বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
‘কি ভাই? কী কেস খাইছেন? খ্যাক খ্যাক খ্যাক...
বিরক্তি নিয়ে রাহাত তার পাশের কয়েদী লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা আবারও বলে ওঠেÑ
‘রেপ কেস?’
‘এসব কী বাজে কথা বলছেন?’
‘ও-লু-লু-লু! এখানে যারা আসে, সব বাজে লোকরাই আসে। বাজে কথা তো অনেক পরের হিসাব। তা আপনে কোন দেশের ভালো লোক? কী নাম?’
রাহাত চুপ করে থাকে।
‘ভালো মানুষের নাম শুনতে তো কোন অসুবিধা নাই। কী বলেন? নাকি নামটাও বাজে?’
‘আমার নাম রাহাত।’
‘বাহ্! বহুত ইজ্জত ওয়ালা নাম তো? আমার নাম কাদের। কাদের পাটওয়ারী। বেশ ভালো বংশ। আমি হইতাছি উচ্চ বংশের উচ্চ কুলাঙ্গার। তিনটা খুন করছি। মৃত্যু দণ্ড হইছিল। পরে এরে ধরে, ওরে ধরে শেষ পর্যন্ত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাইছি। তা আপনে আসছেন কী করে?’
‘খুনের চেষ্টা।’
‘এ্যাঁ? এমন ইজ্জত ওয়ালা নাম নিয়া বেইজ্জতের কাম করলেন? আপনে তো মিয়া সুবিধার পার্টি না।’
‘চুপ করবেন আপনি?’
লোকটা কানে শোনে নি এমন ভান করে বকবক করে যেতে থাকেÑ
‘খুন যে করতে গেছিলেন তার প্রমাণ হইছে?’
‘না। সাক্ষী-সাবুত চলছে। নেক্সট্ হাজিরা তিন দিন পর।’
‘কী আর বলব ভাই? আইন আগের চাইতে কড়াকড়ি হইছে। যদি প্রমাণ করতে না পারেন তো সারা জীবনের জইন্য জেল হইতে পারে।’
‘হলে হবে তাতে আপনার কী?’
‘আমার? আমার কিছু না। সিগারেট খাইবেন? বহুত ঝামেলা কইরা আনাইছি।’ বলতে বলতে একশলা এগিয়ে দেয় রাহাতের দিকে। রাহাত মাথা নাড়ে। সিগারেট সে খায় না।
‘মিয়া! আপনে এত ভালা মানুষভাব নিয়া কেমন যে খুন করতে গেছিলেন মাথায় ঢুকতাছে না।’
রাহাত নিশ্চুপ। মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাখির বাসার মত ছোট্ট সেল দেখতে থাকে। দারোগা সেপাই কাউকেই এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। সবার শেষ সেল বলেই হয়ত।
‘ভাইজান গপ শুনবেন? ভূতের গপ?’
‘কী! ভূত?
‘হ। আমাদের গ্রামদেশে অনেক ভূত। একবার আমার চাচায় মাছ ধইরা ফিরতেছিল। রাইতের বেলা। শুনশান নিরবতা। এমন সময় কেডা জানি পেছন থেইকা চিৎকার পাড়ল Ñ মাঁছ দেঁ হাঁরামজাঁদা। ভাইজান গপ শুনে গায়ের রোম খাড়া হইয়া যাইতাছে না? তো কী হইছে শুনেন। আমার চাচা তখন...
‘আপনি দয়া করে থামবেন? আপনার ফালতু গল্পের চাইতে অনেক ভালো গল্প আমি জানি।’
‘তাই নাকি? একটু শোনান না ভাই?’
‘শুনবেন?’
‘জ্বী! জ্বী!’
রাহাত কী বলবে ভেবে পায় না। চুপচাপ বসে থাকে। পাশে বসা কয়েদী ভূতের গল্পের নাম শুনে উৎসুক হয়ে পড়েছে। রাহাতকে খোঁচাতে থাকেÑ ‘ভাইজান? বললেন না?’
রাহাত গল্প শুরু করেÑ
‘তখন ঠিক রাত বারটা। নয়ন বসে বসে ভার্সিটির অ্যাসাইনমেন্ট রেডী করছিল। দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং ঢং বেজে উঠার কিছুক্ষণ পরই কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেল ও। শরীর খারাপ লাগছে নাকি অন্য কিছু ঠিক বুঝতে পারছে না। আপনা আপনি হাত উঠে এল ঘাড়ের কাছে। যেখানে দুটো গভীর ক্ষত আছে। যেদিন সকালে ক্ষত দুটো আবিষ্কার করল তার আগের রাতে বাঁদুড় ঢুকেছিল। কামড়ে-টামড়ে দিয়েছে বোধহয়। কে জানে?
ইদানিং রাত বারলেই ক্ষত জোড়া ফুলে ফেঁপে ওঠে আর প্রচুর পানির পিপাসা লাগে। এই যেমন এখনও লাগছে।
নতুন রোগটার উপসর্গ জানিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। এখনও ক্ষতটা সারে নি। রাত বাড়লেই টনটন করে ব্যথা করতে করতে ওগুলো ফুলে ওঠে।
নয়ন অ্যাসাইনমেন্ট রেখে ফ্রিজ খুলে পানি খেয়ে নেয়। পর পর দু গ্লাস পানি খেয়েও যেন ওর মনে হল পিপাসা মেটে নি। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে ও।
এভাবে সাত দিন কেটে যায়। সাত দিনের দিন রাত বারোটার পর পর খুব বেশি খারাপ লাগতে শুরু করে নয়নের। লিখতে গিয়ে খেয়াল করে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। ঘাড়ের ক্ষত দুটো আর আগের মত ব্যাথা করছে না ঠিকই কিন্তু ফুলে গেছে। নয়ন অসুস্থতা পাত্তা না দিয়ে লিখতে থাকে। একবার ভাবল পাশের রুমের ইখতিয়ারকে ডাকবে। ও অবশ্য হাড়ের ডাক্তার। গত বছর পাস করেছে। তাতে কী? কিছু একটা সাজেশন তো দেবে? পরে ভাবল এরকম তো তার রোজই হচ্ছে আবার সেরেও যাচ্ছে। থাক। শুধু শুধু এত রাতে ওকে ডাকা-ডাকি করার দরকার নেই। সকাল সকাল আবার কী একটা ডাক্তারী কোর্সে এটেণ্ড করতে হয় ওকে।
আবার লেখায় মনোযোগ দেয় নয়ন। লিখতে গিয়ে কলমের আগায় পানি দেখে চমকে ওঠে সে। আঙুলের মাথা দিয়ে খাতায় পড়ে থাকা চ্যাটচ্যাটে তরল উঠিয়ে পরখ করে দেখে। নাকের কাছে নেয়। বাপরে বাপ! বিশ্রি গন্ধ! কোত্থেকে এল?
ইতি উতি খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ আঙুলের দিকে চোখ পড়তেই দ্বিতীয়বারের মত শক খায় সে। বিশ্রি তরলটার উৎস আসলে কলম নয়। উৎস তার নিজেরই ডান হাতের আঙুল! তাড়াতাড়ি বাম হাতও দেখে নেয়। সে হাতেরও একই অবস্থা। আঙুলগুলোর কোন স্থানে কুঁচকানো কোন স্থানে ফুলে গিয়ে বিকৃত আকৃতি হয়ে আছে। কেমন যেন বমি বমি পায় ওর। দৌড়ে বাথরুমে যায়।
বেসিনের পানি যে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে সেদিকে খেয়াল নেই নয়নের। চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিতে এসেছিলো। তার বদলে অপলক তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। আয়নায় কাকে দেখছে সে? না না। এ অন্য কেউ। ঝট করে মুখ সরিয়ে ফেলে। আবার তাকাতেই দেখে সে একই মুখ। কুচকানো অর্ধ গলিত কদাকার এ মুখ তো তার হওয়ার কথা নয়। আবারও পানির পিপাসা পায়। এত পিপাসা যে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখা শুরু করে।
ফ্রিজের থেকে পানির বোতল বের করে কিন্তু পানি খেতে ইচ্ছে করে না। পিপাসাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। অসহ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত রুম ছেড়েই বেড়িয়ে পড়ে ও।
মধ্যরাতের নির্জন রাস্তায় কেউ নেই। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একজন পথচারীকে হেঁটে আসতে দেখে। লোকটার দিকে চোখ পড়তেই চকচক করে ওঠে নয়নের দু চোখ। লোভীর মত এগোতে থাকে লোকটার পিছু পিছূ। প্রচণ্ড তিয়াশ অনুভব করে ও। তাছাড়া লোকটা বেশ পেশী বহুল। চওড়া ঘাড়! লোকটাকে থামাতে ডাক দেয় নয়নÑ
‘এই যে ভাই শোনেন?’
হাঁটতে থাকা লোকটা দাঁড়িয়ে পড়ে। নেশাগ্রস্ত কি না কে জানে? ঢুলূঢুলু হয়ে বললÑ
‘ছিনতাই করার মত কিছু নাই। বু-উ-ঝ-লে? অন্য পাবলিক ধর। হিক্।’
আর কোন কথা না বলার সুযোগ না দিয়ে লোকটাকে জাপটে ধরে ও। অপ্রকৃতিস্থের মুখ নামায় লোকটার ঘাড়ে। ওর বেরিয়ে আসা শ্বদন্ত ফোঁটায় আনাড়ির মত। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে লোকটা। নয়নের পিপাসা মিটতে থাকে। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে তৃপ্তির একটা ঢেকুর তুলে রুমের দিকে রওনা দেয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে নয়নের। মনে পড়ে যায় কাল রাতের ঘটনা। এমন কেন হল? তাহলে কি সে পিশাচ হয়ে গেছে? পিশাচ!
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায়। প্রতি রাত্রেই একটা করে মানূষ মারতে হয় তাকে। নয়নের খুব কষ্ট হয়। জীবনে আঙুল টিপে যে কোনদিন একটা পিপড়াও মারে নি সে কী করে এতগুলো মানুষ মারছে? ভীষণ অপরাধবোধে ভোগে ও। কিন্তু ওর উপায়ও নেই। প্রতিদিন রাত বারোটার পরপরই অসহ্য পিপাসা পায় ওর। রক্তের নেশায় পাগলের মত ছুটতে থাকে রাস্তায়। শিকারের খোঁজে।
ঢাকা শহরের কড়া আইন পাশ হয়েছে। রাতের বেলা র্যাব পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বসে। শহরে নাকি নতুন এক সন্ত্রাসী গ্র“প নেমেছে। প্রতিদিন একটা করে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটা লাশের ঘাড়ে দুটো করে ফুটো। প্রতিরক্ষা বিভাগের ধারণা কোন আন-আইডেন্টিফাইং বিষ প্রয়োগ করে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে রাত্রে নয়নের বেরুনোও কঠিন হয়ে পড়েছে। রাতে বেরুলেই র্যাব আর পুলিশ, পুলিশ আর র্যাব। সেদিন আরেকটু হলে প্রায় ধরা পড়ে যাচ্ছিল।
ওাস্তায় বেরুতেই এক সার্জেন্টের চোখে পড়ে যায়।
‘এই দাঁড়াও?’
‘নয়ন না শোনার ভান করে হাঁটতে থাকে।’
‘দাঁড়াও বলছি? না হলে গুলি করব।
নয়ন দাঁড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মুখ ঘুরায় না। শেষে ওর বিকৃত মুখ দেখে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসে?
‘কে তুমি? এত রাত্রে রাস্তায় কী করছ?
‘এমনি হাঁটছি।’ কথা বলতে বলতে নয়ন জ্বিভ চাটে। পিপাসা। প্রচণ্ড পিপাসা পেয়েছে।
‘মুখ ঘুরিয়ে রেখেছ কেন? এদিকে তাকাও।’
নয়ন নিশ্চুপ।
‘কথা কানে যায় না। বাকীরা কোথায়?’
‘আমার সঙ্গে কেউ নেই।’
‘আচ্ছা? বলবি না তাহলে? পেটে রোলারের গুতো পড়লে বাকীরাও বেরুবে। থানায় চল হারামজাদা।’
‘থানায় যেতে হবে না। আমিই দেখ তোকে কী করি?’
বলতে বলতে ঝট করে নয়ন মুখ ফেরায় সার্জেন্টের দিকে। বোবা হয়ে যায় সার্জেন্ট। চিৎকার করে যে কাউকে ডাকবে এমন শক্তিও গলায় নেই এখন। থরথর করে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দেয় সে। নয়নও আর দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকটার ঘাড়ে।
শেষ পর্যন্ত সার্জেন্ট ব্যাটাকেই হজম করতে হল। উপায় ছিল না। অন্য কেউ এসে পড়লে ওর আর রক্ষা ছিল না।
সে যাত্রায় সেদিনের মত বেঁচে যায় নয়ন। কিন্তু সমস্যা আরও বাড়ল। সার্জেন্টকে মেরে ফেলায় নিরাপত্তা আর জোরদার করা হয়েছে। আজ একেবারে তার বাসার সামনেই পুলিশ টহল দিচ্ছে। যন্ত্রণা হল দেখছি। আজ রাস্তায় কাউকে ধরা যাবে না। বেরই হওয়া যাবে না ঘর থেকে। রাত বারোটা বাজার আগ পর্যন্ত অনেক ভেবেছে নয়ন। কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারে নি।
বার বার ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে অস্থির হয়ে পড়ছে নয়ন। আর মাত্র দশ মিনিট! সময় যেন ঘোড়ার লাফে এগুচ্ছে। হঠাৎ প্রচণ্ড পিপাসা পেয়ে যায় ওর। বুকটা ধুক পুক করে ওঠে। বারোটা বেজে গেল নাকি? পরে ভালো ভাবে খেয়াল করতেই দেখে ওটা পানির পিয়াসা। ফ্রিজ খুলে ঢক ঢক করে একগাদা পানি খায় ও। আর মিনিট কতক পর তো আর সাধারণ পিয়াসা থাকবে না। তখন কী হবে? কী করে সামাল দেবে ও? রক্ত পিয়াসা?
উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে নয়ন। নার্ভ যথা সম্ভব ঠাণ্ডা করতে চাচ্ছে। কিন্তু কতক্ষণ নিজেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে কে জানে? রক্তের নেশা উঠলেই তো সে পাগলের মত হয়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞান তাকে না।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে ও। হঠাৎ দেয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং ঢং শব্দে বারোটা বাজল জানান দেয়। নয়ন ওঠে না। বালিশ আঁকড়ে পড়ে থাকে বিছানায়। বাইরে কিছুতেই বেরুনো যাবে না। চোখে পড়ে যাবে।
আ-হ্! ওহ্!
শরীরের সমস্ত চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে। যেন পানি শূন্য হয়ে হয়ে পড়ছে। পিপাসা লেগেছে প্রচণ্ড। পিপাসা!
অস্থিরভাবে বিছানায় হাত পা ছুঁড়ে নয়ন। ধীরে ধীরে নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ও। পিপাসায় মগজও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আর পারল না। এক ঝটকায় বিছানা থেকে নেমে পড়ে সে।
দরজা খুলে নিচে নামতে গিয়ে ইখতিয়ার ভাইয়ের দরজার সামনে থমকে দাঁড়ায়। শার্টের কলার টেনে মুখ ঢাকে। বার কয়েক বেল বাজায়।
ঘুম ঘুম চোখে ইখতিয়ার দরজা খোলে।
‘কী ব্যাপার নয়ন? এত রাতে? শরীর খারাপ?’
‘জ্বী। না মানে জ্বী না। না মানে ভালো আছেন আপনি? একটু ভেতরে আসতে পারি?’
অত ফরমালিটিজ মানার ইচ্ছে ছিল না। পারলে ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভেতরটা এমনই শুকিয়ে আছে। কিন্তু তাও পারছে না। এত দিনের চেনা জানা। ওর নিজেরও খেয়াল নেই যে ইখতিয়ারকে আপনি আপনি করে বলতে শুরু করেছে। পিপাসায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
‘কী হয়েছে তোমার? মুখ ঢেকে রেখেছ কেন?’
‘কি-কিছু না।’
‘কী হয়েছে আমাকে খুলে বল? আর দয়া করে মুখ থেকে ওটা সরাও। কারও মুখ না দেখলে তার সাথে আমি কথা বলে আরাম পাই না।’
‘একটা কথা বলব?’
‘বল?’
‘ইয়ে...কেউ শুনে ফেলতে পারে। কানে কানে বলব।’
হাঃ হাঃ হাঃ করে মধুর কণ্ঠে হেসে ওঠে ইখতিয়ার। খুব মজা পেয়েছে যেন। ইখতিয়ারের প্রাণোচ্ছ্বল হাসি শুনে কলজেটা ধক্ করে উঠে নয়নের। পারবে কি এমন একটা মানুষকে খুন করতে?
পরক্ষণেই আরেকটা ব্যাপার মনে হয় ওর। পৃথিবীর ধ্র“ব সত্য মানুষ মরণশীল। তারও চেয়ে বড় সত্য, মরার আগ পর্যন্ত তাকে বেঁচে থাকতে হবে হবে। হোক না সে অন্যকে মরণশীল প্রক্রিয়ার মধ্যে এনেও।
হাসতে হাসতে ইখতিয়ার কান বাড়ায নয়নের মুখের কাছেÑ ‘হুঁ। এবার বল।’
নয়ন কিছু বলছে না দেখে অবাক হয় ও। আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক উল্টা পাল্টা আচরণ করছে। আপনি করে বলছে, মুখ ঢেকে রেখেছে। ওর কেমন যেন সন্দেহ জাগে মনে। কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। নয়নের তীক্ষ্ম দাঁত ততক্ষণে ওর ঘাড়ে ফুঁটতে শুরু করেছে।
‘তারপর?’
কয়েদী লোকটার বিস্ফোরিত চোখ জোড়াই বলে দিচ্ছে গল্পটা যেন গিলছে। রাহাত বলে যেতে থাকেÑ
‘পরদিন নয়ন ভার্সিটিতে যায় না। বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। ওর গায়ে মটমটে বিশাল চাদর। এই কাঠ ফাটা গরমে ভিজে চুপসে একাকার। অবশেষে খুঁজে খুঁজে একটা পুলিশ ফাঁড়ি বের করে ও। শালার পুলিশের বাচ্চা! কাল অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। আজ থেকে আর পুলিশের ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না।
হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে ও। রাস্তার উল্টো দিক থেকে এক লোক হেঁটে আসছে। এই সুযোগ। ধীরে ধীরে চাদরের আড়াল থেকে লম্বা কসাইয়ের ছুরিটা বের করে নয়ন। অন্য কোন ধারাল ছুরি ওর কাছে ছিল না। খাটের তলায় এটা পড়ে ছিল । তাও অনেক খুঁজে পেতে বের করতে হয়েছে। কে ওটা ওখানে রেখে গেছে সে নিজেও জানে না। লোকটা হাতের নাগালে আসতেই পেটে আধ দু ইঞ্চি বসিয়ে দিয়ে খুন করার ভান করতে হবে। তারপর কী হবে তা নয়নের বেশ ভালো ভাবে জানা। খুন করার অপচেষ্টার কারণে তাকে সারাজীবন জেলে থাকতে হবে। এটাই আসল মজা। জেলে যত কয়েদী পাবে একটা একটা করে শেষ করবে। রক্ত পিপাসা মেটাবে। পুলিশের ঝামেলাও থাকবে না।’
এতটুকু বলেই কয়েদী লোকটার দিকে তাকায় রাহাত।
‘গল্প কেমন হল?’
‘ভাল। খুবই ভাল।’
‘শেষটা শুনবেন না।’
‘বলেন।’
‘নয়নের দিন শুরু হয় জেলে। জেল এর পোষাক পরিয়ে অন্য আরেক সেলে ঢুকানো হয়। সেলে ঢুকতেই নয়ন দেখে এক কয়েদী বসে আছে সেলে। কথা হয় তার সাথে। কয়েদীটার নাম কাদের পাটওয়ারী।’
নিজের নাম শুনে কয়েদী লোকটা হাজার ভোল্টের শক্ খায় যেন। পরে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলেÑ
‘ক্বি-কি যে বলেন ভাইজান? হে হে হে... হুদা ডর লাগাইতাছেন কেন? আপনের গপটা এমনিতেই খুব ডরের।’
‘সেলে ঘড়ি নেই। নয়ন বুঝতে পারছে না বারোটা বেজেছে কি না? কিন্তু ওর পিয়াসা পেয়েছে। বড্ড পিয়াস লেগেছে ওর।’
বলতে বলতে রাহাত এগোতে থাকে কয়েদী লোকটার দিকে। ওর শ্বদন্ত বেরিয়ে পড়েছে রক্তের নেশায়। চামড়া কুঁকে চেহারা বিকৃত হতে শুরু করেছে। এমন অচিন্তনীয় দৃশ্য দেখে কয়েদী লোকটা বোবা আতঙ্কে পেছাতে থাকে। পেছাতে পেছাতে সেলের দেয়ালে এক সময় ঠেকে যায় তার মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে থাকা দেহ।:|
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now