জানান দিচ্ছে ; আলো নাই
আলো নাই। শ্রাবনীর বাবা-মা দুজনেই নিস্তব্ধ হয়ে
আছেন। রাতুল বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে।
আলতো করে অন্ধকারেই কবরের পাশে গোলাপ
গাছটা লাগিয়ে দেয়।
ধীরে ধীরে মাইক্রোবাসটা এগিয়ে চলছে। সময়ের
দাবিতে রাতটা এগিয়ে চলছে। সাথে চলছে রাতুল।
পিছনে স্তব্ধ একটা মোড়ল বাড়ি; সেখানে স্তব্ধ
দুইটা প্রানী। রেখে আসা একটা গোরস্থানে একটা
কবর। ভিতরে নিস্তব্ধ শ্রাবনী; উপরে একটা গোলাপ
গাছ। গোলাপ গাছটা বড় হয় ; ফুল ফুটে। কবরের উপরে
ঝড়ে যায় একেকটা ফুটন্ত গোলাপ..!!
.... সমাপ্ত....
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now