বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
উন্মাদ
-খালিদ মিঠুন
ছেলেটার হাত দুটো শক্ত করে বাধা। হাত দুটো ঠিকমত নাড়াচাড়াও করতে পারছে না ছেলেটা। ছেলেটার মুখের উপর রক্ত জমাট বেধে কালো হয়ে আছে। নাক প্রায় থেঁতলে গেছে। চোখটাও ভালমত খুলতে পারছে না । শার্ট রক্তে ভিজে গেছে প্রায়। মেঝেতেও ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারছে না যে আসলে তার সাথে কেন এমন হচ্ছে?
ছেলেটা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল, হঠাৎ করেই একটা প্রাইভেট কার এসে তাকে তুলে চোখে রুমাল বেধে নিয়ে এখানে এই বিশাল রুমে নিয়ে আসলো। তারপর একজন মানুষ, যাকে এই ছেলেটা কখনো দেখেছে কিনা সন্দেহ সেই মানুষটা তাকে অমানুষিক ভাবে অত্যাচার করতে লাগলো!! নির্মম সে অত্যাচার!!
ওই হিংস্র মানুষটা আবারো রুমে এসেছে!! আবছা আলোতে ছেলেটা দেখতে পেল মানুষটার এক হাতে একটা হাতুড়ি আর কিছু পেরেক আর অন্য হাতে আরেকটা ছবি!! ভালমত তাকালো ছেলেটা। ছবির মানুষটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। আরে!! এ তো তার মায়ের ছবি!! যাকে সে দুই মাস আগে এক বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসে আর কোন খোজ খবর নেয়নি!! কারন তার বউ তার মাকে পছন্দ করে না, আর ছেলেটা তার বউকে খুব ভালবাসে, তাই বউয়ের কথায় নিজের মাকে সে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে।
কিন্তু মানুষটার কাছে তার মায়ের ছবি কেন? এই মানুষটা তার কাছে কি চায়?
মানুষটা ছবিটা ছেলের সামনে এনে ফিসফিসিয়ে ছেলেটার কানের কাছে এসে বলে,,
-এই মহিলা কে চিনিস?
-ইয়ে মানে!! হুম! কিন্তু আপনি কে?
অনেক কষ্টে দাঁতে দাঁত ঘষে ছেলেটা বলে উঠল!!
মানুষটা চিৎকার করে উঠে,
-"আমি অভ্র!!"কুত্তার বাচ্চা! তুই এই মানুষটাকে চিনিস?
হাতে রাখা ছবিটা ছেলেটাকে আবার দেখায় মানুষটা!!
ছেলেটা ভয়ে কেপে উঠে এবার। আস্তে করে বলে উঠে,
-হ্যাঁ ইনি আমার মা!!! উনাকে আমি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছি আজ দুই মাস হলো!!
-নিজের জন্মদাতা মাকে তুই নিজের বউয়ের কথায় দুরে রেখে আসছিস!! নিজের মাকে? প্রিয়জন চলে গেলে কত কষ্ট হয় তুই সেটা জানিস?
ছেলেটা উত্তর দেয় না এবার।
মানুষটা আবারো ফিসফিসিয়ে বলে,,
-তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই!! তোকে মরতে হবে, তোর মত নরকের কীটের বেঁচে থাকা মানে একটা অভিশাপ বেঁচে থাকা!!
ছেলেটা চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠে এবার!!
-নাহ!! আমাকে মারবেন না,প্লীজ আমাকে মাফ করে দিন, আমি আজই আমার মাকে বাসায় নিয়ে আসবো, তবু আমাকে মাফ করে দিন।
মানুষটা যেন হঠাৎ করেই শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। একটা পেরেক ঠিক ছেলের কপাল বরাবর রাখলো সে। ছেলেটা চিৎকার করছে, নিজের স্বরতন্ত্রের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে। কিন্তু কেউ মনে হয় ছেলেটার চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না।
মিনিট খানেক পর ছেলেটার চিৎকার চিরজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল!
মানুষটা কপালের ঘাম মুছলো। যাক!আরেকটা নরকের কীট শেষ করা গেল!মানুষটা এসব মানুষদের ঘৃণা করে, যারা নিজের আপনজন, প্রিয়জনকে স্বার্থের কারনে দুরে সরিয়ে চলে যায়। আর এসব মানুষদের খুন করতে তার এতটুকু কষ্ট হয় না। বরং শান্তি শান্তি লাগে! এ নিয়ে সে এই টাইপের পাঁচজনকে খুন করেছে! পাঁচবারই তার অনেক আনন্দ লেগেছে, অনেক আনন্দ!
ছয় বছর আগের কথা!
অভ্র আর মৌমিতা একই ভার্সিটিতে পড়ত। একে অপরকে খুব ভালবাসতো তারা! কিন্তু মৌমিতা স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকায় চলে যায়। অভ্র দেশে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়! মৌমিতার দুই বছর পর ফিরে আসার কথা থাকলেও মৌমিতা আর ফিরে আসে না। পরে অভ্র জানতে পারে মৌমিতা ওই দেশের কোন এক প্রফেসরকে বিয়ে করেছে, শুধুমাত্র ওই দেশের সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য, আর এটাও জানতে পারে যে মৌমিতা কোনদিন আর দেশে ফিরে আসবে না!! অভ্র বিশ্বাস করতে পারে না যে মৌমিতা এরকম করতে পারে তার সাথে! মেয়েটাকে যে সে পাগলের মত ভালবাসতো !
তারপর থেকে সে ঠিক করে যে সে যেখানেই দেখবে কেউ তার প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তাকে সে খুন করে ফেলবে!! স্রেফ খুন করে ফেলবে। এসব মানুষদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। মৌমিতাকে খুন করার ইচ্ছাটাও সে তখন থেকেই লালন করে, প্রায় প্রতিদিনই অভ্র স্বপ্ন দেখে সে মৌমিতাকে কুপিয়ে কুপিয়ে মারছে!! এই স্বপ্নটা দেখতে অভ্রর ভালই লাগে!
বিকালে হাতিরঝিলে প্রায় হাটতে বের হয় অভ্র। অভ্রর হাতে সিগারেট, একটু পর পরই ধোয়ার সাথে সাথে নিকোটিন ও টেনে নিচ্ছে ফুসফুসে!! ধোয়া গুলো যদি ফুসফুসে যেয়ে বিষাক্ত না করে উল্টো বিশুদ্ধ করতো তাহলে হয়তো মানুষ সিগারেটই খেত না! কারন নিষিদ্ধ বস্তুর উপর মানুষের আকর্ষন অনেক আদিম!! ভাল কিছুর উপর মানুষ বিকর্ষিত হয়!
আজ ও হাটতে বের হয়েছে অভ্র। ভার্সিটিতে ক্লাস করিয়ে বিকালে এখানে কিছুক্ষন ঘুরতে তার ভালই লাগে। বিয়ে করেনি সে, তাই বাসায় দেরী করে ফিরলেও কোন বকাঝকা খাবার ও কোন রিস্ক নাই। জোড়ায় জোড়ায় অনেক তরুন তরুণীকেই দেখে সে। দেখতে ভালই লাগে তার!! মৌমিতার সাথেও এভাবে ঘুরতো সে। কিন্তু যখনই এই তরুন তরুনীরা কোন স্বার্থের কারনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখনই তার খারাপ লাগে, মনে হয় ওই স্বার্থবাজটাকে খুন করতে।
হঠাৎ করেই এক শাড়ী পরাহিত এক মেয়ের দিকে চোখ পড়ল অভ্রর। মেয়েটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। আরেহ!! এ তো মৌমিতা! তার মৌমিতা! মৌমিতার পাশে এক সুদর্শন মানুষ! পোশাক আশাকেই বোঝা যাচ্ছে মানুষটা এদেশের নয়। এই মনে হয় সেই প্রফেসর!
কেউ যদি ওই সময় অভ্রকে ভাল করে খেয়াল করতো তাহলে সে নিশ্চিত অভ্রর মুখে হঠাৎ করেই অমানুষিক আর জান্তব হাসি দেখতে পারতো। চোখে দেখতে পারতো হিংস্র পশুর দৃষ্টি!! অনেক দিন ধরে লালিত স্বপ্ন যে তার পুরণ হওয়ার পথে অবশেষে!!
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now