বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
বর্ণমালা_আমার_দুঃখিনী_বর্ণমালা
______________________________________
বাংলা ভাষা। আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষ এ ভাষাতেই কথা বলি। প্রায় সতেরো কোটি মানুষ। এত ছোট একটা দেশে এতগুলো মানুষ এক ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে কোনো ভাষায় এমন ঐক্য আর দেখা যায় না। কিন্তু সতেরো কোটি মানুষের ভাষা এক হয়েও এক নয়। অঞ্চলে অঞ্চলে তার কত বৈচিত্র্য! প্রত্যেক জেলার ভাষার সাথে রয়েছে অন্য জেলার ভাষায় সূক্ষ পার্থক্য। উচ্চারণে রয়েছে ধ্বনিতে পার্থক্য। সে পার্থক্য থানা থেকে থানায় ভিন্নতার সুর এনেছে। আলাদা করেছে আপন বৈশিষ্ট্যে। কখনো কখনো এক অঞ্চলের ভাষা আর এক অঞ্চলের মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। হোক! তবু তো বাংলা! এত বৈচিত্র্যের মাঝেও বাংলা ভাষা তার আপন মহিমায় মাথা উঁচু করে আছে বাংলাভাষী মানুষের হৃদয়ে। সেই উচ্চতা আরো বেড়ে গেছে '৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং সেই দিনটিকে '৯৯ সালে ইউনেস্কোর 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বাংলা ভাষা বর্তমানে ধ্বংসের মুখে। নতুন প্রজন্ম এখন আর বাংলা ভাষার শুদ্ধতা রক্ষার ন্যূনতম চেষ্টাও করে না। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা বাংলা ইংরেজি আর হিন্দি মিলিয়ে 'হিংরেজি' ( হিন্দি> হি, বাংলা>ং, ইংরেজি>রেজি) ভাষা ব্যবহার করে নিজেকে তথাকথিত 'Smart' মনে করছে।
বাংলা একাডেমী! বাংলা ভাষাকে শাসন করার দায়িত্বটা যার উপরে সেই বাংলা একাডেমী রীতিমতো বাংলা ভাষাকে বলাৎকার করে চলেছে। ইচ্ছে অনুযায়ী শব্দের বানান পরিবর্তন করছে, উচ্চারণ পরিবর্তন করছে। ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে সরে যাচ্ছে কোনো কোনো শব্দ। তাতে অর্থের বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্কুল-কলেজেও এখন বানান বা ভাষাজ্ঞানের ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ব্যাকরণ পাঠদানটা এখন যেন ঐচ্ছ্যিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকমহল বা অভিভাবকমণ্ডলীও বাংলা ভাষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরাও ব্যাকরণ পাঠে বিমুখ। ফলশ্রুতিতে জাতি হচ্ছে ভাষাজ্ঞানহীন। এর পরিণতি ভয়াবহ! বিচক্ষণ ব্যক্তিমাত্রই তা বুঝতে পারবেন। পাকিস্তানিরা যখন বাংলা ভাষার গলা টিপে হত্যা করতে চাইল, তখন বাঙালির জাতীয়তবোধ জাগ্রত হলো, ভাষাপ্রীতি উথলে উঠলো! আর আজ নিজেই হিন্দি-ইংরেজির জুতোর তলা চাটছে! এমন পরিবার কি এখন খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে হিন্দি চ্যানেল চলে না? যদি না চলে, তবে বুঝতে হবে সেখানে স্যাটেলাইট চ্যানেলের থাবা পৌঁছায় নি। বাড়ির বাচ্চা ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ঝুঁকে যাচ্ছে হিন্দি চলৎচ্চিত্র গান-বাজনার প্রতি। হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা লোকসংগীত। বাংলা পরিণত হচ্ছে স্রোতহীন একটা নদীতে। বিলুপ্ত হচ্ছে বাংলা সংস্কৃতি। ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে শিথিল হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ। জাতি পরিণত হচ্ছে অন্তঃসারশূন্যে।
অতিসাম্প্রতিক কবি সাহিত্যিক ঔপন্যাসিকেরাও বাংলা ভাষাকে কলুষিত করছে। তারা বাংলা লেখার মাঝে অপ্রয়োজনীয় দুর্বোধ্য ইংরেজি ও হিন্দি শব্দ ঢুকিয়ে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে যেমনটা আগেরকার লেখকদের বাংলাতে সংস্কৃত ভাষার শব্দ ব্যবহারের সাথে তুলনীয়।
সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে মোবাইল ফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়, যেগুলোতে বাংলা ভাষা ল্যাটিন তথা ইংরেজি বর্ণে লেখা হয়। দেশের সরকারের ভাষা সম্পর্কে এমন ঔদাসীন্য গ্রহণযোগ্যতাকে অতিক্রম করে। কেননা এতে ল্যাটিন বর্ণে বাংলা ভাষা লেখার যে বানানবিধি রয়েছে তা অনুসরণ করা হয় না। দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যখন এমনটা করে তখন সাধারণ মানুষ আর কী করবে?
মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে কোনো জাতি বড় হতে পারে না। জ্ঞানচর্চার মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা। তা সত্বেও আমাদের দেশে ইংরেজিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এখনও আমরা ইংরেজির দ্বারস্থ। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষা শেখাটাকে অস্বীকার করি না। তবে তা নিশ্চয়ই বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে নয়। কেননা মাতৃভাষা হারালে একটা জাতি তার সংস্কৃতি হারাবে, আর সংস্কৃতি হারালে পৃথিবী থেকে একটা জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। নিশ্চয়ই আমরা সেটা চাই না। তাই শুধু শহীদ মিনারের বেদীতে পুৃষ্পমাল্য দেওয়ার মাঝে আমাদের ভাষাপ্রীতিকে আবদ্ধ না করে সত্যিকারের ভাষা-প্রেমিক হয়ে উঠি।
আমাদের শুভবোধের উদয় হোক। জয় হোক বিশ্বের প্রতিটি ভাষার। জয় হোক বাংলার।
এনাম
২১/০২/১৭
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now