বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
রানু মৃদু স্বরে বলল, ‘ভেতরে আসব?’
‘এস রানু, এস।’
‘গল্প করতে এলাম।’
‘খুব ভালো করেছ।’
নীলু উঠে গিয়ে রানুর হাত ধরল। রানু বলল, ‘তুমি কাঁদছিলে নাকি, চোখ ভেজা!’ নীলু কিছু বলল না। রানু বলল, ‘এত কিসের দুঃখ তোমার যে দুপুরবেলায় কাঁদতে হয়?’
‘তোমার বুঝি কোনো দুঃখটুঃখ নেই?’
‘উঁহু আমি খুব সুখী।’
রানু হাসতে লাগল। নীলু হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল, ‘তুমি বলেছিলে, একটা খুব অদ্ভুদ কথা আমাকে বলবে।’
‘বলেছিলাম নাকি?’
‘হ্যাঁ। আজ সেটা বলতে হবে। তারপর আমি আমার একটা অদ্ভুদ কথা বলব।’
রানু হাসতে লাগল।
‘হাসছ কেন রানু?’
‘তোমার অদ্ভুদ কথা আমি জানি, এই জন্যে হাসছি।’
‘কী আবোলতাবোল বলচ! তুমি জানবে কী?’
‘জানি কিন্তু।’
নীলু গম্ভীর হয়ে বলল, ‘জানলে বল তো।’
‘তোমার এক জন প্রিয় মানুষ তোমার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছে। ঠিক না?’
নীলু দীর্ঘ সময় কোনো কথাবার্তা বলল না। রানু বলল, ‘কি ভাই, বলতে পারলাম তো?’
‘হ্যাঁ, পেরেছ।’
‘ও কি বাসায় আসবে?’
‘বলব তোমাকে। তার আগে তুমি বল, তুমি কী করে জানলে? বিলু তোমাকে বলেছে? কিন্তু বিলু তো কিছু জানে ন!’
‘আমাকে কেউ কিছু বলে নি।’
‘তাহলে তুমি জানলে কী করে?’
‘আমি স্বপ্ন দেখেছি।’
‘স্বপ্ন দেখেছি মানে?’
‘নীলু, মাঝে-মাঝে আমি স্বপ্ন দেখি। সেগুলো ঠিক স্বপ্নও নয়। তবে অনেকটা স্বপ্নের মতো। সেগুলো সব সত্যি। গত রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, তুমি একটি চিঠি পেয়ে খুব খুশি। সেই চিঠিতে একটি লাইন লেখা আছে, যার মানে হচ্ছে-তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে বা এই রকম কিছু।’
‘এসব কি তুমি সত্যি-সত্যি বলছ রানু?’
‘হ্যাঁ। কবে তাঁর সঙ্গে তোমার দেখা হবে?’
‘আজ বিকেলে। আমি নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানের সামনে একটা সবুজ রুমাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকব। তিনি আমাকে খুঁজে বের করবেন।’
‘বাহ, খুব মজার ব্যপার তো!’
রানু হাসতে লাগল। এক সময় হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ‘শুধু গল্প-উপন্যাসেই এসব হয়। বাস্তবে এই প্রথম দেখছি। তোমার ভয় করছে না?’
‘ভয় করবে কেন?’
‘তোমার কিন্তু নীলু ভয় করছে। আমি বুঝতে পারছি। বেশ ভয় করছে। করছে না?’
‘নাহ।
রানু ইতস্তত করে বলল, ‘ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পার। আমি দূরে থাকব।’
‘থাক, দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।’
মনে হলো নীলু রানুর কথাবার্ত সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। তার চোখ-মুখ গম্ভীর। রানু বলল, ‘কি, নেবে?’
‘না। আমার একা যাবার কথা, একাই যাব।’
‘আর যদি গিয়ে দেখ, খুব বাজে ধরণের একটা লোক। তখন কী করবে?’
‘বাজে ধরণের লোক মানে?’
‘অথ্যাৎ যদি গিয়ে দেখ দাঁত পড়া, চুল পাকা এক বুড়ো?’
‘তোমার কি সে রকম মনে হচ্ছে?’
রানু মাথা দুলিয়ে হাসল, কিছু বলল না। নীলুকে দেখে মনে হলো রানুর ব্যবহারে সে বেশ বিরক্ত হচ্ছে। দুটো বাজতেই সে বলল, ‘এবার তুমি যাও, আমি সাজগোজ করব।’
‘এখনই? চারটা বাজতে তো দেরি আছে।’
‘তোমার মতো সুন্দরী তো আমি না। আমাকে সময় নিয়ে সাজতে হবে।’
রানু উঠে পড়ল। নীলু সত্যি সাজতে বসল। কিন্তু কী যে হয়েছে তার, চোখে পানি এসে কাজল ধুয়ে যাচ্ছে। আইল্যাশ পরার ইচ্ছা ছিল, একা-একা পরা সম্ভব নয়। অনেক বেছেটেছে শাড়ি পছন্দ করল। সাদার উপর নীলের একটা প্রিন্ট। আগে সে কখনো পরে নি।
‘নীলু মা, কোথাও যাচ্ছ নাকি?’
নীলু তাকিয়ে দেখল-বাবা।
‘কোথায় যাচ্ছ গো মা?’
‘এক জন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। তোমার কি চা লাগবে?’
‘হলে ভালো হত। থাক, তুই ব্যস্ত।’
‘চা বানাতে আর কয় মিনিট লাগবে! তুমি বস, আমি বানিয়ে আনছি।’
নীলুর বাবা চেয়ার টেনে নীলুর ঘরেই বসলেন।
‘চা কি চিনি ছাড়া আনব বাবা?’
‘না, এক চামচ চিনি দিস। একটু-আধটু চিনি খেলে কিছু হবে না।’
নীলু চা নিয়ে এসে দেখে বাবা ঝিমুচ্ছেন। ঝিমুনিরও বেশি, প্রায় ঘুমাচ্ছেন বলা চলে। বাবা যেন বড় বেশি দ্রুত বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। বড় মায়া লাগল নীলুর।
‘বাবা, তোমার চা।’
‘কোন বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিস মা?’
নীলু খানিক ইতস্তত করে বলল, ‘তোমাকে আমি পরে বলব বাবা।’
‘সন্ধ্যার আগেই আসবি তো?’
‘হ্যাঁ, বাবা।’
‘গাড়ি নিয়ে যাবি?’
‘না, গাড়ি নেব না।’
‘নিয়ে যা না। ড্রাইভার তো দিন-রাত বসে-বসেই মায়না খায়।’
‘বাবা, আমি গাড়ি নেব না।’
নীলুর সাজ শেষ হলো সাড়ে তিনটায়। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে তার পছন্দই হলো। যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে, সে বেশ রুপসী। তার মায়া-কাড়া দুটি চমৎকার চোখ আছে। কিশোরীদের মতো ছোট ছোট চিবুক। ভালোই তো! এ রকম একটি মেয়েকে পুরুষরা কি ভালোবাসে না? নাকের কাছে মুক্তোর মতো কিছু ঘামের বিন্দু। নীলু তার সবুজ রুমাল দিয়ে সাবধানে ঘাম মুছে ফেলল। তারপর উঠে এল তিনতলায়।
‘রানু, রানু।’
রানু যেন তৈরি হয়েইছিল। সে বেরিয়ে এল সঙ্গে-সঙ্গে।
‘তুমি যাবে বলেছিলে আমার সঙ্গে। চল।’
‘চল।’
রানু তালা লাগাল। নীলু মৃদু স্বরে বলল, ‘তুমি জানতে আমি আসব?’
‘হ্যাঁ, জানতাম।’
সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করল। কারো দেখা পাওয়া গেল না। এক সময় নীলু বলল, ‘এখন চলে যেতে চাও রানু?’
‘আরো খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। তোমার এখনো যেতে ইচ্ছা করছে না।’
‘এক জায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে চল হাঁটি।’
তারা বেশ কয়েক বার নিউ মার্কেট চক্কর দিয়ে ফেলল। কেউ এগিয়ে এসে বলল না, ‘তোমাদের মধ্যে নীলু কে?’
‘রানু, তোমার কি হাঁটতে টায়ার্ড লাগছে?’
‘না।’
‘রানু, তুমি তো অনেক কিছু বুঝতে পার, তাই না?’
‘মাঝে-মাঝে পারি।’
‘লোকটি এসেছে কি না বুঝতে পারছ না?’
‘না নীলু, পারছি না। আমি সব সময় পারি না।’
রানু লক্ষ্য করল, নীলুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে তার সবুজ রুমাল দিয়ে চোখ চেপে ধরল। রানু গাঢ় স্বরে বলল, ‘কাঁদে না নীলু।’
‘কান্না এলে কী করব?’
‘মনটা শক্ত কর ভাই। পৃথিবীটা খুব ভালো জায়গা নয়।’
লোকজন তাকাচ্ছে ওদের দিকে। রানু নীলুর হাত ধরে বাইরে নিয়ে এল। বেশ অস্বস্তিকর অবস্থা।
তার প্রায় চার দিন পর নীলু একটি চিঠি পেল।
প্রিয় নীলু,
ঐদিন তোমাকে দেখলাম। তুমি তো ভারি মিথ্যুক! কেন বললে তুমি দেখতে
সুন্দর নও? তোমাকে বর্ষার জলভারে নত আকাশের মতো লাগছিল। আমি ছুটে
যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমার বান্ধবিকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছি। কথা ছিল
একা আসবে। তাই নয় কি?
শুধু আমরা দুই জন থাকব। আমাকে দেখে যদি তোমার কথা বলতে ইচ্ছে
করে, তাহলে কোনো একটি রেস্টুরেন্টে বসে দুই জনে চা খেতে-খেতে গল্প করব।
আর যদি তোমার আমাকে পছন্দ না-হয়, তাহলে তুমি তোমার সবুজ রুমালটি
তোমার হ্যান্ডব্যাগে লুকিয়ে ফেলবে।
তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। আমি মন-খারাপ করব ঠিকই, কিন্তু বিদায়
নেব হাসিমুখে, এবং আর কোনো দিনই তুমি আমাকে দেখবে না। তবে নীলু,
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমাকে তুমি অপছন্দ করবে না। এ রকম মনে
করার কোনোই কারণ নেই, তবু মনে হচ্ছে। খুব সম্ভব উইশফুল থিংকিং। না মেয়ে?
নীলু চিঠিটি সমস্ত দিনে প্রায় একশ’ বার পড়ল এবং প্রতি বারই তার কাছে নতুন মনে হলো। রাতে সে অদ্ভুদ সুন্দর একটি স্বপ্ন দেখল-যেন পুরোনো আমলের একটি পালতোলা জাহাজে সে বসে আছে। জাহাজের পালটি গাঢ় সবুজ রঙের। প্রচন্ড বাতাস দিচ্ছে। বাতাসে জাহাজ ছুটে চলেছে বিদ্যুৎগতিতে। নীলুর একটু ভয়ভয় লাগছে, কারণ জাহাজে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। নীলু এক সময় বলল, ‘আমার ভয় লাগছে জাহাজে। আর কেউ কি আছে?’ সঙ্গে-সঙ্গে একটি ভারি পুরুষালি গলা শোনা গেল, ‘ভয় নেই নীলু। আমি আছি।’ স্বপ্ন এত সুন্দর হয়!
নীলুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাকি রাত সে আর ঘুমোতে পারল না। বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। বিলু জেগে উঠে বলল, ‘কী হয়েছে রে আপা?’
‘নীলু ভেজা গলায় বলল, ‘পেট ব্যথা করছে। এখন একটু কম। তুই ঘুমো।’
চলবে.......
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Justin Hafiz
User ৪ বছর, ৯ মাস পুর্বেEshrat Jahan
Golpobuzz ৪ বছর, ১০ মাস পুর্বেNamika✨
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেNamika✨
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেNamika✨
User ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ১১ মাস পুর্বেমোঃ আল হাদী
User ৫ বছর পুর্বেsarmin
Guest ৫ বছর, ৬ মাস পুর্বেAnika
Guest ৫ বছর, ৬ মাস পুর্বেFahmid
Guest ৫ বছর, ৮ মাস পুর্বেHridoy
Guest ৫ বছর, ৮ মাস পুর্বেFahmid
Guest ৫ বছর, ৮ মাস পুর্বেHridoy
Guest ৫ বছর, ৮ মাস পুর্বেAijak Newton
Guest ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বেAijak Newton
Guest ৫ বছর, ৯ মাস পুর্বেiBraham Mahmud
Guest ৫ বছর, ১১ মাস পুর্বেiBraham Mahmud
Guest ৫ বছর, ১১ মাস পুর্বেRidoy Siddha
User ৬ বছর, ১ মাস পুর্বেMOLLIKA
Guest ৬ বছর, ৪ মাস পুর্বেRiddhi Arfine Neha
User ৬ বছর, ৯ মাস পুর্বেRiddhi Arfine Neha
User ৬ বছর, ৯ মাস পুর্বে