বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ষড়যন্ত্র

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Fahamul Haque (০ পয়েন্ট)

X বিকেল পাঁচটা। আলীবাজার পয়েন্টের মোড়ে ছোট একটা চায়ের দোকানে বসে বসে এক হাতে চায়ের কাপ রেখে চুমুক দিচ্ছি, আর অন্যহাতের দুই আঙুলের মাঝখানে একটা সিগারেট ধরিয়ে চায়ের সাথে মাঝে মাঝে সিগারেটটাও ঠোঁঠ যুগলের মাঝখানে নিয়ে একটা টান দিয়ে তার ধুয়াগুলা উড়িয়ে দিচ্ছি ক্লান্ত এই বিকেলের মাঝে। হঠাৎ দেখি তুহিন খুব দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসছে।সে "সরকারী মহিলা কলেজের" লেকচারার। জিজ্ঞেস করলাম, -কি হয়েছে? -পুলিশ তকে হন্য হন্য হয়ে খুঁজছে। আমি কলেজ থেকে বের হতেই ৩টা পুলিশ তর ছবি দেখিয়ে বলল, 'তুই এখন কোথায় আছিস আমাকে বলতে হবে।' আমি বলেছি কালকের পর থেকে তর সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগই হয় নি।" এতো গুলা কথা বলার পর সে থামলো, আর এদিকে আমার অবস্থা, 'মরুভূমিতে গলা শুকিয়ে যাওয়া এক পথিক'।নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। আমি বললাম, - পুলিশ কেনো আমাকে খুঁজতে আসবে,তাও আবার ছবিসহ? আর আমার বিরুদ্ধে মামলা, ওয়ারেন্ট এত কিছুই বা কখন কিসের জন্য হল? -তর এতো কিছুর ভাববার সময় এখন না,সব পরে জানতে পারবি। এখন পালা, তারা যদি এদিকেই এসে পড়ে? . 'দৈনিক আজকের কন্ঠ' পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে চাকরী করি, প্রায় ১বছর হল।২বছর আগে মা-বাবা, আর ভাই, বোন আমেরিকায় চলে গেলেও আমার ভাগ্যে তা জুটেনি।আর যাওয়ার কোনো ইচ্ছাও এখন আমার নেই।সাংবাদিকতাই ধরে রাখতে চাই। . . রাত, ১২টা ৩০মিনিট। তুহিনের পরে আরও ২জন সহযোগী আমাকে ফোন করে পুলিশের খুঁজাখুজির খবরটা জানিয়েছেন। গভীর চিন্তায় আমি আচ্ছন্ন। মেসের এক বড় ভাইকে আমি ঘটনার কথা বললাম, তিনি কেবল আমাকে কয়েকটা শান্তনার বাণী শুনালেন। হঠাৎ, কলিংবেলের শব্দ, সাথে সাথে আমার বুকের মধ্যেও যেনো কলিংবেল বেজে উঠল। দরজার ফুঠো দিয়ে দেখলাম, ২জন পুলিশ। তারা যে আমাকেই খুঁজতে এসেছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। মেসের বড় ভাই কে ডেকে দিয়ে, আমি মেসের পিছন দিকের জানালা দিয়ে কোনো মতে বের হয়ে গেলাম, আমাদের মেস নিচতালায় হওয়ায় খুব সহজেই নেমে গেলাম।বড় ভাইয়ের সাথে পুলিশের কি কথা হয়েছে আমি জানিনা।আমাকে এখন পালাতে হবে। . . বিল্ডিংয়ের দেয়াল ডিঙিয়ে আমি চলে এলাম প্রধান সড়কে, দ্রুত হেটে চলে গেলাম আফজালের বাসায়,আফজালের বেশি দূরে নয়, আর মধ্যরাত বলে রাস্তায়ও মানুষজন কম। নিজেই নিজেকে আড়াল দিয়ে দিয়ে চলে এলাম।আফজালকে সব ঘটনা বললাম, সে বলল, -পুলিশ এখানে আসার কথা নয়, তাই আপাতত তুই এখানেই থাক। টিক কোন কারণে, পুলিশ আমাকে খুঁজছে তা জানার জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে আছি। . . সেখানে বসে বসে আমি, আমার পত্রিকার সম্পাদকের কাছে ফোন দিলাম, -আসসালাম ওয়ালাইকুম, স্যার। -ওয়ালাইকুম আস সালাম, সে কি! মেহেদী তুমার ফোন বন্ধ কেনো, সেই সন্ধ্যা থেকে ফোন দিচ্ছি। -স্যার, আমি খুব বিপদে আছি, ফোনের দিকে আমার চোখ নেই।স্যার,পুলিশ..... -হ্যাঁ, পুলিশ তুমাকে খুঁজছে। তুমি কেনো এমন কাজ করতে গেলা, বলো? এখন তো আমাদের পত্রিকারও সম্মান যাবে। -স্যার। আমি এসবের কিছুই জানিনা,কি কারণে পুলিশ আমাকে খুজছে, কি করেছি, আমি কিছুই জানিনা স্যার। -কেনো, দুই দিন আগে যে সাবেক সেনাপ্রধান 'জনাব আলমগীর খানকে' গুম করা হয়েছে, তার জন্য পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শেষে সেখানে তুমাকে জড়িত থাকার সূত্র পেয়েছে।এখন তারা তুমার ছবি নিয়ে তুমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। -স্যার, আলমগীর খান গুম হয়েছেন, এই খবর টা তো আমাদের পত্রিকায় আমিই শিরোনাম করেছি, আমি কেনো উনাকে গুম করতে যাবো? -শুধু, তুমি নয়। এখানে আরও ৪ জনকে জড়িত পেয়েছে।আর তুমি 'হিরু গ্রুপের' সদস্য যে, এটা আমাদের আগে জানালে না কেনো। গুমকারী তুমরা পাঁচ জনই হচ্ছ 'হিরু গ্রুপের সদস্য'। পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, আমার কাছে এসেও তুমার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে গেছে। -স্যার বিশ্বাস করেন,এই ঘটনায় আমি কোনো ভাবেই জড়িত নয়।আর 'হিরু গ্রুপের সদস্য হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাকে যে করেই হউক ফাঁসানো হয়েছে, স্যার। -মেহেদী, আমাদের কিছু করার নেই, পুলিশ ইতিমধ্যে তুমাদের নামে মামলাও দিয়ে ফেলছে।আমরা আমাদের পত্রিকার সম্মানার্থে তুমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।পারলে,এক বার এসে তুমার বহিষ্কার পত্রটা নিয়ে যেও। -স্যার... স্যার.... ফোন রেখে দিলেন 'দৈনিক আজকের কণ্ঠ' পত্রিকার সম্পাদক হাসানুর রহমান। আমার আর কোনো কথাই শুনতে চাইলেন না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হল। এই মানুষটা কে এতোটা আপন, এতোটা প্রিয় ভাবতাম, আর আজ এই মানুষটাই আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না? . . টিভি ছেড়ে দেখলাম, সব চ্যানেল গুলাও এ ব্যাপারে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে। আমিসহ মোট ৫জনের নাম বলা হচ্ছে। অন্য ৪জন 'হিরু গ্রুপের সদস্য' আর আমাকেও হিরু গ্রুপের সদস্য হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে। হিরু গ্রুপ হচ্ছে শহরের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন।এমনকি এদের বিরুদ্ধে আমিও পত্রিকায় অনেক লিখালিখি করেছি, আর আজ আমিই কি না 'হিরু গ্রুপের' সদস্য হয়ে গেলাম? ইতিমিধ্যে, দেশ-বিদেশ থেকে আমার আত্মীয় স্বজনের ফোন আসা শুরু হয়ে গেছে, কেউই আসল ঘটনা বিশ্বাস করছে না।আজ সবাই আমার পর। আমি আমার সিম পালটে ফেললাম। আফজাল তার পুরোনো একটা সিম আমাকে ব্যবহারের জন্য দিল। . . সারাদিন ধরে এই পাঁচ তালার মধ্যে বন্দি থাকতে আমার আর ভাল লাগছে না। সারাদিন আমি টেলিভিশনের সামনেই ছিলাম, আমার বহিষ্কারের খবরটাও খুব প্রচার করা হচ্ছে।তুহিনের সাথে অনেক বার ফোনে কথা হয়েছে।আমাকে এই শহর থেকে পালানোর কথা বলল সে।কিন্তু এই শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। একটু আগে কথা হয়েছে আমার এক বিশস্ত সহকর্মী আরমানের সাথে, অনেক কথা বলার পর তাকে আমার ঠিকানাটাও বলে দিলাম, সে আগামীকাল আমার সাথে দেখা করতে এখানে আসবে। . . প্রায় ৪৫ মিনিট পর, বাসার নিচে গাড়ি আসার শব্দ। আমি আর আফজাল কেবল টিভির পর্দায় চোখ তাক করে রেখেছি। গাড়ির শব্দ শুনেই আফজাল জানালার পর্দার ফাক দিয়ে দেখলো, একটা সাদা কার থেকে ৩জন পুলিশ নামছে আর তার আগে একটা মোটর সাইকেলে বসে আছে আমার বিশ্বস্ত সহকর্মী 'আরমান'।যাকে আমি একটু আগে আমার ঠিকানা দিয়েছিলাম। তাহলে আরমানই এই ষড়যন্ত্রের ভাগীদার। এই না হলে মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা? তারা পাঁচ তালার উঠার আগেই যে করেই আমাকে পালাতে হবে। পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে দিলে আমার হবে না। আমাকে আমার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। . . টিভির গুস্টিরা ইচ্ছে মতো আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাই প্রচার করেই যাচ্ছে। আমি নাকি ৫ বছর ধরে হিরু গ্রুপের সদস্য।গুম হওয়া সাবেক সেনাপ্রধান 'আলমগীর খানের পরে নাকি, আমরা আরও কয়েকজন বিশিষ্ট জনদের গুম করার পরিকল্পনা করেছিলাম। আজ ৫/৬ দিন পেরিয়ে গেলেও আইনের বাহিনী এখনও একটা আসামীকে খুঁজে বের করতে পারেনি।আর এদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রি সহ সরকার,মানবাধিকার সংগঠন, সবাই বেশ আক্ষেপে আছেন আলমগীর খানের জন্য। আমি জানিনা, আমার পরিবারের লোকদের এখন কি অবস্থা, নিকট কয়েকটা বন্ধু পরে আমার অবস্থান কেউ জানে না, আর কারও সাথে আমার কোনো ধরণের যোগাযোগও নেই। . . আফজালের বাসা থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে পালিয়ে এসেছিলাম, বিশ্বাস ঘাতক আরমান আর পুলিশ আমার পাত্তাই পায়নি। তারা ৫ তালায় উঠে আসার আগেই আমি নেমে যাই চার তালায়,ওখানে আফজালের চাচা থাকেন।উনার কাছেও আমার ভাল পরিচয় আছে।চেয়েছিলাম, চাচাকে দেখতে আসার নাম করে,সামান্য কয়েকটা কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতে,কিন্তু চাচা আমাকে দেখেই বললেন,-এই, তুমি এখানে কেনো এসেছো,তুমার মতো সন্ত্রাসকে আমি আগে চিনতে পারিনি, আমি বলতে লাগলাম,-বিশ্বাস করেন চাচা,আমি এসবে জড়িত নই, ইত্যাদি, ইত্যাদি।চাচাকে কথা গুলা বলতে বলতে কিছু সময় কেটে গেলো, আর ততক্ষনে আরমান আর পুলিশ ৫ তালায় গিয়ে আমাকে সার্চ করা শুরু করে দিয়েছে।আর আমি এক দৌড়ে বাসার বাইরে গিয়েই একটা সি.এন.জি ধরে তুহিনের বাসায় চলে আসি। পুলিশ ইতিমধ্যে দুই দিন তার বাসা সার্চ করে গেছে, তাই তুহিনের বাসা আমার জন্য নিরাপদ ছিল না।তাই গতকাল থেকে আমি তাওহিদের বাসায় আছি, সেখানে তাওহিদ আর তার স্ত্রী থাকে।খুব নিরাপদেই এখানে আছি। . . কয়েকটা দিন ধরে সিগারেট কে ভুলেই গেছি, হাতের আঙুলের চিপায় আর ঠোঁঠের চিপায় সিগারেট আসা যাওয়া করছে, ফলাফলে সাদা ধুয়া গুলা উড়ে যাচ্ছে জানালার বাইরে দিয়ে। টিভির সামনে বসে আছি আমি, আফজাল,তুহিন আর তাওহিদ।টিভিতে প্রতিটা চ্যানেলে একটাই ব্রেকিং নিউজ- "গুম হওয়া সাবেক সেনা প্রধান আলমগীর খানকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে উদ্ধার করেছে বিজিবি।সাথে ধরা পড়েছে হিরু গ্রুপের ১৫জন সদস্য, কিন্তু এখনও ধরা পরেননি হিরু গ্রুপের আরেক অন্যতম সদস্য 'আনাছ মেহেদী'।" প্রতিটা চ্যানেলে একই খবর দিচ্ছে আর প্রাণ ভরে হাসছি, আমরা চারটা বন্ধু। সাবেক সেনাপ্রধান সুস্থই আছেন,কেবল হাত,পা আর মুখ বাঁধা ছিল। . . কেটে গেলো আরও ৫দিন। আমি এখনও তাওহিদের বাসার বেলকোনি আর রুমের ভিতর ঘুরাফেরা করি, আমি এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে। গতকাল ৩দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে হিরু গ্রুপের ১৫ জন সদস্যের। বেরিয়ে এসেছে 'আলমগীর খান অপহরণ মামলার চাঞ্চল্যকর তথ্য। সব টিভি চ্যানেল গুলাতে আজও চলছে একই খবর, " ৩ দিনের রিমান্ড শেষে, হিরু গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত শেষে বের হওয়া, আলমগীর খান অপহরণের সাথে এমনকি হিরু গ্রুপের সাথেও 'দৈনিক আজকের কণ্ঠ' পত্রিকার সাবেক রিপোর্টার আনাছ দেলওয়ার মেহেদী'র যে সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছিলো, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। অপহরণের সাথে বা হিরু গ্রুপের সাথে উনার কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা নেই।তবে উনাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি।আগামীকাল সকালে ১৫জনকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিচালক। "আনাছ মেহেদী' কে এখন কি এই মামলা থেকে অব্যাবতি দেওয়া হবে,"সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ,তবে উনার কাছে আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে, সামান্য ভুলের জন্য আজ তিনি চাকরী হারা, চরম হয়রানীর স্বীকার হয়েছেন।আর আসল মেহেদী কে? যে এই অপহরণে জড়িত, তাকেও খুব তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করা হবে।" . . অহনা নামের একটা মেয়ে যে আমার এই জীবন জুড়ে গত ৪বছর ধরে আছে, এই প্রথম আমি তাকে ভুলি গিয়ে এতোটা দিন কাটিয়ে দিতে পেরেছি।আমার সাথে কোনো কথা না হলেও, তুহিন প্রতিদিনই আমার অবস্থা জানিয়ে দিয়েছে তাকে। আজ আমি তার সাথে দেখা করব। তাওহিদের বাসার গন্ডি থেকে বেরিয়ে আমি এই প্রকৃতির মাঝে মিশে যাবো।দুই দিন আগে আমার মা-বাবায় দেশে এসেছেন,কেবল আমার জন্য। কোনো যোগাযোগ নেই,কোনো কথা নেই অস্থির এই দুইটা মানুষকে আমি দেখতে চাই, কেবল দেখতে চাই। আমি এখন মুক্ত, সারা দিন মা-বাবার সাথে সময় কাটিয়েছি আর এখন যাচ্ছি অহনার সাথে দেখা করতে,আমি জানিনা সে আমার প্রতি কিরুপ হবে। এই শহর পাড়ি দিয়ে আরেকটু দূরে, আরেকটা দিগন্তে হেঁটে চলেছি আমি আর অহনা, সে আমাকে বিশ্বাস করেছে,সে আমারই আছে। . . গ্রেফতারকৃত সদস্যদের আরও তিন দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আজকে টিভি চ্যানেল গুলার নতুন খবর, "গ্রেফতার হয়েছেন "আজকের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হাসানুর রহমান, রিপোর্টার আরমান মেহেদী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি আলম আহমেদ ও পুলিশের সহকারি পরিচালক আনন্দ দাস। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী,১২ ঘন্টার ভিতরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।" টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে প্রতিটা পত্রিকার একই খবর। . . "গত ০৬ তারিখে হিরু গ্রুপের কাছে গুম হওয়া সাবেক সেনাপ্রধান জনাব আলমগীর খানকে উদ্ধার করা হয়েছে, পরপর ২বার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে হিরু গ্রুপের ১৫জন সদস্যকে, পুলিশ এখন খুঁজছে হিরু গ্রুপের প্রধান মানিক হাওলাদারকে। ঘটনার নেপথ্য অনেক বিস্তৃত। বহিষ্কার হওয়া 'আজকের কণ্ঠ পত্রিকার রিপোর্টার আনাছ মেহেদী কে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই তাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই পত্রিকার সম্পাদক জনাব হাসানুর রহমান ও আরেকজন রিপোর্টার জনাব আরমান মেহেদীই এইভাবে একটা নির্দোষ মানুষকে ফাসিয়ে দিয়েছেন। দুই রিপোর্টারেরই নামের শেষে 'মেহেদী' আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন পত্রিকার সম্পাদক আর রিপোর্টার আরমান মেহেদী।এই দুইজন আবার সাবেক সেনাপ্রধানকে অপহণের সাথেও জড়িত এবং হিরু গ্রুপেরও সদস্য। উনারা চেয়েছিলেন আনাছ মেহেদীকে জড়িয়ে দিয়ে উনারা পার পেয়ে যাবেন। সাবেক সেনাপ্রধানকে অপহরণের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তাকে ভারতের আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া, আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই সাবেক সেনাপ্রধানের কাছ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল তথ্য জেনে নেওয়া, হিরু গ্রুপ আর ভারতের এই গ্রুপ ছক আকছিল বাংলাদেশে একটি বড় সন্ত্রাসী হামলার। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল গোপন তথ্য ও তাদের ভবিষ্যৎ কাজ সম্পর্কে ধারণা আদায় করা,আর সেনাবাহিনীর আরও কয়েকজন বড় অফিসারকে অপহরন করে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দিয়ে, বাংলাদেশে একটা বড় ধরণের হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টি করা।আর এক্ষেত্রে হিরু গ্রুপকে সর্বোচ্চ সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি আর পুলিশের সহকারী পরিচালক, বিনিময়ে উনারা ভারতের সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছ থেকে পাবেন কোটি কোটি টাকা।পুলিশ তাদের তদন্তে হিরু গ্রুপেরই ৪জন সদস্যকে জড়িত থাকার সূত্র পেয়েছিল, আর সাথে 'আজকের কণ্ঠ' পত্রিকার সম্পাদক ও রিপোর্টার আরমান মেহেদীকেও, কিন্তু এই দুজন নিজেদের নাম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, পুলিশের সহকারী পরিচালকের কাছে আনাছ মেহেদীর নাম আর একটা ছবি দিয়ে দেন, আর 'মেহেদী' নাম এক হওয়ায় তাদের এই কাজটা করতে আরও সুবিধা হয়েছিল। আর মানুষের কাছে ভাল সাজার জন্য পত্রিকার সম্পাদক সে রাতেই বহিষ্কার করে দেন 'আনাছ মেহেদী' কে।আর পুলিশের তদন্ত কাজ ঘুরিয়ে ফলাফল বৃথা দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন পুলিশের সহকারী পরিচালক আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি। আর কোনো দিক দিয়ে যদি উনারা ধরে পড়ে যান, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে বিদেশ চলে যাওয়ারও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন এই ৪ জন, কিন্তু তার আগেই উনারা গ্রেফতার হয়ে যান। বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। আজ সন্ধ্যায় আনাছ মেহেদীর সাথে পুলিশের মহাপরিচালক দেখা করবেন" . . এতক্ষন ধরে আমি দেশের একটি বড় পত্রিকার লিখা পড়ছিলাম।আজকে, এতদিন পর ঘটনার সব নীল নকশা আমি জানতে পারলাম। . . . এই হতভাগার জীবনের এই নির্মম ঘটনার কেটে গেছে অনেক দিন। এখনও আমি যে কোনো জায়গায় গেলেই মানুষ আমাকে আড়চোখে দেখে। আমি নির্দোষ প্রমাণ হওয়ার পরও সমাজের কিছু মানুষ এখনও নানান কথা বলে। বলুক, বলেই যাক। ঘটনার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি কাউকে খুব আপন ভাবতে নেই, আমার বিশ্বস্ত সহযোগী আরমান আর বিশ্বস্ত, প্রিয় মানুষ সম্পাদক হাসানুর রহমান, শেষ পর্যন্ত তারা আমার দেওয়া মূল্যায়ন রাখতে পারে নি।স্বার্থপরতার নেশাই তাদের ডুবালো। ঘটনাটা শিখিয়েছে আরেকটি জিনিস, সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের দায়িত্ব, এই রকম ঘুষখোর আর লোভিদের হাতে কখনও দিতে নেই। বিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের সমাজ প্রতক্ষ্য ভাবে যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, পরোক্ষ ভাবে ততটাই নষ্ট হচ্ছে, এই ধরণের লোভি আর স্বার্থন্বেষি মানুষ রুপি অমানুষ দের জন্য। . . সেই কবে থেকে আমার প্রিয় ভার্সিটির পুকুড় পাড়ে বসে বসে অপেক্ষা করছি অহনার জন্য, পানির নীচে অসাধারণ ভাবে ফুঠে উঠেছে অফুরন্ত দূরের সেই আকাশটা। অইত, অহনাও আসছে........


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৪৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ দেরিতে বিবাহ ইসলামের বিরুদ্ধে শতাব্দীর এক শ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্র
→ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র!
→ সালাহউদ্দিন আয়ুবী। ভয়ংকর ষড়যন্ত্র। তৃতীয় ও চতুর্থ অংশ
→ সালাহউদ্দিন আয়ুবী: ভয়ংকর ষড়যন্ত্র। প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র (চ্যাপ্টার ২)
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র (চ্যাপ্টার ১)
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ৩
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ২
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ২
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ১
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ৪
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ আন্দামান ষড়যন্ত্র চ্যাপ্টার- ৫

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • ¤-ইশিকা-¤
    User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে
    অসাধারণ.....

  • Miraj
    Guest ৬ বছর, ৯ মাস পুর্বে
    Super