বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
হার্ট এটাক - হার্ট এটাক ( পর্ব-১ )
আমার ঘাড় হতে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরত্ব বজায় রেখে নিজ দায়িত্ব সগর্বে পালন করেই বাসটা সাঁইইই- করে প্রায় উড়ে ছুটে গেল নিজ গন্তব্যের দিকে। তার দায়িত্ব পালনে আমি অবশ্যি একটা বাধা হতে পারতাম, যদি না কোনো দয়াবতী মায়াবিনী চশমা পড়া তরুণী দয়াপরবেশ হয়ে আমার হাত ধরে হেঁচকা টানে আমাকে বাসের অপ্রীতিকর মুখমণ্ডলের সাথে ধাক্কা লাগার হাত থেকে বাঁচাতেন। তাঁর হাতের হেঁচকা টানে জোর আছে বলতে হবে। সরাসরি হাত থেকে ঘাড় বেয়ে মেরুদণ্ড চলে গেছে। এতে করে কিডনীতে স্ট্রোক হওয়ার বিধান থাকলে আজ আমার একটা কিডনী স্ট্রোক হলেও হতে পারত।
আমি দাঁড়িয়েছিলাম মহাখালির বাসস্ট্যান্ডের কাছে। অনেকটা হিমু হওয়ার বাসনায়
হেঁটে যাচ্ছিলাম ভবঘুরের মত।
আফসোস! কিছু অপ্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যের দরুণ তা হতে পারলাম না। যেমন- পায়ের জুতা জোড়া।
দিন দুনিয়ার কোন খবর ছিল না। খুব নাটকীয় ভঙ্গিতে হাঁটা প্র্যাক্টিস করছি। বাসটা যদি চিড়ে-চ্যাপ্টা করে চলেও যেত, তাও বোধহয় টের পেতাম না।
আমার জীবন রক্ষাকারিণীর দিকে তাকালাম। তিনি রীতিমত হাঁপাচ্ছেন। আমাকে টানার জন্য যে তাঁকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে, বোঝা যাচ্ছে। ওজনটা বেড়ে গেল নাকি?
"করছেন কী? দেখে চলতে পারেন..." তাঁকে বলার সুযোগটাও দিলাম না। ধমকে উঠলাম, "এটা কী করলেন? জানেন কী করেছেন? জানেন কি হতে পারত?"
তরুণী তাঁর গালভরা চশমার মোটা কাঁচের ভিতর থেকে আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন।
ভ্রু জোড়ায় দিশেহারা ভাব। এখনও পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেন নি। বোঝার চেষ্টা করছেন।
"মানে কী? কী হতে পারত?"
"অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারত। আচমকা টানতে গেলেন কেন?"
"হ্যাঁ! অনেক বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটতে পারত... যদি না টানতাম। পুরো পিষে দিয়ে চলে যেত বাসটা!" সরু চোখে বিরক্তি এনে বললেন তরুণী।
"তাতে ক্ষতি কী ছিল? লাভই তো হত!" বললাম আমি।
"মানে!" আরেক দফা ভিরমি খেল মেয়েটা।
"যদি দূর্ঘটনা ঘটত, বাসটা ধাক্কা দিত, আমার চিকিৎসার খরচ বাস কোম্পানীরই দিতে হত, জরিমানাও দিতে হত! আর যদি মারাও যেতাম আমার পরিবার ক্ষতিপূরণ ঠিকই পেয়ে যেত! এখন যে আপনি আমাকে টেনে এনে বাঁচিয়ে দিলেন, বাস তো পগারপার! এখন, 'মরে যেতে পারতাম' এই টেনশনে যদি হার্টএট্যাক করি? স্ট্রোক করে বসি? বলুন! তার দায় কে নেবে? বাস কোম্পানী নেবে? নাকি আপনি নেবেন?"
মেয়েটা বিস্ফোরিত চোখে অপলকে তাকিয়ে বলে উঠল, "কী লোক রে বাবা! আপনাকে বাঁচালাম বলে কোথায় একটু ধন্যবাদ দেবেন, তা না! জরিমানা নিয়ে পড়ে আছে।"
"কী করব, আপা? গরিব আদমি আছি!"
"বাসটায় লোকজন ভর্তি ছিল। বাসের ওজনের চেয়ে বেশি মানুষের ওজন হবে। ঐ বাসের নিচে পড়লে আর দেখতে হত না!"
"সমস্যা কী ছিল? কাছেই তো পঙ্গু হাসপাতাল...!"
আমাকে শেষ করতে না দিয়েই বিরক্ত হয়ে বলল মেয়েটা, "কী আর করবেন? মাফ করে দিন! চলে যাই! ভুল হয়ে গেছে আমার। আর কোন দিন কারো উপকার করব না!"
মেয়েটা চলেই যাচ্ছিল। আমি রাস্তা আটকে বললাম, " না না নাহ্! এত সহজ নাকি? আমার জরিমানা লাগবে!"
বড় বড় কাঁচের ভেতর থেকে বড় বড় চোখ দুটো তুলনামূলক সরু করে মেয়েটা বলল, " জরিমানা? কীসের জরিমানা?"
"আজ যদি আমি হার্টএট্যাক করে মরে যাই? আমার আত্মীয়স্বজন তখন আপনাকে পাবে কোথায়?"
মেয়েটা অসহায় ভঙ্গিতে বলল, "কী করতে বলছেন?"
"আমাকে ঠান্ডা হতে হবে। বেশি অস্থিরতায় হার্টএট্যাকের সম্ভবনা বেশি। ডাক্তার আংকেল বলেছে।"
"তো?"
"আমাকে বেশি না ... কয়েক গ্লাস কোল্ড কফি খাওয়ালেই হবে।"
"বেশ! আপনাকে টাকা দিয়ে দিচ্ছি। খেয়ে নিন।"
"না না না! টাকা দিলে হবে না। আমি কয় কাপ খাব আমি নিজেও জানি ন!"
"আমার কাজ আছে।"
"কোন বাহানা না! ভুল করবেন আর ভুলের মাশুল দেবেন না? তা তো হয় না!"
মেয়েটা কতক্ষণ ঠোঁট কামড়ালো। পরে ঠোঁট কামড়ানো শেষ করে বলল, "আচ্ছা চলুন। তবে তাড়াতাড়ি। আমার তাড়া আছে।"
"উঁহু! তাড়াহুড়া করলে চলবে না। হার্ট অস্থির পর্যায়ে আছে। তাড়াহুড়া করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ডাক্তার আংকেল বলেছে।"
"আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি। ধীরে ধীরেই চলুন!" তরুণী আমার যুক্তির কাছে হার মানলো।
আমরা একটা কফিশপে ঢুকলাম। কফিশপের নাম 'কফি ডট কম'। এই নামকরণের হেতু খুঁজে পেলাম না। এখানে কি অনলাইনে কফি অর্ডার করা হয়? নাকি অনলাইনে কফি বানানো হয়? এইসব ভার্চুয়াল জিনিসপত্রে বাস্তবজগৎ ভরে যাচ্ছে! বোধহয় ফেসবুক টুইটারে মেতে থাকা জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণই এই নামকরণের উদ্দেশ্য।
তুলনামূলকভাবে জায়গাটা ভালোই। ঘাস আর ফুল জাতীয় টবে সাজানো। কাঠের মেঝে। কাচের গ্রিল বিহীন জানালা।
অজ্ঞাতনামা তরুণীর নাম এখনো জানা হল না। নাম জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছি না। আমরা বসেছি রাস্তার দিকের বারান্দার টেবিলে। পায়ের কাছেই কত গুলো ছোট ছোট টব। বেচারি এমনিতেই মনে হয় আমার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। নামের কথা তুললে টব ছুড়ে মেরে আমার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে চলে যাবে।
সেক্ষেত্রে অবশ্য জরিমানা বা কফির বিল নিয়ে তাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। কফিশপের মালিকই ভরপাই করবে। ব্যাটারা এতগুলো টব রাখবেই কেন যা ছুঁড়ে মারা যায়?
আমি কফির স্ট্রতে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে গেল। যাক! জরিমানা একটু কম দিলেও চলবে। এত ভাল কফি বানায় যেহেতু...
আমি কয়েক ঢোক গিলে রাজকীয় ভঙ্গিতে আড়মোড়া ভেঙ্গে নিশ্চিন্তে বসলাম।এই মুহূর্তে আমার চেয়ে সুখী আর কেউ নেই। পাশ্চাত্যের লোকেরা এই ভঙ্গিতে বসে সানবাথ নেয়। অজ্ঞাতনামা তরুণী ভয় পেয়ে গেল। আমার হাবভাব দেখে নিশ্চয়ই বুঝে গেছে আমার দেরি হবে!
"আপনি একটু তাড়াতাড়ি করুন, প্লিজ। আমাকে উঠতে হবে।"
"আরে, বসুন তো। এত যাই যাই করছেন কেন?"
"আমার সময় নেই।"
"আচ্ছা, আমাকে আপনি কেন বাঁচালেন?"
মেয়েটা কিছুটা বিরক্তি গলায় এনে বলল, "কারণ, কোনো এক কুক্ষণে আপনার জীবনটা আমার কাছে ঐ বাস কোম্পানীর দেওয়া জরিমানার থেকে বেশি দামি মনে হয়ে ছিল।"
"তাহলে আমার জীবনটা নিশ্চয়ই আপনার সময়ের চেয়েও বেশি দামি। চুপ করে শান্ত হয়ে বসুন। কফি খান। আমি কিন্তু কোনো জরিমানা দিতে চাই না।"
"আপনি কেন জরিমানা দিতে যাবেন?"
" বাহ! আপনার যদি হার্টএট্যাক হয়ে যায়, আমার জরিমানা দিতে হবে না?"
"আমার হার্টএট্যাক হবেই বা কেন?"
"আপনি যে হারে যাই যাই করছেন, আপনার মন অস্থির হবে। মন অস্থির হলে হৃৎপিন্ডে রক্ত বেশি বেশি পাম্প হবে। হার্ট এট্যাকের সম্ভবনা বাড়বে। ডাক্তার আংকেল বলেছে।"
"ওরে বাবা!"
"হুম! আমি কি এতই বোকা যে জেনে শুনে জরিমানা দিতে যাব?"
"বোকা? না! না! সেটা তো আপনাকে কিছুতেই বলা যাবে না!"
"হুম। কফি খান। ভাল লাগবে।"
"আপনিই খান কফি। আমার এত সময় নেই।"
"আমি যত কাপ খাব, তাতে আপনি দু'এক কাপ কফি আরাম করে খেতে পারবেন। অর্ডার করি?"
"হুম।" মেয়েটা কাঁধ ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল।
আমি আরো দুটো আমেরিকানো অর্ডার করলাম।
মেয়েটা কফির কাপে চুমুক দিল।
আমি দেখতে চাই, কফি যেভাবে আমার হৃদয় স্পর্শ করে, আমার শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়, তেমনটা সবার হয় কিনা। তখন তাদের দেখতে কেমন লাগে?
দেখা হলো না। ফোন বেজে উঠল।
'Excuse me' বলে ফোন হাতে একটু দূরে হেঁটে গেলাম।
বাবা ফোন করেছেন। কথা শেষে ফোন রাখলাম। মেজাজ তখন তিরিক্ষি। ঠিক হচ্ছে না। কিছু ঠিক হচ্ছে না। একেই বোধহয় বলে 'ঘোর কলিকাল'।যখন কিছুই ঠিকমতো চলে না।
সব রাগ, অভিমান, দুঃখ, হতাশা- কেন্দ্রীভূত হল আমার ফোনের ওপর।
এটাকে কেন বগলদাবা করে নিয়ে এলাম?
ফোনটার দিকে ভস্মদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছি। যত নষ্টের গোড়া!
এটা না থাকলে কবেই ঢাকার রাস্তায় হারিয়ে গিয়ে হিমু হয়ে যেতে পারতাম। কেউ আমাকে খুঁজেই পেত না।
,
চলবে
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
হৃদয়
GJ Writer ৩ বছর, ৯ মাস পুর্বে