বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ল্যাম্পপোস্ট

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Shubho (০ পয়েন্ট)

X - ঘন কুয়াশায় বিশাল মাঠের উপর হাঁটায় সুখ অনুভূত হয় আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতের সময়কার ছুটিতে তাই বাড়ী আসলে, প্রতিদিন ধান কেটে ফেলার পর খালি হওয়া মাঠের মধ্যে খুব ভোরে আমি কুয়াশার বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটতে যাই। এই শীতেও তার ব্যাতিক্রম কোন রুটিন আমি করিনি। তো এমনই এক কুয়াশার বৃষ্টিতে ভেজার দিন, কুয়াশার জানালার ওপাশে চাদরে জড়িয়ে থাকা এক মানবীর দর্শন পাই আমি। দেখলাম, সেও আমার মতনই গায়ে চাদর জড়িয়ে রেখে কুয়াশা ভেদ করে গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে। সে হাঁটছে, এমনভাবে হাঁটছে যেন ভূমি তার স্পর্শে ধন্য হয়। তা দেখে আমারও তখন ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় তার স্পর্শে আসার। মুগ্ধতায় শুধু দেখছিলামই তাকে। দেখতে দেখতে কখন যে সে চলে গেল কুয়াশার গভীরে, বুঝতে পারিনি। দৌরে গেলাম তার দিকে, আরেকটাবার মুগ্ধ হতে। নাহ। পেলাম না তাকে। ফিরে আসতে হয় হতাশায়। সারাটা দিন অসুখে কাটে আমার। অসুখ, ক্ষণকালে সৃষ্ট হওয়া ভালোবাসাকে এক মুহূর্তের বেশি চোখে দেখতে না পারার। পরদিন ভোরে আবার আমি যাই সেখানে। অনেকটা খুঁজি তাকে। নাহ, আসেনি আর আজ। পুনরাই হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরে যাবো বলে যেই পিছু ফিরলাম, দেখি পবিত্র আত্মা বহন করা সেই মুনুষ্য রুপী দেবী চৌধুরানি আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার পানে। আমি হা হয়ে গেছি। সেকেন্ড কতক তাকিয়ে থাকার পর সে কথা বলে উঠলো। বলল, 'এই যে চোখে দেখেন না? এক্ষুনি তো এক্কেবারে ফেলে দিচ্ছিলেন ধাক্কা দিয়ে। আমায় মেরে ফেলার সুপাড়ি নিয়েছেন নাকি? তা কত টাকা পাবেন আমায় মেরে বলুন তো শুনি?' আমি বিস্মিত হওয়ার যে পাহাড় আছে, তখন তার চূড়ায় অবস্থান করছিলাম। ভাবতে পারছিলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে। কোনোরকম জিজ্ঞেস করলাম, 'কি? কি বলছেন কি আপনি হে? আমি আপনাকে মারতে যাবো কেন? আমি তো...' আমি আর কিছুই বলতে পারিনি। সে তার আগেই হনহন করে হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে। আমি পেছন পেছন দৌরে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। বললাম, 'সরি'। সে কিছুটা শান্ত হয়ে বলল, 'সত্যিই আপনি সরি? নাকি ভণিতা করছেন?' -না না আমি সত্যিই সরি। -তাহলে ঠিক আছে। -থ্যাংক ইউ। বাই দ্যা ওয়ে, আমি সৌরভ। -আমি স্বর্না। -আচ্ছা, আপনি কি রোজ এখানে আসেন? -হ্যাঁ, এই গ্রামে বেড়াতে আসার পর রোজ কুয়াশার বৃষ্টিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে আসি এখানে। জানেন? খুব ভাললাগে আমার, কুয়াশায় এভাবে হাঁটতে। ইচ্ছে করে এভাবে হেঁটেই জীবন পার করে দিই। -তবে দিন না। মানা কে করেছে? -তা ঠিক। তবে মানা কেউ না করলেও, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, এখান থেকে যাওয়ার পরেই এংগেজমেন্ট। -ওমা! তবে পড়াশোনা? -চলবে। বিয়ের পরেও তো তা চলতে পারে। সমস্যা তো নেই। ছেলে দেখতে যেমন বেশ তেমনি প্রফেশনেও সুপ্রিম কোর্টের উকিল। আমি আর কিছু বলিনি। কিছু জিজ্ঞেসও করিনি? চুপচাপ বাড়ী ফিরে আসি। প্রচুর ব্যাথা বোধ হচ্ছিল মনে। ভালো থাকার উপায় যেন সব হারিয়ে ফেলি। তবু সেদিন কিছুটা আশা ছিল মনে যে, পরদিন সকালে যখন দেখা হবে, তখন বলবো তাকে অনেক কিছু। কিন্ত সবচে বড় ধাক্কাটা খাই পড়দিন সকালে। যখন কুয়াশার মাঠে গিয়ে তার দেখা মেলেনি। সেই বাড়িতেও গেলাম তার খোঁজে, যেখানে সে বেড়াতে এসছিল। সেখান থেকে জানতে পারলাম সে চলে গেছে গতকাল শহরে। আমি জীবনের প্রথম ভালোবাসা, যার জন্ম হওয়ার আগে আগেই মৃত্যু হয়ে গেছে, তার ব্যাথায় ব্যাথিত মন নিয়ে সেদিনই শহরে ফিরে চলি। শহরে ফেরার পর অনেকদিনেও মন ভালো হচ্ছিল না। যেন, আমার মন চালনার দায়িত্বে থাকা চালকের মৃত্যু ঘটেছে। ফলে চালকবিহীন মন আমার স্থিতি জড়তার সূত্রের প্রতিপাদন করে, খারাপই রয়ে যাচ্ছে চিরকালের জন্যে। কিন্তু হঠাৎ একদিন এক মধ্যরাতে, আমি রাস্তার মাঝখানে থাকা সোডিয়ামের বাতির নিচে বসে যখন নিজের দুঃখ বিলাসের কথা ভাবছিলাম মনে মনে। তখন এক পরিচিত তরুণী কন্ঠ আমায় বলছে শুনলাম, 'এই যে মিস্টার চোখে দেখেননা? এক্ষুনি তো এক্কেবারে ফেলে দিচ্ছিলেন ধাক্কা দিয়ে।' আমি আমার নত করে রাখা মাথা উপরে তোললাম। দেখি স্বর্ণা। কুয়াশার নিত্য সৌন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে, কুয়াশাকে আমার দ্বিতীয় ভালোবাসার বস্তু যে বানিয়ে দিয়েছিল, যার স্পর্শের কাতরতায় উন্মুখ হয়েছিলাম এতদিন সেই দেবী আজ হঠাৎ এই মধ্যরাতে আমার সামনে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি নিজেকে, নিজের চোখকে যারা আমার মস্তিষ্কে তার আগমনের খবর পৌঁছাচ্ছিল। আমি পুনরায় বাকরুদ্ধ। অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করলাম, 'এতদিন কোথায় ছিলে?' অভিমানে গালমুখ ফুলিয়ে রেখেছি আমি। খুব সম্ভবত মেয়েদের মতো আমার এই গাল ফুলানো দেখে সে তার হাসি রুখতে পারেনি। তাই প্রচন্ড জোরে শব্দ করে হাসতে শুরু করলো সে। অনেক্ষণ হেসে যখন ক্লান্ত হলো তখন হাসি থামিয়ে বললো, 'পাগল, আমায় ভালো থাকতে দিলিনা। প্রথম দেখার কালেই তোর চোখে আমার প্রতি কি যেন একটা দেখতে পেয়েছিলাম আমি। সেই থেকে। সেই মুহূর্ত থেকে তোর মুখটা একটা বারও ভুলতে পারিনি। মন শুধু তোর পানে ছুটছিল। আমার সুন্দর সাজানো জীবন তোর জন্যে ভেঙে পালটে যেতে পারে, এই ভয়ে তাই সেদিন চলে আসি শহরে। কিন্তু তোকে দূরে রেখে আসলে হবে কি? মন তো তুই রেখে দিয়েছিস সেদিনই তোর কাছে। আর তাহলে কিভাবে আমার সব ঠিক থাকে তুই বল? অতঃপর আমি এখানে খুঁজতে শুরু করি তোকে। প্রতিদিন খুঁজি। তোর ভার্সিটিতে যাই, তোর বাসার ঠিকানা খুঁজি, খুঁজি তোকে, তোর মায়াভরা মুখটাকে। কিন্তু না পাইনা। এরপর সারাদিন তোকে খুঁজে না পাওয়ার যত হতাশা, সেই হতাশার গল্প প্রতিদিন মধ্যরাতে এইখানে এসে এই হলুদ সোডিয়ামের বাতিওয়ালা ল্যাম্পপোস্টকে শুনাই। কিন্তু হঠাৎ একদিন যে এই ল্যাম্পপোস্ট আমার দুঃখের অবসান ঘটাবে তা সত্যি ভাবতে পারিনি। আমি......আমি তোকে ভালোবাসি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৫৯ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ল্যাম্পপোস্ট
→ রাস্তার আলো দেবে সিমেন্ট, ল্যাম্পপোস্ট লাগবে না!

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Shubho
    User ৭ বছর, ২ মাস পুর্বে
    ধন্যবাদ হৃদয়

  • হৃদয় আহমেদ
    Guest ৭ বছর, ২ মাস পুর্বে
    ভাল গল্প, চালিয়ে যাবি আশা করি।

  • হৃদয় আহমেদ
    Guest ৭ বছর, ২ মাস পুর্বে
    ভাল গল্প, চালিয়ে যাবি আশা করি।